বুধবার, ২৮ মে, ২০১৪

ছুরিটা ঝুলে আছে শূন্যে

মমিঘরে রাখছি তুলে নরম পাপড়িগুলো।

কিছুতেই মাতাল হবোনা আজ আর-----
ভাবতেই--দুই পা টলোমলো ;ভুল হলো নাচের মুদ্রায়।

যে সব তীক্ষফলা শূন্যে ঝুলে থাকে ; শূন্যেই মানানসই,
ঝলসানো রোদে শুধু রংধনুর বিভ্রম তৈরি করে ; লক্ষ্যভেদী নয়।
ট্রাপিজের খেলা দেখি ধুন্ধুমার সার্কাসঘরে
দড়ির এমাথা ওমাথা ঘুরে ঘুরে
সেই শুরুতেই ফিরে আসা-----' খেল খতম, পয়সা হজম' ।

হিমঘরে তৈরি আছে ঠান্ডা কফিন
চকমকি পাথর
এবং
ধারালো তলোয়ার।


শীতলনিদ্রায় যাবার আগে জেনে নিতে হবে
তীরগুলো কি শুধু পাখির বুকের মাপেই তৈরি হয়।







_____________________________________________________________









বৃহস্পতিবার, ২২ মে, ২০১৪

একদিন কৃষ্ণচূড়া আড্ডার

" মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি
বাঁশি কই আগের মতো বাজেনা.........................."
আমাদের বাঁশি আগের মতো নাই বাজুক , ভারী ভাল লাগছিল শাড়ী পরে হাত ভর্তি চুড়ি ,গালে আলপনা আঁকা বাচ্চা মেয়েগুলোকে দেখতে।পরীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছিল একেকজন।হাতে নানা রংয়ের চরকি, বেলুন।
ভুভুজেলার মতো অসহ্য এই বস্তুটা কবে, কিভাবে যে এসে ঢুকলো এদেশে!বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলো মহানন্দে বাজিয়েই যাচ্ছে । লোকজন মহা বিরক্ত হচ্ছে। একজনকে বলতে শুনলাম--- আইন করে এই জিনিষটাকে নিষিদ্ধ করে দেওয়া দরকার।মনে মনে ভদ্রলোকের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে ফেললাম তক্ষুণি।
খোলা মাঠগুলোতে বসেছিল  বৈশাখিমেলা।ফুটপাতগুলোও  ভরে ঊঠেছিল হরেক পণ্যসম্ভারে।ঐতিহ্যবাহী পিঠা এবং পান্তা-ইলিশ ছিল অস্থায়ী খাবার দোকানগুলোর অন্যতম আকর্ষণ।পান্তা-ইলিশে আমার অবশ্য তেমন কোন আগ্রহ নেই।তবে  পিঠা অবশ্যই অনেক বেশী পছন্দের।তাই খেলাম । আর ফুচকা।লেবুর সরবত।রাস্তাঘাটের খাবার বেশ পছন্দ করি। হাইজিন  মানিনা।আর হ্যাঁ রাস্তার খাবার খেয়ে অসুস্থ হয়েছি কখনো ,এটা আমার শত্রুও বলতে পারবেনা।
 হ্যাঁ নববর্ষের কথাই বলছি।
এইতো সেদিন। মাত্রই মাসখানেক আগে রমনার বটমূলে বসেছিল বাংগালীর প্রাণের মেলা।বর্ষবরণ।পহেলা বৈশাখের আসর। নববর্ষকে স্বাগত জানানোর আয়োজন ছিল সমগ্র বাংলাদেশ জুড়েই।
চারুকলার মনোজ্ঞ মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় পহেলা বৈশাখ ১৪২১ সালকে স্বাগত জানানোর পালা।
এরপরে বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন ঐতিহাসিক রমনার বটমূল চত্বরে ছায়ানটের সাংস্কৃতিক  অনুষ্ঠানের
মাধ্যমে।শোভাযাত্রার জন্য চারুকলার শিল্পীরা তৈরি করেছিল রং- বেরংয়ের মুখোশ এবং বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিকৃতি।রবীন্দ্রসরোবর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ  প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ স্থান ,সরকারী-বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল নানা আয়োজন।
বাংলা নববর্ষকে ঘিরে আমাদের যত ব্যাপক প্রস্তুতি, উদ্দীপনা, উল্লাস- আয়োজন, তেমনটি অন্য কোন উৎসব নিয়ে দেখা যায়না।এমনিতে বাংগালীর বারোমাসে তেরোপার্বন।সারা বছরই আমাদের উৎসব।হতে পারে তা ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, কিন্তু প্রভাব থাকে সব ধর্মের মানুষের উপরেই।ঈদের বাজারে দোকানগুলো উপচে পড়ে ক্রেতার ভীড়ে , সে কেবল মুসলমান ক্রেতা নয়।হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-ক্রিস্টান সব ধর্মের মানুষই আছে সেখানে।পূজা-পার্বনেও তাই।সেরকম উপচে পড়া জনস্রোত দেখা যায় শারদীয়া পূজামন্ডপে।আড্ডা আর উৎসব প্রিয় বাংগালী সবধরণের উৎসবকেই  প্রাণভরে উপভোগ করতে জানে।
আর আমরা যারা একটু আধটু সাহিত্যচর্চা করি অথবা স্রেফ পড়তে ভালবাসি ;সারা বৎসর অপেক্ষা করে থাকি ঈদের বিশেষ সংকলনের সাথে সাথে কলকাতার পূজাসংখ্যাগুলোর।হাতে পাওয়ার পর কোনটা রাখি ,কোনটা আগে পড়ি --তাও এক সমস্যা বটে।
সে যাক। বলছিলাম পহেলা বৈশাখের কথা ।বাংলা নববর্ষ সর্বধর্ম নির্বিশেষে আমাদের একমাত্র সার্বজনীন উৎসবের দিন।এজন্য আমরা  প্রতি বছরই এই দিনটাকে দিতে চাই একটা নতুন মাত্রা।
বর্ষবরণে পিছিয়ে থাকেনা আমাদের গ্রামীণ জনপদও।বরং তাদের কাছে দিনটির গুরুত্ব  অনেক বেশী অর্থবহ।
শুভ হালখাতা বা সালতামামির দিন।নানা  বর্ণাঢ্য আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলেও পালিত হয় দিনটি।
আমার ছেলে বেলায়, আমাদের গ্রামের বাড়ীতে শুভ হালখাতার মিষ্টি খাওয়ার প্রচুর স্মৃতি আছে।
শুধুই বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গ কেন, বিশ্বের যেখানে যত বাংগালী আছে ; এমনকি সুদূর পশ্চিমা ইউরোপ আমেরিকার বাংগালী কম্যুইনিটিগুলো পর্যন্ত  নববর্ষ উদ্‌যাপন করে বিপুল আগ্রহ-উদ্দীপনার সাথে।মানুষ যেখানেই ,যতদূরেই যাকনা কেন নিজের শিকড়ের টানকে ভুলতে পারেনা। ভুলতে পারেনা নিজস্ব সংস্কৃতি।
বরং তখন দেশ নাগালের বাইরে থাকে বলেই স্মৃতিকাতরতায় বিমর্ষ হতে হতে বিদেশের মাটিতেও তুলে আনতে চায় এক টুকরো স্বদেশ ;হলোই বা একদিনের জন্য।
" এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ ।
তাপসনিঃশ্বাসবায়ে   মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে ,
বৎসরের আবর্জনা  দূর হয়ে যাক ।"
গ্লোবালওয়ার্মিং এর জাঁতাকলে পড়ে ঋতুচক্রে ঘটেছে অদ্ভুত বিবর্তন।যতই বৈশাখকে আমরা ডাকাডাকি করিনা কেন কালবৈশাখি ঝড়জলে 'বৎসরের আবর্জনা' সব ধুয়ে মুছে নিয়ে যাবার জন্য ; কালবৈশাখির সেই ঝড় আর আসেনা আগের মতো নিয়ম করে, ঠিক সময়মতো। পালটে গেছে তার নির্ধারিত সময়সূচি ।আবহাওয়ায় ঘটেছে ব্যাপক উলট-পালট।
নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ আমরা । তীব্রশীতের প্রকোপে জবুথবু হয়ে পড়ি  আবার অতিবেশী গরমও আমাদের কাম্য নয় কখনো। অভ্যস্ত নই।
এখন ঢাকাবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রচন্ড গরমে। ঢাকায় একদিনের তাপমাত্রা সূচক অনুযায়ী--৪০.২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঊঠতেই নাভিশ্বাস উঠে নগরবাসীর ;   ৫৪ বৎসরের  আবহাওয়ার রেকর্ড  পরীক্ষা করে দেখা যায় এ ধরণের উচ্চমাত্রার গরম ঢাকার ইতিহাসে নজিরবিহীন। নিঃসন্দেহে সহ্যসীমার শেষপ্রান্তে বসবাস করছে নগরবাসী।তার উপরে আছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।
বৃষ্টি হচ্ছে ।সাথে ঝড়তুফান-শিলাবৃষ্টিও ; মাঝে মাঝেই ।কিন্তু গরমের প্রকোপ কমছেনা তাতে।দরকার ছিল ক'দিন টানা বৃষ্টির। তেমনটা হচ্ছেনা।ঢাকার  টুকটাক খুচরো বৃষ্টিগুলো কিন্তু খুব আজব ধরণের।হয়ত এই গলিতে বৃষ্টি হচ্ছে ,পাশের গলিতে তার ছিঁটেফোঁটা লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবেনা। এমন প্রায়ই হয়।বলতেই হয় ,ঢাকার বৃষ্টির ভুগোল জ্ঞান  নেই।
বৃষ্টি হবে আর একটু ভিজবোনা এমন হয় নাকি?আর কিছু না হোক বারান্দায় বৃষ্টির ছাঁটের  মাঝে দাঁড়িয়ে হাতটা অন্ততঃ বাড়িয়ে দেবো অবিরল জলধারার আদর মেখে নিতে। বৃষ্টিপাগল কেউ বাসার ছাদে কেউ গলিতে নেমে  মেতে উঠে ধারাস্নানে।এইসব দৃশ্য খুব স্মৃতিভারাতুর করে ফেলে।মনে পড়ে  শৈশবের বৃষ্টিভেজা দিনের কথা।ধারাজলে অবগাহন। শিল কুড়ানো।কাগজের নৌকা ভাসানো।
 " আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায়
অশ্রুভরা দুটি চোখ
তুমি ব্যাথার কাজল মেখে
 লুকিয়ে ছিলে ওই মুখ..............."
কাকে মনে পড়ে? মনে পড়ে নিজেরই হারানো শৈশব-কৈশোর।তারুণ্যের উচ্ছাস ভরা মায়াময় দিন যা কালচক্রে চলে যায় ব্যাথার কাজলের আড়ালে।
এই উত্তপ্ত দিন আর বৃষ্টির টানা-হেঁচড়ার মাঝেই ঢাকা নগরী রূপান্তরিত হয়ে গেছে পুষ্পনগরীতে।উদ্যানে, পার্কে, আইল্যন্ডে ,শহরের অলি-গলিতে  থরে থরে ফুটে গেছে গ্রীষ্মের ফুলগুলো।কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, সোনালু, জারুল,  একাশিয়া,শিরিষের অপূর্ব রূপমাধুর্য্য থেকে চোখ ফেরানো মুশকিল।
থরে থরে ফুটে আছে বেগুনি জারুল আর সাদা কুরচির ফুল। গুচ্ছ গুচ্ছ হলুদ সোনালু।আরো কত নাম না জানা পুষ্প-কুসুম।।ঘাসের বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট ঘাসফুলগুলো ।রূপের মেলায় তারাও যে পিছিয়ে নেই এমন বুঝা গেল প্রজাপতি আর ঘাসফড়িংয়ের চঞ্চল ওড়াওড়ি দেখে।
ইটপাথর-হাইরাইজের নাগরিক যান্ত্রিকতা আর রোদঝলসানো দিনের হাঁসফাঁস  অবস্থা থেকে নগরবাসীকে খানিকটা স্বস্তি দিতেই যেন প্রকৃতি নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছে এক নয়নাভিরাম পুষ্পোদ্যান।সূর্যকিরণের প্রখর দাবদাহের মাঝে প্রশান্তির স্নিগ্ধ স্পর্শ।
ঢাকায় এমনকি মনে হয় সমগ্র বাংলাদেশেই সব থেকে বেশী যে ফুল চোখে পড়ে সেটা হলো কৃষ্ণচূড়া।যার অন্য নাম গুলমোহর।আকাশের নীচে চমৎকার এক লালমখমলের সামিয়ানার মতো মেলে দিয়েছে নিজেকে  আর আশেপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছে  আলোক-রশ্মির মতো রক্ত লাল রংয়ের বিচ্ছুরণ।
" গুলমোহরের ফুল ঝরে যায়
বনে বনে শাখায় শাখায়
কেন যায়? কেন যায়? "
 এমন ফুলের মাসে কি ঘরে বসে থাকা যায়?রোজ বিকেলের অবসরে,বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভীড় করছে  প্রকৃতিপ্রেমিরা ; উদ্যানে, পার্কে ।
 এর মাঝেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজসেবি সংগঠন   'এক রঙ্গা এক ঘুড়ি' র  সদস্যরা( আমিও তাদের একজন) ,সংসদ ভবন সংলগ্ন   চন্দ্রিমা উদ্যানে আয়োজন করে ফেলল এক চমৎকার ' কৃষ্ণচূড়া আড্ডা' র।উদ্দেশ্য শুধুই ঘুরে বেড়ানো আর নির্মল আড্ডা।

আড্ডা দিতে আমরা কখনো পিছপা হইনা। সে ঘরোয়া আড্ডাই হোক বা খোলা আকাশের নীচে অনেক প্রাণের সম্মিলিত কলকাকলীতে।অনেকেই এলেন পরিবারের লোকজনকে নিয়ে, অনেকে এলেন কোন বন্ধুকে সংগী করে।কেউবা একা একাই চলে এলেন সবার সাথে আনন্দমেলার অংশভাগী হতে।একটা বিকেল ভরে উঠল, পরিপূর্ণ হয়ে রইল অনেক কথার কলকাকলি--গুনগুনানিতে।
পড়ে থাক হাজারো আটপৌরে যন্ত্রণা। রোদতপ্ত দিন। জীবনের শত পাওয়া না পাওয়া হিসেবের খাতা। অন্ততঃ একটা বিকেলতো  ভরে রইল।  মন গেয়ে উঠল,
" জগতের আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ।
...............................................................
জয়ধ্বণি  শুনিয়ে যাবো  এ মোর নিবেদন" ।

___________________________________________________________________

বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

নীল ফিঙ্গে

বিকেলটা যখন খুব মৃদু পায়ে হেঁটে আসছিল
জলতরঙ্গের গুনগুন আবেশের মতো ;
মনে পড়লো অস্তরাগের কথা।

যে নদীর স্রোতে দোলে মেঘমালা কালোকাজলের মতো ;
ঢেউয়ে ঢেউয়ে নাচে মেঘভারানত আকাশের ছবি ;
আমিও সে নদীর নাম রেখেছি-----কাজল নদী।

দীর্ঘবিষাদমগ্ন দুপুরের পরে
অপেক্ষায় থাকে স্নিগ্ধ জল ছলছল নদীকলস্বরা।

নদী যাচ্ছে বিকেলের কাছে-------
নাকি বিকেলটাই এগিয়ে আসছে !

আজ সারাদিন কেটে গেল একটা নীলফিঙ্গের খোঁজে ;
এই একটা নাম দিনভর বেজে বেজে গেল। জুড়ে রইল।

সে কোথায় থাকে?

খুঁজবো? 


----------------------------------------------------------------------------

কিচ্ছু যায় আসেনা




বারান্দায় কুকুরের লেজের মতো বাঁকা একটা ছায়া পড়ে আছে।

ক্লীব হয়ে যাচ্ছি।কিছুতেই যায় আসেনা কিছু।

সময়কে পাখির মতো খাঁচায় ঝুলিয়ে রাখি
খেয়ালখুশীমতো দোল খেয়ে যাক।

কিছুই যায় আসেনা।

উঠোনে ঝুলিয়ে রাখি পোড়ালাশ ,সার্কাসের ক্লাউনের মতো।
লাশের কি আসে যায় মানুষের বীভৎসউল্লাসে?

কি দরকার এতো প্রাযুক্তিক উৎকর্ষের হৈ চৈ ;
মায়ের ছেলে যদি মাঝনদীতেই হারিয়ে যায় বাড়ী ফেরার পথে?

সময় হেঁটে যাচ্ছে তমসাচ্ছন্নজঙ্গলের দিকে,
সভ্যতার পোশাক আশাক খুলে ফেলে,
আদিমগুহার পথে হাঁটছে মানুষ।
অথবা
আস্ত একটা অন্ধকারবনই উঠে এসেছে জনপদে।পশুর অভয়ারণ্য।


লাল টেলিফোন পাশে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছো শীতাতপ ঘরে?
গহনঅরণ্য থেকে হা-মুখ অজগর আসছে ছুটে।
শুনতে পাচ্ছো? কিচ্ছু যায় আসেনা?

এখানে জীবন যেন জলে ভাসা তুচ্ছ খড়কুটো
যেমন তেমন ভেসে যাক বাতাসের তোড়ে,
হা-ঘরে মানুষগুলো বাঁচুকমরুক ;কিচ্ছু যায় আসেনা।



_______________________________________________________________


মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০১৪

ফেরাটা সহজ নয়

 অপেক্ষায় ছিল তিনরঙ্গা  তিনটি বিস্ময় এবং উলটে যাওয়া একটি চেসবোর্ড।



অবজ্ঞার ঢেউয়ের ভেতর ডুবসাঁতার কাটছিল যে মাছ ,
সেওতো পেরিয়ে গেল অর্ধেক নদী।
সন্তরণপটু মাছেরাও ধরা পড়ে নিকিরির সুনিপুন জালে।
ট্রলারটা এগিয়ে আসছে  মাঝনদীর দিকে..............................................

একটা ছেঁড়াখোঁড়া বারোয়ারিমেঘ উড়ে এসে জলে ছায়া ফেলে, প্রতিচ্ছায়া খুঁজে ;
আকাশেরও কম নয় আয়নাবিলাস।

বাড়ীটা ভীষণ ডাকে ;
টিনের চাল বেয়ে নেমে আসা ঝুরোঝুরো ঝুলে থাকা শ্বেতকরবীর ঝাড়।
বাড়ী----ভাবলেই
কলকলস্বরে বয়ে যায় স্রোতস্বিনীকুশিয়ারা, সুরমাসুন্দরী।
বাতাসের তরঙ্গে কাঁপে সবুজ ধানের ক্ষেত।

ফেরাতো সহজ নয় ;
একবার মাণচিত্র ভুলে গেলে।
কতবার ভাবি-----
পথের দু'পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে আসা নুড়িগুলো আবার
কুড়াতে কুড়াতে একদিন ঠিকই ফিরে যাবো। হয়না।

বুধবার, ১৪ মে, ২০১৪

এক মাঠ বৃষ্টির ভেতর

দীর্ঘশ্বাসের অবশেষটুকু রেখে , দূরদিগন্তে ছায়াটা মিলিয়ে যায় ;
কুয়াশার মতো অস্পস্ট ধারাজলের ভেতরে।


কী যে প্রখর ফুটেছে জারুলসোনালু !পাতাগুলো লাজনম্র আবছা হয়ে আছে।
তীব্র কৃষ্ণচূড়া ; আকাশের নীচে সামিয়ানা পেতে অপেক্ষায় আছে
যেন এক্ষুণি শুরু হবে বর্ষামাঙ্গলিক
মেঘমল্লারের তালে তালে, নেচে যাবে একশ ময়ুর;
লালমখমলে
মেঘের অশ্রুগুলো টুপটাপ মুক্তোর মতো ঝরে গেছে আজ সারাদিন।

ফিরে আসে বৃষ্টিদিন,
কদমকেতকীর রাত ।

প্রবল উল্টেপাল্টে যায়,
খুলে যায় স্মৃতির সোনালীপাতাগুলো।
গভীরগোপন খামগুলো চন্দনসুগন্ধী কুঠরিতে অস্ফুটে কথা বলে ওঠে।

একটা যতিহীন সুদীর্ঘপথ হেঁটেছি কেবল ছায়ামগ্নতার ভেতরে ;
দরোজার বাইরে ছিল সুর্যশিখার পথ ;
স্বপ্নের ঘোরে কেউতো খুঁজেনা রোদতপ্ত দিন !

আজ কি দুঃখদিন?
অঝোরধারা চিরে উড়ে গেল একটি শালিখ ;
জুড়িটা কোথায় গেল কোথাও পাইনি খুঁজে।
চিলেকোঠার পাশে জড়োসড় ভিজেকাক।

আজকে নাহয়
এক মাঠ বৃষ্টির ভেতরেই ছড়িয়ে দিলাম রোজনামচার ছেঁড়াপাতাগুলো।











সোমবার, ১২ মে, ২০১৪

স্বপ্নলেখার খাতা

মেঘাচ্ছন্নআঁধার থেকে একটা ঝলমলে দিনের স্বপ্নই তবে উঠে আসুক।


স্বপ্নলেখার জন্য আমার চাই গোলাপীসুগন্ধী মাখা খাতা।যেখানে সেখানে স্বপ্ন লিখতে নেই।
সোনার পালঙ্ক চাই।
সোনারূপার জিয়নমরণকাঠি।
ময়ুরপুচ্ছের কলম।
এইসব প্রাসংগিক আয়োজন শেষ হলে ---একটা স্বপ্নপুরান লিখবো
প্যাপিরাসে পাওয়া হাজার বছরের কিচ্ছাউপাখ্যান।


দৈত্যগুলো সব পাথরখোঁদাই।
মাঝরাতে জীবন্ত হয়---হাতীশালে হাতী আর অশ্বশালার ঘোড়া ধরে ধরে খায়।
ডাইনীরা থাকে রূপবতী রানীর ছদ্মপোশাকে।আসল রানীরা ঊড়ে যায় পাখি হয়ে ;
বনেজঙ্গলে।

রাজাগুলো সব যুগে খুব অর্থগৃধ্নু ।কবরেও নিয়ে যায় হীরেজহরৎ ;
এসব লিখা আছে শিলালিপি ও তাম্রফলকে।

স্বপ্নখাতায় থাকবেনা কোন চেঙ্গিস--তৈমুর

বরং বিজনগহন অরণ্য থেকে  রানীকেই উদ্ধার করে আনি।
আলো ঝলমল সিংহাসনে  রানীর অভিষেক।




__________________________________________________________________










রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

গল্পের প্রতিকূল সময়

এই বিপ্রতীপ সময়
গল্পের অনুকূল নয় মোটে
কথাগুলোর কোন ক্রমানুসার নেই ; যেন
বালকের অগোছাল খেলাঘর..................
কাঠের ঘোড়া
রোবোটমানব
মাঠিরপুতুল
সাইরেন বাজানো গাড়ী
প্লাস্টিকের লাটিমগুলো
লালনীল ঘুড়ি
নাটাইয়ের এলোমেলো সুতো
রঙ্গীন বেলুন
ঝিকিমিকি মার্বেল
-----------সারা ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

জানিনা কোন কথা আগে বলা যায়
গোলাপ এবং বারুদের গন্ধ মিলেমিশে গেলে
সব কথা এলোমেলো হয়ে যায় বড়ো-------
সেন্সরড 'আহা' 'উহু' গুলো ;
আগে ছাড়পত্র নিতে হবে
কতটুকু বলা যাবে ;
কাম্য নয় কাঠগড়া অথবা হাতকড়া।

কেন বারবার আদিবস্তির আকাশে
কাকচিলের মচ্ছব লাগে বারবার
এমন গল্প নিরাপদ নয়।

একমাত্র বৈধ ক্যামেরায় তোলা ছবিগুলোই
সত্য
এবং
নিরাপদ
আপাততঃ ।


(১৯/৩/২০০৯)


--------------------------------------------------------------

শনিবার, ১০ মে, ২০১৪

নষ্টঘড়ির কাঁটা

নীল ক্যানভাসে আঁকা চেনাআধোচেনা ছবিগুলো ক্রমশঃ ঝাপসা হয়ে আসে ।


আচমকা আনন্দশিহরণে কেটেছে সারাটা বিকেল।
এমন ভাবছি ;
সহসাখুশীর এই ফুলঝুরি ফেরি করি গলি গলি ঘুরে
 গোধুলির রংমাখা এক খন্ড মেঘ পকেটে পুরে ঘুরে আসি সারাটা শহর


কোথায় সেই ক্ষণপূর্বে গড়া দৃশ্যকল্প !
কোথায় অস্তরাগ!
দাউ দাউ আগুনে পুড়ছে আকাশ। তীব্রবাষ্পতাপে শহরের গলি।

অকস্মাৎ প্রচন্ড হল্লা ওঠে--------------
 খোঁয়াড়ের বেড়া ভেঙ্গে বের হয়ে গেছে বরাহের পাল।
উদগ্রচিৎকারের নগ্নতায় থেমে গেছে প্রজাপতির পত্‌পত্‌ ডানার বাদ্য ;
মগ্নবিভোর পরাগের  ছন্দে ছন্দে বেজে ওঠা।

সময়ের গোলকধাঁধায় দিগ্‌ভ্রান্ত নাবিকেরা হারিয়ে ফেলেছে কম্পাস;
মাঝসমুদ্রের ঢেউয়ে।
লাইটহাঊস ভ্রমে মরীচিকার পথে ছুটছে জাহাজ।

বিভ্রান্ত-----
বড়ো বিভ্রান্ত সময়।


নষ্টঘড়ির কাঁটা ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মতো উলম্বস্থির হয়ে আছে।




----------------------------------------------------------------------------

সোমবার, ৫ মে, ২০১৪

এ্যাকুরিয়ামের প্রতিবেশী

কোথাও একটুখানি বাধে ;
কাঁচের মৎসঘরে মাছপোষানিষ্ঠুরতা এখনো শিখিনি।

এ্যাকুরিয়ামে-----------
জলের সমতলে ভাসছে মৃতমৎস । মরাচোখ জ্বলজ্বল করে ;
ফ্লুরোসেন্ট আলোর মাহাত্ব্য ।

কেন যে মানুষের এত প্রবল দখলদারিত্বলোভ ;
অর্থবিত্ত
নামযশ
ঘর ভর্তি সৌখিন আসবাব
এ্যান্টিক ডেকোরেশন পিস্‌ ।
আরো চাই। আরো আরো বেশী

খাঁচাবন্ধী পাখী ।
কচ্ছপ।
খরগোশ।
জলে সাঁতরানো মীন চায় ডাঙ্গার ঘরে।


এ্যাকুরিয়ামে প্রতিবেশী ;
মরামাছ
জ্যান্ত মানুষ।





-------------------------------------------------------------





প্ল্যানেটোরিয়াম আকাশ

রুক্ষতার প্রবল থাবার ভেতরে চলে যেতে যেতে
শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছি সবুজ গাছের পাতাগুলো ;
বাদামের খোলার মতো বিবর্ণ,রুক্ষসুক্ষ
কঠিন হচ্ছে ক্রমশঃ।

কালের সাক্ষিগোপাল--------------------
দেখে যাচ্ছি-- কিভাবে মানুষ জুড়ে দিচ্ছে ঘরের উপরে ঘর
প্লাস্টিক লেগোর মতো।ঢেকে দিচ্ছে অন্তঃরীক্ষ ;
যন্ত্রযান আর কারখানার কালোধোঁয়া।

এভাবেই হারিয়ে যাবে সবুজআকাশ ।
আর আমরা
সবুজস্মৃতি উদ্ধারে প্রজেক্টরে দেখবো সবুজ ধানক্ষেত ;
সেলুলয়েডের ফিতাবন্ধী ত্রিডাইমেনশন ছবি।

বিশুদ্ধ  আকাশ দেখাব্যাকুলতায় 
প্ল্যানেটোরিয়ামের হেলানো চেয়ারে বসে দেখবো
রাতের তারকামন্ডল।

দেখা হবেনা
শারদীয়া মেঘরঙ্গলীলার রঙ্গীন আনাগোনা।

শুধুমাত্র-----
আমাদের স্মৃতিমেদুরতায় ভেসে আসবে
দখিনার সাথে বৃষ্টিভেজা কামিনীর ঘ্রাণ ;
ভেজামাটির সোঁদাগন্ধ।






----------------------------------------------------------------------














শুক্রবার, ২ মে, ২০১৪

অপেক্ষা

একটি গোধূলি এসে ভীষণ নাড়িয়ে দিল কড়া ;
যেন আকাশের কাড়া-নাকাড়া বেজে গেল
ঝুমবৃষ্টির শিঞ্জিনীর সাথে ।

আরো কিছুটা সময় বাকী আছে শুধু
হেলিওসের ঘোড়াগুলো মাঠ পেরোলেই
আস্তাবলের পথে,
নিকষ রাতপর্দায় ঢেকে যাবে সব।
রক্তচোষা বাদুড়ের পাল
 ঢুকে যাবে নিরীহ ভেড়ার খোঁয়াড়ে ।


কমলাআকাশ চিরে উড়ে যায় সাদা বলাকার ঝাঁক
উদাসীপাখার সুরে মন আনচান করে ওঠে বড়ো ;
পেয়ালায় ঢেলে নেই সোনালী অমৃত ;
তীব্রনেশালু এই রঙ্গমেলায়
আমিও নাহয় মাতালই হলাম.................................


সাততালা বাড়ির ছাদে
সীমাহীন বৈরাগ্যে বসে আছে
একটি কালোদাঁড়কাক ।
বাড়ী ফেরার যেন কোন তাড়া নেই ।
বাসাটা কি একা?
আর কেউ নেই?



 ভোরের অপেক্ষায় আছে------রক্তশূন্য মেষগুলো





-----------------------------------------------------------------------------------------------







বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০১৪

শূন্য দুপুর

ঝিম ধরা একটি দুপুর
ভরা রৌদ্রের বুকে গাঢ়শূন্যতার ছবি আঁকে ;
আমি তাকে পান করি বরফশীতল জলের মতো,
গ্লাসের নীচে জমছে বরফের কুচি।


একটি পথভোলা প্রজাপতি উড়ে এসে
বসেছে ফ্লাওয়ারভাসে
ফুলের উপরে দিচ্ছে ছড়িয়ে তার মায়ার পরাগ ;
যেই--- দেয়ালে পড়লো তার ছায়া,
শূন্যদেয়াল এঁকে নিল এক অপূর্ব ছবি।

ভালবাসি ক্যানভাসের ফুল, প্রজাপতি এবং শূন্যতা।

হাতের তালুতে লেগে আছে জন্মদাগের মতো বিষাদ ;
কি করে মুছবো তাকে !
মুঠোয় আবীর মেখে রেখেছি লুকিয়ে।

দরোজার বাইরে একটি বাদামী খাম
দীর্ঘশ্বাসের মতো  লম্বালম্বি পড়ে আছে ;
কি যেন জরুরী চিঠি পাঠিয়েছে কেউ।
ধুলোয় যাচ্ছে ঢেকে।

অবহেলার বারান্দায় পড়ে আছে খামবন্ধী কথা ;
ঘরের ভেতরে জমে  প্রগাঢ়নিস্তব্দতা ;
 বরফের কুচি।



---------------------------------------------------------

বিবমিষা

করডাইটের গন্ধভরা শহরে ফুল কিনতে এসে
দেখি -- গোলাপচাষীরা বুনছে বীজ ; বারুদের।

কি ভেবে যে
আজ আবার দীর্ঘদিন পরে রংগীন পর্দার মুখোমুখি ;
গালগল্পের ফেনা ওঠা তুবড়ীতে বিবমিষা লেগে গেল।

শীতাতপের ভেতরেও ভয়াবহ ঘাম ঝরাচ্ছে ; একদল নপুংসক।
একপক্ষ তেরিয়া
অন্যপক্ষ মারমুখী
খুলে নিচ্ছে একে অন্যের পরিধেয় ; কোটপাতলুন।
আমি
আমজনতার পিঁপড়াসদৃশ একটি অংশমাত্র
কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিনা
আমার গুড় অথবা চিনির সামান্য ভাগ।
ডেঁয়ো পিঁপড়ে নই ; মৃতলাশের মাংস খুবলে খাইনা।
নিতান্ত গৃহজকীট ; এক কণা খাদ্যের জন্য ঘুরে ঘুরে ফিরি।

লাশের উৎসবে মাতে শকুনেরা ।


দেখছি----
পরিযায়ী পাখীর মতো আমাদের স্বপ্নগুলোর উড়ে উড়ে ফিরে যাওয়া ;
হিমশীতল সাইবেরিয়ার পথে।
হতাশার তীরে এফোঁড় ওফোঁড় হৃৎপিন্ড।

বাগাড়ম্বরে পালটে যাচ্ছে সময়ের নির্ভুল মাণচিত্র

তীব্র থেকে তীব্রতর হয় বমনেচ্ছা।