" মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি
বাঁশি কই আগের মতো বাজেনা.........................."
আমাদের বাঁশি আগের মতো নাই বাজুক , ভারী ভাল লাগছিল শাড়ী পরে হাত ভর্তি চুড়ি ,গালে আলপনা আঁকা বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখতে।পরীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল একেকজন।হাতে নানা রংয়ের চরকি, বেলুন।
ভুভুজেলার মতো অসহ্য এই বস্তুটা কবে, কিভাবে যে এসে ঢুকলো এদেশে!বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো মহানন্দে বাজিয়েই যাচ্ছে । লোকজন মহা বিরক্ত হচ্ছে। একজনকে বলতে শুনলাম--- আইন করে এই জিনিষটাকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া দরকার।মনে মনে ভদ্রলোকের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ফেললাম তক্ষুণি।
খোলা মাঠগুলোতে বসেছিল বৈশাখিমেলা।ফুটপাতগুলোও ভরে ঊঠেছিল হরেক পণ্যসম্ভারে।ঐতিহ্যবাহী পিঠা এবং পান্তা-ইলিশ ছিল অস্থায়ী খাবার দোকানগুলোর অন্যতম আকর্ষণ।পান্তা-ইলিশে আমার অবশ্য তেমন কোন আগ্রহ নেই।তবে পিঠা অবশ্যই অনেক বেশী পছন্দের।তাই খেলাম । আর ফুচকা।লেবুর সরবত।রাস্তাঘাটের খাবার বেশ পছন্দ করি। হাইজিন মানিনা।আর হ্যাঁ রাস্তার খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছি কখনো ,এটা আমার শত্রুও বলতে পারবেনা।
হ্যাঁ নববর্ষের কথাই বলছি।
এইতো সেদিন। মাত্রই মাসখানেক আগে রমনার বটমূলে বসেছিল বাংগালীর প্রাণের মেলা।বর্ষবরণ।পহেলা বৈশাখের আসর। নববর্ষকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই।
চারুকলার মনোজ্ঞ মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ ১৪২১ সালকে স্বাগত জানানোর পালা।
এরপরে বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন ঐতিহাসিক রমনার বটমূল চত্বরে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে।শোভাযাত্রার জন্য চারুকলার শিল্পীরা তৈরি করেছিল রং- বেরংয়ের মুখোশ এবং বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।রবীন্দ্রসরোবর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ,সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল নানা আয়োজন।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আমাদের যত ব্যাপক প্রস্তুতি, উদ্দীপনা, উল্লাস- আয়োজন, তেমনটি অন্য কোন উৎসব নিয়ে দেখা যায়না।এমনিতে বাংগালীর বারোমাসে তেরোপার্বন।সারা বছরই আমাদের উৎসব।হতে পারে তা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, কিন্তু প্রভাব থাকে সব ধর্মের মানুষের উপরেই।ঈদের বাজারে দোকানগুলো উপচে পড়ে ক্রেতার ভীড়ে , সে কেবল মুসলমান ক্রেতা নয়।হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-ক্রিস্টান সব ধর্মের মানুষই আছে সেখানে।পূজা-পার্বনেও তাই।সেরকম উপচে পড়া জনস্রোত দেখা যায় শারদীয়া পূজামন্ডপে।আড্ডা আর উৎসব প্রিয় বাংগালী সবধরণের উৎসবকেই প্রাণভরে উপভোগ করতে জানে।
আর আমরা যারা একটু আধটু সাহিত্যচর্চা করি অথবা স্রেফ পড়তে ভালবাসি ;সারা বৎসর অপেক্ষা করে থাকি ঈদের বিশেষ সংকলনের সাথে সাথে কলকাতার পূজাসংখ্যাগুলোর।হাতে পাওয়ার পর কোনটা রাখি ,কোনটা আগে পড়ি --তাও এক সমস্যা বটে।
সে যাক। বলছিলাম পহেলা বৈশাখের কথা ।বাংলা নববর্ষ সর্বধর্ম নির্বিশেষে আমাদের একমাত্র সার্বজনীন উৎসবের দিন।এজন্য আমরা প্রতি বছরই এই দিনটাকে দিতে চাই একটা নতুন মাত্রা।
বর্ষবরণে পিছিয়ে থাকেনা আমাদের গ্রামীণ জনপদও।বরং তাদের কাছে দিনটির গুরুত্ব অনেক বেশী অর্থবহ।
শুভ হালখাতা বা সালতামামির দিন।নানা বর্ণাঢ্য আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও পালিত হয় দিনটি।
আমার ছেলে বেলায়, আমাদের গ্রামের বাড়ীতে শুভ হালখাতার মিষ্টি খাওয়ার প্রচুর স্মৃতি আছে।
শুধুই বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ কেন, বিশ্বের যেখানে যত বাংগালী আছে ; এমনকি সুদূর পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার বাংগালী কম্যুইনিটিগুলো পর্যন্ত নববর্ষ উদ্যাপন করে বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে।মানুষ যেখানেই ,যতদূরেই যাকনা কেন নিজের শিকড়ের টানকে ভুলতে পারেনা। ভুলতে পারেনা নিজস্ব সংস্কৃতি।
বরং তখন দেশ নাগালের বাইরে থাকে বলেই স্মৃতিকাতরতায় বিমর্ষ হতে হতে বিদেশের মাটিতেও তুলে আনতে চায় এক টুকরো স্বদেশ ;হলোই বা একদিনের জন্য।
" এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ ।
তাপসনিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে ,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ।"
গ্লোবালওয়ার্মিং এর জাঁতাকলে পড়ে ঋতুচক্রে ঘটেছে অদ্ভুত বিবর্তন।যতই বৈশাখকে আমরা ডাকাডাকি করিনা কেন কালবৈশাখি ঝড়জলে 'বৎসরের আবর্জনা' সব ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবার জন্য ; কালবৈশাখির সেই ঝড় আর আসেনা আগের মতো নিয়ম করে, ঠিক সময়মতো। পালটে গেছে তার নির্ধারিত সময়সূচি ।আবহাওয়ায় ঘটেছে ব্যাপক উলট-পালট।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ আমরা । তীব্রশীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে পড়ি আবার অতিবেশী গরমও আমাদের কাম্য নয় কখনো। অভ্যস্ত নই।
এখন ঢাকাবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রচন্ড গরমে। ঢাকায় একদিনের তাপমাত্রা সূচক অনুযায়ী--৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঊঠতেই নাভিশ্বাস উঠে নগরবাসীর ; ৫৪ বৎসরের আবহাওয়ার রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা যায় এ ধরণের উচ্চমাত্রার গরম ঢাকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিঃসন্দেহে সহ্যসীমার শেষপ্রান্তে বসবাস করছে নগরবাসী।তার উপরে আছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।
বৃষ্টি হচ্ছে ।সাথে ঝড়তুফান-শিলাবৃষ্টিও ; মাঝে মাঝেই ।কিন্তু গরমের প্রকোপ কমছেনা তাতে।দরকার ছিল ক'দিন টানা বৃষ্টির। তেমনটা হচ্ছেনা।ঢাকার টুকটাক খুচরো বৃষ্টিগুলো কিন্তু খুব আজব ধরণের।হয়ত এই গলিতে বৃষ্টি হচ্ছে ,পাশের গলিতে তার ছিঁটেফোঁটা লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমন প্রায়ই হয়।বলতেই হয় ,ঢাকার বৃষ্টির ভুগোল জ্ঞান নেই।
বৃষ্টি হবে আর একটু ভিজবোনা এমন হয় নাকি?আর কিছু না হোক বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁটের মাঝে দাঁড়িয়ে হাতটা অন্ততঃ বাড়িয়ে দেবো অবিরল জলধারার আদর মেখে নিতে। বৃষ্টিপাগল কেউ বাসার ছাদে কেউ গলিতে নেমে মেতে উঠে ধারাস্নানে।এইসব দৃশ্য খুব স্মৃতিভারাতুর করে ফেলে।মনে পড়ে শৈশবের বৃষ্টিভেজা দিনের কথা।ধারাজলে অবগাহন। শিল কুড়ানো।কাগজের নৌকা ভাসানো।
" আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়
অশ্রুভরা দুটি চোখ
তুমি ব্যাথার কাজল মেখে
লুকিয়ে ছিলে ওই মুখ..............."
কাকে মনে পড়ে? মনে পড়ে নিজেরই হারানো শৈশব-কৈশোর।তারুণ্যের উচ্ছাস ভরা মায়াময় দিন যা কালচক্রে চলে যায় ব্যাথার কাজলের আড়ালে।
এই উত্তপ্ত দিন আর বৃষ্টির টানা-হেঁচড়ার মাঝেই ঢাকা নগরী রূপান্তরিত হয়ে গেছে পুষ্পনগরীতে।উদ্যানে, পার্কে, আইল্যন্ডে ,শহরের অলি-গলিতে থরে থরে ফুটে গেছে গ্রীষ্মের ফুলগুলো।কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জারুল, একাশিয়া,শিরিষের অপূর্ব রূপমাধুর্য্য থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল।
থরে থরে ফুটে আছে বেগুনি জারুল আর সাদা কুরচির ফুল। গুচ্ছ গুচ্ছ হলুদ সোনালু।আরো কত নাম না জানা পুষ্প-কুসুম।।ঘাসের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট ঘাসফুলগুলো ।রূপের মেলায় তারাও যে পিছিয়ে নেই এমন বুঝা গেল প্রজাপতি আর ঘাসফড়িংয়ের চঞ্চল ওড়াওড়ি দেখে।
ইটপাথর-হাইরাইজের নাগরিক যান্ত্রিকতা আর রোদঝলসানো দিনের হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে নগরবাসীকে খানিকটা স্বস্তি দিতেই যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে এক নয়নাভিরাম পুষ্পোদ্যান।সূর্যকিরণের প্রখর দাবদাহের মাঝে প্রশান্তির স্নিগ্ধ স্পর্শ।
ঢাকায় এমনকি মনে হয় সমগ্র বাংলাদেশেই সব থেকে বেশী যে ফুল চোখে পড়ে সেটা হলো কৃষ্ণচূড়া।যার অন্য নাম গুলমোহর।আকাশের নীচে চমৎকার এক লালমখমলের সামিয়ানার মতো মেলে দিয়েছে নিজেকে আর আশেপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে আলোক-রশ্মির মতো রক্ত লাল রংয়ের বিচ্ছুরণ।
" গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়
বনে বনে শাখায় শাখায়
কেন যায়? কেন যায়? "
এমন ফুলের মাসে কি ঘরে বসে থাকা যায়?রোজ বিকেলের অবসরে,বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভীড় করছে প্রকৃতিপ্রেমিরা ; উদ্যানে, পার্কে ।
এর মাঝেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজসেবি সংগঠন 'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি' র সদস্যরা( আমিও তাদের একজন) ,সংসদ ভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানে আয়োজন করে ফেলল এক চমৎকার ' কৃষ্ণচূড়া আড্ডা' র।উদ্দেশ্য শুধুই ঘুরে বেড়ানো আর নির্মল আড্ডা।
আড্ডা দিতে আমরা কখনো পিছপা হইনা। সে ঘরোয়া আড্ডাই হোক বা খোলা আকাশের নীচে অনেক প্রাণের সম্মিলিত কলকাকলীতে।অনেকেই এলেন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে, অনেকে এলেন কোন বন্ধুকে সংগী করে।কেউবা একা একাই চলে এলেন সবার সাথে আনন্দমেলার অংশভাগী হতে।একটা বিকেল ভরে উঠল, পরিপূর্ণ হয়ে রইল অনেক কথার কলকাকলি--গুনগুনানিতে।
পড়ে থাক হাজারো আটপৌরে যন্ত্রণা। রোদতপ্ত দিন। জীবনের শত পাওয়া না পাওয়া হিসেবের খাতা। অন্ততঃ একটা বিকেলতো ভরে রইল। মন গেয়ে উঠল,
" জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
...............................................................
জয়ধ্বণি শুনিয়ে যাবো এ মোর নিবেদন" ।
___________________________________________________________________
বাঁশি কই আগের মতো বাজেনা.........................."
আমাদের বাঁশি আগের মতো নাই বাজুক , ভারী ভাল লাগছিল শাড়ী পরে হাত ভর্তি চুড়ি ,গালে আলপনা আঁকা বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখতে।পরীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল একেকজন।হাতে নানা রংয়ের চরকি, বেলুন।
ভুভুজেলার মতো অসহ্য এই বস্তুটা কবে, কিভাবে যে এসে ঢুকলো এদেশে!বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো মহানন্দে বাজিয়েই যাচ্ছে । লোকজন মহা বিরক্ত হচ্ছে। একজনকে বলতে শুনলাম--- আইন করে এই জিনিষটাকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া দরকার।মনে মনে ভদ্রলোকের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ফেললাম তক্ষুণি।
খোলা মাঠগুলোতে বসেছিল বৈশাখিমেলা।ফুটপাতগুলোও ভরে ঊঠেছিল হরেক পণ্যসম্ভারে।ঐতিহ্যবাহী পিঠা এবং পান্তা-ইলিশ ছিল অস্থায়ী খাবার দোকানগুলোর অন্যতম আকর্ষণ।পান্তা-ইলিশে আমার অবশ্য তেমন কোন আগ্রহ নেই।তবে পিঠা অবশ্যই অনেক বেশী পছন্দের।তাই খেলাম । আর ফুচকা।লেবুর সরবত।রাস্তাঘাটের খাবার বেশ পছন্দ করি। হাইজিন মানিনা।আর হ্যাঁ রাস্তার খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছি কখনো ,এটা আমার শত্রুও বলতে পারবেনা।
হ্যাঁ নববর্ষের কথাই বলছি।
এইতো সেদিন। মাত্রই মাসখানেক আগে রমনার বটমূলে বসেছিল বাংগালীর প্রাণের মেলা।বর্ষবরণ।পহেলা বৈশাখের আসর। নববর্ষকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই।
চারুকলার মনোজ্ঞ মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ ১৪২১ সালকে স্বাগত জানানোর পালা।
এরপরে বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন ঐতিহাসিক রমনার বটমূল চত্বরে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে।শোভাযাত্রার জন্য চারুকলার শিল্পীরা তৈরি করেছিল রং- বেরংয়ের মুখোশ এবং বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।রবীন্দ্রসরোবর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ,সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল নানা আয়োজন।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আমাদের যত ব্যাপক প্রস্তুতি, উদ্দীপনা, উল্লাস- আয়োজন, তেমনটি অন্য কোন উৎসব নিয়ে দেখা যায়না।এমনিতে বাংগালীর বারোমাসে তেরোপার্বন।সারা বছরই আমাদের উৎসব।হতে পারে তা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, কিন্তু প্রভাব থাকে সব ধর্মের মানুষের উপরেই।ঈদের বাজারে দোকানগুলো উপচে পড়ে ক্রেতার ভীড়ে , সে কেবল মুসলমান ক্রেতা নয়।হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-ক্রিস্টান সব ধর্মের মানুষই আছে সেখানে।পূজা-পার্বনেও তাই।সেরকম উপচে পড়া জনস্রোত দেখা যায় শারদীয়া পূজামন্ডপে।আড্ডা আর উৎসব প্রিয় বাংগালী সবধরণের উৎসবকেই প্রাণভরে উপভোগ করতে জানে।
আর আমরা যারা একটু আধটু সাহিত্যচর্চা করি অথবা স্রেফ পড়তে ভালবাসি ;সারা বৎসর অপেক্ষা করে থাকি ঈদের বিশেষ সংকলনের সাথে সাথে কলকাতার পূজাসংখ্যাগুলোর।হাতে পাওয়ার পর কোনটা রাখি ,কোনটা আগে পড়ি --তাও এক সমস্যা বটে।
সে যাক। বলছিলাম পহেলা বৈশাখের কথা ।বাংলা নববর্ষ সর্বধর্ম নির্বিশেষে আমাদের একমাত্র সার্বজনীন উৎসবের দিন।এজন্য আমরা প্রতি বছরই এই দিনটাকে দিতে চাই একটা নতুন মাত্রা।
বর্ষবরণে পিছিয়ে থাকেনা আমাদের গ্রামীণ জনপদও।বরং তাদের কাছে দিনটির গুরুত্ব অনেক বেশী অর্থবহ।
শুভ হালখাতা বা সালতামামির দিন।নানা বর্ণাঢ্য আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও পালিত হয় দিনটি।
আমার ছেলে বেলায়, আমাদের গ্রামের বাড়ীতে শুভ হালখাতার মিষ্টি খাওয়ার প্রচুর স্মৃতি আছে।
শুধুই বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ কেন, বিশ্বের যেখানে যত বাংগালী আছে ; এমনকি সুদূর পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার বাংগালী কম্যুইনিটিগুলো পর্যন্ত নববর্ষ উদ্যাপন করে বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে।মানুষ যেখানেই ,যতদূরেই যাকনা কেন নিজের শিকড়ের টানকে ভুলতে পারেনা। ভুলতে পারেনা নিজস্ব সংস্কৃতি।
বরং তখন দেশ নাগালের বাইরে থাকে বলেই স্মৃতিকাতরতায় বিমর্ষ হতে হতে বিদেশের মাটিতেও তুলে আনতে চায় এক টুকরো স্বদেশ ;হলোই বা একদিনের জন্য।
" এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ ।
তাপসনিঃশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে ,
বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক ।"
গ্লোবালওয়ার্মিং এর জাঁতাকলে পড়ে ঋতুচক্রে ঘটেছে অদ্ভুত বিবর্তন।যতই বৈশাখকে আমরা ডাকাডাকি করিনা কেন কালবৈশাখি ঝড়জলে 'বৎসরের আবর্জনা' সব ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবার জন্য ; কালবৈশাখির সেই ঝড় আর আসেনা আগের মতো নিয়ম করে, ঠিক সময়মতো। পালটে গেছে তার নির্ধারিত সময়সূচি ।আবহাওয়ায় ঘটেছে ব্যাপক উলট-পালট।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ আমরা । তীব্রশীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে পড়ি আবার অতিবেশী গরমও আমাদের কাম্য নয় কখনো। অভ্যস্ত নই।
এখন ঢাকাবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রচন্ড গরমে। ঢাকায় একদিনের তাপমাত্রা সূচক অনুযায়ী--৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঊঠতেই নাভিশ্বাস উঠে নগরবাসীর ; ৫৪ বৎসরের আবহাওয়ার রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখা যায় এ ধরণের উচ্চমাত্রার গরম ঢাকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিঃসন্দেহে সহ্যসীমার শেষপ্রান্তে বসবাস করছে নগরবাসী।তার উপরে আছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।
বৃষ্টি হচ্ছে ।সাথে ঝড়তুফান-শিলাবৃষ্টিও ; মাঝে মাঝেই ।কিন্তু গরমের প্রকোপ কমছেনা তাতে।দরকার ছিল ক'দিন টানা বৃষ্টির। তেমনটা হচ্ছেনা।ঢাকার টুকটাক খুচরো বৃষ্টিগুলো কিন্তু খুব আজব ধরণের।হয়ত এই গলিতে বৃষ্টি হচ্ছে ,পাশের গলিতে তার ছিঁটেফোঁটা লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমন প্রায়ই হয়।বলতেই হয় ,ঢাকার বৃষ্টির ভুগোল জ্ঞান নেই।
বৃষ্টি হবে আর একটু ভিজবোনা এমন হয় নাকি?আর কিছু না হোক বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁটের মাঝে দাঁড়িয়ে হাতটা অন্ততঃ বাড়িয়ে দেবো অবিরল জলধারার আদর মেখে নিতে। বৃষ্টিপাগল কেউ বাসার ছাদে কেউ গলিতে নেমে মেতে উঠে ধারাস্নানে।এইসব দৃশ্য খুব স্মৃতিভারাতুর করে ফেলে।মনে পড়ে শৈশবের বৃষ্টিভেজা দিনের কথা।ধারাজলে অবগাহন। শিল কুড়ানো।কাগজের নৌকা ভাসানো।
" আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়
অশ্রুভরা দুটি চোখ
তুমি ব্যাথার কাজল মেখে
লুকিয়ে ছিলে ওই মুখ..............."
কাকে মনে পড়ে? মনে পড়ে নিজেরই হারানো শৈশব-কৈশোর।তারুণ্যের উচ্ছাস ভরা মায়াময় দিন যা কালচক্রে চলে যায় ব্যাথার কাজলের আড়ালে।
এই উত্তপ্ত দিন আর বৃষ্টির টানা-হেঁচড়ার মাঝেই ঢাকা নগরী রূপান্তরিত হয়ে গেছে পুষ্পনগরীতে।উদ্যানে, পার্কে, আইল্যন্ডে ,শহরের অলি-গলিতে থরে থরে ফুটে গেছে গ্রীষ্মের ফুলগুলো।কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জারুল, একাশিয়া,শিরিষের অপূর্ব রূপমাধুর্য্য থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল।
থরে থরে ফুটে আছে বেগুনি জারুল আর সাদা কুরচির ফুল। গুচ্ছ গুচ্ছ হলুদ সোনালু।আরো কত নাম না জানা পুষ্প-কুসুম।।ঘাসের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট ঘাসফুলগুলো ।রূপের মেলায় তারাও যে পিছিয়ে নেই এমন বুঝা গেল প্রজাপতি আর ঘাসফড়িংয়ের চঞ্চল ওড়াওড়ি দেখে।
ইটপাথর-হাইরাইজের নাগরিক যান্ত্রিকতা আর রোদঝলসানো দিনের হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে নগরবাসীকে খানিকটা স্বস্তি দিতেই যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে এক নয়নাভিরাম পুষ্পোদ্যান।সূর্যকিরণের প্রখর দাবদাহের মাঝে প্রশান্তির স্নিগ্ধ স্পর্শ।
ঢাকায় এমনকি মনে হয় সমগ্র বাংলাদেশেই সব থেকে বেশী যে ফুল চোখে পড়ে সেটা হলো কৃষ্ণচূড়া।যার অন্য নাম গুলমোহর।আকাশের নীচে চমৎকার এক লালমখমলের সামিয়ানার মতো মেলে দিয়েছে নিজেকে আর আশেপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে আলোক-রশ্মির মতো রক্ত লাল রংয়ের বিচ্ছুরণ।
" গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়
বনে বনে শাখায় শাখায়
কেন যায়? কেন যায়? "
এমন ফুলের মাসে কি ঘরে বসে থাকা যায়?রোজ বিকেলের অবসরে,বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভীড় করছে প্রকৃতিপ্রেমিরা ; উদ্যানে, পার্কে ।
এর মাঝেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজসেবি সংগঠন 'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি' র সদস্যরা( আমিও তাদের একজন) ,সংসদ ভবন সংলগ্ন চন্দ্রিমা উদ্যানে আয়োজন করে ফেলল এক চমৎকার ' কৃষ্ণচূড়া আড্ডা' র।উদ্দেশ্য শুধুই ঘুরে বেড়ানো আর নির্মল আড্ডা।
আড্ডা দিতে আমরা কখনো পিছপা হইনা। সে ঘরোয়া আড্ডাই হোক বা খোলা আকাশের নীচে অনেক প্রাণের সম্মিলিত কলকাকলীতে।অনেকেই এলেন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে, অনেকে এলেন কোন বন্ধুকে সংগী করে।কেউবা একা একাই চলে এলেন সবার সাথে আনন্দমেলার অংশভাগী হতে।একটা বিকেল ভরে উঠল, পরিপূর্ণ হয়ে রইল অনেক কথার কলকাকলি--গুনগুনানিতে।
পড়ে থাক হাজারো আটপৌরে যন্ত্রণা। রোদতপ্ত দিন। জীবনের শত পাওয়া না পাওয়া হিসেবের খাতা। অন্ততঃ একটা বিকেলতো ভরে রইল। মন গেয়ে উঠল,
" জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
...............................................................
জয়ধ্বণি শুনিয়ে যাবো এ মোর নিবেদন" ।
___________________________________________________________________
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন