শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০০৯

দিগঙ্গনার ঘর

লিখে যাচ্ছি নিঃসঙ্গতা আর খুলে যাচ্ছে
একটি বাদামী-দরোজা........................

জিতে যচ্ছে
জিতে যাচ্ছে প্রবল-প্রতাপ অবসাদ;

অসহ-দহনে ক্ষয়ে যাচ্ছে আয়ুর সোনালী ডানাগুলো

কোথায় পালাবো?
কোথায় ফিরবো?
যুদ্ধ-বিধ্বস্ত নগরীতে ঠিকানা দিক্‌-চিহ্ন হীন।
অথবা

কোথাও কি কখনো আদৌ কোন ঘর ছিল?



দূরাগত মিহি সুরে বেজে ওঠা বীণ;

স্পর্শাতীত দিগন্ত-বলয়;

দিগন্ত-বালিকার কোন ঘর থাকেনা।

চাইনা বৃষ্টি-----আগুন চাই

দিওনা বৃষ্টি ।
নিভতে চাইনা
গাইছি আগুনের স্তব।সাগ্নিক।

শুধু শুধু জড়ো করি আসর-ভাঙ্গা জলসাঘরের দীর্ঘশ্বাসগুলো
যাবার নিয়মে চলে যায় রূপকথা বলা সবুজ টিয়াটি।তার
অনিচ্ছার একটি পালক শুধু পড়ে থাকে।পুড়াই।
মুছে ফেলি পেলব ঘাসের সবুজ-মমতা।

মুঠোতে মেখেছি জ্যোৎস্না আর
চাঁদের গরলটুকু নিঃশেষে করেছি পান;
দেখেছি হৃৎপিন্ডের নীল রং ।তীব্র।

ভাল আছি।
ঝিনুকের খোলের ভেতরে গুটানোর ভব্যতাটুকু রপ্ত হয়ে গেলে
সবাই ভালই থাকে।এভাবেই।

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০০৯

গোলকধাঁধার বাড়ী

করতলে একটি কুয়াশা-মাখা ভোর ছিল
আঙ্গুলের ফাঁকে কখন যে ঝরে গেছে বুঝতে পারিনি।



কষ্ট পাই
বর্ণাঢ্য-জলসায় অচেনা মুখের ভীড়ে একা হয়ে গেলে
ক্রমশঃ কুঁকড়ে যাই নিজের ভেতরে।

হারতে চাইনা।বারবার হেরে যাই।
নিজের প্রলম্বিত ছায়াটুকু ক্রমাগত নিজেকে অতিক্রম করে যায়।
কষ্ট পাই।

বিস্মরণের আজন্ম-স্বভাবে ঠিকানা-বিভ্রাট;
এ গলি ও গলি খুঁজতে খুঁজতে
তোমার গলির একদম পাশ দিয়েই
আনমনে এক ভুল বাড়ীতে ঢুকে যাই

সে এক ঐন্দ্রজালিক বাড়ী
গোলকধাঁধা.......................................

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০০৯

মাত্র একটি শব্দ উচ্চারণের হের ফের

তেমন করে যাওয়া হয়না।
কোন সীমাহীনেই তো হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম------------------------------
গন্তব্যবিহীন এক ট্রেনের হুইসেল যখন বেজে ওঠে,
বলি--একটু থামো।ভেবে দেখি আর আমার নেবার মতো কিছু বাকী আছে কিনা।

নিতান্ত প্রকৃতির খেয়ালে বেড়ে ওঠা অশ্বত্থ--কতদূর তার শিকড় ছড়ায়
কেমন রাশি রাশি নেমে আসা ঝুরি-জটাগুলো ঘিরে রাখে তার সমস্ত অবয়ব!

এওতো সত্যি--সম্পর্কগুলো কুরুশ-কাঁটার বুননে নকশী-ফুলের মতো
মনে করো --অনবধানে শেষ গিঁট খুলে গেছে
তখন আর কোথায় নকশা
কোথায়ইবা মনোলোভা কারুকাজ!
তবু কি তার মাহাত্ম্য!
দ্রৌপদীর অন্তহীন আঁচলের মতন--কেবলই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর, দীর্ঘতম........................

কোন পথে গেছে অমৃত-উদ্যান
কোনটি অতলান্ত-অন্ধকার টানেলের পথ

মাত্র একটি শব্দ-উচ্চারণের হেরফের বদলে দেয় আমূল জীবন;
মাত্র একটি------হ্যাঁ
অথবা----------না।

মঙ্গলবার, ৪ আগস্ট, ২০০৯

কেউ ডেকে ডেকে ফিরে যায়

কেবল ঘুমের ভেতরেই সুখে থাকি
কেবল ঘুমের ভেতরেই স্বপ্নের নির্ঝরিণী..............



মাঝরাতের বেহালার ছড়ে ডেকে ডেকে ফিরে গেছে কেউ
ঘুম ভাঙ্গা ছায়া ছায়া ভোরে কোন পদচিহ্ন ছিলনা
বাতাসের মীড়ে ছিলনা কোন বিষাদের রেণু
সুরের নোনাজল মিশে গেছে ভোরের শিশিরের মাঝে;
এভাবেই রাতের সমস্ত স্মৃতি মুছে ফেলে প্রভাতের আলো।

এক চিলতে বারান্দায়
পরিত্যক্ত পাউরুটি কিংবা কর্নফ্লেকসের টুকরোগুলো ছড়িয়ে দিলে
ক'টি ক্ষুধার্ত চড়ুই কেমন ব্যগ্র উল্লাসে খুটে খুটে নেয় খাদ্যকণাটুকু;
'ভালবাসা 'কি তেমনি কোন খাদ্যবস্তুর নাম-----
কেউ ব্যাকুল আনন্দে লুফে নেবে বলে
কেউ করুণাবশতঃ ছুড়ে দেবে?

কেউ উদাসীনতার ঘোমটায় মুখ ঢেকে রাখে
কেউ ডেকে ডেকে ফিরে যায়।

শনিবার, ১ আগস্ট, ২০০৯

সময় মত যাওয়া হয়না



--কত বড় হতে চাও?
--আমার হাতগুলো এমন দীর্ঘ হবে --কীনব্রীজের রেলিং‌‌য়েরফাঁকে বাড়িয়ে দিয়ে ঘুরিয়ে দেবো আলী আমজদের ঘড়ির কাঁটাগুলো।

--পারবেনা।মানুষ এত বড় হয়না।শরীর-কাঠামোর নির্দিষ্ট সীমা আছে।

অতএবঃ

স্বপ্নের দুরন্ত-ঘোড়াটির টগবগ টগবগ গতি রুদ্ধ হয়।
আকাঙ্ক্ষার পালকগুলো একে একে এভাবেই খসে পড়ে----
এভাবেই শুরু---

ইচ্ছে-পথের মোড়ে মোড়ে রোড-ব্লক;
দ্বিধা-দ্বন্ধ-উদাসীনতার দরোজার কড়া নাড়তে নাড়তে
হাতটাই নিঃসাড়---------সহজে কপাট খোলেনা।
এতোটা সরল নয় লক্ষণ-রেখার গন্ডী পার হওয়া।
কেবল পথিক জানে পায়ের নীচে ফোসকার দাগগুলো কতোটা গভীর।

যাই।
বড়ো দেরী করে যাই
কোথাও যাওয়া হয়না--ঠিকঠাক সময় মতন।

বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই, ২০০৯

তুমি নও চাঁদনি-রাতের সেই বাঁশরিয়া

নদীর ভিতরে আগুন ছিল--ভেবেছি সূর্যের প্রতিবিম্ব।
স্রোতের বুকে আগুন জ্বেলে এভাবেই নদীগুলো বয়ে যাক।


ফ্লুরোসেন্ট-আভিজাত্যে যে তুমি---সে অন্য আরেকজন।


চাঁদের বৃষ্টিতে চুল খুলে দিলে খসে পড়েছিল তার খোঁপার গোলাপ;
কে তুলে নিয়েছিল--জ্যোৎস্নার ফুলের মতন?
বাঁশিতে উঠেছিল বেজে মগ্নতার ধুন
মহুয়া আর মাদলের ঘোরে মত্ত সাঁওতাল-রমনীর কাঁকালের মতো
সে ও বেজে উঠেছিল।

হায়! সেই চাঁদ-রাত!

রাত বাড়ে--
হিস্‌ হিস্‌ --যেন অবিকল সাপের জমজ শব্দে শ্যাম্পেনের ছিপি খুলে যায়
ক্রমশঃ নীল হতে থাকে ফেনা ওঠা তরল পানীয়

রাত জেগে থাকে সোনালী গরলের ভিতর।

তুমি জেগে থাকো-------------------------------------

সোমবার, ৬ জুলাই, ২০০৯

বিগত জন্মের পরিচয়

আমি তো ছুটে চলি জন্ম থেকে জন্মান্তরে
নিশ্চিত জানি কোন প্রাচীন পুঁথিতে গাঁথা আছে
আমার পূর্ব-জন্মের জীবনালেখ।

বিগত জন্মের পরিচয় খুঁজে ফিরি
প্রচ্ছন্ন-ছায়ার আড়ালে চলে যায় ধোয়াসা-অবয়বগুলো।

অহল্যার মূক-পাষাণে কি রাখা ছিল কোন এক জন্মের ঋণ?
কার পাপে শাপ দিয়েছিল অবার্চীন গৌতম ঋষি?

মনে পড়ে
তীব্র জলের ঘ্রাণে ছুটে আসা শরবিদ্ধ কস্তুরী-হরিণের চোখের আকুতি;
সে কোন জন্ম?কবেকার কথা?

যতিহীন জীবন
যখন যেমন তেমনি করেই কেটে যায়।
তবু--
চকিত-ঝলকে উন্মনা করে
বিগত কোন এক জন্মের দীর্ঘশ্বাস
আচমকা ছায়ার আড়ালে ঢাকা এক অবয়ব ভেসে ওঠে।

সোমবার, ২৯ জুন, ২০০৯

পারদ উঠে যাওয়া একটি আয়না

তুমি বলছো ওটা একটা আয়না।হ্যাঁ ছিল।
ঘর্ষণে ঘর্ষণে এখানে ওখানে পারদগুলো উঠে গেছে।
এখন------না আয়না না কাঁচ।
সামনে দাঁড়াও---ভাঙ্গাচোরা টুকরো খন্ড খন্ড ছবিগুলো
বলে--'বাকীটা কোথায় হারালে?পুরো তুমি নেই।'
ধীরে ধীরে সমস্ত পারদ উঠে গেলে
নিরেট এক টুকরো কাঁচের এপাশ ওপাশ বলে কিছুই থাকেনা।

এলো মেলো বাতাসের পাকে উদাসী ঘুড়ির মতো ছেড়ে দেওয়া সময়
কোন ছাড় দেয়নি;
কোথাও তোমার অপেক্ষায় থমকে যায়নি তার নির্ধারিত কাঁটাগুলো।

বোকা মাছ !
জলের গভীরে না গিয়ে চড়ে বসেছিল ঢেঊয়ের চূড়ায়
জোয়ারের টানে কেমন ডাঙ্গায় উঠে এলো!
কিছুতেই ছাড় দেয়নি ধীবর-হাতের মুঠোময়-উল্লাস।
মার্জারের চোখের লালসা ঘুরে রসুইয়ের আনাচে-কানাচে।

তরঙ্গ কখনো কাঁদে মাছের মরণে?
অবয়ব ধরেনা পারদবিহীন একখন্ড কাঁচ।

পিছনে পায়ের দাগ রেখে আসি।

বিমুগ্ধ-আবেশ কেটে গেলে শরাব মিথ্যে হয়ে যায়
তবু লালপানির পেয়ালা হাতে বসে থাকি;
জীবন দোল খাচ্ছে অবিরত ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো।

এখনো এ ঘরের সব কোন ছেয়ে আছে শেষ বিকেলের সুরভি-মদিরা
এখনো মুছেনি তানপুরার শেষ ঝংকারের রেশ
গোধুলীর কনে দেখা আলোর ঘেরে ফুটি ফুটি সন্ধ্যামালতী
আকাশে পাখসাট বাজে-------বিহঙ্গম ফিরছে কুলায়;
নিষ্প্রাণ স্ট্যাচুর মতো এক জোড়া মানব-মানবী
নির্বাক।ওদের সব কথা শেষ হয়ে গেছে।

তুমি তো জানতে --
চাঁদের কতটা গভীরে গেলে স্পর্শ করা যায় চরকাবুড়ির সুতো
আমাদের জন্য বাকী ছিল আরো এক তৃতীয়াংশ পথ।
ফিরে আসা যথার্থ ফিরে আসা হয়না আর
বারবার ভুল হয় প্রত্যাবর্তনের অলিখিত শর্তগুলো
অমলিন আঁকা থাকে পদযাত্রার ছাপ;

ফিরে আসি। পিছনে পায়ের দাগ রেখে আসি।

তেপান্তরের অপর পারে

আকাশের দিকে না তাকানোই ভালো
শূন্যতার অফুরান এই বর্ণসম্ভার শুধুই ঈর্ষাতুর করে।


সময়ের পালকিটা তেপান্তরের মাঠ পেরুলেই
খসে পড়ে মায়াবী পর্দা---------------
মুঠোর ভাঁজে লুকোনো নখরগুলো চেনা হয়ে যায় দ্রুত;

দুরন্ত সবুজ কিশোরেরা অচেনা,প্রবল পুরুষ
সবুজ মেয়েরা আর সবুজ থাকেনা
কাল নেকাবে ঢাকা পড়ে হরিৎ ওড়না
স্বপ্নের সমস্ত পাপ গচ্ছিত রেখে আসে পিয়াইনের জলের নুড়িতে।

পথের প্রতিটি মোড়ে একটি বিবর্ণ পাপড়ি খসে পড়ে
বুকের ভেতরে জমা নক্ষত্রের রাত
চাঁদের উঠোন
গানের জলসা--রবীন্দ্র,নজরুল,লালন,শচীন
পুকুরের মত্ত জলে দাপাদাপি নিদাঘ-মধ্যাহ্ন
কলেজ পালানো উন্মত্ত দুপুর
প্রখর-স্বপ্নের তীব্র সাদা পালে তর তর ভাসা ডিঙ্গিখানি

থরে থরে সাজানো স্মৃতির গ্যালারী।


যাপিত জীবনের ভারে ন্যুব্জ পৃষ্ঠদেশ
-----পিছু ফিরতে দেবেনা
কোথাও একদন্ড তিষ্ঠোতে দেবেনা কালের চাবুক।

প্রাত্যহিক ছন্দ ভেঙ্গে আচমকা আনমনে
দূরাগত অতীতের রিনরিনে কিশোরীকন্ঠটি বেজে ওঠে,
'তারাগুলো আরেকবার চিনিয়ে দেবে ,বাবা?'

কখনো আমি কেউ ছিলামনা

আমি কেউ নই।। কখনো আমি কেউ ছিলামনা।


সমুদ্রের ফেনায়িত মদে ভাঙ্গে প্রবাল-প্রাচীর

আমি তার কিয়দংশ;
মৃত;
ভঙ্গুর;
সামান্য।


রক্তস্রোতের মাঝে আদিমতম যাযাবর নেশা
তরঙ্গ-স্পন্দনে শিরায় শিরায় মাদলের বোল বেজে ওঠে;তবু
নিবিড় সমুদ্র-দর্শনে ব্যর্থ
তিন ঢেউ পেরুনো হয়না
প্রবল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বালুকাবেলায় ফিরে আসি
বার বার।
ছুটে চলা কেবল গন্তব্যে পৌঁছানো নয়;অভ্যস্ত পদক্ষেপ।
মধ্যাহ্নের খররোদে অনায়াস-রপ্ত পদযাত্রা শেষে
ছায়াবীথি
অশ্বত্থের মূলে ঠান্ডা ঘাস
তরুছায়ে বৃন্তচ্যুত দু'একটি বর্ণগর্বী পারিজাত;

কেউ অপেক্ষায় থাকেনা।


আমি কিছু নই।কিছুই হতে চাইনি।
না বাজীর রেসের ঘোড়া
না ইতিহাসের পাতায় লেখা এক নাম
লোকশ্রুত-কিংবদন্তী;কিছু নয়।

একক-বিশুদ্ধ আমাকে চেয়েছি
আমি
শুদ্ধতম-বিশুদ্ধতায় আমি

কোনটি সত্য ছবি-----------
লহর-মগ্ন জলের অস্থির কারুকাজ?
দর্পণের ক্ষীণ দোদুল্যমানতা?
নাকি দেয়ালের ফ্রেমে ঈষৎ হাসিমাখা স্থিরচিত্রের উদ্ভাস;
দ্বন্দ্ব ঘুচেনা...................................................

আমি নেই..............................
না আয়নায়;
না জলে;
না স্থিরচিত্রে............।

মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০০৯

নস্টালজিয়া

দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে যাতায়াত শুধু
সময় মিশে যায় মহাকাল স্রোতে
এভাবেই বদলে যায় দৃশ্যপট
রূপান্তরের পালে দোলা দিয়ে যায়
কিছু স্মৃতিভারাতুর দীর্ঘশ্বাস।
কেউ জানেনা কোথায় পথের শেষ.........


মনে পড়ে
লেবু-গন্ধী উদাস-অলস দুপুরগুলো
সৌরভে বিভোর রমণীয় প্রজাপতি মেলা
লাল ফড়িংয়েরা বাতাসের গায়ে ডানা মেলে দিলে
হাওয়ায়
হাওয়ায়
কেমন মদালসা সুরের কাঁপন বেজে যেতো

থোকা থোকা রুধির-পুষ্পিত কৃষ্ণচূড়াটি
ঝিরি ঝিরি পাতায় আর রক্ত-রাঙা ফুলে ঢেউ তুলে
মধুৎসবের বারতা দিয়ে যেতো,'ফাগুন এসেছে';
লাল পাপড়ির কার্পেটে পা ডোবানো বিকেলগুলো নেই।
এখানে পাথুরে অহংকারের এক বিলাসী ভবন আছে
বারান্দায় বাহারি বেতের চেয়ার
বৈকালিক চায়ের আড্ডা
ল'ভলিউমে রবীন্দ্র-বাণী,
"এ পথে আমি-যে গেছি বার বার,ভুলিনি তো এক দিনও।"

শুক্রবার, ২০ মার্চ, ২০০৯

পুতুল নির্মাতার জন্য

অপার মুগ্ধতায় -
একটি পুতুলের নির্মান দেখে যাই
শিল্পের অপূর্ব সুষমাময়
নৃত্যরত দশটি আঙ্গুলের যুথবদ্ব- সঞ্চালন
অপরূপ এই কর্মকুশলতাটুকু ভাল লাগে ।

আরো বেশী ভাল লাগে-
সদ্য নির্মিত এই মুর্তিটা কর্কশ আঙ্গুলে
তছনছ এলোমেলো করে দিয়ে
নৃত্যপটু দু’হাতের সব ছন্দ ভেঙ্গে দিতে।

কার এমন দুঃসাহস
তাকেই নতুন করে গড়ে
যে নিজেকেই পৌনঃপুনিক নির্মান করে
প্রতিদিন ।

সেই ভাল তবে

কেন মায়া-জ্যোৎস্নার মিথ্যে আলোতে
এমন করে কাঁদালে আমাকে?
স্বপ্ন-দৃশ্যে আস্থা ছিলনা
তাই বার বার দ্বন্ধে ভোগেছি

দাওনি জবাব মুখ ফিরিয়েছো
ভুবন ভুলানো কপটহাসিতে ।

সখ্য চেয়েছি ভালবাসা নয়
মানতে চাওনি ।
জানতে চাওনি
কি কথা আমার
কি কথা তোমার–বুকের ভেতরে
অহরহ বাজে।
পানসিতে করে সাগর পেরোবো
এমন সাহস আমার ছিলনা
আকাশের বুকে ঘুড়ি হয়ে উড়ি
এমন স্বপ্ন কখনোতো নয় ।

দূরে ছিলে ভাল
দূরইতো ভাল
কাছে আসার এই বিড়ম্বনা
তোমাকে শোভেনা
আমাকেও নয় ।

দু’চোখে আমার মাখিনি কাজল
খোঁপায় পরিনি সুগন্ধী ফুল
কুঞ্জ সাজিয়ে ডাকিনি তোমাকে

সেই ভালো তবে-
আরো দূরে যাও।
যদি বাঁচে প্রেম
হয়ে যাবে তাও
হৃদয়-কোঠরে কিংবদন্তী।

বৃহস্পতিবার, ১৯ মার্চ, ২০০৯

গল্পের প্রতিকূল সময়

এই বিপ্রতীপ সময়
গল্পের অনুকূল নয় মোটে
কথাগুলোর কোন ক্রমানুসার নেই ;যেন
বালকের অগোছালো খেলাঘর-----
কাঠের ঘোড়া
রোবোট-মানব
মাটির পুতুল
সাইরেন বাজানো গাড়ী
প্লাস্টিকের লাটিমগুলো
লাল-নীল ঘুড়ি
নাটাইয়ের এলোমেলো সুতো
রংগীন বেলুন
ঝিকি মিকি মার্বেল
----- সারা ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

জানিনা কোন কথা আগে বলা যায়
গোলাপ এবং বারুদের গন্ধ মিলে মিশে গেলে
সব কথা এলোমেলো হয়ে যায় বড়ো.........
সেন্সরড 'আহা!', 'উহু!' গুলো;
আগে ছাড়পত্র নিতে হবে-- কতটুকু বলা যাবে
কাম্য নয় কাঠগড়া অথবা হাতকড়া।

কেন বারবার আদি-বস্তির আকাশে
কাক-চিলের মচ্ছব লাগে;
এমন গল্প নিরাপদ নয়।

একমাত্র বৈধ ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোই
সত্য
এবং
নিরাপদ
আপাততঃ।

সোমবার, ১৬ মার্চ, ২০০৯

অসমাপ্ত ছবি অথবা হিংস্র-পালক

জলসূত্রি মেঘের ডানায় চড়ে স্বপ্নগুলো ক্রমশঃ নিসর্গের ভেতরে ঢুকে পড়ে;
ক্যানভাসে আঁকা অসমাপ্ত ছবি...................................................

সারাদিন টেলিফোনের তারে আর গলির মোড়ের
গাছের ডালে হুটোপুটি করা ফিঙে,শালিকগুলো
অস্তাচলে--- কেমন বাসায় ফেরে
কেমন তাদের নীড়
কতটুকু স্বপ্ন-তৃণে বুনে রাখে সেই ঘরগুলো ;
কোনদিন দেখা হয়নি।এমনি
হাজার অজ্ঞানতা নিয়ে একটি সম্পূর্ণ জীবন কেটে যায়।
প্রতিদিন চশমার পাওয়ার বাড়ে আরো
অজানা-অসম্পূর্ণতার সন্তাপগুলো
প্রকট অজগরের মতো জড়িয়ে ধরে
কান পাতলেই অস্থি-ভাঙ্গনের চূর চূর আর্তনাদ।

আমাদের আকাশে আর পায়রা উড়েনা
মেঘের আড়াল থেকে আচমকা এক ঝাঁক শকুন নেমে আসে
আস্তাকুড়-সন্ধানী;
আমাদের সবুজ ক্ষেতে হিংস্র-পালক উড়ে
অসময়ে ঝরে পড়ে আধ-পাকা ধান।

রবিবার, ৮ মার্চ, ২০০৯

যেভাবে ঘন্টাগুলো বাজে

এই যে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতরে অনুপ্রবিষ্ট আত্মাগুলো
আমার সমস্ত সমৃদ্ধি আর সম্পন্নতাটুকু তাদের কাছে ঋণী।

দ্বেষণার কেন্নো-কেঁচো আগলে রেখেছে পা
ঘিনঘিনে কেঁচো-নৃত্যে হাস্যকর তাল-লয়;
তোমার নুপুরের ভাঁজে এক পাল কৃমি-কীট
নেচে যাও, নাচলে পয়সা মিলে--নিদেন হাততালি।

তুমি কি জানো আমিওযে খুব কলা-কুশীলব
নাচের প্রতিটি মুদ্রা আমার আয়ত্ত?

ডিং ডং ডিং ডং
যেভাবে সন্ধ্যারতিতে গীর্জার ঘন্টাগুলো বেজে ওঠে
তেমনি আমার ভেতরেও বেজে ওঠে এক সতর্ক নিনাদ
আড়মোড়া ভাঙ্গে অগ্নিমান ক্রোধের দানব
তোমার উদগ্র লুব্ধতাটুকু নিমেষেই ভস্ম করে দিতে পারে;
কঠিন নিগড়ে বন্ধী করে রাখি।

তুমি আমার যোগে নেই।বিয়োগেও না।

তোমার উঠোন আর আমার দুয়ারে সহস্র যোজন ফাঁক।

সুস্থ সমাজ গড়তে হবে নিজেদেরকেই

স্বাধীনতার প্রায় আটত্রিশ বৎসর পরে সমস্ত দেশে আবার নতুন করে স্বাধীন স্বাধীন একটা আমেজ এসেছে। সবার মনে নতুন আশা--নতুন উদ্দীপনা।আমরা আশা করছি এবার আমাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সব কিছু আমাদের আশানুরূপ বদলে যাবে।সমস্ত অনাচার -অত্যাচার-দুর্নীতির মূল উৎপাটন করে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলা হবে।দ্রব্যমূল্য কমবে--মানুষের অভাব-অনটন দূর হয়ে যাবে ।এই প্রত্যাশার পেছনে সব থেকে বেশী সক্রিয় যে ফ্যাক্টর কাজ করছে তা হলো মানুষের আবেগ।আমরা আবেগপ্রবন জাতি।বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই
যুক্তির চেয়ে আবেগই আমাদের পরিচালিত করে বেশী।প্রকৃতপক্ষে এটাই আমাদের সব থেকে বড় শক্তি আবার সব থেকে বড় দুর্বলতাও।সোজা কথায়--আমাদের আবেগ যখন যুক্তির সাথে মিলে কাজ করে তখন আমরা যে কোন কঠিন সমস্যার সমাধান অনায়াসে করে নিতে পারি।আবার এর ব্যত্যয় হলে নেতিবাচক ফলাফলই স্বাভাবিক। নতুন সরকার নির্বাচনে আমাদের যুক্তি এবং আবেগ উভয়ই কাজ করেছে---সব দ্বিধা--সন্দেহের অবসান ঘটিয়ে আমরা স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে
অবলীলায় প্রত্যাখ্যান করতে পেরেছি।এটা আমাদের অনেক বড় অর্জন, অনেক বড় সাফল্য।এই সাফল্যের হাত ধরেই আমাদের অন্যান্য সমস্যাগুলোর সমাধানও করে নিতে পারবো বলেই বিশ্বাস করি।তবে অতি আবেগীয় প্রত্যাশায় ভেসে না গিয়ে আমাদের মনে রাখতে হবে--রাতারাতি সবকিছু বদলে ফেলা সম্ভব না।আমাদের ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে-----একটার পর একটা সমস্যার ক্রমান্বয় সমাধানের।আর আমাদের সব থেকে বড় দুর্বলতা যা তা হলো আমাদের সমস্ত উদ্দীপনাগুলো খুব তাড়াতাড়ি স্তিমিত হয়ে পড়ে ।এজন্যই আমাদের সাফল্যগুলোকে আমরা শেষপর্যন্ত ধরে রাখতে পারিনা।এই দুর্বলতাটা আমাদের কাটিয়ে উঠতেই হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে--সব সমস্যা সমাধানের চাবি আমাদেরই হাতে।আমরা নিজেরা সচেতন থাকলে--ঝিমিয়ে না পড়লে--কোন অপশক্তিই আমাদের সাফল্যকে দমিয়ে রাখতে পারবেনা।আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস --মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তার জ্বলজ্যান্ত প্রমান।এত বড় যুদ্ধগুলো আমরা জয় করে নিতে পেরেছি যখন তখন দেশগড়ার এই যুদ্ধেও আমরা অবশ্যই জয়ী হবো।কিন্তু এজন্য আমাদের একতাবদ্ধ থাকতে হবে----সচেতন থাকতে হবে।যে কোন অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে সবাইকে এক সাথে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠতে হবে।দেশগড়া শুধু সরকারের কাজ নয়।আমাদেরও নাগরিক-দায়িত্ব রয়েছে এব্যাপারে।আমাদের চোখের সামনে চোর চুরি করে নিয়ে গেলে আমরা চোর ধরা শুধু পুলিশের দায়িত্ব মনে করে--চুপ করে থাকলে চলবে কেন?এদেশ আমাদের । এর প্রতিটি কণায় মিশে আছে আমাদের শহীদ ভাইদের রক্ত।কাজেই একে সুরক্ষার দায়িত্বে আমাদেরও অনেক বেশী প্রয়োজনীয় ভূমিকা আছে।দারিদ্র্যপীড়িত এদেশের বেশীর ভাগ মানুষই উপযুক্ত শিক্ষা-দীক্ষার অভাবে অসচেতন। ভাল-মন্দ বোঝার, নীতি-যুক্তি, ন্যায়-অন্যায় বিচার করার সামর্থ্য তাদের নেই।এদেরকে সচেতন করে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে সুস্থ -চিন্তার শিক্ষিত বিবেকবান মানুষকেই। 'নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবো কেন'-এ ধরনের মনোভাব পোষণ করে থাকলে যে তিমিরে আছি সেই তিমিরেই পড়ে থাকতে হবে।ঝুড়িতে একটি পচা আম থাকলে বাকী আমগুলোতেও পচন ধরে। কাজেই সুস্থ-সুন্দর সমাজের প্রত্যাশায় শুধু নয়--সুস্থ-সুন্দর সমাজ গড়ার অঙ্গীকারে--- সক্রিয়তায় থাকতে হবে আমাদের নিজেদেরকেই।

আসুন সবাই মিলে আবর্জনাগুলো পরিষ্কার করি



স্বাধীনতা পরবর্তী সমস্ত নির্বাচনের রেকর্ড ভঙ্গ করে একচেটিয়া জয়লাভ করেছে বর্তমান নির্বাচিত সরকার।এই নির্বাচিত সরকারের কাছে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের প্রধানতম দাবী---যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এব্যাপারে সরকারের আগ্রহী সদিচ্ছা আমাদের আশাবাদী হতে সাহায্য করেছে বৈকি।কিন্তু সরকারের উপর সব ভার ছেড়ে দিয়ে আশাবাদী অপেক্ষায় বসে থাকলে আমাদের চলবেনা।এ ব্যপারে সরকারকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করতে হবে আমাদের।একাত্তরের প্রতিটি বিশ্বাসঘাতক দেশদ্রোহীর বিচার যাতে সুনিশ্চিত হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে আমাদের সবাইকে--যাতে একটাও যুদ্ধাপরাধী কোন ফাঁক গলে বেরিয়ে না যেতে পারে বিচারের আওতা থেকে।নিষিদ্ধ করতে হবে ওদের সমস্ত রাজনৈতিক কর্মকান্ড যাতে আবার সংগঠিত হয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
গ্ণতান্ত্রিক সরকার জনগণের জন্য --জনগণের দ্বারা--জনগনের মধ্য থেকে নির্বাচিত সরকার। কাজেই গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিটি কর্মকান্ডে জনতার সমর্থন এবং অংশগ্রহণ অপরিহার্য।এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।আর এই অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে হবে আমাদেরই।নির্বাচনের পরেই নির্বাচিতরা যাতে আমাদের ভুলে না যান--সেটা আমাদেরই দেখতে হবে।এ যাবত কাল আমরা দেখে এসেছি নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কিভাবে --কত তাড়াতাড়ি জনগণের কথা ভুলে গেছেন।গণতন্ত্রের লেবাসে স্বৈরশাসনের পরাকাষ্ঠা এদেশের মানুষ কম দেখেনি।বিগত তথাকথিত নির্বাচিত সরকারের আমলের স্বৈরাচারী কর্মকান্ড-উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ ----দুই দুইটা বৎসরের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের কথা আশাকরি সবার মনে এখনো তরতাজা।বর্তমান সরকারের কাছে আমরা এমনটি প্রত্যাশা করিনা--তাদের প্রতি আমাদের আস্থারও অভাব নাই।তারপরেও আর যাতে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব না হয় তা দেখতে হবে--সতর্ক থাকতে হবে---নিশ্চিত করতে হবে এদেশের জনগণকেই।সরকারের প্রতিটি উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সহযোগিতা করা যেমন আমাদের কর্তব্য--তেমনি সরকার তথা কোন জনপ্রতিনিধির অন্যায় কর্মতৎপরতায় প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়াও আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মাঝখান থেকেই ঊঠে এসেছেন---ভিন্ন কোন গ্রহ থেকে নয়।আমরা সবাই যেমন ভালমন্দে মেশানো মানুষ--ওরাও তাই।আমাদের প্রায় সকলের মাঝেই কমবেশী অপরাধ-প্রবণতা,লোভ-লালসা আছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য এদেশের আপামর জনতা যেভাবে একই প্লাটফরমে জড়ো হয়েছে ---মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রতিটি ক্ষেত্রে এভাবে একতাবদ্ধ থাকলে এদেশে গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠা অসম্ভব কিছু নয়।
রাষ্ট্রের কাছে আমরা কি চাই?চাই সুন্দর-নিরাপদ সামাজিক জীবনের নিশ্চয়তা।সন্ত্রাসবিহীন,অন্যায়-অবিচারের বাইরের নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা।আইনের যথাযথ প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ।কিন্তু এসব চাহিদা পূরণে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব এবং ভূমিকা কতটুকু ---তা কি আমরা ভেবে দেখি?উন্নত বিশ্বের আইন-কানুনের উদাহরণ বা উপমা আমাদের মতো দারিদ্রপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য খানিকটা হাস্যকরও বটে।যে দেশের অধিকাংশ মানুষ অক্ষরজ্ঞানহীন তারা আইন-কানুন ,রীতি-নীতি জানবে এবং মানবে এটা মনে হয় অতিকল্পনা হয়ে যায়।কিন্তু আমরা যারা তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ--আমাদের মাঝে কতজন শতভাগ আইন মেনে চলি?আমরা আইন-কানুনের চর্চা করলে এবং শিক্ষাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এব্যাপারে সচেতন করে তুললে ওরাও আইন মেনে চলতো বলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।ওরা চুরি-ছিনতাইয়ের মতো বেআইনী কাজগুলো করে সীমাহীন অভাবের তাড়নায়,অন্যায় করে অজ্ঞতার জন্য।
এসব নিম্নবিত্তরা চুরি করে অভাবে আর উচ্চবিত্তরা চুরি করে ,
অন্যায় জেনেও --লোভের স্বভাবে।
সামাজিক নিরাপত্তার প্রশ্নটি আসলেই আইনপ্রয়োগের প্রশ্নটি আসে।আমাদের দেশও আইনের বাইরে নয়--দেশে আইন-কানুন আছে ঠিকই কিন্তু তা মেনে চলার অভ্যাস তৈরি হয়নি আমাদের।শুধু আইন থাকলেই হয়না ---নিজেদের নীতিবোধ এবং বিবেককে জাগ্রত না রাখতে পারলে আইন শুধু কাগজের পৃষ্টায়ই লিপিবদ্ধ থাকবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব আইনের সুষ্ঠূ প্রয়োগ--আইনভঙ্গকারীর দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি বিধান যাতে একই অপরাধ দ্বিতীয়বার কেউ করার সাহস না পায়।এই শাস্তিবিধান প্রক্রিয়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে সক্রিয় সহযোগিতা করা আমাদের নাগরিক দায়িত্বের মাঝেই পড়ে।সমস্ত অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুললে অন্যায়কারী কখনো মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবেনা।

আসুন আমরা সকলে মিলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পাশাপাশি সমস্ত অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হই---দৃঢ় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি যাতে সমস্ত দুর্নীতি-সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের আবর্জনা মুক্ত করে একটি সত্যিকারের নিরাপদ --সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।


ভাষা আন্দোলনের শপথ হোক দল মত নির্বিশেষে দেশকে ভালবাসা




অন্যের সাথে ভাববিনিময়ের জন্যই শুধু নয় --ভাষা আমরা ব্যবহার করি নিজের সাথে কথোপকথনের জন্যেও।আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো কখনো নির্বাক নয়।সেই চিন্তা-ভাবনাগুলো অন্যেরা শুনতে না পেলেও আমরা আমাদের নিজের ভেতরে কথাগুলোকে সাজাই-গুছাই--সিদ্ধান্ত নেই।অর্থাৎ একটা মানুষের সার্বক্ষণিক সঙ্গী তার ভাষা।চিন্তাশুন্য মানুষ যেমন কল্পনা করা যায়না তেমনি ভাষাহীন মানুষও নয়।বোবারও নিজস্ব ভাষা আছে।চিন্তার বাহনই হলো ভাষা।আমাদের চিন্তা-ভাবনাগুলো কখনো আমরা নিজের ভেতরেই রেখে দেই, কখনো শেয়ার করি অন্যের সাথে,কখনোবা লিখে রাখি কাগজে- কলমে।ভাষা আমাদের মনও মননের প্রতিনিধি।আবেগ-অনুভবের বাহক।একজন মানুষকে চিনতে হলে ,বুঝতে হলে,তার সাথে ভাবের আদান-প্রদান করতে হলে সাহায্য নিতে হয় ভাষার।স্থান ভেদে কাল ভেদে ভাষা ভিন্ন ভিন্ন রূপে প্রতিভাত হয়।অর্থাৎ ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল।যুগে যুগে ,স্থানান্তরে মানুষের মুখের ভাষা বিবর্তিত হয়---বদলে যায়।আমার নিজের ভাষা আমার নিজের ভৌগলিক অবস্থানের ---জন্মভূমির প্রতিনিধিত্ব করে।আমি বাংলায় কথা বলি,আমার কথ্য ভাষা বাংলা অর্থাৎ আমি একজন বাংগালী।
একজন ইংরেজ ইংরেজীতে কথা বলে।একজন আরব আরবীতে। আবার ব্যতিক্রমও আছে।মনে করি --বাঙ্গালী মা-বাবার সন্তান কিন্তু লালিত -পালিত হলো একটি ভিন্নভাষী পরিবারে ।তার ভাষা কিন্তু বাংলা হবেনা।তার ভাষাও হবে ওই ভিন্নভাষা---যেখানে সে বড় হয়েছে।অন্য কথায় যার যার আজন্ম লালিত পরিবেশেই গড়ে উঠে মানুষের নিজের ভাষা।
একজন মানুষের নিজের ভাষা তার স্বকীয়তা-মৌলিকত্বের নির্দেশক।মানুষ নিজেকে যেমন ভালবাসে ---নিজস্ব স্বকীয়তা,নিজস্ব পরিচিতি, নিজস্ব স্বাধীনতাকে তেমনি ভালবাসে।এতে কোনরূপ বাধা বা প্রতিবন্ধকতা কাম্য নয় কখনোই।এর ব্যত্যয় হলেই সৃষ্টি হয় অসন্তোষের ---যার ফলশ্রুতি বিদ্রোহে রূপান্তরিত হতে সময় লাগেনা।
আমাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আমাদের স্বাধীনচেতনার,আমাদের মৌলিকত্বের প্রতি গভীর অনুরাগের প্রতীকি ইতিহাস হয়ে আছে।এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য,প্রেরণা বা তাৎপর্য নিছক বাংলাভাষায় কথা বলা অথবা লিখতে পারার জন্যেই ছিলনা।এর মূল উদ্দেশ্য বা প্রেরণা আরো অনেক গভীরে প্রোথিত।পৃথিবীর মানুষ আজ আর শুধু নিজের ঘরের ভিতর আবদ্ধ নেই।মানুষ ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবী জুড়ে।এ দেশের মানুষ যেমন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে--তেমনি আমাদের দেশেও ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে আগত মানুষের অভাব নেই। বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় আমরা কথা বলিনা বা বলবোনা একথাটি ঠিক নয়।পৃথিবীর অন্যান্য ভাষাকেও গ্রহণ না করলে জ্ঞান-বিজ্ঞান বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তৈরির ক্ষেত্রে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে সেটাও আমাদের কাম্য হতে পারেনা।আগেই বলেছি ভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র বাংলাভাষায় কথা বলার আন্দোলন ছিলনা---এটা ছিল আমাদের অস্তিত্বের স্বীকৃতির লড়াই।আমাদের স্বাধীন-স্বতন্ত্র সত্ত্বার অধিকার প্রতিষ্ঠার ,মর্যাদা রক্ষার লড়াই।নিপীড়ন -নির্যাতন-নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে ,অবহেলা-বঞ্চনার বিরুদ্ধে,কারো ক্রীড়নক হয়ে থাকার বিরুদ্ধে ---যে জাতিসত্ত্বাটি গুমরে গুমরে মরছিল,তিল তিল করে যে ক্ষোভগুলো জমা হয়ে ভিতরে ভিতরে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের জন্ম দিচ্ছিল --তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে বাহান্নতে।সেই আন্দোলন ছিল আমাদের জাগরণের আন্দোলন। আত্মোপলব্দির আন্দোলন--যার হাত ধরে আজ আমরা একটা স্বাধীন পতাকার অধিকার অর্জন করেছি।পৃথিবীর মাণচিত্রে 'বাংলাদেশ' নামের একটি স্বাধীন ভূখন্ডের নাম লিখেছি।
কোন আন্দোলনের রাস্তাই ফুল বিছানো থাকেনা।যে কোন আন্দোলনের সাফল্য--অনেক ত্যাগ, ধৈর্য , অধ্যবসায় এমনকি অনেক রক্তপাতও দাবী করে।উদাহরণস্বরূপ '১লা মে' শ্রমিক দিবসের কথাই ধরি।১৮৮৬খ্রীষ্টাব্দে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কর্মঘন্টার স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য শিকাগোর রাজপথ রক্ত-রঞ্জিত করে শ্রমিকেরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল,নির্দিষ্ট কর্মঘন্টার অধিকার প্রতিষ্ঠায় সফল হয়েছিল।তাদের ত্যাগের সুফল আজ আন্তর্জাতিক ভাবে সমস্ত বিশ্বের শ্রমিকেরা ভোগ করছে।সমগ্র বিশ্ব প্রতি বৎসর '১লা মে 'সেসব আত্মোৎসর্গকারী শ্রমিকদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে।তেমনি করেই আমাদের যে সোনার ছেলেরা রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে আমাদের ভাষা তথা মৌলিকত্বের স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছিল ---বিশ্ববাসী তাদের সেই আত্মত্যাগকে পরম শ্রদ্ধায় স্বীকৃতি দিয়েছে।আমাদের '২১ ফেব্রুয়ারী 'আজ আর শুধু আমাদের নয়--সমগ্র বিশ্বের 'ভাষা দিবস' রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে।এ আমাদের অনেক বড় গৌরব---অনেক বড় অহংকার । কিন্তু আমাদের এই গৌরবকে বিশ্ব-দরবারে সুপ্রতিষ্ঠিত-মহীয়ানরূপে দেখতে চাইলে আমাদের আরো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।আন্তর্জাতিক অঙ্গনে 'বাংলাদেশ ' নামক দেশটিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে হবে।যে দেশের ছেলেরা ভাষার জন্য প্রাণ দিতে ইতস্তত করেনি--স্বাধীনতার জন্য বুলেটের সামনে নির্দ্বিধায় বুক পেতে দিয়েছিল ----সে দেশ দেশদ্রোহী-স্বাধীনতাবিরোধীদের আবাসভূমি হবে ভাবা যায়না। যে মাটিতে শত শহীদের পবিত্র রক্তস্রোত বয়ে গেছে সে মাটিতে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়াবে স্বাধীনতাবিরোধীরা এই নির্মম পরিহাস কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।আবার কিছু লালসা-গ্রস্ত মানুষের দুর্নীতিগুলো যা এদেশের উন্নয়নের প্রতিবন্ধক তাদের এই কর্মকান্ডগুলোকেও মেনে নেওয়া যায়না।এসব অগৌরবের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করে তার হৃতমর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে হবে আমাদের সবাইকে মিলেমিশে---দলমত নির্বিশেষে।পক্ষ-বিপক্ষ নির্ধারিত হোক ---'দেশপ্রেমিক বনাম দেশদ্রোহী-স্বাধীনতাবিরোধী'--এভাবে।শুধুমাত্র দল বিভাজন করে অনৈক্য সৃষ্টি করে রাখলে বিশ্বাসঘাতক অপশক্তিগুলোই বারবার জয়ী হবে।
নিজের প্রাণের থেকেও দেশ বড় সে প্রমাণ রেখে গেছে আমাদের শহীদেরা ।তাহলে তাদের উত্তরসূরীরা কেন দেশকে দলের উর্ধ্বে স্থান দিতে পারবেনা?কারো পছন্দের দল ক্ষমতায় যেতে না পারলে সেকি সরকারী দলের সমস্ত ভাল কাজগুলোকেও বিরূপ দৃষ্টিতে দেখবে,বিরূপ সমালোচনা করবে --যাচাই-বাছাই ছাড়াই? আর যার পছন্দের দল ক্ষমতাসীন তারা সরকারের অন্যায় কাজগুলোও চুপ থেকে হজম করে যাবে নিজের মনোনীত দল বলে?এই মানসিকতা বলতে দ্বিধা নেই আমাদের অধিকাংশের মাঝেই আছে । এবং এটা হলো আত্মঘাতী-মানসিকতা। আমাদের সমস্ত পশ্চাৎপদতার মূল কারণ এটাই।যতদিন পর্যন্ত আমরা এই দলাদলিকে দেশের উন্নয়নের থেকেও বেশী প্রাধান্য দেবো ততদিন পর্যন্ত দেশ যে অন্ধকার-গহ্বরে পড়ে আছে সেখানেই পড়ে থাকবে। কারণ জনগণই শক্তি। জন-প্রতিরোধের মুখে কোন অন্যায় যেমন প্রশ্রয় পেতে পারেনা তেমনি জনগণের সহায়তা ছাড়া কোন উন্নয়ন তৎপরতার সাফল্যের সম্ভাবনাও কমে যায়।জনমতের অনেক বড় ভূমিকা আছে রাষ্ট্র পরিচালনায়,রাষ্ট্রের উন্নয়নে।

ভাষা আন্দোলনের এই ঐতিহাসিক মাসটিতে আমাদের সকলের শপথ হোক দেশ গড়ার ।স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে নির্মূল করার।দেশকে স্থান দিন সবার উপরে। দল নয় ----দেশকে ভালবাসুন। ভাষা আন্দোলনের এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর এটাই আমাদের একমাত্র এবং শ্রেষ্ট উপায়।


প্রবল-প্রতাপ শাসক



ক্রমাগত বদলে যায় দিনযাপনের রংগুলো
এখনো এই শেষ বিকেলের বারান্দার গ্রীলে
এক ফোঁটা কমলা-রোদ্দুরের গন্ধ লেগে আছে।

নিত্যকার রৌদ্র-দগ্ধ নগরীতে আনাগোনা
হাতের তেলোতে এক মুঠো রোদ মেখে নিলে
'পাপ','পাপ' ---চারপাশে ভৎর্সনার শব্দ ওঠে
এই সব নিত্য-রোদ-রং পাপ?
সবাই নগরপিতা?

সেই সব স্খলনের কি নাম তবে
ছায়ার আড়ালে ঢেকে রাখা কুকুরবিলাসগুলো?
পঙ্কে ডোবানো পাগুলো সাতবার জলে ধুয়ে নিলেই
শুচিস্মিত-পুণ্যাত্মা?

তোমার অসীম-করুণানিদান এক প্রভু আছেন জানি।
ধন্য তুমি। তোমার প্রভুকেও ধন্যবাদ।

মাথার উপরে শাণিত-কৃপাণ কখনো খাপবদ্ধ নয়;
আমার প্রবল-প্রতাপ শাসকের কথা তোমার জানা নেই।

আমার ভয়গুলো



ছেলেবেলা খাকী পোষাক দেখলে খুব ভয় পেতাম।মানে--পুলিশ।পুলিশ আমার সামনে কোন অপকর্ম করেছে বলে আমার ছেলেবেলার কোন স্মৃতি নেই অবশ্য।তবু যে কেন পুলিশের নাম শুনলেই একটা ভয় তাড়া করতো। আর শোনার চেয়ে বেশী-খাকী পোষাকটাই ছিল রূপকথার গল্পে শোনা -দানো-রাক্ষসের প্রতিমূর্ত্তি। এত ছেলেবেলায় কোন তফাৎ করা সম্ভব ছিলোনা তাই যে কোন দফতরের পিয়ন-আর্দালী(ওদের জন্যও ওই খাকী রংটাই প্রচলিত ছিল তখন) দেখলেও ভাবতাম পুলিশ।ভয়ের চোটে নিজেকে অদৃশ্য করে ফেলার কোন কলা-কৌশল, মন্ত্র-টন্ত্র জানা আছে কিনা মনে মনে হাতড়ে বেড়াতাম।
আমার কৈশোরের স্মৃতি হলো একাত্তর।পাকিস্থানী সেনার চক্রা -বক্রা পোষাক আর মিলিশিয়ার(আধা সামরিক) কালো পোষাক এমন প্রভাব ফেলেছিল --সেই কিশোর মনে যা থেকে আজ পর্যন্ত বেরিয়ে আসতে পারিনি।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বারবারই ঘটে।সেই ভয়টাই বারবার ফিরে ফিরে আসে।
এতো গেল পোষাক ভীতির কথা।
আরেক ধরনের মানুষ আমার ভীতির তালিকার প্রথম সারিতে আছে----তারা হলো দালাল। ছেলেবেলা জমির দালাল, বীমার দালাল,গরু-ছাগল ইত্যাদি ইত্যাদির দালালের সাথে পরিচিত ছিলাম।তারা হল নিরাপদ দালাল।
ভীতিকর দালাল দেখার শুরুও সেই একাত্তর থেকেই।স্বাধীনতা বিরোধী দালালদের বর্বর নৃশংসতার,বিশ্বাসঘাতকতার এবং চরম নোংরামীর ছবি দেখলাম সেই সময়েই।নিজের দেশের সাথে--দেশের মানুষের সাথে--নিজের পাড়া-প্রতিবেশী-স্বজনের সাথে সেই বিশ্বাসঘাতকতার দলিল আজো বিশ্বব্যাপী দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
সেই থেকেই' দালাল'( ব্যবসা- বাণিজ্যের ব্রোকারদের প্রসংগ এখানে আসছেনা) শব্দটির প্রতিও এক তীব্র ঘৃণাবোধ কাজ করে।
আমার ভয় এবং ঘৃণার পাত্র হলো যে কোন অপশক্তির দালাল।
বিভ্রান্তিকর ব্যাপার হলো দালালদের কোন নির্দিষ্ট পোষাক নেই।দেখে চেনার মতো কোন চিহ্ন শরীরে ধারণ করেনা। ওরা সাধারণ পোষাকে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ভীড়ে মিশে থাকে।আর পৌরাণিক কাহিনীর 'ঘরের শত্রু বিভীষণের'মতো অনবরত নিজের ঘরের দেয়ালে ছিদ্র করে যায়।চোরের মতো সিঁদ কেটে কেটে দেয়ালের ভিত দুর্বল করে দেয়একটু একটু করে।
দেশের শত্রুই ছদ্মবেশী দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করা প্রয়োজন।প্রয়োজনএদের প্রতিরোধ করার। নাহলে এই হাজার সমস্যা পীড়িত-ঘুণপোকা ধরা দেশটি ক্ষয় হতে হতে একসময় ধুলায় মিশে যাবে।
আমি ভীতু মানুষ। আমার মতো ভীতু মানুষ আরো অনেক আছে। কিন্তু ভীতু হলেও আমি সবসময় আশাবাদী।সারাক্ষণ খুব প্রত্যাশা নিয়ে থাকি একদিন সাহসী মানুষের সম্মিলিত হাতগুলো বলীয়ান হয়ে উঠবে। এবং আমার মতো ভীতু মানুষের ভয়ের কারণগুলো চিহ্নিত এবং নির্মূল করতে সক্ষম হবে।


গোর-খোদকের খোঁজে

গড্ডলিকা-স্রোতের শেষ ভেড়াটিও
কুজ্ঝটিকায় অদৃশ্য হলে
অন্ধকারের পরিতৃপ্ত চাদরের নীচে মুখ লুকোয় পৃথিবী

চাদঁ উঠবেনা আজ আর কিছুতেই
পরীর রাজ্যে মেঘের কায়েমী স্বৈরশাসন চলে।

রাজপ্রাসাদের ধ্বংস স্তুপের নীচে
গুমরে গুমরে ওঠে এক আর্তনাদ।

পাখীর মায়াবী-মহার্ঘ পালক
ধারালো খঞ্জর
এবং
একটি আনমনা হাত

নিজের ছায়াকেই আক্রান্ত করা

এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় হৃৎপিন্ডের রক্তক্ষরণ থামেনা।

মর্মমূলে বেঁধানো তীক্ষধার ছুরি
অজানা গোরস্থানের পথে নিঃসঙ্গ পথিক
গোর-খোদকের খোঁজে


কখনো
নিজের সমাধি নিজেকেই খোঁজতে হয়।


তখন আমরা কোথায় ছিলাম?

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কৌতুক নকশা আমার খুব প্রিয়।আপনাদের অনেকেই হয়ত শুনে থাকবেন।চোর এসে বাড়ীতে ঢুকেছে। গৃহকর্তা জেগে আছেন।চোরের আগমন সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকেবহাল।চোর একে একে জিনিষ-পত্র জড়ো করছে আর গৃহকর্তা সীমাহীন কৌতুহলে শুধু অবলোকন করে যাচ্ছেন--চোর শেষপর্যন্ত কি করে।শুধুই ভাবছেন-'দেখিনা কি করে'।এই ভাবনা -প্রক্রিয়াটা চলল চোরের প্রস্থান পর্যন্ত।'দেখিনা কি করে'--ভাবতে ভাবতে এতই মশগুল হয়ে রইলেন,চোর চোখের সামনে ঘরের সমস্ত জিনিষ বাঁধাছাদা করে নিয়ে নিশ্চিন্তে চলে গেল।গৃহকর্তা তখন বাস্তব জগতে ফিরলেন।তারপর গেলেন থানায় ডায়েরী লেখাতে।পুলিশ অফিসার একের পর এক ঘটনার বর্ণনা শুনে যাচ্ছেন আর প্রশ্ন করছেন --তখন আপনি কি করলেন?- ভদ্রলোক বারবার একই উত্তর দিচ্ছেন--' আমিতো তখন ভাবছি দেখিনা কি করে'। ডায়েরী লেখা শেষ করে ভদ্রলোকের চূড়ান্ত বোকামীতে মহাবিরক্ত পুলিশ অফিসার বললেন--এবার তাহলে বাড়ি যান আর বসে বসে ভাবুন',দেখিনা পুলিশ কি করে '।
প্রসঙ্গ লালনের ভাস্কর্য ভাঙ্গা।মূর্তি না ভাস্কর্য তা নিয়েও বিতর্ক। আরেকদল ব্যস্ত এর শিল্পগুণাগুণ বিচারে। এযেন পালাগানের আসর।একদলএক চরণ গাইল প্রত্যুত্তর দিল অন্য দল আগের চরণের বিরোধিতা করে।
আসল কথাটি হচ্ছে- এটা একটা পুতুল, মূর্তি বা ভাস্কর্য যাই হোক না কেন স্থাপিত হয়েছিল লালনের স্মারক রূপে। এই ভাস্কর্যটি অপসারণ একে অপমান করারই নামান্তর মাত্র।
সমস্ত দেশ জুড়ে বিক্ষোভ -অসন্তোষ চলছে। এব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন আছে সকলের কাছে, আমার নিজের কাছেও।
ভাস্কর্য ভাংগার এই সিদ্ধান্তটি যখন নেওয়া হয়েছিল তখন থেকে বাস্তবে
কার্যকরী হওয়ার মাঝখানের সময়টাতে আমরা কোথায় ছিলাম?সম্মিলিত হাতের শক্তিতো অপরিসীম।আমরা কেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে পারিনা আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি
স্বরূপ এসব অনভিপ্রেত কার্যকলাপ?
ঘটনা কি এখানেই সীমাবদ্ধ --লালনের ভাস্কর্য পর্যন্ত?এরকম ঘটনা কি একের পর এক ঘটবেনা যা আমাদের সংস্কৃতির শিকড় শুদ্ধ ধরে একসময় টান দেবে?
কি করব আমরা ? ভানুর কৌতুক-নকশার বোকা গৃহকর্তা হয়ে ভেবে যাবো ' দেখিনা কি করে'--পরে থানায় গিয়ে ডায়েরী লিখিয়ে আসার জন্য?


ক্ষিতিজ-কন্যা সম নারী

কি নিয়ম শুদ্ধতার?
অন্তরস্থ সমস্ত অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে
কাষ্ঠ বৎ পুড়ে যাবে কাষ্ঠ-পুত্তলিকা?
এমন জ্বলন-
জ্বলন্ত শবের তাপে তৃণখন্ড ছাই?

বিষদাঁত ভেংগে দিলে আবার গজাবে বিষদাঁত
গরলে গরলে বাড়ে কালকুটের আয়ু।

কী অপরূপ পরিহাস বিকিরণ করে
অতি হীন কাঁচ-খন্ড
পরশ-পাথর ভ্রমে-
মখমলে মোড়া সোনার থালায় তুলে নিলে।
কী অদ্ভুত বিভ্রান্তি!
ক্ষমাহীন অশুদ্ধতা-গ্লানি?

অবিনাশী নয় প্রেম
দমকা হাওয়ায়-
পুরোনো গোলাপ-দল ঝরে ঝরে পড়ে;
বৃথাই অমৃত বিতরণ--সোনার চামচে।

অগ্নি-নিরীক্ষণে যাবে তুমি, কতটুকু সতী?
ষোলশ গোপিনী সখা কৃষ্ণ চায়
ক্ষিতিজ-কন্যা সম নারী।

এই লেখাটি বোদ্ধা পাঠকের জন্য নয়

অনেক আগে পড়া একটি উপন্যাসের অংশ বিশেষ এখনো মাঝে মাঝে মনে পড়ে( যতদূর মনে পড়ছে প্রমথ নাথ বিশীর লেখা-- বইর নামটাও মনে নেই এজন্য পাঠক ক্ষমা করবেন)।
এক ছোট ছেলে একটি দেশলাইয়ের বাক্সে কতকগুলো পিঁপড়া রেখে তার ভিতরে একটু একটু করে চিনি ঢালছে দেখে একজন জিজ্ঞেস করছে-----কি রে কি করছিস?তখন ছেলেটি উত্তর দিচ্ছে---পিঁপড়েকে চিনি খাওয়াচ্ছি, ঠাক্‌মা বলেছে পিঁপড়েকে চিনি খাওয়ালে পুণ্যি হয়।
এই কথোপকথনটি পড়ে খুব মজা পেয়েছিলাম বলে এখনো কথাগুলো মনে আছে। আর এখন বারেবারেই মনে পড়ে যায় এই কথাগুলো।
আমি রাজনীতি নিয়ে কোন আলোচনা করতে চাইনা। ওসবের জন্য অনেক বড়বড় মানুষ আছেন। যারা এসব ভাল বুঝেন এবং আলোচনা করেন। এক দল আলোচনা করেন আর আরেক দল নিজস্ব ভঙ্গিতে তার সমালোচনা করেন। (বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেই সমালোচনার একটি বিশিষ্ট ভঙ্গি আছে)।এসব পড়ে প্রায়ই বিস্তর জ্ঞান বৃদ্ধি হয় এবং আনন্দের অনেক খোরাকও পাওয়া যায়।
আমার কথাগুলো হল ভিন্ন। খুব সাধারণ একজন নাগরিক হিসাবে-আমি যা চাই তা হলো প্রাণ খুলে কথা বলতে।নিজের পছন্দ -অপছন্দ ব্যক্ত করতে।অন্যের পছন্দ-অপছন্দেরকথা শুনতে।
কিছু পুণ্যকামী মানুষ আছেন যারা সবসময় আমাদের উপকার করে পুণ্য অর্জন করতে চান।তাই বার বার আমরা সেই দেয়াশলাইয়ের বাক্সে ফিরে যাই। বাইরে থেকে বাক্সের ভিতরেএকটু একটু করে চিনি ঢালা হয়।
কিন্তু পিঁপড়া বাক্সের ভিতরে বাতাসের অভাবে মরে গেলে চিনিটা খাবে কে?

পাখীদের ভাষা

বিধ্বংসী প্রলয় ভাঙ্গে বাবুইয়ের বাসা
তিলে তিলে গড়ে তোলা স্বপ্ন-কুঞ্জ;
-------আর্তনাদের হা হা রবগুলো
কুড়োতে কুড়োতে-----কতদূর চলে গেছি !
থামাতে পারেনি কোন পিছু ডাক
এক অগম্য গন্তব্যের দিকে
------এ আমার অগস্ত্য যাত্রা তবে?

বিহঙ্গম নীড়ে ফেরে সায়াহ্ন-বেলায়
অনিকেত বিহগ খুঁজে সবুজ ঠিকানা।

কি করে বুঝবে তুমি পাখীদের ভাষা
চঞ্চুতে প্রেম আর বক্ষময় স্বপ্নের কোলাহল
কখনো খোঁজেছো?

অবজ্ঞার অভিনয়

ক্রমশঃ
নিবিড় কুয়াশা ঢাকে হরিৎ ভূ-খন্ড
কোথাও উঠছে এক কাঁচের দেয়াল

অন্তহীন নীলাম্বরে স্বপ্ন-চয়ন শুধু
ফলতঃ স্বহস্তে রক্তাক্ত করা আপন হৃৎপিন্ড।

দেবত্বে বিশ্বাসী নই
কোন আসক্তি নেই স্বর্ণমুকুটে;
সখ্যতার করস্পর্শ ঢের বেশী দামী।

জানেনা সে—-
কিভাবে নীলাক্ত করে অবজ্ঞার অভিনয়

যে থাকে–তেপান্তরের অপর পারে
প্রগাঢ় সবুজ এক দ্বীপের ভেতর।

মানুষের প্রতিচ্ছবি

কখনো
বদলে দিতে ইচছে করে দৈনন্দিন দৃশ্যপট
ইচ্ছে করে--
তছনছ টুকরো টুকরো চূর্ণ-বিচূর্ণ করি
স্তাবর অস্তাবর যতকিছু ।

নিজেকেও
ঝুরো ঝুরো ভেঙ্গেঁ
আবার নতুন করে গড়ি মাটির পুতুলের মতো ।

কেন মানবিক আয়নায় বারবার
শার্দ্দুলের মুখচ্ছবি বিম্বিত হবে?
মানুষের বুকের ভেতরে আদিম জঙ্গল আর কত?
বাৎসল্যের দূর্বাঘাসগুলো আর কত কাল
পুড়ে পুড়ে যাবে হিংসার লাভাস্রোতে?

বদলে দিতে ইচ্ছে করে 'দর্পণ ' নামের
এই কাঁচ খন্ডটাকেই

বদলানো গেলে হয়তোবা
মুকুরে ফুটবে নিজস্ব আকৃতি------- মানুষেরই।

ক্লাউন

সার্কাসের দড়িতে ঝুলছে একটি ক্লাউন
দড়াবাজ নয় তাই পারেনা নিপুণ
কোন কৌশলের খেলা

কোন পথে নেমে যাবে
শিখেনি যে তাও।

উপরে অনন্ত আকাশ
তবু
দু'টি পাখা নেই বলে
উড়তে পারেনা;
নীচে রুখা মাটি
ভয়-
হাত ফস্কালেই চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে।

ঝুলছে
ঝুলেই যাচ্ছে
এভাবে ঝুলেই যাবে বুঝি
অনন্ত- অনন্তকাল ধরে।

শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০০৯

যেভাবে ঘন্টাগুলো বাজে

এই যে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতরে অনুপ্রবিষ্ট আত্মাগুলো
আমার সমস্ত সমৃদ্ধি আর সম্পন্নতাটুকু তাদের কাছে ঋণী।

দ্বেষণার কেন্নো-কেঁচো আগলে রেখেছে পা
ঘিনঘিনে কেঁচো-নৃত্যে হাস্যকর তাল-লয়;
তোমার নুপুরের ভাঁজে এক পাল কৃমি-কীট
নেচে যাও, নাচলে পয়সা মিলে--নিদেন হাততালি।

তুমি কি জানো আমিওযে খুব কলা-কুশীলব
নাচের প্রতিটি মুদ্রা আমার আয়ত্ত?

ডিং ডং ডিং ডং
যেভাবে সন্ধ্যারতিতে গীর্জার ঘন্টাগুলো বেজে ওঠে
তেমনি আমার ভেতরেও বেজে ওঠে এক সতর্ক নিনাদ
আড়মোড়া ভাঙ্গে অগ্নিমান ক্রোধের দানব
তোমার উদগ্র লুব্ধতাটুকু নিমেষেই ভস্ম করে দিতে পারে;
কঠিন নিগড়ে বন্ধী করে রাখি।

তুমি আমার যোগে নেই।বিয়োগেও না।

তোমার উঠোন আর আমার দুয়ারে সহস্র যোজন ফাঁক।