ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি কৌতুক নকশা আমার খুব প্রিয়।আপনাদের অনেকেই হয়ত শুনে থাকবেন।চোর এসে বাড়ীতে ঢুকেছে। গৃহকর্তা জেগে আছেন।চোরের আগমন সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকেবহাল।চোর একে একে জিনিষ-পত্র জড়ো করছে আর গৃহকর্তা সীমাহীন কৌতুহলে শুধু অবলোকন করে যাচ্ছেন--চোর শেষপর্যন্ত কি করে।শুধুই ভাবছেন-'দেখিনা কি করে'।এই ভাবনা -প্রক্রিয়াটা চলল চোরের প্রস্থান পর্যন্ত।'দেখিনা কি করে'--ভাবতে ভাবতে এতই মশগুল হয়ে রইলেন,চোর চোখের সামনে ঘরের সমস্ত জিনিষ বাঁধাছাদা করে নিয়ে নিশ্চিন্তে চলে গেল।গৃহকর্তা তখন বাস্তব জগতে ফিরলেন।তারপর গেলেন থানায় ডায়েরী লেখাতে।পুলিশ অফিসার একের পর এক ঘটনার বর্ণনা শুনে যাচ্ছেন আর প্রশ্ন করছেন --তখন আপনি কি করলেন?- ভদ্রলোক বারবার একই উত্তর দিচ্ছেন--' আমিতো তখন ভাবছি দেখিনা কি করে'। ডায়েরী লেখা শেষ করে ভদ্রলোকের চূড়ান্ত বোকামীতে মহাবিরক্ত পুলিশ অফিসার বললেন--এবার তাহলে বাড়ি যান আর বসে বসে ভাবুন',দেখিনা পুলিশ কি করে '।
প্রসঙ্গ লালনের ভাস্কর্য ভাঙ্গা।মূর্তি না ভাস্কর্য তা নিয়েও বিতর্ক। আরেকদল ব্যস্ত এর শিল্পগুণাগুণ বিচারে। এযেন পালাগানের আসর।একদলএক চরণ গাইল প্রত্যুত্তর দিল অন্য দল আগের চরণের বিরোধিতা করে।
আসল কথাটি হচ্ছে- এটা একটা পুতুল, মূর্তি বা ভাস্কর্য যাই হোক না কেন স্থাপিত হয়েছিল লালনের স্মারক রূপে। এই ভাস্কর্যটি অপসারণ একে অপমান করারই নামান্তর মাত্র।
সমস্ত দেশ জুড়ে বিক্ষোভ -অসন্তোষ চলছে। এব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন আছে সকলের কাছে, আমার নিজের কাছেও।
ভাস্কর্য ভাংগার এই সিদ্ধান্তটি যখন নেওয়া হয়েছিল তখন থেকে বাস্তবে
কার্যকরী হওয়ার মাঝখানের সময়টাতে আমরা কোথায় ছিলাম?সম্মিলিত হাতের শক্তিতো অপরিসীম।আমরা কেন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে পারিনা আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি
স্বরূপ এসব অনভিপ্রেত কার্যকলাপ?
ঘটনা কি এখানেই সীমাবদ্ধ --লালনের ভাস্কর্য পর্যন্ত?এরকম ঘটনা কি একের পর এক ঘটবেনা যা আমাদের সংস্কৃতির শিকড় শুদ্ধ ধরে একসময় টান দেবে?
কি করব আমরা ? ভানুর কৌতুক-নকশার বোকা গৃহকর্তা হয়ে ভেবে যাবো ' দেখিনা কি করে'--পরে থানায় গিয়ে ডায়েরী লিখিয়ে আসার জন্য?
রবিবার, ৮ মার্চ, ২০০৯
তখন আমরা কোথায় ছিলাম?
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন