শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৪

আমি ঘুমোতে চেয়েছি



আমিতো ঘুমোতে চেয়েছি
গাছের ছায়ায় ঢাকা নিমগ্ন ঘাসের মতো নিরিবিলি
চাঁদটাই তার প্রখর জ্যোৎস্নাউচ্ছ্বাসে ঘুমোতে দেয়নি ,
চাঁদনি প্রাবল্যে ঢেলে দিল আজীবন অনিদ্রাঅসুখ।

ঘোর চন্দ্রিমার সোনালি আগুনে
কেন যে তীব্র এক হা-হুতাশ  বাঙময় হয়ে গেল !
হাহাকারের শব্দগুলো এতোটাই প্রবল ছিল
যেন নিঃশ্বাসের শব্দ বেজে যাচ্ছে
কামারশালার নেহাইয়ে হাপরস্পন্দনের মতো।



স্রোতে টলমল ডিঙ্গির শোকে সমুদ্র যখন ফেলল দীর্ঘশ্বাস
আরো প্রবল থেকে প্রবলতর ঢেউ উঠলো
গিলে নিলো আস্ত ডিঙ্গিটাকেই।


বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৪

বিষ নিঃশ্বাস


 কোথাও নতুন আরেক চোরকুঠুরি তৈরি হলো ;
 কোথাও জমাট বাঁধে আরো কিছু গাঢ় অন্ধকার।





 স্থির হও। স্থির
চরকির বংশদন্ডের মতো ।
যখন তোমার চারপাশে  হাওয়ার তালে তালে  ঘুরবে
রংগীন কাগজের ঘুর্ণাবর্ত ; পৃথিবীর উল্লাস ,
তোমার মনে হবে --
আহা! যদি হতাম ইন্দ্রধনুডানার  শিতিকন্ঠ পাখি ,
কেউ না কেউতো কুড়িয়ে নিতো আনন্দের  একটি পালক !

তোমার আকাশ দেখা জানালায় কুরুশবুননের রেশমিজাল
বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে দীর্ঘশ্বাসের প্রতিধ্বণিগুলো ।
তুমি জানো
সবাই ময়ুর নয় ,
কেউ কেউ ফুল ও পাতা ঝরানো কষ্ট বুকে নিয়ে
বৃক্ষ হয়েই বেঁচে থাকে।

কবে
কত যুগ আগে যেন
তোমার জানা হয়েছিল 'নিঃসঙ্গতা ' একটি হিংস্র ময়াল
তার কিলবিলে স্পর্শে বারবার বিবমিষা এবং শ্বাসরুদ্ধকর  ভয় ।

চাঁদের ঘোরলাগা দেয়ালে
হুট করে একটি ধুসর টিকটিকি নেমে আসে  ,
পতঙ্গভুক বীভৎসতা দেখতে চাওনি  ;
বিচ্ছিন্ন করেছো সোনালি কারুকাজের দেয়াল।



পাখির কাছে ধার করেছো  যে দু'টো  ডানা ,
আভারনাসের বিষবাষ্পে তারও  পালক পুড়ে গেছে।










সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৪

চাঁদের কৌটায়



 ছায়াটা উড়ে যাচ্ছে  স্যাঁতসেঁতে হাওয়ার ঘেরে
একটা মিশকালো দাঁড়কাকের মতো ।
আর আমি
গণিতের শূন্যগুলোকে কমাতে কমাতে নিয়ে আসছি
একক সংখ্যায়।

যখনই দীর্ঘঘুমের ব্যাকুলতা
তখনই  মুঠো মুঠো ঘুমের ওষুধ ;
স্বপ্নহীন সিডেটিভ ঘুম।

অন্ধকার বারান্দার স্তব্দ অনিদ্রার সাথে জেগে থাকে
সুনসান এক বিনিদ্র গলি ;
লাইটপোস্টের ছেঁড়া ছেঁড়া আলোগুলো
অভয়বাণীর মতো জ্বলে থাকে সারারাত ,
ঝিঁঝির গুঞ্জরণের সাথে ডানা ঝাপটায় রাতচরা পাখি ।

কখন যে বুকের ভেতরে অনায়াসে ঢুকে পড়ে
একটা বিচ্ছিন্ন  আকাশ -----

চাঁদের রূপালি কৌটায় যে স্বপ্ন জমাই সারারাত
ভোর হলেই কোথায় যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ফেলি !


এক টুকরো সোনালি দড়ি অথবা সুতো




বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৪

ছবিটা নিখুঁত হয়না




আবারো সেই হিমগন্ধের বিভীষিকা ,নিঃশ্বাস আগলে রাখা  কালো হাত।

মেঘের প্যাস্টেলে আঁকা  বহুবর্ণ ছবিগুলো উলটে পালটে দিয়ে
ছুটে যাচ্ছে উন্মাতাল এক মৃত্যুরং ঘোড়া ;
কিংকর্তব্যবিমূঢ় লাগাম-------------------------------------



সময় কখনো ইজেরের কোমরে বাঁধা ইলাস্টিক ফিতে নয় যে
চাইলেই --- দীর্ঘ অথবা হ্রস্ব হবে ।
তবু
তীব্র জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে কখনো বা ভেসে যাচ্ছে সময়ের কাঁটা ।


হতাশ্বাসের বিষবাষ্পে ক্রমশ  বিবর্ণ  হচ্ছে সবুজ পত্রপুষ্পশাখা ।


হয়ত নিখুঁত  আকাশের ছবি চাইছে এক বিফল চিত্রকর।














মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

শেষ বিন্দুতে



শব্দতরঙ্গে কম্পন জাগে।
দূর দিগন্তরেখায় অচেনা এক বর্ণআলেখ্য----------------- 
কুয়াশা ভেঙ্গে অঙ্কুরিত হয়ে ওঠে একটা ছায়া অথবা শব্দ ।
কোথাও পাতার বাঁশি বেজে ওঠে ;
ধ্রুপদী সুরের মীড়ে মিশে আছে
এক অতলান্ত সবুজ ঘ্রাণের মতো নীরবতা ;
স্রোতস্বিনীঢেউয়ের মতো বিলম্বিত এক লয় গড়িয়ে যাচ্ছে
মহাসমুদ্রের দিকে ।


তুমি নুপুর নও ।
নদী নও।
রং-তুলিও নও ।
তবু বাতাসে পেন্সিল ঘুরিয়ে এঁকে নিচ্ছো এক শূন্যবলয়
সেই বৃত্তের ভেতরে আরেক বৃত্ত ;
এভাবে একটা বিন্দুতেই শেষ।এবং

স্থির।









-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------


সোমবার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৪

দাগ



থাক্‌ ।

এই দাগ।বোতল উপচে পড়া তরল আনন্দচিহ্ন ।
বাতাসে মিলিয়ে গেলে ঘ্রাণ
তলানিতে  স্মৃতিঅভিজ্ঞান  ফুটে থাক
আরো কিছুটা সময় ।


ফুল টেনে নিচ্ছে প্রাণপণ  গন্ধ  , বাতাসের ।
মলয়ার অনুতে অনুতে ভিন্ন সুর বেজে গেলে
রঙ বদলে যায় বারবার
তা কি জানে বোকাপুষ্প?


রঙ পেন্সিল হাতে দাঁড়িয়েছি নোনাদেয়ালের পাশে।







=============================================

শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০১৪

সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট



                     এক প্রচন্ড ঝড় উঠলো। ধুলোর।যেখানে যা কিছু ছিল স্থির ,  সব ছিটকে সরে গেল এখান থেকে ওখানে। লন্ডভন্ড।
            ল্যাম্পপোস্টের গায়ে লেপ্টে থাকা মৃত প্রজাপতির চোখে তখনো  সরব হয়ে ছিল এক বিস্মিততীব্র জিজ্ঞাসা--আলোর কাছাকাছি গেলেই পুড়তে হবে কেন! কিছুক্ষণের ভেতরই মৃতমাংস সন্ধানী পিঁপড়ারা ভীড় করবে এখানে ।আত্মাহুতি দেবে আরো কিছু ক্ষুদ্রকায় প্রাণ। প্রখর তাপে পতঙ্গ পুড়ে। পুড়ে খাদ্যসন্ধানী পিপীলিকা এবং  যে তীব্রতাপ পুড়ায় পতঙ্গ,  সেই খরদহন কখনো কখনো  মানুষের নরম হাতগুলোতে ছড়িয়ে দেয় ফোসকার দাগ। আজীবনের।
    এই যে মানুষ , পতঙ্গ অথবা পিঁপড়া যারা সন্ধান করে আলো অথবা মাংসের তাদের পরিণতিগুলো, একই সুতোয় বাঁধা। অবসান।
           তার চাইতে   এই প্রখর উত্তাপের উৎস থেকে দূরেই থাক্‌  ক্ষীণজীবী কীট-পতঙ্গ এবং সমস্ত কোমলতাগুলো। আগুনের কাছাকাছি  থাকুক কেবল অগ্নিপ্রতিরোধক ধাতব কাঠিন্য।' সারভাইভ্যাল  অব দ্য ফিটেস্ট'।

     
      শন শন দমকা হাওয়ায় ইতিউতি উড়ে যাচ্ছে  শুকনো জীর্ণ ডালপালা , পাতা , খড়কুটো।
বাতাসের দুর্ণিবার আলোড়নে শূন্যে উঠে যাওয়া ঝরা পাতাগুলো পাখি নয়--এই কথাটা কখনো ভুলে যায়   আত্মমগ্নতার গভীরে ডুবে যাওয়া কিছু মানুষ।ধুসর বর্ণের বিচ্ছিন্ন ঘুর্ণিতে তারা ভোগতে থাকে উড়ে যাওয়া ডানাবিভ্রমে। অহেতুক।
  ঝড় থেমে গেলে এসব ঝরে পড়া ছাইপাশ  আবার নেমে আসবে মাটির মাধ্যাকর্ষনের টানে।জায়গা হবে ডাস্টবিনে। মিউনিসিপ্যালিটির আবর্জনার গাড়িতে ।
     
               প্রবলবর্ষনের তোড়ে ছাদ উপচে পড়া অবিরাম জলধারাওতো মাঝে মাঝে ঝর্ণার বিভ্রম তৈরি করে ফেলে এক নিমেষে ।পাহাড়, ঝর্ণা এবং নদী পিয়াসী মানুষের কাছে এও এক তৃপ্তিদায়ক সান্ত্বনা। উঠোনে মিছেমিছি তৈরি হওয়া এক নদীতে মানুষ ভাসিয়ে দেয় না না রঙের কাগজের নৌকা আর কপোলকল্পনায় ভাবে    ' সপ্তডিঙ্গা মধুকর দিয়েছি ভাসায়ে '।






                

বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০১৪

অশ্রুত সুর






তোমার আয়না অথবা জলবিম্বে নক্ষত্রের কোলাহল ;

হাতের তালু থেকে এক নদী বিষাদ গড়াতে গড়াতে
মিশে গেছে সমুদ্রের নুনে।


রাত দ্বিপ্রহরের ঘন্টায় বেজে ওঠে নীলভায়োলীন
নীরবতার বাদামী খাম ছিঁড়ে
ইথারে ছড়িয়ে পড়ে
কালোগোলাপের তমসারণিত পাপড়িগুলো।
শব্দ ভাঙ্গছে
ভাঙ্গতে
ভাঙ্গতে
খুঁজে ফিরছে নতুন কোন বাক্যগ্রন্থি।

তার চেয়ে একটা ঝড় উঠুক প্রবল সামুদ্রিক
একখন্ড সমুদ্রই নাহয় ছিটকে উঠুক
ছড়িয়ে পড়ুক আকাশের পিঙ্গল অলিন্দে ।
তরঙ্গচূড়ার উত্তুঙ্গে কেঁপে ওঠে সশব্দ বর্ণমালা
উড়ুক্কু মাছের ঠোঁটে ঠোঁটে তারা সব
পৌঁছে যাবে মেঘের কানে কানে ; গোপন চিঠির মতো।


চাঁদের পতাকাতলে বেজে গেল --- অশ্রুত সানাই ।








--------------------------------------------------------------------------------------

বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পরিসর



তুমি মেঘমল্লার হতে চেয়েছিলে ;অথচ বর্ষা তোমার প্রিয় ঋতু ছিলনা ।
তোমার কড়ে আঙ্গুলে এই প্রবল সত্য  বারবার  ফুটে উঠেছে
আর  তুমি লুকিয়ে ফেলেছো তোমার আঙ্গুল , নখরসুদ্ধ ।
তারও বহু আগে
আমি ছুঁয়ে ফেলেছি তোমার হাত
বিষনখ
এবং
আগুন।

পুড়ছে অথবা বিষিত--------------------------------------------


মেঝেতে পড়ে থাকা  আপাতঃনিরীহ পোকাটাই
একদিন কিলবিলে শরীর বেয়ে ঠিক পৌঁছে যাবে
মগজের প্রগাঢ়প্রকোষ্ঠে ।
নীলব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে তুমি ছুঁতে চাইবে এক বিষন্ন বরফ।

একদিন তুমি ঠিকই জানবে
আকাশ এক প্রখর হাহাকারের শূন্যশব্দ ছাড়া আর কিছু নয়.....................

















---------------------------------------------------------------------------------------------------------





বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

কাঁচ অথবা পাথর


অদ্ভূত  শিসের শব্দে শ্যাম্পেনের ছিপি খুলে গেলে
আনন্দের ঘ্রাণরং বেজে ওঠে
বাতাসের পরতে পরতে ।
ক্রিস্টাল পানপাত্রে ফ্লুরোসেন্ট জ্যোৎস্না ছলকে ওঠে
মাতাল গন্ধের রেশ--------------------------------


বাজপাখির ডানায় একটা  আদিগন্ত মাঠ পোড়ানোর মতো
যথেষ্ট আগুন ছিল।
তবুও একটা শীতলহাত রেখেছে ঢেকে একখন্ড হরিৎ ;
পথ জুড়ে তপ্ত ছাই
কাঁকরের ব্যাথা।
সবুজগুলো বারবার দ্বিখন্ডিত হচ্ছে
দ্বিধাগ্রস্থ রাতের অন্ধকারের মতো

চোখে কি মাখলে তবে ভিন্ন  রংয়ের  কাজল
সবুজকে দেখছো তীব্রনীল অথবা খয়েরি !


যে কথাগুলো কেবল উথালপাতাল  ঘুরে
জলের ভেতর মাছের মতো
ঘূর্ণির মতো

সেসব অর্থহীন -----নিয়েছি মেনে।


দেয়ালতো দেয়ালই
কাঁচ
অথবা
পাথর---------------------------------------------------------



-------------------------------------------------------------------------------------



হারানো কলমের কবি স্বদেশ সেন


" হারানো কলম কেউ একদিন টেবিলে তুলবে
পায়ে পায়ে এই আগমন তুমি বুঝতে পারবেনা
তখনও তুমি দুধ ভরে নিতে চাও শরীরে
কিছুতেই বুঝোনা হাওয়া আটকায় না কোন আঙটায় "

                                  ( হারানো কলম / স্বদেশ সেন )
                   কলম হারায় । কলমের আঁচড় হারায়না । কাগজে রেখে যায় তার স্থায়ী চিহ্ন।এই চিহ্ন বা লিখনগুলো যদি বাক্যের একটি  সফল পংক্তিমালা নির্মান করতে পারে , তবে তা কাগজের বুক থেকে পৌঁছে যায় মানুষের হৃদয়ে হৃদয়ে । দাগ কেটে যায়।
  স্রষ্টা  সৃষ্টি  করেন আপন খেয়ালে , নিজের মতো করে । এই সৃষ্টি যখন সফল ও সম্পূর্ণ হয়ে যায় তখন  তা আর স্রষ্টার  নিজস্ব থাকেনা । স্রষ্টাকে অতিক্রম করে সকলের হয়ে যায়। এটাই  সৃষ্টির সার্থকতা , স্রষ্টার সাফল্য।
        চলে গেলেন এক কলম কারিগর। একজন আত্মমগ্ন কবি। কাব্যস্রষ্টা । স্বদেশ সেন।তাঁর  কলমও কি  হারিয়ে গেল? না সেটা হারায়নি। বেঁচে আছে তাঁর কাগজ-কলমের কারুকাজগুলো। বেঁচে থাকবে বাংলাসাহিত্যের ইতিহাসে এক বিশিষ্ট  স্থান  জুড়ে।
              "  ভরা কাগজকে ভাবো একটা প্রপাত যেমন হয়
                 সেখানে একটা মাত্রাময় দাগ পড়বে
                 আনারস কেন্দ্রের মতো
                 ঘাস ফলের কাগজ
                 সে তো ঝরবে বলেই ঝর্ণা বলেই বয়ে যায়
                  সে  তো দাগবে বলেই দামী
                  আভাস থেকে অন্ত দেখতে দেখতে দেখিয়ে দেওয়া । "
                                                           (  ভরা কাগজ /  স্বদেশ সেন )
       
                    এই ভরা কাগজের প্রপাতে অজস্র মাত্রাময় দাগ রেখে চলে গেলেন তিনি ।
                
  পাঠকের  অন্তরে এবং মুখে মুখে ফিরবে তাঁর কবিতাগুলো---সপ্রাণ। কিন্তু তিনি নিজে চলে গেছেন নশ্বর এই পৃথিবী ছেড়ে এক অনন্ত অবিনশ্বরে। যাবার আগে এই নশ্বর পৃথিবীর জন্য রেখে গেছেন কিছু অবিনশ্বর কাব্যশৈলি।খুব সরব এক কবিতার খাতা ফেলে উঠে চলে গেলেন,এক না লেখার দেশে ।যেখানে আর কোন কবিতার খাতায় আঁচড় কাটবেনা তারঁ এই কলমটি।
         যেমন--" হাওয়া আটকায় না কোন আঙটায় '--তেমনি জীবনও চিরকাল আটকে থাকেনা কোন নশ্বর দেহে।একদিন হুট করে নিভে যায় জীবনপ্রদীপের শেষ সলতেটুকু। অনাকাঙ্খিত , কিন্তু অবধারিত।যে যায় সেও যেতে চায়না । এই জাগতিক মায়াজাল ছিন্ন করে স্বেচ্ছায় -হাসিমুখে চলে যাওয়া সহজ নয়।আর আশপাশের মানুষ , প্রিয়জন , চেনা পৃথিবী হাহাকার করে বলে যেওনা, যেওনা, যেওনা।তবুতো যেতে হয়। এটাই নিয়ম।আর যাবার আগেই পৃথিবীতে রেখে যায়   নিজের কিছু না কিছু চিহ্ন ,স্বাক্ষর । উত্তরাধিকার।
     কেন লেখে মানুষ? কিভাবে লেখে? মানুষ সারাক্ষণ কথা বলে নিজের সাথেই।প্রশ্ন করে ,উত্তর দেয়।পৌঁছায় কোন না কোন সিদ্ধান্তে। সরল অথবা জটিল।আর নিজেকে বলা এই কথাগুলো , এই সিদ্ধান্তগুলোই সাহিত্য হয়ে ওঠে যখন অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারে লেখনির মাধ্যমে।কেউ কেউ পারে । সবাই নয়।যুগে যুগে মানুষ এই আপন খেয়ালের , অনুভবের কথা লিখে রেখেছে  শিলালিপিতে , প্যাপিরাসে, ভূর্জপত্রে ।এই সাহিত্যেরও আবার নানা ডালপালা।তার মাঝে সব থেকে প্রাচীন সব থেকে শিল্পিত মাধ্যম হলো কবিতা।শিল্পিত এবং জনপ্রিয় ।বিবর্তনের পথ ধরে তারও আবার ভিন্ন রূপ। ভিন্ন মেজাজ।
             কবি স্বদেশ সেন খুব অবলীলায় নিজের লেখনীকে করতে পেরেছেন সর্বজনগ্রাহ্য এবং সেইসাথে অতিক্রম করে গেছেন নিজের সময়কেও।তিনি যেন অনাগত সময়ের এক অগ্রদূতের মতোই  সমসাময়িক লেখনীধারা থেকে বেরিয়ে নিজের  লেখাতে প্রবর্তন করেছেন এক ভিন্ন এবং নতুন ধারার ।
                         
           কবিতা দু'ভাবেই লেখা হয়। মূর্ত অথবা বিমূর্ত। কেউ কেউ নিজের চারপাশে খুব বিমুর্ত এক আবহের সৃষ্টি করে নিয়ে লিখতে পারেন  বা লিখেন।চেনা জগতের অনেক বাইরের কথা।পাঠক তার নাগাল বা  স্পর্শ পায়না খুব সহজে।আবার কেউ লিখেন খুব  জীবনঘনিষ্ট কিছু পক্তিমালা যা পাঠকচিত্তের খুব কাছাকাছি।পাঠক চাইলেই  স্পর্শ করতে পারে, ঢুকে পড়তে পারে কবিতার আদ্যোপান্ত শরীরে। একজন বিমুগ্ধ পাঠক হিসেবে স্বদেশ সেন আমার কাছে শেষোক্তদের দলে।তাঁর কবিতাগুলো পড়লে মনে হয়  এই কবিতার কোথাও না কোথাও আমিও আছি-- আছে আমার চেনা পৃথিবীর খন্ডাংশগুলো।খুব চেনা এক জগতের কথা বারবার উঠে এসেছে তাঁর লেখনিতে।যে পড়বে তার কাছেই এমন মনে হবে। ভাবের, প্রকাশের এই সার্বজনীনতাকে অত্যন্ত সফলভাবে পরিস্ফুট করতে পেরেছেন  তিনি।
কবিতাতো জীবনেরই কথা । খুব শিল্পিত  অলংকারে ।রোম্যান্টিক বাতাবরনে ।কবিতা উঠে আসে যাপিত জীবনের দোলাচল থেকে।এক সুগভীর , সুতীব্র জীবনবোধই কবিতার প্রেষণা।
                স্বদেশ সেনের কবিতা  একদিকে যেমন তীব্র জীবনবোধের ইংগিত , তেমনি নিপুন শব্দবিন্যাসের এক সার্থক প্রয়াস।কবিতাগুলো বিশিষ্ট হয়ে উঠে  আঙ্গিক নির্বাচনের মুন্সিয়ানায় , যথাযথ শব্দ এবং বাক্যের সফল প্রয়োগে  ; পাঠককে টেনে ধরে রাখতে সক্ষম হয় কবিতার ভেতরে।

   " জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে কেমন ক'রে ছাড়াছাড়ি হলো
    অথচ আমি বোঁটার উপর আঁকশির মতো কামড়ে ছিলাম
    হলুদ কোথায় আটকানো খশ্‌টে মাছির একটা  স্টিল ।
    দাম দাম শব্দ , ব্যাকফায়ার , দাঁড়ালো টি . এন্ড কো-র ম্যাক
    মাঠে গরু ঝুম বিস্ফোরণের মতো দৌঁড়
                                             দূরে গ্রাম ত্রিয়াং
    মৃৎভান্ডের মতো আমি ডাক দেই , সামনে স্লেট পাথর টিলা
    জল্লাদ ফিরিয়ে দিল নামের বদলা নাম আমার লালায় ভেজা
    কুর্চিপাতায় কুড়িয়ে নিল খাস ভৃত্য ।"

                                                ( জলপ্রপাত / স্বদেশ সেন )


কী অদ্ভুত আর তীব্র উচ্চারণ ! " কেমন ক'রে ছাড়াছাড়ি হলো/ অথচ আমি বোঁটার উপর আঁকশির মতো কামড়ে ছিলাম"--- এই কথাগুলো বুকের ভেতরে কী প্রচন্ড এক আলোড়ন তুলে ফেলে নিমেষেই।এইতো কবিতা! এটাইতো কবিতা ! আর এই যে বাক্যের এক নতুন ধারার বিন্যাস, ' মৃৎভান্ডের মতো আমি ডাক দেই ' অথবা  'জল্লাদ ফিরিয়ে দিল নামের বদলা নাম আমার লালায় ভেজা
    কুর্চিপাতায় কুড়িয়ে নিল খাস ভৃত্য ।'  এভাবে এই বাক্যটাও দেখি   'খশ্‌টে মাছির একটা  স্টিল  '  । কী অসাধারণ বাক্য বিন্যাস ! তাঁর সমসাময়িক কবিদের থেকে  সম্পূর্ণই আলাদা । নতুন এবং অভিনব।
      " গড়া ও বানানো নিয়ে কথা বলো
        তীব্র  হও  পুরনো হ'য়োনা ।
        নিজেকে নিজের সঙ্গে গুণ করো
        অন্তত আড়াই গুণ করো
        টেকনিক্যাল কুহকের মতো ।

                              ( নদীর মানে / স্বদেশ সেন )

 'টেকনিক্যাল কুহক ' ! অভিনব এক যুথবদ্ধতা।  ' তীব্র  হও  পুরনো হ'য়োনা ' । উনিও নিজে এই ছিলেন । তীব্র কিন্তু কখনো পুরনো নয়।

         "আপেল ঘুমিয়ে আছে ওকে তুমি দাঁত দিয়ে জাগাও
          নতুন ছালের নীচে রক্ত চেপে খেলা করে দাঁত
         সহজে, আপন মনে চরাচর শান্ত দেখে খুন হয়ে যায়
         আপেল ফুলের দিন শেষ হয়, বেড়ে ওঠে নির্বিকার দাঁত
        -  -----------------------------------------------
         ওকে তুমি খুন করো, টুকরো করো, লেই করে আনো
         চিহ্নহীন করে ভাঙো - কাজে লাগো ফলিক অ্যাসিড
         রেশম কীটের মতো আত্মপ্রতিকৃতি ভাঙো আর সুস্থ হও
         আপেল ঘুমিয়ে আছে ভোরবেলা - ওকে তুমি দাঁত দিয়ে জাগাও।

                                                     (আপেল ঘুমিয়ে আছে, স্বদেশ সেন)

  'রেশম কীটের মতো আত্মপ্রতিকৃতি ভাঙো আর সুস্থ হও' । অসাধারণ এক উপমা।

              স্বদেশ সেনের কবিতায় ভাব, উপমা এবং উচ্চারণের  ভঙ্গি বরাবরই  লক্ষ্যনীয়। দেখি, এই শব্দ নিয়ে তিনি নিজে কি বলেছেন ------------

"  শব্দের পাড়ায় আমি মাঝে মাঝে যাই  চরিতার্থ হতে
   ফিরে  আসি চরিত্র হারিয়ে একা লবংগের মতো
    মুখটাকে বুক  পকেটে গুঁজে
    অন্ধকারে
   গাছের মতন খুব কম্প ওঠে ভেতরে ভেতরে
   পুরনো বেলার গন্ধ
   সাবেরিয়া রে , কাহে মারো নজরিয়া , কাহে মারো
   আস্তে কড়া নাড়ি , বলি , ময়না , সুখ কি  কোথাও নেই ? "

                                                             ( শব্দের পাড়ায় / স্বদেশ সেন )


          শব্দের বিকারই তার গান 
          ফুটবে বলে ফুল এখন বিরতিতে আছে
         সচেতন হ'য়ে ফুটবে
         গন্ধনাদ হ'য়ে
         আমাদের সেই শব্দ বিরতিতে রাখো
         প্রাক- বিবাহ থেকে বিবাহকে ভাঁজ করে  তোল
         ভোজ্য যেমন ভাজা হয় পাশ ফিরে ফিরে
         কথা বলার ব্যাপারই যেমন বলে  যাওয়া
         প্রকৃত সেপটিপিন বন্ধ বলেই খুলবে
         বানানকে একবার বাঁধালেই শব্দ
         শব্দ যদি ওড়েটাই বানান।

                              ( শব্দের বিকার / স্বদেশ সেন )

     শব্দ নিয়ে  উনি  নিজে  খেলেছেন এক অনবদ্য খেলা । পুরনো শব্দবিন্যাসের ধারা ভেঙ্গে নির্মান করে  নিয়েছেন  এক  নতুন  বিন্যাসরীতি। এখানেই তাঁর স্বকীয়তা।


 তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে মানবিক  হাহাকারগুলোও খুব সাবলীল ভাবে ।

 যখন স্বদেশ সেন লিখেন,-------

    "---------হা-স্বপ্নে  কেঁদে ডেকেছি কোথায় আমার মা
আমি ভয় পাই ঝড়ে, ম্যান্ডোলিনে, মেঘের পেছনে মেঘ
                                যে কোন পথের পাশে ঝনৎকার............"

                                    ( উপত্যকা থেকে নেমে / স্বদেশ সেন)


এই পক্তিগুলো পড়তেই বুকের মাঝখানটায় কেমন যেন এক শিরশিরানি !   আমাদের সবার বুকের ভেতরে বেঁচে থাকে এক শিশু । যে --এমনকি বৃদ্ধবয়সেও ভুলতে পারেনা মায়ের চাহিদা।যখনই মুখোমুখি হয় জীবনের যেকোন প্রতিকূলতার , খুঁজে মায়ের আঁচলের নির্ভরতার ছায়া।যন্ত্রণায়। যুদ্ধে। তাঁর  এই পক্তিমালায়  সেই শিশুটি জেগে উঠে নতুন করে ।  মনে হয় এতো আমারই কথা।

                তিনি অনায়াসে লিখে গেছেন  চারপাশের জীবনযাপনের খুব স্বাভাবিক চিরাচরিত দৃশ্যাবলি। যাপিত জীবনের  চাহিদা-হতাশা  ।এবং ক্ষোভ।

 " আমাকে একটা কাজ দাও, যে কোন, যেমন তেমন একটা কাজ
  মাইরি-মেরি করে বলছি
  একটা কাজ দাও
  এই নিত্যদিনের   বানভাসি আর ভালো লাগছেনা  ।
  ----------------------------------------------------------------------------------------------

  শেষে কি জ্বালাবো তোমাদের সাজানো বাগান,
                                    টেরিন, মেহগিনি, ফুলবাড়ি
  আমি কি শেষপর্যন্ত জ্বলতে জ্বলতে দু'চোখের চামড়া খুইয়ে
                                  তোমাদের অন্দর মহলে ঢুকে পড়বো?

                                   
                     
                                                            ( শেষ  পর্যন্ত / স্বদেশ সেন)


       
" ধন্য বল ভাতের উপরে নুন
কোনদিন ফুরোবেনা ভাতের জন্য নুনের কাজ
একবিংশ শতকে এখনও  ভাত নিয়ে কাজ করতে হয় 
একটু মজ্জার ঝাল একটু লজ্জার টক নিয়ে
কত ভাত পায়নি আশাপুতুল মি-মি  "

                ( অত্যন্ত ভাস্কর / স্বদেশ সেন )



  কবিতা যে  শুধু হতাশার অথবা  বিরহের কথা বলে তাতো নয়।কবিতা স্বপ্নের কথাও বলে নবজন্মের কথা। নতুন করে বেঁচে ওঠার কথা। আশ্বাস  ; ফিনিক্সের মতো ছাই-ভস্ম থেকে উঠে এসে সোনালি ডানার ভরে নতুন উড়ালের । 

        " না হয় একটা ফুল শুকিয়েছে  , দেখিসনি বাগানে অন্যান্য
                                                                             দৃষ্টরজা ফুল
          না হয় একটা তারা খসে গেছে ............এমন যৌবন সেও তো
                                                                নিঃশ্বাস ফেলে চলে যায়
         পাঁজরায় কোথায় ফুটেছে একটা কাঁটা না বরফকুচি               
                           জন্মনাড়ীতে উপমা হয়ে ঊড়ে বসল একটা কাঠঠোকরা

        দীপ জ্বালতে একটা ফোস্কা যদি পড়েই
                             তাই বলে ঘর আঁধার করে চৌকাঠে বসবে? "


                                           
                                                                                     (পায়ে পায়ে / স্বদেশ সেন )

  হতাশার মাঝে তিনি বারবার খুঁজেছেন  নতুন আশা ; ব্যর্থতার বিকল্প ।


"আমি সূর্য  ডুবলে খুঁজি কোথাও এক টুকরো খাদির চাঁদ
চাঁদ ডুবলে এককণা খনিজ তারা ।
আমি ঈশ্বরের কাছে গচ্ছিত রেখে যেতে চাই
                 জল  মরু ও সীমূম
                 পাপ  ঈর্ষা   পুরীষ
পত্রমোচীবনের মতো মনোনিবেশ থেকে পালিয়ে
কাউলের নিঃসঙ্গ ঘোড়া যেমন নেফা থেকে
আমি সেই উপত্যকা থেকে  নেমে
একবার উরুত বাজিয়ে তরানা গাইতে চাই ।"

                                   ( উপত্যকা থেকে নেমে / স্বদেশ সেন)


  এই যে কথাগুলো ----" না হয় একটা ফুল শুকিয়েছে  , দেখিসনি বাগানে অন্যান্য
                                                                             দৃষ্টরজা ফুল" 

  অথবা
"আমি সূর্য  ডুবলে খুঁজি কোথাও এক টুকরো খাদির চাঁদ
চাঁদ ডুবলে এককণা খনিজ তারা ।"

এমন কথা যিনি লিখেন,তিনি কক্ষনো হতাশাবাদীদের দলে পড়েননা ।
তিনি জীবনের দৈন্যগুলোর কথাও বলেন, আবার এই অপ্রাপ্তি থেকে বেরিয়ে নতুন আলোকপথের অনুসন্ধানেরও ইংগিত দেন।


  কেমন ছিলেন কবি স্বদেশ সেন? ব্যক্তি অথবা  কবি হিসেবে?
কবি হিসেবে তাঁর যে পরিচিতি সেটাতো তাঁর কবিতা পাঠকেরাই বিচার  বা  মূল্যায়ন করবেন।
তবে একজন কবিতা পাঠক হিসেবে এটুকু বলতে পারি স্বদেশ সেনের কবিতা পড়তে গিয়ে আমার বিমুগ্ধ পাঠ বিঘ্নিত হয়নি কখনো । বরং বিস্মিত এবং আপ্লুত হয়েছি বারবার তাঁর লেখনীর নৈপুন্যে ।
ব্যক্তি স্বদেশ সেনের সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি ,
তিনি ছিলেন নিজের ভেতরে বাস করা একজন আত্মমগ্ন মানুষ।প্রচারবিমুখ। কোন ধরণের হৈচৈয়ের  মাঝে না থাকা একজন। আত্মমগ্ন  কিন্তু উদাসীন নন। নিজের চারপাশকে খুব ভালভাবেই দেখেছেন , পর্যালোচনা  বা পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিষ্ট  আন্তরিকতায়।যার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর লেখনিতে।এ ধরনের লেখার অপরিসীম মূল্য রয়েছে নিমগ্ন পাঠকের কাছে। বাংলা কবিতা যতদিন বেঁচে থাকবে। স্বদেশ সেনও বেঁচে থাকবেন  । বেঁচে থাকবে তাঁর কলম।

                       




        

           
                         
                                           
               












-----------------------------------------------------------------------------------------------------





                                
                                  












শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

ল্যান্ডস্কেপ



উজ্জ্বলঅনিন্দ্য সব ল্যান্ডস্কেপ থাকে শুধু স্বপ্নের ভেতরে
তুমি জানো
তোমার দেয়ালে  পুরোটা ঝুলবে
নাকি
এক খন্ডাংশ ।


শূককীট থেকে বেরিয়েই উড়ে যাচ্ছে প্রজাপতি
গাছের বাকলে ফেলে যাচ্ছে কালো তার ছায়া
এবং
একটি খোলস।
ডানায় কোন রঙ স্থির হবে সেটা অন্য প্রশ্ন ;
আলাদা।
কিন্তু
এইযে হুট করে খুলে দিলে রোদের বোতাম
ছায়াটা কোথায় রইলো ?
ছায়ার পেছনে ছায়া
তার পেছনে------------------------------------


কাসকেটে জমিয়ে রেখেছি ধুলোছাই।





--------------------------------------------------------------------------------------------------------------

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

লোডশেডিংয়ের রাত



হৃৎপিন্ডে মাইডাসের স্পর্শ চাইনা।
জীবন্ত  হৃদয় কেন হবে শুধুমাত্র কঠিন এক স্বর্ণপিন্ড !
হৃদ্‌স্পন্দনের প্রতিটি শব্দ শুনতে চাই
আর
ছুঁয়ে দেখতে চাই
ছুরিকাঘাতে গড়িয়ে পড়া রক্তধারার উষ্ণতাটুকু।


জানালার দু'পাশের দৃশ্যাবলি আর একখন্ড আকাশ
সাথে নিয়ে, ছুটে যাচ্ছে দ্রুতগামী ট্রেন।
ক্রমশঃ মিলিয়ে যায় তীব্র হুইসেলের শব্দ ;
পেছনে পড়ে থাকে
পরিত্যক্ত প্ল্যাটফরমের দীর্ঘশ্বাস।

আজ সারাদিন খুব ঘুম ঘুম নির্জনতা
মেঘের মতো ছায়া ফেলেছিল।
বুকের ভেতরে খুব ছড়ানো ছিল ,ভিজে হাওয়ার কুয়াশা।
নীলখাতার কোথায়  কতোটা হয়ে গেছে আরো গাঢ়নীল
দেখতে চাইনি,
জানি
যতই খন্ডিত করা হোক আকাশ
নীল সেই নীলইতো ; প্রখর অথবা ম্লান।

এক ঘর অন্ধকারের গ্রাসের ভেতর
বাতাসের  প্রবল হতাশ্বাস বয়ে যায়
টুং টাং বেজে ওঠে আলো নেভা ঝাড়বাতি;

আলো জ্বলবে কি জ্বলবেনা
ভাবতে
ভাবতেই মনে পড়লো
আজ আবার এক তমসাঘেরা লোডশেডিংয়ের রাত।







শুক্রবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৪

এতোটা বিষাদ ছিল



এতোটা বিষাদ মেখে  না নিলে কোনদিনও জানা হতোনা
সব বিষন্নবিষ মুছে ফেলা যায় পাখির পালকে।

কোন মাঝরাতের ভয়াল কোলাহলে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
রাতজাগা পাখিটাকে খুঁজি ;
কান পেতে থাকি পাখসাটে।প্রিয় পাখি।

আজ আবার আকাশের মন ভার হলো খুব
তবু বৃষ্টি হলোনা ;
নিমের চিকন পাতায়, ডালে
 একরাশ ঝিরিঝিরি অন্ধকার নেমে আসে।
ছাদের আলসেয় একাকি বসে থাকা কাক
'খা, খা' চিৎকারে জানিয়ে দিল
তারও প্রিয় নয়  অবেলার এই বিষাদআঁধার ।

এতোটা বিষাদে ডুবে না গেলে কোনদিনও জানা হতোনা
সমুদ্রস্নানে সেরে যায় হাজার অসুখ ;
দেখা হতোনা--তরঙ্গচূড়ায় দুঃখগুলো কেমন সোনালি হয়ে ওঠে,
স্রোতে মেশা এমন বেলির সুবাস ----চেনা হতোনা।

এতোটা বিষাদ ছিল বলেই
আবার ফিরে আসা ;
প্রিয় পাখি এবং সমুদ্র---------------------------------------------







-------------------------------------------------------------------------------------------

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০১৪

আকাশ জুড়ে শুনিনু



            চাঁদ উপুড় ঢেলে দিল  মায়াবী জ্যোৎস্নার অঝোর ধারা।প্রবলসমুদ্রের ঢেঊয়ের মতো সবুজ চাঁদনীর লহর খেলে যায় নুনপোড়া ক্ষত ভিজিয়ে দিয়ে।তাই হোক। সমস্ত নুন সাগরের নুনে মিশে ঝরে যাক।

   হতাশ্বাসের নীল হুতাশনে চারপাশ পুড়িয়ে ফেলার আগেই নিজের জন্য তৈরি করে ফেলতে হয় একটি চাবুক।যেন নোনাধরা দেয়ালে  খুঁজতে নাহয় কোন হারিয়ে যাওয়া প্রতিচ্ছবি।কেবল নাম হয়ে বেঁচে থাকা কোন মুখের আদল।বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া আর্তনাদগুলো বুমেরাং হয়ে বারবারইতো ফিরে এসেছে।আর বাতাসের মীড়ে মীড়ে তৈরি করেছে হাহাকারের নবতর শব্দাবলি।কতোবার............................................................

                  দূরাগত জাহাজের ভেঁপু বেজে ওঠার  আগেই কেন যে এক অর্থহীন ডুবসাঁতারে মাঝসমুদ্রে পৌঁছে যাওয়া ! সেইতো সৈকতেই ফিরে আসতে হয়। কোন মানে হয়না ।অথবা এ এক প্রতিযোগিতা নিজের ছায়ার সাথে। ছায়াকে অতিক্রম  করে যাবার  বোকাদুঃসাহসিকতার এক আবেগতাড়িত লোভ।শেষপর্যন্ত ভেংচি কেটে ছায়াটাই এগিয়ে যায়। যা স্বতসিদ্ধ। স্বাভাবিক। ছায়াকে অতিক্রম করা যায়না।অনুসরণ করা যায় মাত্র।ছায়াটাও সত্যি। আপন অস্তিত্বের মতোই।আমরা ভুলে থাকি । আমরাই..........................................


          এইযে সমুদ্র আর আকাশের মাঝখানের ফাঁকের হিসেবটা, দুরত্বের উদাহরণ হয়ে আছে  যুগ যুগ ধরে --এ এক মিথ্যে উদাহরণ।আকাশ আর সমুদ্রের মতো পরস্পরের এত কাছাকাছি , পরস্পরের এত আপন আর কিছুর তুলনা চলেনা। সারাক্ষণ মুখোমুখি তাকিয়ে থাকা।আর কে পারে এমন!সময়ের পরিক্রমা শেষ হয়ে গেলে আকাশ তার সূর্য আর চাঁদকে পরম নিশ্চিন্তে রেখে দেয় সাগরের নিরাপদ কোলে।সাগর যেমন তার সব জলকণা তুলে রাখে আকাশের মেঘের ভেলায়।সবকিছু এভাবেই । সব। সব।অথচ আমরা দেখছি অন্যরকম। দেখছি দুরত্ব। খুঁজছি বিরহ। তাদের অন্তহীন মিলনের গান সহজে ধরা দেয়না আমাদের কানে।

            জলের সিঁড়ি ভেঙ্গে ভেঙ্গে  তলিয়ে যাচ্ছে মাছ। আবার ভাসছে কানকোর ঝাপটায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের স্বভাবগত প্রয়োজনীয়তায়।জলইতো মাছের একমাত্র বিচরণক্ষেত্র। কখনো সমতলে ,কখনো অতলে।আবার জলের বিলাসও  মাছইতো।
   কোন কোন গ্রন্থিবন্ধন এমনি----জল আর মাছের মতো । আকাশ আর সমুদ্রের মতো। এমনি কাছে অথবা দূরে।

" আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে        তোমারি নাম----------"

কার নাম? কার?

সে শুধু সমুদ্রের।






----------------------------------------------------------------------------------------------------------------

     

বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

ইউফোরিয়া



              শেষরাতে যখন চন্দনবনের পাপিয়া ডেকে ওঠে , 'পিউ কাঁহা, পিউ কাঁহা ' বোলে ;এক অদ্ভুত- অলৌকিক সৌরভে প্লাবিত হয়ে যায় এই ঘর।মনে হয় যেন হাজার বছর এই সুগন্ধটুকুরই অপেক্ষায় ছিলাম।সারা ঘর আঁতিপাঁতি করে খুঁজতে থাকি সেই মহার্ঘ্য ফুলদানিটি , যেখানে সাজিয়ে রাখা যায় এই বহুমূল্য পারফিউম ; যা প্রবাহিত হচ্ছে শরীরের রন্দ্রে রন্দ্রে যুগপৎ আগুন এবং জলের মতো।
              এক অদ্ভুত বিভঙ্গে নেচে যায় দোলনাঘরের পরী।ঠোঁটের কাছে ধরে রাখা পানপাত্রে মোহময় অমৃত।

                   মন খুব ভাল আজ ;সবুজ ঘাসের বুকে নেচে যাওয়া আরো প্রগাঢ়সবুজ ফড়িংয়ের মতো ।

একটি বহুবর্ণ প্রজাপতি উড়ে যেতে যেতে হাতের তালুতে এঁকে গেল পিতলরং শুভেচ্ছাবাণি। মন খুব ভাল।

রংধনুর ছবি



রংধনুর গায়ে হাত রেখে
আবার জুড়ে দিচ্ছি সূর্য  বিচ্ছুরণের আলো
 এবং জলকণাগুলো।

ধনুকের ছিলা থেকে ছিটকে গিয়েছিল  যে রঙ,
ছড়িয়ে গিয়েছিল মেঘের আনাচকানাচে ;
আবার ফিরছে তারা বর্ণচ্ছটার আলোকিত উৎসবে।

মানুষ জল ভালবাসে ,ভিন্নার্থে তরল।
এই যে গ্লাসে গ্লাসে ঢালা হচ্ছে রক্তাক্ত পানীয়
এবং আইসকিউব ;
কারো কারো চুমুকের সাথে ভেসে উঠবে স্বদন্ত হাঙ্গরের ছবি
তবু
ভয় চেপে রেখে নিঃশেষে পান করে নেবে সবটুকু ফেনিল অমৃত।


মানুষ জল ভালবাসে
তবু
জলের গন্ধ চেনেনা হরিণের মতো। বৃথাই
রংধনুর প্রতিচ্ছবি খুঁজে ঝর্ণার স্রোতে।



-------------------------------------------------------------------


শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

অচিন্ত্য প্রেমের হরিণ (Gacela of Unforseen Love)



কেউ বুঝতে পারেনি তোমার জরায়ুর
গাঢ় ম্যাগনোলিয়ার সৌরভ।
কেউ জানতোনা তুমি দাঁতের ফাঁকে সয়েছিলে
ভালবাসার একটি হামিংবার্ড তাও।

তোমার কপালের শশীকলার সাথে খোলাপ্রান্তরে
ঘুমিয়ে পড়েছিল সহস্র ক্ষুদে পার্সিয়ান ঘোড়া,
তুষারের শত্রু,
যখন চার রাত তোমার কোমর রেখেছিলাম আলিঙ্গনাবদ্ধ করে।

প্লাস্টার এবং যূথিকার ফাঁকে তোমার চকিতচাহনি
ছিল একটি বিবর্ণ বীজশাখা।
তোমাকে দেবার জন্য আমার হৃদয়ে খুঁজেছিলাম 
 গজদন্ত অক্ষরগুলো যা বলে, "সিয়েমপ্রে" ,
"সিয়েমপ্রে ","সিয়েমপ্রে" :  আমার নিদারুণ যন্ত্রনার উদ্যান,
সর্বদাই ধরাছোঁয়ার বাইরে তোমার শরীর,
আমার মুখবিবরে তোমার ধমনীর ওই রক্ত,
ইতিমধ্যেই তোমার মুখগহবর আলোহীন
আমার মৃত্যুর জন্য।

Federico García Lorca


------------------------------------------------



সোমবার, ২১ জুলাই, ২০১৪

তিমিশিকারির হার্পুন




শেষরাতে ঝিঁঝির গুনগুন সুর থেমে গেলে
এক উত্তাল সমুদ্রের ছবি আঁকি।

সম্পূর্ণ ছবির জন্য চাই আরো গাঢ় নীল রঙ
আরো উন্মত্ত সমুদ্র দর্শন
চাই
উদগ্র মাতাল ঘোরের সন্তরণ, অশান্ত ঢেউয়ের চূড়ায়।


মাঝসমুদ্রের গভীরে নোঙ্গর ফেলেছে তিমিশিকারির জাহাজ ।
হার্পুনে বিদ্ধ নীলতিমি ;
লাল রক্তস্রোতের ধারা মিশে গেছে নীল ঢেউয়ের লহরে ।

তরঙ্গনিনাদে বাজে শিকারের উল্লাস
আরো লক্ষ্যভেদি হার্পুন
আরো
আরো----- রক্তের ধারা।

এমন তীব্র উচ্চারণের ছবি আঁকতে চাইনি।
আঁকতে চেয়েছি সবুজ উপকূল ঘেষা এক শান্ত সাগরের ছবি
যেখানে
বালুকাবেলায় ঢেউগুলো রেখে যায় ভোরের স্নিগ্ধ স্পর্শআদর  ।


তুলিটাই
টেনে নিল এক প্রবল মাঝসমুদ্রে ;
যেখানে রক্তস্রোত আর হাঙ্গরের ভয়।





----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

ঘুমিয়ে আছেন শুভবোধের ঈশ্বর


রক্তলোলুপ ডাইনির কন্ঠে উচ্চারিত হয় কী প্রচন্ড দম্ভের বাণী !
---হ্যাঁ আমরা ওদের হত্যা করবো। হত্যা করা হবে ওদের মায়েদেরও।


কোথায় তুমি শুভবোধের ঈশ্বর?
কবে ভাঙ্গবে তোমার এই মরণঘুম?

সাম্রাজ্যবাদের থাবার নীচে ঘুমন্ত বিবেকের ঈশ্বর।
পিশাচের পায়ের নীচে সভ্যতা ঘুমায়।আর
শয়তানের প্রবল-প্রতাপ আরেক ঈশ্বর জেগে থাকে গাজার পশ্চিমতীরে
বারবার পূতিগন্ধময় কফিনের ডালা খুলে ডেকে তোলে ঘুমন্ত ড্রাকুলাগুলোকে।
খুব পিপাসার্ত তারা। শিশুরক্ত ছাড়া তাদের পিপাসা মেটেনা।
মায়ের গর্ভাশয়ে লালিত হচ্ছে যে শিশুর ভ্রুণ, তাকেও
হত্যা করছে তারা ; গ্যালন গ্যালন রক্ত টেনে নিচ্ছে
পচাগলা ঠোঁট ও ধারালো দাঁতের ফাঁকে। তবু তাদের পিপাসা মেটেনা।

মৃত্যু উপত্যকায় প্রাণভয়ে কম্পিত ওই  শিশুদের ভীতমুখে ফুটে উঠে
আমার সন্তান, আমার উত্তরাধিকারির প্রতিচ্ছবি ।
অবিরত তীব্র ব্যাথার ছোঁবলে ফালি ফালি হচ্ছে হৃৎপিন্ড।

এই শিশুকন্ঠের কান্না-আর্তনাদগুলো বাতাসের কালো পরমানুর সাথে মিলেমিশে
ঘোর অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে পৃথিবীর মুখ। কি করে মুছবে এই কলংককালিমা?


কবে ঘুম ভাঙ্গবে মানুষের? মানবতার? আদৌ ভাঙ্গবে কি?
অপেক্ষায় আছি---জেগে উঠো শুভবোধের ঈশ্বর। জেগে উঠো মানবতা।





বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

শর্ত


হাতগুলো এগিয়ে আসছিল
অসংখ্য হাত। ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের । তার সেসব হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডগুলো ।
ভিন্ন ভিন্ন শর্তের বাণীসহ।

পা ডুবল।আস্তে আস্তে কোমর। বুক-পিঠ।নেমে যাচ্ছে সমস্ত শরীর।তলিয়ে যাচ্ছে অথই জলের ঘুর্ণির ভেতরে।
শরীরময় জলজ কাঁটালতার  খোঁচা। ছিন্নভিন্ন হচ্ছে নগ্ন হাত-পা-বুক।জলের সমতলে ভেসে উঠছে গোলাপি বুদ্‌বুদ্‌। রক্তের।
কার বাড়ানো হাত ধরবে সে? আপাতঃ  সাহায্যের এই শর্তগুলোর মাঝে কোনটা বেছে নেয়া যায়!

আর আশ্চর্য্য এই জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তার আচমকা মনে পড়ল সেই গল্পটির কথা যা সে বারবার চেষ্টা করেছে
কাউকে বলতে । কিন্তু শুনার সময় ছিলনা কারো। সবাই এড়িয়ে গেছে ব্যস্ততার অজুহাতে।আসলে তারতো কোন বন্ধুই নেই।ছিলনা। আর অনেকেরই এমনি সব  গল্পগুলো  না বলাই  থেকে যায় জীবনভর।বলা হয়না।একদিন চাপা পড়ে মাটির নীচে অথবা আগুনের অবশিষ্টাংশের মাঝে বিলীন হয়ে যায়।

আগ্রহী হাতগুলো তেমনি বাড়ানো আছে একটা লোভ ,একটা প্রত্যাশার ব্যাকুলতায়।প্রতিটি হাতেই একটি অথবা একাধিক শর্তের দাবী।

কোনটা? কোনটা?

রক্তের গন্ধে ছুটে আসা জলজদানব কুমীরটা টেনে নিচ্ছিল আরো গভীর জলের ভেতরে।  ভয়াল মুখগহ্বরের বাইরে বের হয়ে থাকা তার বাদামী দুইটা হাত তখনও নড়ছিল শর্তের দ্বিধাগ্রস্থতার ভেতরে।



-------------------------------------------------------------------------------------------------------




শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

অন্ধকার মৃত্যুর হরিণ (Gacela of the Dark Death)

এই  আপেলগুলোর স্বপ্নে আমি ঘুমুতে চাই,
 সমাধিক্ষেত্রের কোলাহল থেকে উঠে এসে।
 ওই শিশুটির স্বপ্নে আমি ঘুমুতে চাই
  যে উত্তাল সমুদ্রে ছিন্ন করতে চেয়েছিল তার হৃদয়।


মৃতদের রক্তক্ষরণ হয়না একথাটি আর শুনতে চাইনা,
ওই যে গলিত মুখগুলো যায় জলের সন্ধানে,
 আমি শিখতে চাইনা  ঘাসের এই নির্যাতন,
দেখতে চাইনা ভোরের আগে কর্মচঞ্চল চাঁদের সর্পাকৃতি মুখ।

কিছুক্ষন ঘুমুতে চাই
কিছুক্ষণ ,এক মিনিট, এক শতাব্দী;
কিন্তু সবাইকে অবশ্যই তা জানতে হবে আমি মরে যাইনি ।
যেহেতু আমার ঠোঁটগুলোতে স্বর্ণখন্ড
যেহেতু আমি ওয়েস্ট উইংয়ের এক ক্ষুদে বন্ধু
যেহেতু আমি আমার কান্নার তীব্র ছায়া।

ভোরে আমাকে ঢেকে রেখো একটি আচ্ছাদনে
কারণ ভোর আমার দিকে ছুড়ে দেবে মুঠোভর্তি পিপীলিকা,
এবং আমার জুতোগুলো ভিজিয়ে দিও খর জলে
যেন পিছলে যেতে পারে বৃশ্চিকের চিমটিগুলো।

যেহেতু আমি আপেলগুলোর স্বপ্নে ঘুমুতে চাই
শিখতে চাই সেই আর্তনাদ যা আমাকে শুচি করে দেবে মৃত্তিকার সাথে ;
যেহেতু আমি থাকতে চাই ওই তমসাচ্ছন্ন শিশুটির সাথে
যে তার হৃদয় ছিন্ন করতে চেয়েছিল উত্তাল সমুদ্রে।


Federico García Lorca

 
 
 

যে নগরী ঘুমায়না (City That Does Not Sleep)


আকাশে কেউ ঘুমায়না  । কেউনা, কেউ নয়।
 ঘুমায়না কেউ ।

 চাঁদের প্রাণিগুলো  ঘুরছিল আর শুঁকছিল তাদের কুটীরের চারপাশ।
 যে লোকগুলো স্বপ্ন দেখেনা তাদের কামড়ে দেবে এসে  জীবন্ত গুঁইসাপ ,
এবং ভগ্নহৃদয়ে পালিয়ে যাওয়া লোকটাকে পাওয়া যাবে রাস্তার মোড়ে তারাদের মৃদু প্রতিবাদের শান্ত তলদেশে অবিশ্বাস্য কুমিরগুলো ।


 ঘুমায়না কেউ পৃথিবীতে।কেউ নয়,কেউনা।
কেউ ঘুমায়না।

দূরের এক সমাধিতে একটি শবদেহ

পুড়ছে তিন বৎসর ধরে
  কারণ তার হাটুর নীচে একটি  গ্রামীন শুষ্ক ভূমি
এবং  যে সকালে  তারা সমাধিস্থ করেছিল ওই ছেলেটিকে কেঁদেছিল অনেক
তাকে শান্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল কুকুরগুলোকে ডেকে  পাঠানোর।

জীবন একটি স্বপ্ন নয়, সাবধান! সাবধান! সাবধান!
আমরা সিঁড়ি থেকে নেমে যাই ভেজামাটির স্বাদ অনুভবের জন্য
অথবা আরোহন করি বরফের ক্ষুরধার প্রান্তে মৃত ডালিয়ার কন্ঠস্বরের সাথে।

কিন্তু বিস্মরণ বলে কিছু নেই , স্বপ্নও নেই।
 অস্থিত্ব আছে মাংসের।নতুন একগুচ্ছ শিরায়
চুম্বন আমাদের মুখগুলোকে জুড়ে রাখে,

এবং  এই ব্যাথাকে যে জেনেছে সে আজীবন জেনেই যাবে
এবং  আজীবন মৃত্যুকে বহন করবে তার কাঁধে যে  ভয় পায় সে ।

একদিন
ঘোড়াগুলো বাস করতে আসবে পান্থশালায়
এবং ক্ষিপ্ত পিঁপড়েগুলো
নিজেদের নিক্ষেপ করবে  গরুর চোখে আশ্রিত হলুদ আকাশে।

একদিন
আমরা সংরক্ষিত প্রজাপতিগুলোকে দেখবো মৃতদেহ থেকে উঠে আসতে
 কিন্তু তখনও হাঁটছে  ধুসর শৈবাল এবং স্তব্দ নৌকার রাজ্যে।
আমরা দেখবো আমাদের আংটিগুলোর বিচ্ছুরণ এবং জিহ্‌বা থেকে গোলাপের ঠিকরে ওঠা।
সাবধান! সাবধান হও! সাবধান হও!

যাদের এখনো  আছে বজ্রপাত এবং নখরের চিহ্নগুলো,
এবং ওই ছেলেটি যে কাঁদে কোনদিন সেতু আবিষ্কারের গল্প
শুনেনি বলে,
অথবা ওই মৃত লোকটি যে  এখন  মালিক শুধু তার একটি জুতো এবং মাথাটার ,
আমরা অবশ্যই তাদের নিয়ে যাবো সেই দেয়ালের কাছে  যেখানে অপেক্ষায় আছে গুঁইসাপ
 এবং বিষধরেরা ,

যেখানে ভালুকের দাঁতগুলো অপেক্ষায় আছে,
 যেখানে অপেক্ষায় আছে ছেলেটির মমিকৃত হাত,
 শেষপ্রান্তে দাঁড়ায় উটের কেশরগুলো তীব্র নীল কম্পনের সাথে ।

 কেউ ঘুমাচ্ছেনা আকাশে।কেউ নয়,কেউনা।

ঘুমাচ্ছেনা কেউ ।
যদি কেউ বন্ধ করে তার চোখ
একটি চাবুক, ছেলেরা, একটি চাবুক !
খোলাচোখগুলোর  দৃশ্যচিত্র হতে দাও

এবং আগুনের যন্ত্রনাক্ত ক্ষত।
এই পৃথিবীতে কেউ ঘুমাচ্ছেনা।একজনও না,নয় একজনও ।
আমি এটা আগেই বলেছি।

কোন একজনও ঘুমাচ্ছেনা।
কিন্তু কেউ যদি রাত্রে তার মন্দিরে খুব বেশি শেঁওলার জন্ম দেয়,
 মঞ্চের চোরাদরোজাগুলো খুলে দাও সে যেন চাঁদনি দেখতে পারে
মিথ্যা পানপাত্রগুলো,বিষ,এবং রঙ্গমঞ্চের খুলি।


 Federico García Lorca










ভোরের আগে (Before the Dawn )




তীরন্দাজেরাও কিন্তু
প্রেমের মতো অন্ধ।


সবুজ রাতে
উষ্ণ লিলির নকশাচিহ্ন  রেখে যায়
তীক্ষ বর্শাগুলো।

চাঁদের কীলক
বিদ্ধ করে বেগুনী মেঘদল
এবং তাদের তূনীরগুলো
শিশিরপূর্ণ হয়।

হ্যাঁ,প্রেমের মতো
তীরন্দাজেরাও
অন্ধ!


Federico García Lorca

শিকল



অবশেষে তারা থামলো।
থামলো এসে এক বরফমোড়া প্রান্তরে। আর খোঁজতে লাগলো তাদের আপন আপন পথের নিশানা।তাদের চারপাশ ঘিরে বইছে সীমাহীন নিস্তব্দতার এক বাতাবরণ।মৃত্যুর মতো নিস্তব্দতা? আসলে কথাটা ভুল। মৃত্যুকেও ঘিরে থাকে এক ধরণের কোলাহল, হাহাকারের হৈচৈ ।
এই নীরবতাটা বরফের মতোই। শীতল। জমাট।তারা পাশাপাশি হাঁটছিল। পাশাপাশি। কাছাকাছি নয়।কেউ কাউকে না দিচ্ছিল স্পর্শের আশ্বাস ; না জাগাতে পারছিল সান্নিধ্যের আকাংখা ।তাদের পায়ের নীচে, মাথায়, সমস্ত শরীরে জড়িয়ে যাচ্ছিল হিমকুয়াশার গুড়ি গুড়ি কণা।ক্রমশ তারা হয়ে যাচ্ছিল আরো বেশি শীতল-ঠান্ডা দুই বরফ খন্ড।
         এভাবে কত ঘন্টা----বৎসর----যুগ--------শতাব্দী ধরে হেঁটে যাচ্ছে তারা? আর কেনই বা এই সঙ্গহীন সঙ্গ?
এখন তারা ভাবছিলনা এসব।দুজনেরই একধরণের তাড়া ভেতরে ভেতরে।একটা শেষ পথের অনুসন্ধানে ব্যস্ত তাদের চোখ।
শেষপর্যন্ত তারা যেখানে এসে থেমেছে ,সেখান থেকেই শুরু হবে তাদের ভিন্ন যাত্রার আয়োজন।
এই পর্যন্ত এসে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত নারীটি বসে পড়লো ধুলিমলিন সেই প্রান্তরের একপাশে।বললো,
------ " আর পারছিনা আমি। এখানেই থাকি। তুমি এগিয়ে যাও।"
পুরুষটি একটু ইতস্তত ফিরে তাকালো , তারপর এগিয়ে যেতে শুরু করলো। আর--- তারপরে --- আবার ফিরে এলো বা আসতে হলো।
 তাকালো তার পায়ের দিকে আর পকেটগুলো হাতড়াতে লাগলো একটা চাবির খোঁজে।

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতা

সারারাত মুঠোর ভেতরে জোনাকির আলো নিয়ে বসে থাকি
ভোর হলেই তারা সব মৃতদেহ ;
হাওয়ায় উড়ছে দীপাধারের শব।

মানুষ টের পায় ঠিক।
আর মৃত্যুর গন্ধ যত বেশি কাছাকাছি হয় ;
তীব্র ধাবিত হয় জীবনের দিকে

এবং নিজের অজান্তেই মৃত্যুবাসরের জন্য তৈরি করে এক
অনিন্দ্য ফুলের বাগান।


এখনো জীবন্ত ফেনার চিহ্ন লেগে আছে মৃতঘোড়াদের নালে,
পিঠে এখনো বাঁধা আরোহীর স্যাডল ।
পালিয়ে গেল যেসব ঘোড়সওয়ার
তাদের প্রাণহীন অশ্বগুলোকে পরিত্যক্ত ফেলে
তারা জানতনা প্রতিটি ঘোড়সওয়ারকেই হতে হয় দক্ষ তীরন্দাজ?
তারা কেন অস্ত্রহীন গিয়েছে
সেই জঙ্গলের পথে
যেখানে  ওৎঁ  পেতে আছে গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতারা?









বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

চলে যাবার ঠিক আগে



মনে হচ্ছে আচমকা কোথাও চলে যাবো । যেতে হবে।


প্রবল জ্বরের পায়ের কাছে শুয়ে আছে প্রাণঘাতি ভাইপার।
 মাত্র একটি ছোঁবলেই তুলে নেবে সমস্ত উত্তাপ, আর
উজাড় ঢেলে দেবে বিষথলির সম্পূর্ণ গরল।


চেনা-জানা পাখিদের চঞ্চুগুলো খুব আদরে মুখর
সবুজপাতায় অবিরল ঢেলে দিচ্ছে সোহাগঅমৃত ।
গোধূলিতে-- নীড়ের কোটরে ঢুকার আগেই
মাধবীর গোলাপিঘ্রাণ ঠোঁটে মেখে নেবে ; এবং মধুরঙ সুধা।


আমাদের মাতাল ঘোড়াগুলো
খুব অবজ্ঞায় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে সব খানাখন্দ ,
স্ফিত নাসারন্দ্র এবং মুখে শ্রান্তির ফেনা তুলেও
তুমুল ছুটে যাচ্ছে চিরহরিৎ উপত্যকার দিকে।
তাদের পায়ের নীচের ঘাসগুলো কেঁপে ওঠে বিস্ময়ের ত্রাসে ;
এ কেমন উন্মত্ত ছুটে চলা!

আরো তীব্র ছুটে যাক।
আরো।
আরো।
হ্রেষার ভেতরে বাজুক প্রচন্ড তূর্যনাদ ,আরো দুরন্ত হোক খট খটা খট
খুরধ্বণি ; থেঁতলে যাক তৃণগুচ্ছের আড়ালে লুকোনো বিষধরগুলো ।
দুমড়েমুচড়ে যাক স্বপ্নপ্রাঙ্গণের পথে সমস্ত আগাছা ।

আসলে এমন করে  যাবার কথা ভাবিনি কখনো
যেতে হবে---
ভাবতেই কালো চাদরের মতো এক আকাশ বিষাদ নেমে আসে ।
যেন ভোরের নীলিমা চিরে এক ঝাঁক পরিযায়ি পাখির
যুথবদ্ধ আর্তনাদের কোলাহল তোলে অনিচ্ছুক ফিরে যাওয়া।

ক্রমশঃ প্রিয় হয়ে ওঠা ব্যালকনি ;
রেলিং জড়িয়ে ধরা গোল্ডেনশাওয়ারের ঝাড়,
টবে ফোটা মল্লিকা , গোলাপ------------------
এদের দীর্ঘশ্বাস সাথে নিয়ে , যেতে  চাইনি কোথাও।

অদূর মাঠের অন্যপাশ থেকে জারুল-শিরিষের হিমনিঃশ্বাস ভেসে আসে ;
তারাও যে খুব আপন ; রঙের ঘোরলাগা বিকেলের সাথী।

তবু  চলে যেতে হবে।সারাক্ষণ পায়ে পায়ে ঘুরছে এক বিষাক্ত সরীসৃপ।

যেতে হবে।

তবে
এভাবে আচমকা কোথাও চলে যেতে হলে
বিষপিঁপড়ার কৌটাতে এক চামচ মধু ঢেলে দিয়ে যাবো।










----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

















 


বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

ভুল দরোজা এবং পুরনো অসুখ


এটা একটা ইয়েল-লক।
কিছুতেই  খুলবেনা ভুল চাবি হলে।

আবার দাঁড়িয়েছি এসে এক ভুল দরোজায় !

ফিরে আসে হাজার বছরের পুরনো অসুখ।
বেডসাইড ক্যাবিনেটের উপর
জলের বোতল,ঔষধের স্ট্রিপগুলো জমে জমে
স্তুপাকার।
এখানেই একদিন ছিল তীব্রলাল ফ্লাওয়ার ভাস ;
শুভ্র রজনীগন্ধার স্টিকগুলো ।

চাবিটা কি ভুল?
যেন অনন্ত অনন্তকালের মোচড় ;
এই চাবি --------------
 এই তালার ভেতরে।
কিছুতেই খুলছেনা।
নাকি দাঁড়ালাম এসে ভুল কোন দরোজায়?
অন্য কোন তালা!

এভাবেই মাঝে মাঝে কড়া নাড়ি ভিন্ন দরোজার।
জলতরঙ্গের মতো সুরেলা কলিংবেল বেজে গেলে,
বিরসজিজ্ঞাসু চোখে যে এসে দাঁড়ায়
সে আমার চেনা কেউ নয় । বুঝি
আবার দাঁড়িয়েছি এসে ভুল বাড়ীর,
ভুলমানুষের মুখোমুখি।

হাজার বছরের পুরনো অসুখ ফিরে আসে,
মুমূর্ষুশয্যায় শুয়ে শুয়ে দেখি জানালার বাইরে একখন্ড নীলাকাশ
বেগুনী মেঘেদের ওড়াওড়ি
দেখি-- দুই টুকরো মেঘ খুব কাছাকাছি এসে
কেন যে প্রবলবিরাগে দূরে সরে গেল ;
মেঘেদেরও তবে আছে অভিমান!
তীব্রপাখসাটের ধ্বণি তুলে একটি স্কাইলার্ক
হারিয়ে গেল  শূন্যগর্ভ আকাশের ভীড়ে
বিশাল নীলিমায় কেবল একটি কোলাহলের শব্দরেশ লেগে আছে।

মূঠোর ভেতরে ঘাসফুল।
জোনাকির আলো।
তবু যেন সহস্রযুগের পুরনো স্বপ্নেরঅসুখ ফিরে  আসে।
জ্যোৎস্নার ধারাপাতে কমলাআগুন ঝরে পড়ে ;
 আবছা ঘন্টাধ্বণিতে বেজে যাচ্ছে
 সাবধানবাণী--
এমন সুনসান চাঁদনির মাঠে হাঁটলেই পা'দুটো ঝলসে যাবে ।

নিজেকে দ্বিখন্ডিত করেছি কবে যেন
কত যুগ আগে !
অর্ধেক  তার বাউলের একতারা সুরে।
বাকীটুকু কোথায় হারালো আজ আর পড়েনা মনে ;
তবু
দুই নৌকায় পা--জীবন টলোমলো  জলসরোবর।

 জলসিঁড়ি দীঘির মাঝখানে ফোটা
 লালশালুকের ফুল,
আর নির্জন মাঠের পাশে
সেই স্ট্যাচু ; অচলপাথর। আজো মনে হয় ঠিক তেমনি আছে ,
তেমনি নির্বাক।
সারণিতে আজো  বেঁচে  আছে তার প্রতিচ্ছায়া !


এবং চাঁদটাও
কেন যে সময়ের নিয়ম মানেনা !
বারবার----------------------------------------
 আটপৌরে জীবনের ছন্দে খুব ভুল হয়ে যায়।
ওই চাঁদ--অবেলার
জানালায় এসে দাঁড়ালেই
গদ্যলেখার পাতাগুলো সব নিমেষেই কবিতা হয়ে ওঠে ।

হাজার বছরের পুরনো অসুখ ফিরে ফিরে আসে।
আবার দাঁড়াই এসে কোন ভুল দরোজায়।







------------------------------------------------------------------------------------------
 












 






























 




রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

চোখগুলো বেঁচে উঠুক


এমন নয় যে
চাঁদে হাত রাখলেই দুইহাত সোনালি হয়ে যাবে ;
বরং জ্যোৎস্নার তপ্ত আগুনে  পুড়ে যেতেও পারে।

সূর্যালোকে দাঁড়ালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে
রাতের আঁচড়ের দাগগুলো।
যখন
 হাসির আড়ালে মানুষ লুকিয়ে ফেলছে কান্নার চিহ্নগুলো ;
তখন
আমি বলছি---এটা হয়তো মৃতদের কোন শহর।

কখনো কখনো
মানুষের চোখগুলো মাছেদের মতো নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।
 যেসব চোখের দিকে তাকালেই শবদেহের কথা মনে পড়ে
কতটুকু বেঁচে আছে তারা?

একটি কালো দাঁড়কাক টেলিফোনের তারে
একবার ডেকে উঠতেই কে যেন বললো,
-----আজ কেউ আসতে পারে।
উত্তরকোণে কাক ডাকলে অতিথি আসে।

এমনধারা কাকতত্ত্বে বিশ্বাসী নই।
তবু--অপেক্ষায় থাকি-----কেউ আসুক।
আসুক।
আর উন্মত্তমৃদঙ্গের তালে জাগিয়ে তুলুক এই প্রাণহীননগরীকে।
নিস্পন্দ চোখগুলোতে একইসাথে ফিরুক
নোনাজল আর অক্ষরের কারুকাজ।



------------------------------------------------------------------------------------------------------

বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

উজানের দূরত্ব


 সব  খেলায় একজন রেফারি থাকবে এমন কোন কথা নেই ;
অথবা রেফারির হুইসেল ।
জলক্রীড়ায়তো নয়ই।
 যেমন-----নৌকাবাইচ।

কখনো নামিনি জলে ;
 ভয় ছিল খুব।

আর এখন----------
ট্রফি  শুধু জলশাসনের দক্ষবিজেতার ;
জেনেও
উড়িয়ে দিয়েছি সাদা পাল
আর এক অলৌকিক  বৈঠায় রেখেছি হাত।
জানিনা জল কেটে কতদূর যেতে পারি---------

এইযে আচমকা হুট করে নদীতে নেমে যাওয়া
এওতো এক ব্যাখ্যাতীত প্রবলঘোরের খেলা

 জিতি
 অথবা
 ডুবি
এভাবেই ভেসে যাবো যতদূর-----------------

 একবার ভাটিতে না গেলে, জানা হবেনা
 মাঝনদীর ঢেউয়ের সাথে উজানের দুরত্ব  কতটুকু।




------------------------------------------------------------------------------------------------------------




মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০১৪

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়




             রাত নেমে এলে গাছেরাও হিংস্র হয়ে উঠে।পাতাগুলো ছড়াতে থাকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

                 আমার যে কী হয়!রাত নামলেই ইচ্ছে করে কোন ঝোপালো গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে সারারাত পাতার বাঁশি বাজাই।যেমন বাজাতাম শৈশবের অলসউদাস দুপুরগুলোতে।বাজাই আর পান করি সোনালিজ্যোৎস্নার অমিয়দ্রাক্ষারস।

              আমার কোন আপত্তি নেই  রাতভর পাতার বিষাক্তনিঃশ্বাসে ফুসফুস ভরে নিতে।সারাদিন কত মানুষের ছড়িয়ে দেওয়া বিষ ঢুকে যায় শরীরের রন্দ্রে রন্দ্রে।আর শরীর সেই বিষগুলো নিতে নিতে হয়ে গেছে নীলকন্ঠ পাখি।কন্ঠনালীতে জমে আছে কালকুটের ভরা থলে।

                       হয়না। রাতগুলো থাকে লৌহদরোজার নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বন্ধী। দূরে থাকে গাছ। পাতার বাঁশি।
পাহাড়সমান অনতিক্রম্য বাধা অতি ক্ষুদ্র এক ইচ্ছেপূরণের পথেও!

           পুনর্জন্মবিশ্বাসী হলে আমি চাইতাম  খোঁপায় বুনোফুল গোঁজা এক পাহাড়ী আদিবাসি রমনীর জীবন।হ্যাঁ জন্মে জন্মে আমি এক নারীই  থাকতে চাই।কিন্তু সেই নারী এই নিগড়বন্ধী সমাজের কেউনা।জীবন হবে মুক্তবিহঙ্গের মতো, প্রজাপতির মতো স্বচ্ছন্দবিহারের। যে নারীরা অবগুন্ঠনের আড়ালে লুকোয়না তাদের নারীত্ব--------বিব্রত নয় লোভীচোখের নগ্ন-চাহনীতে।উৎসবের রাতে মহুয়ার নেশায় ঘোরমাতাল হয়।নাচে তার পুরুষের হাতে হাতে ধরে, পায়ের তালে তালে  তাল মিলিয়ে।ঝোরার জলে পা ডুবিয়ে বঁড়শিতে মাছ  ধরে।চুলে মহুয়ার ফুল গুঁজে ঘুরে বেড়ায় পাহাড়ীঝর্ণার মতো বন্ধনহীন।
        জীবনতো হবেই এমন সহজ আর অনাবিল।
               নিরিবিলি রাতে পাতার বাঁশি বাজানোর সুযোগহীন  জীবন আমার চাইনা।
এমন নয় যে এই বাঁশির সুরে তৈরি হয় কোন মোহনীয় আবেশ, বরং  খানিকটা বিকট অথবা উদ্ভট মনে হয় কখনো কখনো।কিন্তু বাজাতে পারলে প্রাণের  অফুরানস্পন্দনের শব্দ বেজে উঠে ঠিকই।
        এই ইচ্ছেপূরণের  ব্যর্থতাকে  আমূল গ্রাস করে ফেলে  সীমাহীন বিষাদের নীলঢেউ।আর সারারাত সেই উথালপাথাল ঢেউয়ের নাগরদোলায় দুলতে থাকে পৃথিবী। 
 
                      ঘুম আসেনা। ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী কেবলই পালিয়ে বেড়ায়।ছড়াগানের ছন্দে ছন্দে ঘুমে ঢুলু ঢুলু  সেই চোখ দু'টোই যে ফেলে এসেছি সহস্র আলোকবর্ষ দূরের শৈশবে ---- কেন যে বারবার ভুলে যাই! সেই মায়াভরা শিশুকাল আর ফিরবেনা । তবু হাতছানি দেবে। পিছু ডাকবে। আরো অনিদ্রায় অনিদ্রায় ভরে দেবে ব্যাকুল রাতগুলো।
         

             খুব চড়ামূল্যে কিনে নিতে হয় নিজস্ব নির্জনতাটুকু।আর এই মহামূল্য নির্জনতার ভেতরেই ঢুকে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল।নিজের সাথে কথা বলতে গেলেই শুরু হয়ে যায় চাওয়াপাওয়া যোগবিয়োগের অংক। জীবনতো কখনো শুরু হয়না কোন অংকের সূত্রে।তবে কেন এত হিসেবের মারপ্যাঁচ উঠে  আসে !কেন যে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও মনটাকে স্মৃতিশূন্য কিংবা একেবারে অনুভুতিশূন্য করে ফেলা যায়না ! কেন যে!


                                          বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না জীবনে কিছু পাগলামি না থাকলে।  এই এখন যেমন একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কুয়াশাভেজা ব্যালকনিতে বসে হি হি করে কাঁপছি।মনে হচ্ছে এর চাইতে আনন্দদায়ক আর কিছু ঘটেনি এই জীবনে। এমনকি এখন যদি আকাশভাঙ্গা  জ্যোৎস্না নেমে  এসে প্লাবিত করে দিতে চায় , তাকে বলবো--' এখন নয়। এখন এই জ্বরতপ্ত অন্ধকারনির্জনতাই আমার প্রিয়। আলো চাইনা '।

        যাপিতজীবন আর স্বপ্নের মাঝখানে এক রেললাইন ফাঁক।আজীবন পাশাপাশি তবু কেউ কাউকে ছোঁয়না ; কেবলই সমান্তরে ছুটে চলা  আকাশ আর সমুদ্রের মতো।

            দৃশ্যতঃ আমার কোথাও যাবার ছিলনা।
তবু চোরাটানে আবার এসে দাঁড়াই ইস্টিশনে । টিকেটকাউন্টারের জানালায় হাত বাড়িয়ে এক অচেনা গন্তব্যের টিকিট কিনে ফেলি।
সব যাত্রাইতো আর পূর্বনির্ধারিত নয়।







----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------








        


শুক্রবার, ২০ জুন, ২০১৪

আগুনের পাখিঃফিনিক্স


ভস্মস্তুপ থেকে আবার এসেছে উঠে, অবিনশ্বর আগুনের পাখী ;ফিনিক্স ।




প্রতিবন্ধী এক ঈশ্বরকে যুপকাষ্ঠে বলি দেবার পরে
যারা সন্যাসীর বাঘছাল দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিল ট্রাম্পেট
আর সেই প্রচন্ড ঢাকের শব্দ ছড়িয়ে দিয়েছিল বাতাসের পরতে পরতে
তারাও কি পথ ভুলে নেমে গেলো কালো এক অন্ধকার গুহার দিকে?
ভুল করে বন্ধ গুহার ঘুলঘুলি খুলে গেলে
অবাঞ্চিত রোদ
রবাহুত শব্দের হৈচৈ ওঠে।
বন্ধ গুহাই নিরাপদ।বন্ধই থাক।

যুগে যুগে মানুষ কেবল শুনেছে
আগুন উগরে দেওয়া পাহাড়ের কথা।
 লারারিয়ায় এখনো অঙ্কিত আছে ভিসুভিয়াসের সাপ।


তীব্র হুইসেলের শব্দে দোলে ওঠে জলসাঘরের ঝাড়বাতি ;
অস্থির আলোর রেখাপথ ধরে আত্মবিনাশকামী পতঙ্গ ওড়ে ।

অগ্নিরহস্যসন্ধানী পতঙ্গেরা
 বারবার সে রহস্য জানতে  চেয়েছে
কী এমন ক্ষোভে ভলকানোর আচমকা এমন তীব্র ফোঁসে ওঠা।


অবশেষে
সমস্ত জমাট বরফ গলে গেলে দেখা গেল
রক্তমাংস নয়-----রঙীন পোশাক মোড়া কংকাল ছিল।


জানালার পাশে ছাইবর্ণ মেঘ
ঈশানকোণের বার্তা নিয়ে আসে-----
ছায়াপথ ধরে আবার আসবে ফিরে কফিনবন্ধী ঘুঙুরগুলো ;
যারা এখনো খুলেনি নাচের পোশাক,
ভুলেনি কত্থকের  'তেরে কেটে ' মুদ্রার বোল
একে একে ফিরবে সব  নাচঘরের  বেলোয়ারীআলোর বাসরে।
আবারো
 অদ্ভুত জোনাকীর আলো থেকে আসবে উঠে সেই নৃত্যপটীয়সী  ময়ুরগুলো
যারা অবারিত জলনৃত্যের শ্রান্তিতে রঙীনপালক ঝরিয়ে দিয়ে
উড়ে গিয়েছিল অচেনা মেঘপথের উজানসন্ধানে।


আবারো নতুন আঁচড়ে আঁচড়ে বিক্ষত হবে সোনালিডানার রেখাচিত্রগুলো;
পালকে জলের ভার অসহ হয়ে গেলে
আবারো জন্মান্তরের পথে ফিরে যাওয়া ?






















মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০১৪

মেঘমল্লার বাজে

বাজে
 মৃদঙ্গ। মেঘমল্লার। ময়ুর পেখম।

কাম্যবৃষ্টি ঝরে।


বাঁশীতে বাঁধা ছিল মেঘমল্লারের সুর ;

তুই চাইলি বলে---------------

হাজার একর আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামিয়ে দিলাম।

তুই কেন ভিজলিনা তবু?

হায় পিপাসার্ত মানুষ!
বরফের চাঁই ভেবে আগুন জ্বালায় সাদা পাথরের নীচে ;
পাথরে পাথর ঘষে।
আর কখনো কখনো
এই পাথুরেধোঁয়া  থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ধুপসুগন্ধীঘ্রাণ
উড়ে আসে গন্ধবিভোর চকোরেরা ;
আগুনের আঁচে ছাই হয়।

খরার উজানে যেতে যেতে ছুঁয়ে ফেলি সমুদ্রের ঢেউ।
নোনাজলে গোড়ালি ডুবে গেলে,
চাইলাম----আকাশ আবার ফিরিয়ে দিক
সাগরের শুষে নেয়া জলকণারাশি।


আমার বাঁশীটা দিয়ে দিলে -------

তুই কি এমন বৃষ্টি নামাবি?






------------------------------------------------------------------------------------

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০১৪

বিঁধে আছে তীর এবং ভাঙ্গা কাচের টুকরো


পায়ে বিঁধে গেছে ভাঙ্গা কাচের টুকরো
রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে ড্যান্সফ্লোরে---------


নাচঘরে কেন এমন ছড়িয়ে দিয়েছো চূর্ণকাচ,
পাপড়ির নীচে গোলাপের কাঁটা?

আমারতো জানাই ছিল
পারশিগালিচার নীচে---রক্ত এবং কাচের টুকরো ; দুটোই লুকনো যায়।

রোজ ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি
সমস্ত শরীর জুড়ে বিঁধে আছে ঈর্ষার ছোট ছোট তীরগুলো।
যখন বিভোরঘুমে
বুকের ভেতরে পাখি, প্রজাপতি আর ঘাসফুল তুলে রাখি ;
কেউ ভালবেসে দিয়ে যায় তীরউপহার।


ইদানীং খুব সচেতনে
মানুষের ভাঁজকরা মুঠোর দিকে  তাকিয়ে দেখি
কখন কোন ফাঁকে গুপ্তনখরগুলো বের হয়ে আসে।


------------------------------------------------------------------------

সোমবার, ৯ জুন, ২০১৪

চাঁদ ডুবে গেলে



আমাদের একটা ছায়াঘর ছিল----
খুব রোদ্দুরের দিনে চুপচাপ পাতাঝরার শব্দ শোনার জন্য

তখন--
আবছাম্লান নীহারকণার মতো স্বপ্নেরা উড়ে উড়ে যেতো চারপাশে।


আমি রাতকে বলেছি আরো কিছুটা সময় থেমে যেতে ;
নীলজোনাকীরা যেটুকু সময়----------
সোনালীআগুন জ্বালিয়ে রাখে মুঠোর ভেতরে।
ঝিঁঝিপোকারা কথা দিয়েছিল কন্ঠে তুলে দেবে গুনগুন গুঞ্জরণের
ঝিনিকিঝিনি সুর।
খুব ভীরুতায় রাত বললো--
সেও থাকতে পারেনা চাঁদের পাহারা ছাড়া ;
চাঁদ ডুবে গেলে
সেও চলে যাবে।

থেমে গেল নক্ষত্রের সব কোলাহল।


চাঁদ ডুবে গেলে রাত নিভে যায় ।
কেনযে-------------------------





-------------------------------------------------------------------------------------------------




























রবিবার, ৮ জুন, ২০১৪

এক বৃদ্ধের গল্প এবং একজন কবি --বিষ্ণু বিশ্বাস

"' আমি নেই, হয়ত ছিলাম---"
এমন দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণে কে বলতে পারে এই কথা?একজন কবি ছাড়া আর কেউনা।যেখানে প্রতিদিন মানুষ সাড়ম্বরে জানান দিচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব ----আমি আছি ,আমি ছিলাম , আমি থাকবো।এমন নিঃশর্তে নিজের অস্তিত্বের প্রতি সন্দিহান হতে পারেন শুধুমাত্র একজন কবিই।কিন্তু এই মৃদু উচ্চারণই প্রবলভাবে জানিয়ে দেয় ---কবি আছেন , কবি ছিলেন।এই উচ্চারণ একজন কবির অহংকারের উচ্চারণ।শুধুমাত্র একজন কবিকেই মানায়।

  " ‘আমি নেই, হয়ত ছিলাম’, শুরু হল এইভাবে তার কথা।
সে মরে গেছে কি বেঁচে আছে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না তখন।
কে জানে, সে হয়ত শেষ থেকে শুরু করেছিল। তবে তার গল্প শুরু হলো সে সময়
যে সময়টিতে কেউ আমরা আর তৈরি নই এই গল্পটি শোনবার জন্য।"
( এক বৃদ্ধের গল্প/বিষ্ণু বিশ্বাস
২১/২২.১১.৯২ )

কী বিস্ময়কর! কী অদ্ভুত মিল নিজের জীবনের সাথে !
 হ্যাঁ কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের কথা বলছি। আশির দশকের কবি।
জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঝিনাইদহের বিষয়খালিতে (১৯৬২/২৯ মে)।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। '৮৫ সালে অনার্স শেষ করে চলে আসেন ঢাকায় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।নতুন জগৎ ।জীবনযাপন এবং কাব্যচর্চার নতুন পরিমন্ডল।শুরু হয় কিছুটা যেন এলোমেলো, এক বোহেমিয়ান জীবনযাপন। ।তবুও সময়ের সাথে মানিয়ে যায় সবকিছুই।লেখালেখি, আড্ডা, বন্ধুবান্ধব সবই চলছিল স্বাভাবিক।

ছন্দপতন ঘটলো ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার রাজনৈতিক ডামাডোলে।যার প্রভাবমুক্ত ছিলনা বাংলাদেশও।সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা উদ্ভুত এই হিংস্র পরিস্থিতি কবিকে বিপর্যস্ত করেছিল মারাত্মকভাবে।করেছিল আতংকগ্রস্থ।আজব আজব হ্যালুসিনেশনে ভোগতে থাকেন।ভীতচকিত হয়ে দেখতেন একটা সাদা গাড়ী  অথবা ছুরি হাতে কেউ একজন তাকে তাড়া করে ফিরছে।এইরকম ভীতিবিহবলতার মাঝে প্রায়ই উধাও হয়ে যেতে শুরু করেন মাঝে মাঝেই । আবার ফিরেও আসেন। এরকম সিজোফ্রেনিক অবস্থায় শুরু হয় মনোচিকিৎসা। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান একেবারেই ।চলে যান পশিমবঙ্গে।১৯৯৩ সালে। এরপর বহু বছর আর তেমন কোন খোঁজ পাওয়া যায়না তাঁর।খোঁজ মিলল সুদীর্ঘ আঠারো বৎসর পরে ।পশিমবঙ্গের বনগাঁয়ের আশেপাশে কোথাও আছেন তিনি এটুকু জানা গেল। যেখানেই হোক, আছেন যে এটাই আনন্দের এবং স্বস্তির।

তাঁর বন্ধুবান্ধবের কথা থেকে জানা যায় বিষ্ণূ ছিলেন খুব ফ্যাশন্যাবল ছেলে। জিনস্‌ ছিল তাঁর প্রিয়, শার্ট পরতেন ইন করে।আশ্চর্য ব্যাপার  হলো সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েও তিনি ভুলে যাননি নিজেকে গুছিয়ে রাখার অভ্যাস, ভুলে যাননি তাঁর একদাঘনিষ্ট বন্ধুদের নাম।এক প্রত্যক্ষদর্শী সুহৃদের কাছে জানা যায় আজো তিনি আগের মতই থাকেন সুসজ্জিত আর কেউ বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করে গড়গড় করে বলে যান বন্ধুদের প্রিয় নামগুলো।অর্থাৎ  তিনি আছেন স্মৃতি ও বিস্মৃতির এক নতুন জগতে। যা ফেলে এসেছেন পিছনে তা সম্পূর্ণ ধরে রাখতে না পারলেও পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেননি ,অতীতের কিছু অংশ আঁকড়ে ধরে আছেন গভীর মমতায় ।

 " থেমে থাক, লাল লাল বোতলে সৌগন্ধ স্থির
জলভারে
অপূর্ব অন্তর উৎসারিত শান্ত কান্ত জল
তোমাদের
আর নোনা হাড়ের আঘাতে ঝরুক আদর?
নোনা দাঁতে নোনা হাড়ে।
তারপরে
সাগরের অজানা গুহায় মানব আমি দাঁড়াব এসে
সম্মুখে তোমার তোমাদের
ঝর্ণাধারা
শাদা শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীত হবে
যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে।"
(রাতের সঙ্গীত/বিষ্ণূ বিশ্বাস)


জীবন থেমে যায়নি ঠিক ।তবে থমকে আছে। প্রায় চলৎশক্তিহীন। এই থমকে যাওয় জীবন আবার চলতে শুরু করবেতো?"ঝর্ণাধারা /শাদা শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীত হবে /যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে" । আকাশের নীলচোখে ভোর হোক।কবির জীবন বয়ে যাক ঝর্ণাধারা হয়ে ,শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীতে।



কবি কি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ? '৯২ সালে লেখা  এক কবিতায় লিখছেন, ' আমি নেই ,হয়ত ছিলাম', আর ঠিক এক বৎসরের মাথায়ই হারিয়ে গেলেন, নেই হয়ে গেলেন। ' আমি নেই ,হয়ত ছিলাম'  বাক্যটা আর 'এক বৃদ্ধের গল্প' হয়ে রইলনা।হয়ে গেল কবির নিজস্ব উচ্চারণ।

 এই কবিতা যখনকার কবি তখন হয়ত ভোগছিলেন অস্তিত্বহীনতার সংকটে।এই থাকা অথবা না থাকা ধরে নিতে পারি নিজেকে নিয়ে একধরণের দ্বিধাগ্রস্থতা--নিজের গুরুত্ব-অগুরুত্ব নিয়ে।এই দ্বিধাদ্বন্দ নিয়তই আলোড়িত করে মননশীল মানুষকে।কী আমার অবস্থান অথবা আমি কতটুকু প্রয়োজনীয় অন্যদের কাছে--এই কৌতুহল মানুষের মাঝে খুবই প্রবল।বিশেষ করে একজন কবির কাছে।কবি থাকেনইতো নিজস্ব অস্তিত্বভাবনার জগতে ।নিজের এবং  চারপাশের  বাস্তবতা থেকে দূরে এক কল্পরাজ্যের সন্ধানে। এই পলায়নি মনোভাব থেকেইতো কবিতার জন্ম।কবি বাস্তবের হয়েও সম্পূর্ণ  বাস্তবের নন।

কে যেন বলে গেছেন --একজন কবির ভাবনা সমাজের সাধারণ মানুষের ভাবনার থেকে পঞ্চাশ বৎসর এগিয়ে থাকে। কাজেই এই প্রগতিশীল ভাবনার মাণদন্ডে প্রচলিত সমাজকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে গিয়েই কবি বারবার হোঁচট খান।সমঝোতা করাটা কখনোবা দূরুহতম হয়ে ঊঠে তার জন্য।আর তখনই ঘটে যায় বিপত্তি।সমাজ এবং কবিমানসের মধ্যে শুরু হয় এক অনিবার্য সংঘর্ষ--যাকে কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।ভেঙ্গে যায় মানসিকস্থিতির বাঁধ।নিজের সাথেই তখন নিরন্তর  যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত কবি কখনওবা পারেন স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে আসতে,  আবার কখনও ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেন ;খেই হারিয়ে ফেলেন ।বিষ্ণু এই যুদ্ধে হেরে গেলেন ।স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরা হলোনা তাঁর।

"তারপর দ্রুত ভিড়ের ভেতর কোথায় সে ডুব দিল
 কোনদিন, তারপরে, তাকে আমরা আর দেখি নি।"
 ( এক বৃদ্ধের গল্প/বিষ্ণু বিশ্বাস)

এতো নেহায়েতই 'এক বৃদ্ধের গল্প' নয়।এ যে কবির নিজেরই গল্প।অজানা অচেনা এক ভিড়ের ভিতর নিজেকে লুকিয়ে ফেলার গল্প।যাকে আর কেউ খুঁজে পাবেনা সুদীর্ঘ আঠারো বৎসর পর্যন্ত ; এমন সফল এক আত্মগোপন।এই আত্মগোপনে আর কার কি আসলো গেল জানিনা ,বড় হয়ে রইল একজন অমিত সম্ভাবনাময় কবির আত্মবিনাশের ইতিহাস।বাংলাসাহিত্য বঞ্চিত হয়ে গেল কিছু আসাধারণ পংক্তিমালা থেকে।

আশার কথা কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের খোঁজ পাওয়া গেছে। কিছু অসাধারণ মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে কবিকে আবার সুস্থ করে তোলা যায়। ফিরিয়ে আনা যায় তাঁর পরিচিত সাহিত্যের ভূবনে।
আশাকরি বিষ্ণু আবার ফিরবেন আমাদের মাঝে সুস্থ-স্বাভাবিক। বাংলা সাহিত্যভান্ডারে যোগ করবেন আরো নতুন কিছু অসাধারণ কাব্যশৈলি।

"এমন গল্পের কবি অন্ধ হলে সৃষ্টি স্থিতি লয়
নিশ্চিহ্ন আলোর সখা, তোমাদের শোনা কোন গান
পাথরে স্থির হয়েছে।"
( গল্পের কুমার / বিষ্ণূ বিশ্বাস)

এমন কবিতা গল্পের কবির অন্ধত্ব মেনে নেওয়া যায়না। " এমন গল্পের কবি " আবার চক্ষুষ্মান হও।ফিরে এসো আলোকের ঝার্ণাধারায়------'যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে '।

"শুধু মৃতদের গল্প কত আর কাঁধে ঝুলে যাবে
এবার নিষ্কৃতি পেলে, শান্তি অন্বেষণে মহাকাশে
গিয়ে, দু’টুকরো লোহা ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে দেব
অসহ অসীম শব পুড়ে হোক ছাই পুড়ে ছাই।"
( কালো মেয়ে / বিষ্ণু বিশ্বাস)

হ্যাঁ কবি --মৃতদের গল্পগুলো কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে , শবগুলো পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে শুরু হোক নবজীবনের গান। জীবন আবার ফিরুক জীবনের মতো।


এক বৃদ্ধের গল্প/ বিষ্ণু বিশ্বাস

সূর্য ধীরে নিভে গেল। আকাশে গোলাপি একটা রঙ আস্তে অন্ধকারে হারাল। এক
বৃদ্ধকে ঘিরে আমরা বসে আছি কিছু তরুণ তরুণী। বহুকালের প্রাচীন। ও আমাদের
কিছু বলবে ভেবেছে, অথবা,
আমরা কিছু শুনব অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা কোনো কথাই বলছি না।
তারপর একটি দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ- বৃদ্ধটির। নাভীপদ্মে সঞ্চিত যেন বহুকালের
গাঁজাময় গেজানো ধোঁয়া সে অসীমে ফুঁকে দিল।
‘আমি নেই, হয়ত ছিলাম’, শুরু হল এইভাবে তার কথা।
সে মরে গেছে কি বেঁচে আছে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না তখন।
কে জানে, সে হয়ত শেষ থেকে শুরু করেছিল। তবে তার গল্প শুরু হলো সে সময়
যে সময়টিতে কেউ আমরা আর তৈরি নই এই গল্পটি শোনবার জন্য।
কিন্তু শুরুতেই একটি প্রাচীন তরবারির কর্মসিদ্ধির কথা বলে, সে আমাদের থমকে
দিয়েছে। তারপর কবেকার ওর জীর্ণ ব্যাগ থেকে রাশি রাশি ঝরা পাতার মতো টাকা
-টাকা, একে একে, মুঠো মুঠো বের করল, আর তাতে আগুন জ্বালাল।
পৃথিবীর যতসব সুগন্ধি বৃক্ষের পত্র, পোড়া মাংস আর ধূপগন্ধের মতো,
চন্দন বনের হাওয়ায় কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেইসব।
আমরা আবার ব্যাকুল হলাম- কী বলে, শুনবো ভেবে ঠিক তখুনি
সে তার পলকা দাড়িতে কিছুক্ষণ হাত বুলালো, মাথা থেকে টুপিটি পকেটে নিল এবং
হাসল, তীব্র মৃদুস্বরে বলল, ‘এবার তোমরা’।
তারপর দ্রুত ভিড়ের ভেতর কোথায় সে ডুব দিল
 কোনদিন, তারপরে, তাকে আমরা আর দেখি নি।

২১/২২.১১.৯২












শনিবার, ৭ জুন, ২০১৪

এই ঘর ভুলানো সুরে

আমার কখনো পুরোটা পথ যাওয়া হয়না।
মাঝরাস্তার গোলকধাঁধায় আটকা পড়ে বারবার ফিরে আসি।
চলতে চলতে চাঁদের প্রাসাদ দেখে থমকে গেলাম।হাট করে খোলা ছিল জোৎস্না উঠোন।দুইদিকে দুই সিঁড়ি।একটা নেমে গেছে পাতালের পথে, অন্যটা সোজা আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে দুই হাত।যেন ধরে ফেলবে--ছুঁয়ে ফেলবে আরেকটুখানি  এগিয়ে গেলেই। এবং পাতালের সিঁড়িটা ---নেমে গেছে এক অনন্ত নির্জনতার পথে।
কোনদিকে যাবো? উত্তরণের সিঁড়ি যদি ভেঙ্গে পড়ে মাঝপথে অথবা পাতালের সিঁড়ি গভীরগহন এক অনন্তগহ্বরে ঠেলে দেয় যেখান থেকে আর ফেরা যায়না!এইসব ভাবতে ভাবতেই --বন্ধ হয়ে গেল সামনের দরোজা।সিঁড়ি নেই। দরোজাও নেই।নেই আর কোন গন্তব্য।
এটাই যখন স্বভাব হয়ে গেল --বারে বারে সঠিক পথের দ্বিধাগ্রস্থতা ; নিজেকে পথের মাঝেই ছড়িয়ে দিলাম।পথ যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানেই থেমে যাবো নাহয়।

রোজ ভোররাতে আকাশ থেকে নীল নীল যে ফুলগুলো ঝরে পড়ে,তার কোন নাম অথবা গন্ধ জানিনা আমি।
শুধু দেখি ফুলঝুরির মতো ঝরে পড়ছে থোকা থোকা আলোকরেনু।কোনদিন আমার হাতের মুঠোয় ধরতে পারিনি তার একটি কণাও।জানা হয়নি কেমন তাদের ঘ্রাণ অথবা উষ্ণতা।শুধু দূর থেকে দেখা সেই আলোর ঝলক ধরে রাখি চোখের স্মৃতিতে আর নয়নমণিতে সোচ্চার রাখি সেই বর্ণানুভব স্তবপাঠের মতো; হয়তো কোন একদিন ধরা দেবে সুগন্ধময় উত্তাপের সাথে।নিজেকেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে দেই আকাশ এবং সমুদ্রের সীমাহীন নীলে । কেউ কেউ হয়ত খুঁজবে এই নীলসমর্পনের পিছনে কোন এক অজানা রহস্যময়তা,ধিক্কার অথবা করতালির সুযোগ।তবে আমিও কখনো কোন সুযোগ রাখিনা রহস্যসন্ধানী টিকটিকিদের জন্য।


একবার এক খাঁচা বিক্রেতা আমাকে বলেছিল--খাঁচা  পাখির থেকে বেশী মূল্যবান একজন গৃহস্থের কাছে।পাখি যখন তখন ডানা ঝাপটায় ,হৈচৈ করে । পালিয়ে যেতে পারে সুযোগ পেলেই।খাঁচা চিরকাল স্থির ।গৃহস্থবারান্দার শোভা।আবার নতুন কোন পাখি পোষা যায়।পুরোনো খাঁচা। নতুন পাখি।নতুন বুলি।
সন্ধানে আছে ---কিন্তু এখনো দেখা পাইনি কোন পাখিবিক্রেতার যার কাছে জেনে নিতে পারি তার নিজস্ব হিসাবনিকাশ ।অবশ্য খাঁচা অথবা পাখিওয়ালা দুজনেই বলবে  নিজেদের মতো করেই ।এটাই নিয়ম।

পথ।
 দু'সারি গাছের মাঝখানে ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসা ছায়ামগ্ন একটা টানেলের ছবি,যা মিশে যাচ্ছে অনন্তের সাথে।দূরপাল্লার বাসে যেতে যেতে কতোবার দেখি এই দৃশ্য আর হারিয়ে যাই অনন্তবিভোরতার ভিতরে।

পথিক।
একতারা হাতে গৈরিকবেশ একজন ক্লান্তমলিন মানুষ।শ্রান্ত পায়ে হাঁটছে তবু একতারায় বাজিয়ে যাচ্ছে ঘরপালানো--ছন্নছাড়ানেশার সুর।

মানুষ নিজেইতো বাঁধে ঘর আর সেই ঘর থেকে পালিয়ে বেড়ায় অজানা পথেপ্রান্তরে।চারদেয়ালের আচ্ছাদনের ভিতরেও মনের গোপনকুঠরিতে লুকিয়ে রাখে এক বিবাগীবাউলের ছবি।দিগবলয়ের অন্যপ্রান্ত থেকে যখনতখন  ছূটে আসে যাদুকরী এক ঢাকের বাদ্য। সেই দূরাগত শব্দের টানে টানে ছুটে বেড়ায় দূর থেকে দূরান্তে।

ঘরের নয়, মানুষ হতে চেয়েছে আকাশের।মুক্তবিহঙ্গের মতো।  ভেবেছে  একদিন কোন জাদুমন্ত্রে তারও গজিয়ে যাবে দুইটা ডানা আর উড়ে বেড়াবে আকাশের অসীম নীলিমায়।
পাখি হতে না পেরেই  কি মানুষ বিবাগী হয়ে গেল!আকাশের না হতে পেরে পথের। ঘর ভুলানো সুরের  পথিক।





শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

অঝোরবৃষ্টি নামুক



 আজ এমন মনপোড়ানো চাঁদ উঠলো কেন?
জোৎস্নার তীব্রকলরবে ভেসে যাচ্ছে চরাচর।
চাঁদনি চাইনি।
বৃষ্টি চেয়েছি।

আজ এই শহরে অঝোরবৃষ্টি নামুক।
সবুজপাতারা সারাদিন বৃষ্টিপ্রত্যাশায় আছে।

বাচাল এক টুকরো ঝড়োহাওয়া নীপবনের গল্প শোনাতে এলে,
বলি--চুপ করে থাকোনা আরো কিছুটা সময়।
মেঘের ভেলায় চড়ে বৃষ্টিধারায়
নেমে যাবে একঝাঁক সাদা রাজহাস ;
কোলাহলে থমকে গেলে, ফিরে যেতে পারে।

যখন কাশগুচ্ছমেঘদল ভীড় করেছিল
কামিনীঝোপের মাথার উপরে ;দেখা হয়নি।
অন্যমনে ভাবছি তখন অঝোরবর্ষণের কথা।
এই অভিমানে জলরাশি দূরে সরে গেছে ; জানা হলোনা।

আজ তুমুল বেজে যাচ্ছে বৃষ্টিশৈশবের  স্মৃতিমেদুরতা।
ভীষণ দুলছে কাগজের নাও ;
অতলজলের দেশে মৎসকন্যা ;
নোলক হারিয়ে গেছে পাতালপুরিতে ;
প্রবলধারার ভেতরে রেনু রেনু ছড়িয়ে গেল ,
প্রথম কদমদিনের পাপড়িগুলো।

এক খন্ড অলস উড়োমেঘ খুব উদাসীনতায় ঈশানকোণের দিকে
উড়ে গেলে ---মনে হলো আজ আর বৃষ্টি হবেনা।
চাতকেরা  অভিশাপ ছড়াতে ছড়াতে দূরনীলিমার পথে
হারিয়ে গেলে
বাতাসের মীড়ে মীড়ে মিশে গেল বিষাদের সুর।

ধারামগ্নতায় জলপাহাড় গড়েছি আজ সারাটা বিকেল
ছড়িয়ে দিয়েছি ঘাসে ঘাসে
ফড়িংয়ের  ঠোঁটে ঠোঁটে সেই শুভসংবাদ পৌঁছে গেছে
গাছে গাছে, লতায়পাতায় ;
কেতকীকেয়ার ফুটি ফুটি কুঁড়িগুলো প্রতীক্ষায় আছে।
  আজ কেন তবে বৃষ্টি হবেনা?

আজ এই শহরে অঝোরবৃষ্টি নামুক।
রাতের আকাশ চিরে বেজে যাক জলঝরনামৃদঙ্গের তান ।







রবিবার, ১ জুন, ২০১৪

খেলা হার অথবা জিতের

কেউ কেউ পারে জলসূত্রি মেঘের ডানায় চড়ে রামধনুপ্রজাপতি হয়ে যেতে।
কেউ কেউ
ডিসটেম্পারড দেয়ালের ফ্রেমবন্ধী ছবি।

ড্রপসীন পড়ে গেছে ;
নাচঘর থেকে ফিরে যাচ্ছে নুপুরের সাথে যুদ্ধুক্লান্তপায়ের নর্তকীরা।
এওতো যুদ্ধজয়---ক্ষয়কাশ রোগীর মতো ধুকতে ধুকতে বিশুদ্ধনিঃশ্বাসে ফিরে আসা।
এওতো যুদ্ধজয়---বেয়াড়া বন্যার স্রোতেও পাড়ের লতাগুল্মে জড়িয়ে থাকা।

সংক্ষিপ্ত ট্রেইলারে লোভনীয় দৃশ্যক্রম।
ঠান্ডা ছবিঘরে সাজানো নায়কনায়িকা এবং চতুর কাহিনীবিন্যাস ;
কাটছাট ইতিহাস--সেলুলয়েডফিতের বাইরে।

প্রবল আবেগস্রোতে পেরিয়েছি দীর্ঘকুয়াশাভেজা হিমকালোমাঠ,
অন্যপাশে আলো আছে ভেবে।
আলো নয়
আগুনও নয়
মরীচিকা ছিল।
অনুচ্চারেই বাঙময় হয়ে রইল সব অনুযোগঅভিমান
তবু
বিহগদূতির  ঠোঁটে দিয়েছি তুলে ভাষাঅভিজ্ঞান।

রণক্ষেত্র থেকে দূরে,
ভিন্নপথের খোঁজে ,
ব্যস্ত হাতের মুঠোয় কেনযে আচম্বিতে ঊঠে আসে আগ্নেয়াস্ত্র

সংঘাত কেনযে এত অনিবার্য হয়ে ওঠে!

ঘড়ির কাঁটার সাথে পালটে যাচ্ছে রণকৌশল।আর
অবিশ্রান্ত যুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষয়ে যাচ্ছে আয়ু

কখনো একটু বিরামতো চাই

তবে-- সাদা পতাকাকে আত্মসমর্পনের ঝান্ডা ভেবে নিলেই
বিপর্যয় ; হিসেবের গরমিল।

যুদ্ধশেষের আবছা ঘন্টাধ্বণি বাজছে কোথাও?

কে হারলো?

জিতলো কি কেউ?



------------------------------------------------------------------------------------



বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

ছুরিটা ঝুলে আছে শূন্যে

মমিঘরে রাখছি তুলে নরম পাপড়িগুলো।

কিছুতেই মাতাল হবোনা আজ আর-----
ভাবতেই--দুই পা টলোমলো ;ভুল হলো নাচের মুদ্রায়।

যে সব তীক্ষফলা শূন্যে ঝুলে থাকে ; শূন্যেই মানানসই,
ঝলসানো রোদে শুধু রংধনুর বিভ্রম তৈরি করে ; লক্ষ্যভেদী নয়।
ট্রাপিজের খেলা দেখি ধুন্ধুমার সার্কাসঘরে
দড়ির এমাথা ওমাথা ঘুরে ঘুরে
সেই শুরুতেই ফিরে আসা-----' খেল খতম, পয়সা হজম' ।

হিমঘরে তৈরি আছে ঠান্ডা কফিন
চকমকি পাথর
এবং
ধারালো তলোয়ার।


শীতলনিদ্রায় যাবার আগে জেনে নিতে হবে
তীরগুলো কি শুধু পাখির বুকের মাপেই তৈরি হয়।







_____________________________________________________________









বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০১৪

একদিন কৃষ্ণচূড়া আড্ডার

" মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি
বাঁশি কই আগের মতো বাজেনা.........................."
আমাদের বাঁশি আগের মতো নাই বাজুক , ভারী ভাল লাগছিল শাড়ী পরে হাত ভর্তি চুড়ি ,গালে আলপনা আঁকা বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখতে।পরীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল একেকজন।হাতে নানা রংয়ের চরকি, বেলুন।
ভুভুজেলার মতো অসহ্য এই বস্তুটা কবে, কিভাবে যে এসে ঢুকলো এদেশে!বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো মহানন্দে বাজিয়েই যাচ্ছে । লোকজন মহা বিরক্ত হচ্ছে। একজনকে বলতে শুনলাম--- আইন করে এই জিনিষটাকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া দরকার।মনে মনে ভদ্রলোকের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ফেললাম তক্ষুণি।
খোলা মাঠগুলোতে বসেছিল  বৈশাখিমেলা।ফুটপাতগুলোও  ভরে ঊঠেছিল হরেক পণ্যসম্ভারে।ঐতিহ্যবাহী পিঠা এবং পান্তা-ইলিশ ছিল অস্থায়ী খাবার দোকানগুলোর অন্যতম আকর্ষণ।পান্তা-ইলিশে আমার অবশ্য তেমন কোন আগ্রহ নেই।তবে  পিঠা অবশ্যই অনেক বেশী পছন্দের।তাই খেলাম । আর ফুচকা।লেবুর সরবত।রাস্তাঘাটের খাবার বেশ পছন্দ করি। হাইজিন  মানিনা।আর হ্যাঁ রাস্তার খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছি কখনো ,এটা আমার শত্রুও বলতে পারবেনা।
 হ্যাঁ নববর্ষের কথাই বলছি।
এইতো সেদিন। মাত্রই মাসখানেক আগে রমনার বটমূলে বসেছিল বাংগালীর প্রাণের মেলা।বর্ষবরণ।পহেলা বৈশাখের আসর। নববর্ষকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই।
চারুকলার মনোজ্ঞ মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ ১৪২১ সালকে স্বাগত জানানোর পালা।
এরপরে বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন ঐতিহাসিক রমনার বটমূল চত্বরে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে।শোভাযাত্রার জন্য চারুকলার শিল্পীরা তৈরি করেছিল রং- বেরংয়ের মুখোশ এবং বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।রবীন্দ্রসরোবর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ  প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ,সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল নানা আয়োজন।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আমাদের যত ব্যাপক প্রস্তুতি, উদ্দীপনা, উল্লাস- আয়োজন, তেমনটি অন্য কোন উৎসব নিয়ে দেখা যায়না।এমনিতে বাংগালীর বারোমাসে তেরোপার্বন।সারা বছরই আমাদের উৎসব।হতে পারে তা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, কিন্তু প্রভাব থাকে সব ধর্মের মানুষের উপরেই।ঈদের বাজারে দোকানগুলো উপচে পড়ে ক্রেতার ভীড়ে , সে কেবল মুসলমান ক্রেতা নয়।হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-ক্রিস্টান সব ধর্মের মানুষই আছে সেখানে।পূজা-পার্বনেও তাই।সেরকম উপচে পড়া জনস্রোত দেখা যায় শারদীয়া পূজামন্ডপে।আড্ডা আর উৎসব প্রিয় বাংগালী সবধরণের উৎসবকেই  প্রাণভরে উপভোগ করতে জানে।
আর আমরা যারা একটু আধটু সাহিত্যচর্চা করি অথবা স্রেফ পড়তে ভালবাসি ;সারা বৎসর অপেক্ষা করে থাকি ঈদের বিশেষ সংকলনের সাথে সাথে কলকাতার পূজাসংখ্যাগুলোর।হাতে পাওয়ার পর কোনটা রাখি ,কোনটা আগে পড়ি --তাও এক সমস্যা বটে।
সে যাক। বলছিলাম পহেলা বৈশাখের কথা ।বাংলা নববর্ষ সর্বধর্ম নির্বিশেষে আমাদের একমাত্র সার্বজনীন উৎসবের দিন।এজন্য আমরা  প্রতি বছরই এই দিনটাকে দিতে চাই একটা নতুন মাত্রা।
বর্ষবরণে পিছিয়ে থাকেনা আমাদের গ্রামীণ জনপদও।বরং তাদের কাছে দিনটির গুরুত্ব  অনেক বেশী অর্থবহ।
শুভ হালখাতা বা সালতামামির দিন।নানা  বর্ণাঢ্য আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও পালিত হয় দিনটি।
আমার ছেলে বেলায়, আমাদের গ্রামের বাড়ীতে শুভ হালখাতার মিষ্টি খাওয়ার প্রচুর স্মৃতি আছে।
শুধুই বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ কেন, বিশ্বের যেখানে যত বাংগালী আছে ; এমনকি সুদূর পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার বাংগালী কম্যুইনিটিগুলো পর্যন্ত  নববর্ষ উদ্‌যাপন করে বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে।মানুষ যেখানেই ,যতদূরেই যাকনা কেন নিজের শিকড়ের টানকে ভুলতে পারেনা। ভুলতে পারেনা নিজস্ব সংস্কৃতি।
বরং তখন দেশ নাগালের বাইরে থাকে বলেই স্মৃতিকাতরতায় বিমর্ষ হতে হতে বিদেশের মাটিতেও তুলে আনতে চায় এক টুকরো স্বদেশ ;হলোই বা একদিনের জন্য।
" এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ ।
তাপসনিঃশ্বাসবায়ে   মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে ,
বৎসরের আবর্জনা  দূর হয়ে যাক ।"
গ্লোবালওয়ার্মিং এর জাঁতাকলে পড়ে ঋতুচক্রে ঘটেছে অদ্ভুত বিবর্তন।যতই বৈশাখকে আমরা ডাকাডাকি করিনা কেন কালবৈশাখি ঝড়জলে 'বৎসরের আবর্জনা' সব ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবার জন্য ; কালবৈশাখির সেই ঝড় আর আসেনা আগের মতো নিয়ম করে, ঠিক সময়মতো। পালটে গেছে তার নির্ধারিত সময়সূচি ।আবহাওয়ায় ঘটেছে ব্যাপক উলট-পালট।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ আমরা । তীব্রশীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে পড়ি  আবার অতিবেশী গরমও আমাদের কাম্য নয় কখনো। অভ্যস্ত নই।
এখন ঢাকাবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রচন্ড গরমে। ঢাকায় একদিনের তাপমাত্রা সূচক অনুযায়ী--৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঊঠতেই নাভিশ্বাস উঠে নগরবাসীর ;   ৫৪ বৎসরের  আবহাওয়ার রেকর্ড  পরীক্ষা করে দেখা যায় এ ধরণের উচ্চমাত্রার গরম ঢাকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিঃসন্দেহে সহ্যসীমার শেষপ্রান্তে বসবাস করছে নগরবাসী।তার উপরে আছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।
বৃষ্টি হচ্ছে ।সাথে ঝড়তুফান-শিলাবৃষ্টিও ; মাঝে মাঝেই ।কিন্তু গরমের প্রকোপ কমছেনা তাতে।দরকার ছিল ক'দিন টানা বৃষ্টির। তেমনটা হচ্ছেনা।ঢাকার  টুকটাক খুচরো বৃষ্টিগুলো কিন্তু খুব আজব ধরণের।হয়ত এই গলিতে বৃষ্টি হচ্ছে ,পাশের গলিতে তার ছিঁটেফোঁটা লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমন প্রায়ই হয়।বলতেই হয় ,ঢাকার বৃষ্টির ভুগোল জ্ঞান  নেই।
বৃষ্টি হবে আর একটু ভিজবোনা এমন হয় নাকি?আর কিছু না হোক বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁটের  মাঝে দাঁড়িয়ে হাতটা অন্ততঃ বাড়িয়ে দেবো অবিরল জলধারার আদর মেখে নিতে। বৃষ্টিপাগল কেউ বাসার ছাদে কেউ গলিতে নেমে  মেতে উঠে ধারাস্নানে।এইসব দৃশ্য খুব স্মৃতিভারাতুর করে ফেলে।মনে পড়ে  শৈশবের বৃষ্টিভেজা দিনের কথা।ধারাজলে অবগাহন। শিল কুড়ানো।কাগজের নৌকা ভাসানো।
 " আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়
অশ্রুভরা দুটি চোখ
তুমি ব্যাথার কাজল মেখে
 লুকিয়ে ছিলে ওই মুখ..............."
কাকে মনে পড়ে? মনে পড়ে নিজেরই হারানো শৈশব-কৈশোর।তারুণ্যের উচ্ছাস ভরা মায়াময় দিন যা কালচক্রে চলে যায় ব্যাথার কাজলের আড়ালে।
এই উত্তপ্ত দিন আর বৃষ্টির টানা-হেঁচড়ার মাঝেই ঢাকা নগরী রূপান্তরিত হয়ে গেছে পুষ্পনগরীতে।উদ্যানে, পার্কে, আইল্যন্ডে ,শহরের অলি-গলিতে  থরে থরে ফুটে গেছে গ্রীষ্মের ফুলগুলো।কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জারুল,  একাশিয়া,শিরিষের অপূর্ব রূপমাধুর্য্য থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল।
থরে থরে ফুটে আছে বেগুনি জারুল আর সাদা কুরচির ফুল। গুচ্ছ গুচ্ছ হলুদ সোনালু।আরো কত নাম না জানা পুষ্প-কুসুম।।ঘাসের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট ঘাসফুলগুলো ।রূপের মেলায় তারাও যে পিছিয়ে নেই এমন বুঝা গেল প্রজাপতি আর ঘাসফড়িংয়ের চঞ্চল ওড়াওড়ি দেখে।
ইটপাথর-হাইরাইজের নাগরিক যান্ত্রিকতা আর রোদঝলসানো দিনের হাঁসফাঁস  অবস্থা থেকে নগরবাসীকে খানিকটা স্বস্তি দিতেই যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে এক নয়নাভিরাম পুষ্পোদ্যান।সূর্যকিরণের প্রখর দাবদাহের মাঝে প্রশান্তির স্নিগ্ধ স্পর্শ।
ঢাকায় এমনকি মনে হয় সমগ্র বাংলাদেশেই সব থেকে বেশী যে ফুল চোখে পড়ে সেটা হলো কৃষ্ণচূড়া।যার অন্য নাম গুলমোহর।আকাশের নীচে চমৎকার এক লালমখমলের সামিয়ানার মতো মেলে দিয়েছে নিজেকে  আর আশেপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে  আলোক-রশ্মির মতো রক্ত লাল রংয়ের বিচ্ছুরণ।
" গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়
বনে বনে শাখায় শাখায়
কেন যায়? কেন যায়? "
 এমন ফুলের মাসে কি ঘরে বসে থাকা যায়?রোজ বিকেলের অবসরে,বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভীড় করছে  প্রকৃতিপ্রেমিরা ; উদ্যানে, পার্কে ।
 এর মাঝেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজসেবি সংগঠন   'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি' র  সদস্যরা( আমিও তাদের একজন) ,সংসদ ভবন সংলগ্ন   চন্দ্রিমা উদ্যানে আয়োজন করে ফেলল এক চমৎকার ' কৃষ্ণচূড়া আড্ডা' র।উদ্দেশ্য শুধুই ঘুরে বেড়ানো আর নির্মল আড্ডা।

আড্ডা দিতে আমরা কখনো পিছপা হইনা। সে ঘরোয়া আড্ডাই হোক বা খোলা আকাশের নীচে অনেক প্রাণের সম্মিলিত কলকাকলীতে।অনেকেই এলেন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে, অনেকে এলেন কোন বন্ধুকে সংগী করে।কেউবা একা একাই চলে এলেন সবার সাথে আনন্দমেলার অংশভাগী হতে।একটা বিকেল ভরে উঠল, পরিপূর্ণ হয়ে রইল অনেক কথার কলকাকলি--গুনগুনানিতে।
পড়ে থাক হাজারো আটপৌরে যন্ত্রণা। রোদতপ্ত দিন। জীবনের শত পাওয়া না পাওয়া হিসেবের খাতা। অন্ততঃ একটা বিকেলতো  ভরে রইল।  মন গেয়ে উঠল,
" জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
...............................................................
জয়ধ্বণি  শুনিয়ে যাবো  এ মোর নিবেদন" ।

___________________________________________________________________

বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

নীল ফিঙ্গে

বিকেলটা যখন খুব মৃদু পায়ে হেঁটে আসছিল
জলতরঙ্গের গুনগুন আবেশের মতো ;
মনে পড়লো অস্তরাগের কথা।

যে নদীর স্রোতে দোলে মেঘমালা কালোকাজলের মতো ;
ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে মেঘভারানত আকাশের ছবি ;
আমিও সে নদীর নাম রেখেছি-----কাজল নদী।

দীর্ঘবিষাদমগ্ন দুপুরের পরে
অপেক্ষায় থাকে স্নিগ্ধ জল ছলছল নদীকলস্বরা।

নদী যাচ্ছে বিকেলের কাছে-------
নাকি বিকেলটাই এগিয়ে আসছে !

আজ সারাদিন কেটে গেল একটা নীলফিঙ্গের খোঁজে ;
এই একটা নাম দিনভর বেজে বেজে গেল। জুড়ে রইল।

সে কোথায় থাকে?

খুঁজবো? 


----------------------------------------------------------------------------

কিচ্ছু যায় আসেনা




বারান্দায় কুকুরের লেজের মতো বাঁকা একটা ছায়া পড়ে আছে।

ক্লীব হয়ে যাচ্ছি।কিছুতেই যায় আসেনা কিছু।

সময়কে পাখির মতো খাঁচায় ঝুলিয়ে রাখি
খেয়ালখুশীমতো দোল খেয়ে যাক।

কিছুই যায় আসেনা।

উঠোনে ঝুলিয়ে রাখি পোড়ালাশ ,সার্কাসের ক্লাউনের মতো।
লাশের কি আসে যায় মানুষের বীভৎসউল্লাসে?

কি দরকার এতো প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের হৈ চৈ ;
মায়ের ছেলে যদি মাঝনদীতেই হারিয়ে যায় বাড়ী ফেরার পথে?

সময় হেঁটে যাচ্ছে তমসাচ্ছন্নজঙ্গলের দিকে,
সভ্যতার পোশাক আশাক খুলে ফেলে,
আদিমগুহার পথে হাঁটছে মানুষ।
অথবা
আস্ত একটা অন্ধকারবনই উঠে এসেছে জনপদে।পশুর অভয়ারণ্য।


লাল টেলিফোন পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো শীতাতপ ঘরে?
গহনঅরণ্য থেকে হা-মুখ অজগর আসছে ছুটে।
শুনতে পাচ্ছো? কিচ্ছু যায় আসেনা?

এখানে জীবন যেন জলে ভাসা তুচ্ছ খড়কুটো
যেমন তেমন ভেসে যাক বাতাসের তোড়ে,
হা-ঘরে মানুষগুলো বাঁচুকমরুক ;কিচ্ছু যায় আসেনা।



_______________________________________________________________


মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

ফেরাটা সহজ নয়

 অপেক্ষায় ছিল তিনরঙ্গা  তিনটি বিস্ময় এবং উলটে যাওয়া একটি চেসবোর্ড।



অবজ্ঞার ঢেউয়ের ভেতর ডুবসাঁতার কাটছিল যে মাছ ,
সেওতো পেরিয়ে গেল অর্ধেক নদী।
সন্তরণপটু মাছেরাও ধরা পড়ে নিকিরির সুনিপুন জালে।
ট্রলারটা এগিয়ে আসছে  মাঝনদীর দিকে..............................................

একটা ছেঁড়াখোঁড়া বারোয়ারিমেঘ উড়ে এসে জলে ছায়া ফেলে, প্রতিচ্ছায়া খুঁজে ;
আকাশেরও কম নয় আয়নাবিলাস।

বাড়ীটা ভীষণ ডাকে ;
টিনের চাল বেয়ে নেমে আসা ঝুরোঝুরো ঝুলে থাকা শ্বেতকরবীর ঝাড়।
বাড়ী----ভাবলেই
কলকলস্বরে বয়ে যায় স্রোতস্বিনীকুশিয়ারা, সুরমাসুন্দরী।
বাতাসের তরঙ্গে কাঁপে সবুজ ধানের ক্ষেত।

ফেরাতো সহজ নয় ;
একবার মাণচিত্র ভুলে গেলে।
কতবার ভাবি-----
পথের দু'পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে আসা নুড়িগুলো আবার
কুড়াতে কুড়াতে একদিন ঠিকই ফিরে যাবো। হয়না।

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

এক মাঠ বৃষ্টির ভেতর

দীর্ঘশ্বাসের অবশেষটুকু রেখে , দূরদিগন্তে ছায়াটা মিলিয়ে যায় ;
কুয়াশার মতো অস্পস্ট ধারাজলের ভেতরে।


কী যে প্রখর ফুটেছে জারুলসোনালু !পাতাগুলো লাজনম্র আবছা হয়ে আছে।
তীব্র কৃষ্ণচূড়া ; আকাশের নীচে সামিয়ানা পেতে অপেক্ষায় আছে
যেন এক্ষুণি শুরু হবে বর্ষামাঙ্গলিক
মেঘমল্লারের তালে তালে, নেচে যাবে একশ ময়ুর;
লালমখমলে
মেঘের অশ্রুগুলো টুপটাপ মুক্তোর মতো ঝরে গেছে আজ সারাদিন।

ফিরে আসে বৃষ্টিদিন,
কদমকেতকীর রাত ।

প্রবল উল্টেপাল্টে যায়,
খুলে যায় স্মৃতির সোনালীপাতাগুলো।
গভীরগোপন খামগুলো চন্দনসুগন্ধী কুঠরিতে অস্ফুটে কথা বলে ওঠে।

একটা যতিহীন সুদীর্ঘপথ হেঁটেছি কেবল ছায়ামগ্নতার ভেতরে ;
দরোজার বাইরে ছিল সুর্যশিখার পথ ;
স্বপ্নের ঘোরে কেউতো খুঁজেনা রোদতপ্ত দিন !

আজ কি দুঃখদিন?
অঝোরধারা চিরে উড়ে গেল একটি শালিখ ;
জুড়িটা কোথায় গেল কোথাও পাইনি খুঁজে।
চিলেকোঠার পাশে জড়োসড় ভিজেকাক।

আজকে নাহয়
এক মাঠ বৃষ্টির ভেতরেই ছড়িয়ে দিলাম রোজনামচার ছেঁড়াপাতাগুলো।











সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

স্বপ্নলেখার খাতা

মেঘাচ্ছন্নআঁধার থেকে একটা ঝলমলে দিনের স্বপ্নই তবে উঠে আসুক।


স্বপ্নলেখার জন্য আমার চাই গোলাপীসুগন্ধী মাখা খাতা।যেখানে সেখানে স্বপ্ন লিখতে নেই।
সোনার পালঙ্ক চাই।
সোনারূপার জিয়নমরণকাঠি।
ময়ুরপুচ্ছের কলম।
এইসব প্রাসংগিক আয়োজন শেষ হলে ---একটা স্বপ্নপুরান লিখবো
প্যাপিরাসে পাওয়া হাজার বছরের কিচ্ছাউপাখ্যান।


দৈত্যগুলো সব পাথরখোঁদাই।
মাঝরাতে জীবন্ত হয়---হাতীশালে হাতী আর অশ্বশালার ঘোড়া ধরে ধরে খায়।
ডাইনীরা থাকে রূপবতী রানীর ছদ্মপোশাকে।আসল রানীরা ঊড়ে যায় পাখি হয়ে ;
বনেজঙ্গলে।

রাজাগুলো সব যুগে খুব অর্থগৃধ্নু ।কবরেও নিয়ে যায় হীরেজহরৎ ;
এসব লিখা আছে শিলালিপি ও তাম্রফলকে।

স্বপ্নখাতায় থাকবেনা কোন চেঙ্গিস--তৈমুর

বরং বিজনগহন অরণ্য থেকে  রানীকেই উদ্ধার করে আনি।
আলো ঝলমল সিংহাসনে  রানীর অভিষেক।




__________________________________________________________________










রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

গল্পের প্রতিকূল সময়

এই বিপ্রতীপ সময়
গল্পের অনুকূল নয় মোটে
কথাগুলোর কোন ক্রমানুসার নেই ; যেন
বালকের অগোছাল খেলাঘর..................
কাঠের ঘোড়া
রোবোটমানব
মাঠিরপুতুল
সাইরেন বাজানো গাড়ী
প্লাস্টিকের লাটিমগুলো
লালনীল ঘুড়ি
নাটাইয়ের এলোমেলো সুতো
রঙ্গীন বেলুন
ঝিকিমিকি মার্বেল
-----------সারা ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

জানিনা কোন কথা আগে বলা যায়
গোলাপ এবং বারুদের গন্ধ মিলেমিশে গেলে
সব কথা এলোমেলো হয়ে যায় বড়ো-------
সেন্সরড 'আহা' 'উহু' গুলো ;
আগে ছাড়পত্র নিতে হবে
কতটুকু বলা যাবে ;
কাম্য নয় কাঠগড়া অথবা হাতকড়া।

কেন বারবার আদিবস্তির আকাশে
কাকচিলের মচ্ছব লাগে বারবার
এমন গল্প নিরাপদ নয়।

একমাত্র বৈধ ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোই
সত্য
এবং
নিরাপদ
আপাততঃ ।


(১৯/৩/২০০৯)


--------------------------------------------------------------

শনিবার, ১০ মে, ২০১৪

নষ্টঘড়ির কাঁটা

নীল ক্যানভাসে আঁকা চেনাআধোচেনা ছবিগুলো ক্রমশঃ ঝাপসা হয়ে আসে ।


আচমকা আনন্দশিহরণে কেটেছে সারাটা বিকেল।
এমন ভাবছি ;
সহসাখুশীর এই ফুলঝুরি ফেরি করি গলি গলি ঘুরে
 গোধুলির রংমাখা এক খন্ড মেঘ পকেটে পুরে ঘুরে আসি সারাটা শহর


কোথায় সেই ক্ষণপূর্বে গড়া দৃশ্যকল্প !
কোথায় অস্তরাগ!
দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে আকাশ। তীব্রবাষ্পতাপে শহরের গলি।

অকস্মাৎ প্রচন্ড হল্লা ওঠে--------------
 খোঁয়াড়ের বেড়া ভেঙ্গে বের হয়ে গেছে বরাহের পাল।
উদগ্রচিৎকারের নগ্নতায় থেমে গেছে প্রজাপতির পত্‌পত্‌ ডানার বাদ্য ;
মগ্নবিভোর পরাগের  ছন্দে ছন্দে বেজে ওঠা।

সময়ের গোলকধাঁধায় দিগ্‌ভ্রান্ত নাবিকেরা হারিয়ে ফেলেছে কম্পাস;
মাঝসমুদ্রের ঢেউয়ে।
লাইটহাঊস ভ্রমে মরীচিকার পথে ছুটছে জাহাজ।

বিভ্রান্ত-----
বড়ো বিভ্রান্ত সময়।


নষ্টঘড়ির কাঁটা ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো উলম্বস্থির হয়ে আছে।




----------------------------------------------------------------------------

সোমবার, ৫ মে, ২০১৪

এ্যাকুরিয়ামের প্রতিবেশী

কোথাও একটুখানি বাধে ;
কাঁচের মৎসঘরে মাছপোষানিষ্ঠুরতা এখনো শিখিনি।

এ্যাকুরিয়ামে-----------
জলের সমতলে ভাসছে মৃতমৎস । মরাচোখ জ্বলজ্বল করে ;
ফ্লুরোসেন্ট আলোর মাহাত্ব্য ।

কেন যে মানুষের এত প্রবল দখলদারিত্বলোভ ;
অর্থবিত্ত
নামযশ
ঘর ভর্তি সৌখিন আসবাব
এ্যান্টিক ডেকোরেশন পিস্‌ ।
আরো চাই। আরো আরো বেশী

খাঁচাবন্ধী পাখী ।
কচ্ছপ।
খরগোশ।
জলে সাঁতরানো মীন চায় ডাঙ্গার ঘরে।


এ্যাকুরিয়ামে প্রতিবেশী ;
মরামাছ
জ্যান্ত মানুষ।





-------------------------------------------------------------





প্ল্যানেটোরিয়াম আকাশ

রুক্ষতার প্রবল থাবার ভেতরে চলে যেতে যেতে
শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছি সবুজ গাছের পাতাগুলো ;
বাদামের খোলার মতো বিবর্ণ,রুক্ষসুক্ষ
কঠিন হচ্ছে ক্রমশঃ।

কালের সাক্ষিগোপাল--------------------
দেখে যাচ্ছি-- কিভাবে মানুষ জুড়ে দিচ্ছে ঘরের উপরে ঘর
প্লাস্টিক লেগোর মতো।ঢেকে দিচ্ছে অন্তঃরীক্ষ ;
যন্ত্রযান আর কারখানার কালোধোঁয়া।

এভাবেই হারিয়ে যাবে সবুজআকাশ ।
আর আমরা
সবুজস্মৃতি উদ্ধারে প্রজেক্টরে দেখবো সবুজ ধানক্ষেত ;
সেলুলয়েডের ফিতাবন্ধী ত্রিডাইমেনশন ছবি।

বিশুদ্ধ  আকাশ দেখাব্যাকুলতায় 
প্ল্যানেটোরিয়ামের হেলানো চেয়ারে বসে দেখবো
রাতের তারকামন্ডল।

দেখা হবেনা
শারদীয়া মেঘরঙ্গলীলার রঙ্গীন আনাগোনা।

শুধুমাত্র-----
আমাদের স্মৃতিমেদুরতায় ভেসে আসবে
দখিনার সাথে বৃষ্টিভেজা কামিনীর ঘ্রাণ ;
ভেজামাটির সোঁদাগন্ধ।






----------------------------------------------------------------------














শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

অপেক্ষা

একটি গোধূলি এসে ভীষণ নাড়িয়ে দিল কড়া ;
যেন আকাশের কাড়া-নাকাড়া বেজে গেল
ঝুমবৃষ্টির শিঞ্জিনীর সাথে ।

আরো কিছুটা সময় বাকী আছে শুধু
হেলিওসের ঘোড়াগুলো মাঠ পেরোলেই
আস্তাবলের পথে,
নিকষ রাতপর্দায় ঢেকে যাবে সব।
রক্তচোষা বাদুড়ের পাল
 ঢুকে যাবে নিরীহ ভেড়ার খোঁয়াড়ে ।


কমলাআকাশ চিরে উড়ে যায় সাদা বলাকার ঝাঁক
উদাসীপাখার সুরে মন আনচান করে ওঠে বড়ো ;
পেয়ালায় ঢেলে নেই সোনালী অমৃত ;
তীব্রনেশালু এই রঙ্গমেলায়
আমিও নাহয় মাতালই হলাম.................................


সাততালা বাড়ির ছাদে
সীমাহীন বৈরাগ্যে বসে আছে
একটি কালোদাঁড়কাক ।
বাড়ী ফেরার যেন কোন তাড়া নেই ।
বাসাটা কি একা?
আর কেউ নেই?



 ভোরের অপেক্ষায় আছে------রক্তশূন্য মেষগুলো





-----------------------------------------------------------------------------------------------







বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০১৪

শূন্য দুপুর

ঝিম ধরা একটি দুপুর
ভরা রৌদ্রের বুকে গাঢ়শূন্যতার ছবি আঁকে ;
আমি তাকে পান করি বরফশীতল জলের মতো,
গ্লাসের নীচে জমছে বরফের কুচি।


একটি পথভোলা প্রজাপতি উড়ে এসে
বসেছে ফ্লাওয়ারভাসে
ফুলের উপরে দিচ্ছে ছড়িয়ে তার মায়ার পরাগ ;
যেই--- দেয়ালে পড়লো তার ছায়া,
শূন্যদেয়াল এঁকে নিল এক অপূর্ব ছবি।

ভালবাসি ক্যানভাসের ফুল, প্রজাপতি এবং শূন্যতা।

হাতের তালুতে লেগে আছে জন্মদাগের মতো বিষাদ ;
কি করে মুছবো তাকে !
মুঠোয় আবীর মেখে রেখেছি লুকিয়ে।

দরোজার বাইরে একটি বাদামী খাম
দীর্ঘশ্বাসের মতো  লম্বালম্বি পড়ে আছে ;
কি যেন জরুরী চিঠি পাঠিয়েছে কেউ।
ধুলোয় যাচ্ছে ঢেকে।

অবহেলার বারান্দায় পড়ে আছে খামবন্ধী কথা ;
ঘরের ভেতরে জমে  প্রগাঢ়নিস্তব্দতা ;
 বরফের কুচি।



---------------------------------------------------------

বিবমিষা

করডাইটের গন্ধভরা শহরে ফুল কিনতে এসে
দেখি -- গোলাপচাষীরা বুনছে বীজ ; বারুদের।

কি ভেবে যে
আজ আবার দীর্ঘদিন পরে রংগীন পর্দার মুখোমুখি ;
গালগল্পের ফেনা ওঠা তুবড়ীতে বিবমিষা লেগে গেল।

শীতাতপের ভেতরেও ভয়াবহ ঘাম ঝরাচ্ছে ; একদল নপুংসক।
একপক্ষ তেরিয়া
অন্যপক্ষ মারমুখী
খুলে নিচ্ছে একে অন্যের পরিধেয় ; কোটপাতলুন।
আমি
আমজনতার পিঁপড়াসদৃশ একটি অংশমাত্র
কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিনা
আমার গুড় অথবা চিনির সামান্য ভাগ।
ডেঁয়ো পিঁপড়ে নই ; মৃতলাশের মাংস খুবলে খাইনা।
নিতান্ত গৃহজকীট ; এক কণা খাদ্যের জন্য ঘুরে ঘুরে ফিরি।

লাশের উৎসবে মাতে শকুনেরা ।


দেখছি----
পরিযায়ী পাখীর মতো আমাদের স্বপ্নগুলোর উড়ে উড়ে ফিরে যাওয়া ;
হিমশীতল সাইবেরিয়ার পথে।
হতাশার তীরে এফোঁড় ওফোঁড় হৃৎপিন্ড।

বাগাড়ম্বরে পালটে যাচ্ছে সময়ের নির্ভুল মাণচিত্র

তীব্র থেকে তীব্রতর হয় বমনেচ্ছা।