শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

অচিন্ত্য প্রেমের হরিণ (Gacela of Unforseen Love)



কেউ বুঝতে পারেনি তোমার জরায়ুর
গাঢ় ম্যাগনোলিয়ার সৌরভ।
কেউ জানতোনা তুমি দাঁতের ফাঁকে সয়েছিলে
ভালবাসার একটি হামিংবার্ড তাও।

তোমার কপালের শশীকলার সাথে খোলাপ্রান্তরে
ঘুমিয়ে পড়েছিল সহস্র ক্ষুদে পার্সিয়ান ঘোড়া,
তুষারের শত্রু,
যখন চার রাত তোমার কোমর রেখেছিলাম আলিঙ্গনাবদ্ধ করে।

প্লাস্টার এবং যূথিকার ফাঁকে তোমার চকিতচাহনি
ছিল একটি বিবর্ণ বীজশাখা।
তোমাকে দেবার জন্য আমার হৃদয়ে খুঁজেছিলাম 
 গজদন্ত অক্ষরগুলো যা বলে, "সিয়েমপ্রে" ,
"সিয়েমপ্রে ","সিয়েমপ্রে" :  আমার নিদারুণ যন্ত্রনার উদ্যান,
সর্বদাই ধরাছোঁয়ার বাইরে তোমার শরীর,
আমার মুখবিবরে তোমার ধমনীর ওই রক্ত,
ইতিমধ্যেই তোমার মুখগহবর আলোহীন
আমার মৃত্যুর জন্য।

Federico García Lorca


------------------------------------------------



সোমবার, ২১ জুলাই, ২০১৪

তিমিশিকারির হার্পুন




শেষরাতে ঝিঁঝির গুনগুন সুর থেমে গেলে
এক উত্তাল সমুদ্রের ছবি আঁকি।

সম্পূর্ণ ছবির জন্য চাই আরো গাঢ় নীল রঙ
আরো উন্মত্ত সমুদ্র দর্শন
চাই
উদগ্র মাতাল ঘোরের সন্তরণ, অশান্ত ঢেউয়ের চূড়ায়।


মাঝসমুদ্রের গভীরে নোঙ্গর ফেলেছে তিমিশিকারির জাহাজ ।
হার্পুনে বিদ্ধ নীলতিমি ;
লাল রক্তস্রোতের ধারা মিশে গেছে নীল ঢেউয়ের লহরে ।

তরঙ্গনিনাদে বাজে শিকারের উল্লাস
আরো লক্ষ্যভেদি হার্পুন
আরো
আরো----- রক্তের ধারা।

এমন তীব্র উচ্চারণের ছবি আঁকতে চাইনি।
আঁকতে চেয়েছি সবুজ উপকূল ঘেষা এক শান্ত সাগরের ছবি
যেখানে
বালুকাবেলায় ঢেউগুলো রেখে যায় ভোরের স্নিগ্ধ স্পর্শআদর  ।


তুলিটাই
টেনে নিল এক প্রবল মাঝসমুদ্রে ;
যেখানে রক্তস্রোত আর হাঙ্গরের ভয়।





----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

ঘুমিয়ে আছেন শুভবোধের ঈশ্বর


রক্তলোলুপ ডাইনির কন্ঠে উচ্চারিত হয় কী প্রচন্ড দম্ভের বাণী !
---হ্যাঁ আমরা ওদের হত্যা করবো। হত্যা করা হবে ওদের মায়েদেরও।


কোথায় তুমি শুভবোধের ঈশ্বর?
কবে ভাঙ্গবে তোমার এই মরণঘুম?

সাম্রাজ্যবাদের থাবার নীচে ঘুমন্ত বিবেকের ঈশ্বর।
পিশাচের পায়ের নীচে সভ্যতা ঘুমায়।আর
শয়তানের প্রবল-প্রতাপ আরেক ঈশ্বর জেগে থাকে গাজার পশ্চিমতীরে
বারবার পূতিগন্ধময় কফিনের ডালা খুলে ডেকে তোলে ঘুমন্ত ড্রাকুলাগুলোকে।
খুব পিপাসার্ত তারা। শিশুরক্ত ছাড়া তাদের পিপাসা মেটেনা।
মায়ের গর্ভাশয়ে লালিত হচ্ছে যে শিশুর ভ্রুণ, তাকেও
হত্যা করছে তারা ; গ্যালন গ্যালন রক্ত টেনে নিচ্ছে
পচাগলা ঠোঁট ও ধারালো দাঁতের ফাঁকে। তবু তাদের পিপাসা মেটেনা।

মৃত্যু উপত্যকায় প্রাণভয়ে কম্পিত ওই  শিশুদের ভীতমুখে ফুটে উঠে
আমার সন্তান, আমার উত্তরাধিকারির প্রতিচ্ছবি ।
অবিরত তীব্র ব্যাথার ছোঁবলে ফালি ফালি হচ্ছে হৃৎপিন্ড।

এই শিশুকন্ঠের কান্না-আর্তনাদগুলো বাতাসের কালো পরমানুর সাথে মিলেমিশে
ঘোর অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে পৃথিবীর মুখ। কি করে মুছবে এই কলংককালিমা?


কবে ঘুম ভাঙ্গবে মানুষের? মানবতার? আদৌ ভাঙ্গবে কি?
অপেক্ষায় আছি---জেগে উঠো শুভবোধের ঈশ্বর। জেগে উঠো মানবতা।





বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

শর্ত


হাতগুলো এগিয়ে আসছিল
অসংখ্য হাত। ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের । তার সেসব হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডগুলো ।
ভিন্ন ভিন্ন শর্তের বাণীসহ।

পা ডুবল।আস্তে আস্তে কোমর। বুক-পিঠ।নেমে যাচ্ছে সমস্ত শরীর।তলিয়ে যাচ্ছে অথই জলের ঘুর্ণির ভেতরে।
শরীরময় জলজ কাঁটালতার  খোঁচা। ছিন্নভিন্ন হচ্ছে নগ্ন হাত-পা-বুক।জলের সমতলে ভেসে উঠছে গোলাপি বুদ্‌বুদ্‌। রক্তের।
কার বাড়ানো হাত ধরবে সে? আপাতঃ  সাহায্যের এই শর্তগুলোর মাঝে কোনটা বেছে নেয়া যায়!

আর আশ্চর্য্য এই জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তার আচমকা মনে পড়ল সেই গল্পটির কথা যা সে বারবার চেষ্টা করেছে
কাউকে বলতে । কিন্তু শুনার সময় ছিলনা কারো। সবাই এড়িয়ে গেছে ব্যস্ততার অজুহাতে।আসলে তারতো কোন বন্ধুই নেই।ছিলনা। আর অনেকেরই এমনি সব  গল্পগুলো  না বলাই  থেকে যায় জীবনভর।বলা হয়না।একদিন চাপা পড়ে মাটির নীচে অথবা আগুনের অবশিষ্টাংশের মাঝে বিলীন হয়ে যায়।

আগ্রহী হাতগুলো তেমনি বাড়ানো আছে একটা লোভ ,একটা প্রত্যাশার ব্যাকুলতায়।প্রতিটি হাতেই একটি অথবা একাধিক শর্তের দাবী।

কোনটা? কোনটা?

রক্তের গন্ধে ছুটে আসা জলজদানব কুমীরটা টেনে নিচ্ছিল আরো গভীর জলের ভেতরে।  ভয়াল মুখগহ্বরের বাইরে বের হয়ে থাকা তার বাদামী দুইটা হাত তখনও নড়ছিল শর্তের দ্বিধাগ্রস্থতার ভেতরে।



-------------------------------------------------------------------------------------------------------




শনিবার, ১২ জুলাই, ২০১৪

অন্ধকার মৃত্যুর হরিণ (Gacela of the Dark Death)

এই  আপেলগুলোর স্বপ্নে আমি ঘুমুতে চাই,
 সমাধিক্ষেত্রের কোলাহল থেকে উঠে এসে।
 ওই শিশুটির স্বপ্নে আমি ঘুমুতে চাই
  যে উত্তাল সমুদ্রে ছিন্ন করতে চেয়েছিল তার হৃদয়।


মৃতদের রক্তক্ষরণ হয়না একথাটি আর শুনতে চাইনা,
ওই যে গলিত মুখগুলো যায় জলের সন্ধানে,
 আমি শিখতে চাইনা  ঘাসের এই নির্যাতন,
দেখতে চাইনা ভোরের আগে কর্মচঞ্চল চাঁদের সর্পাকৃতি মুখ।

কিছুক্ষন ঘুমুতে চাই
কিছুক্ষণ ,এক মিনিট, এক শতাব্দী;
কিন্তু সবাইকে অবশ্যই তা জানতে হবে আমি মরে যাইনি ।
যেহেতু আমার ঠোঁটগুলোতে স্বর্ণখন্ড
যেহেতু আমি ওয়েস্ট উইংয়ের এক ক্ষুদে বন্ধু
যেহেতু আমি আমার কান্নার তীব্র ছায়া।

ভোরে আমাকে ঢেকে রেখো একটি আচ্ছাদনে
কারণ ভোর আমার দিকে ছুড়ে দেবে মুঠোভর্তি পিপীলিকা,
এবং আমার জুতোগুলো ভিজিয়ে দিও খর জলে
যেন পিছলে যেতে পারে বৃশ্চিকের চিমটিগুলো।

যেহেতু আমি আপেলগুলোর স্বপ্নে ঘুমুতে চাই
শিখতে চাই সেই আর্তনাদ যা আমাকে শুচি করে দেবে মৃত্তিকার সাথে ;
যেহেতু আমি থাকতে চাই ওই তমসাচ্ছন্ন শিশুটির সাথে
যে তার হৃদয় ছিন্ন করতে চেয়েছিল উত্তাল সমুদ্রে।


Federico García Lorca

 
 
 

যে নগরী ঘুমায়না (City That Does Not Sleep)


আকাশে কেউ ঘুমায়না  । কেউনা, কেউ নয়।
 ঘুমায়না কেউ ।

 চাঁদের প্রাণিগুলো  ঘুরছিল আর শুঁকছিল তাদের কুটীরের চারপাশ।
 যে লোকগুলো স্বপ্ন দেখেনা তাদের কামড়ে দেবে এসে  জীবন্ত গুঁইসাপ ,
এবং ভগ্নহৃদয়ে পালিয়ে যাওয়া লোকটাকে পাওয়া যাবে রাস্তার মোড়ে তারাদের মৃদু প্রতিবাদের শান্ত তলদেশে অবিশ্বাস্য কুমিরগুলো ।


 ঘুমায়না কেউ পৃথিবীতে।কেউ নয়,কেউনা।
কেউ ঘুমায়না।

দূরের এক সমাধিতে একটি শবদেহ

পুড়ছে তিন বৎসর ধরে
  কারণ তার হাটুর নীচে একটি  গ্রামীন শুষ্ক ভূমি
এবং  যে সকালে  তারা সমাধিস্থ করেছিল ওই ছেলেটিকে কেঁদেছিল অনেক
তাকে শান্ত করার জন্য প্রয়োজন ছিল কুকুরগুলোকে ডেকে  পাঠানোর।

জীবন একটি স্বপ্ন নয়, সাবধান! সাবধান! সাবধান!
আমরা সিঁড়ি থেকে নেমে যাই ভেজামাটির স্বাদ অনুভবের জন্য
অথবা আরোহন করি বরফের ক্ষুরধার প্রান্তে মৃত ডালিয়ার কন্ঠস্বরের সাথে।

কিন্তু বিস্মরণ বলে কিছু নেই , স্বপ্নও নেই।
 অস্থিত্ব আছে মাংসের।নতুন একগুচ্ছ শিরায়
চুম্বন আমাদের মুখগুলোকে জুড়ে রাখে,

এবং  এই ব্যাথাকে যে জেনেছে সে আজীবন জেনেই যাবে
এবং  আজীবন মৃত্যুকে বহন করবে তার কাঁধে যে  ভয় পায় সে ।

একদিন
ঘোড়াগুলো বাস করতে আসবে পান্থশালায়
এবং ক্ষিপ্ত পিঁপড়েগুলো
নিজেদের নিক্ষেপ করবে  গরুর চোখে আশ্রিত হলুদ আকাশে।

একদিন
আমরা সংরক্ষিত প্রজাপতিগুলোকে দেখবো মৃতদেহ থেকে উঠে আসতে
 কিন্তু তখনও হাঁটছে  ধুসর শৈবাল এবং স্তব্দ নৌকার রাজ্যে।
আমরা দেখবো আমাদের আংটিগুলোর বিচ্ছুরণ এবং জিহ্‌বা থেকে গোলাপের ঠিকরে ওঠা।
সাবধান! সাবধান হও! সাবধান হও!

যাদের এখনো  আছে বজ্রপাত এবং নখরের চিহ্নগুলো,
এবং ওই ছেলেটি যে কাঁদে কোনদিন সেতু আবিষ্কারের গল্প
শুনেনি বলে,
অথবা ওই মৃত লোকটি যে  এখন  মালিক শুধু তার একটি জুতো এবং মাথাটার ,
আমরা অবশ্যই তাদের নিয়ে যাবো সেই দেয়ালের কাছে  যেখানে অপেক্ষায় আছে গুঁইসাপ
 এবং বিষধরেরা ,

যেখানে ভালুকের দাঁতগুলো অপেক্ষায় আছে,
 যেখানে অপেক্ষায় আছে ছেলেটির মমিকৃত হাত,
 শেষপ্রান্তে দাঁড়ায় উটের কেশরগুলো তীব্র নীল কম্পনের সাথে ।

 কেউ ঘুমাচ্ছেনা আকাশে।কেউ নয়,কেউনা।

ঘুমাচ্ছেনা কেউ ।
যদি কেউ বন্ধ করে তার চোখ
একটি চাবুক, ছেলেরা, একটি চাবুক !
খোলাচোখগুলোর  দৃশ্যচিত্র হতে দাও

এবং আগুনের যন্ত্রনাক্ত ক্ষত।
এই পৃথিবীতে কেউ ঘুমাচ্ছেনা।একজনও না,নয় একজনও ।
আমি এটা আগেই বলেছি।

কোন একজনও ঘুমাচ্ছেনা।
কিন্তু কেউ যদি রাত্রে তার মন্দিরে খুব বেশি শেঁওলার জন্ম দেয়,
 মঞ্চের চোরাদরোজাগুলো খুলে দাও সে যেন চাঁদনি দেখতে পারে
মিথ্যা পানপাত্রগুলো,বিষ,এবং রঙ্গমঞ্চের খুলি।


 Federico García Lorca










ভোরের আগে (Before the Dawn )




তীরন্দাজেরাও কিন্তু
প্রেমের মতো অন্ধ।


সবুজ রাতে
উষ্ণ লিলির নকশাচিহ্ন  রেখে যায়
তীক্ষ বর্শাগুলো।

চাঁদের কীলক
বিদ্ধ করে বেগুনী মেঘদল
এবং তাদের তূনীরগুলো
শিশিরপূর্ণ হয়।

হ্যাঁ,প্রেমের মতো
তীরন্দাজেরাও
অন্ধ!


Federico García Lorca

শিকল



অবশেষে তারা থামলো।
থামলো এসে এক বরফমোড়া প্রান্তরে। আর খোঁজতে লাগলো তাদের আপন আপন পথের নিশানা।তাদের চারপাশ ঘিরে বইছে সীমাহীন নিস্তব্দতার এক বাতাবরণ।মৃত্যুর মতো নিস্তব্দতা? আসলে কথাটা ভুল। মৃত্যুকেও ঘিরে থাকে এক ধরণের কোলাহল, হাহাকারের হৈচৈ ।
এই নীরবতাটা বরফের মতোই। শীতল। জমাট।তারা পাশাপাশি হাঁটছিল। পাশাপাশি। কাছাকাছি নয়।কেউ কাউকে না দিচ্ছিল স্পর্শের আশ্বাস ; না জাগাতে পারছিল সান্নিধ্যের আকাংখা ।তাদের পায়ের নীচে, মাথায়, সমস্ত শরীরে জড়িয়ে যাচ্ছিল হিমকুয়াশার গুড়ি গুড়ি কণা।ক্রমশ তারা হয়ে যাচ্ছিল আরো বেশি শীতল-ঠান্ডা দুই বরফ খন্ড।
         এভাবে কত ঘন্টা----বৎসর----যুগ--------শতাব্দী ধরে হেঁটে যাচ্ছে তারা? আর কেনই বা এই সঙ্গহীন সঙ্গ?
এখন তারা ভাবছিলনা এসব।দুজনেরই একধরণের তাড়া ভেতরে ভেতরে।একটা শেষ পথের অনুসন্ধানে ব্যস্ত তাদের চোখ।
শেষপর্যন্ত তারা যেখানে এসে থেমেছে ,সেখান থেকেই শুরু হবে তাদের ভিন্ন যাত্রার আয়োজন।
এই পর্যন্ত এসে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত নারীটি বসে পড়লো ধুলিমলিন সেই প্রান্তরের একপাশে।বললো,
------ " আর পারছিনা আমি। এখানেই থাকি। তুমি এগিয়ে যাও।"
পুরুষটি একটু ইতস্তত ফিরে তাকালো , তারপর এগিয়ে যেতে শুরু করলো। আর--- তারপরে --- আবার ফিরে এলো বা আসতে হলো।
 তাকালো তার পায়ের দিকে আর পকেটগুলো হাতড়াতে লাগলো একটা চাবির খোঁজে।

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতা

সারারাত মুঠোর ভেতরে জোনাকির আলো নিয়ে বসে থাকি
ভোর হলেই তারা সব মৃতদেহ ;
হাওয়ায় উড়ছে দীপাধারের শব।

মানুষ টের পায় ঠিক।
আর মৃত্যুর গন্ধ যত বেশি কাছাকাছি হয় ;
তীব্র ধাবিত হয় জীবনের দিকে

এবং নিজের অজান্তেই মৃত্যুবাসরের জন্য তৈরি করে এক
অনিন্দ্য ফুলের বাগান।


এখনো জীবন্ত ফেনার চিহ্ন লেগে আছে মৃতঘোড়াদের নালে,
পিঠে এখনো বাঁধা আরোহীর স্যাডল ।
পালিয়ে গেল যেসব ঘোড়সওয়ার
তাদের প্রাণহীন অশ্বগুলোকে পরিত্যক্ত ফেলে
তারা জানতনা প্রতিটি ঘোড়সওয়ারকেই হতে হয় দক্ষ তীরন্দাজ?
তারা কেন অস্ত্রহীন গিয়েছে
সেই জঙ্গলের পথে
যেখানে  ওৎঁ  পেতে আছে গুপ্তধানুকী এবং মাংসবিক্রেতারা?









বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

চলে যাবার ঠিক আগে



মনে হচ্ছে আচমকা কোথাও চলে যাবো । যেতে হবে।


প্রবল জ্বরের পায়ের কাছে শুয়ে আছে প্রাণঘাতি ভাইপার।
 মাত্র একটি ছোঁবলেই তুলে নেবে সমস্ত উত্তাপ, আর
উজাড় ঢেলে দেবে বিষথলির সম্পূর্ণ গরল।


চেনা-জানা পাখিদের চঞ্চুগুলো খুব আদরে মুখর
সবুজপাতায় অবিরল ঢেলে দিচ্ছে সোহাগঅমৃত ।
গোধূলিতে-- নীড়ের কোটরে ঢুকার আগেই
মাধবীর গোলাপিঘ্রাণ ঠোঁটে মেখে নেবে ; এবং মধুরঙ সুধা।


আমাদের মাতাল ঘোড়াগুলো
খুব অবজ্ঞায় দ্রুত পেরিয়ে যাচ্ছে সব খানাখন্দ ,
স্ফিত নাসারন্দ্র এবং মুখে শ্রান্তির ফেনা তুলেও
তুমুল ছুটে যাচ্ছে চিরহরিৎ উপত্যকার দিকে।
তাদের পায়ের নীচের ঘাসগুলো কেঁপে ওঠে বিস্ময়ের ত্রাসে ;
এ কেমন উন্মত্ত ছুটে চলা!

আরো তীব্র ছুটে যাক।
আরো।
আরো।
হ্রেষার ভেতরে বাজুক প্রচন্ড তূর্যনাদ ,আরো দুরন্ত হোক খট খটা খট
খুরধ্বণি ; থেঁতলে যাক তৃণগুচ্ছের আড়ালে লুকোনো বিষধরগুলো ।
দুমড়েমুচড়ে যাক স্বপ্নপ্রাঙ্গণের পথে সমস্ত আগাছা ।

আসলে এমন করে  যাবার কথা ভাবিনি কখনো
যেতে হবে---
ভাবতেই কালো চাদরের মতো এক আকাশ বিষাদ নেমে আসে ।
যেন ভোরের নীলিমা চিরে এক ঝাঁক পরিযায়ি পাখির
যুথবদ্ধ আর্তনাদের কোলাহল তোলে অনিচ্ছুক ফিরে যাওয়া।

ক্রমশঃ প্রিয় হয়ে ওঠা ব্যালকনি ;
রেলিং জড়িয়ে ধরা গোল্ডেনশাওয়ারের ঝাড়,
টবে ফোটা মল্লিকা , গোলাপ------------------
এদের দীর্ঘশ্বাস সাথে নিয়ে , যেতে  চাইনি কোথাও।

অদূর মাঠের অন্যপাশ থেকে জারুল-শিরিষের হিমনিঃশ্বাস ভেসে আসে ;
তারাও যে খুব আপন ; রঙের ঘোরলাগা বিকেলের সাথী।

তবু  চলে যেতে হবে।সারাক্ষণ পায়ে পায়ে ঘুরছে এক বিষাক্ত সরীসৃপ।

যেতে হবে।

তবে
এভাবে আচমকা কোথাও চলে যেতে হলে
বিষপিঁপড়ার কৌটাতে এক চামচ মধু ঢেলে দিয়ে যাবো।










----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------

















 


বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

ভুল দরোজা এবং পুরনো অসুখ


এটা একটা ইয়েল-লক।
কিছুতেই  খুলবেনা ভুল চাবি হলে।

আবার দাঁড়িয়েছি এসে এক ভুল দরোজায় !

ফিরে আসে হাজার বছরের পুরনো অসুখ।
বেডসাইড ক্যাবিনেটের উপর
জলের বোতল,ঔষধের স্ট্রিপগুলো জমে জমে
স্তুপাকার।
এখানেই একদিন ছিল তীব্রলাল ফ্লাওয়ার ভাস ;
শুভ্র রজনীগন্ধার স্টিকগুলো ।

চাবিটা কি ভুল?
যেন অনন্ত অনন্তকালের মোচড় ;
এই চাবি --------------
 এই তালার ভেতরে।
কিছুতেই খুলছেনা।
নাকি দাঁড়ালাম এসে ভুল কোন দরোজায়?
অন্য কোন তালা!

এভাবেই মাঝে মাঝে কড়া নাড়ি ভিন্ন দরোজার।
জলতরঙ্গের মতো সুরেলা কলিংবেল বেজে গেলে,
বিরসজিজ্ঞাসু চোখে যে এসে দাঁড়ায়
সে আমার চেনা কেউ নয় । বুঝি
আবার দাঁড়িয়েছি এসে ভুল বাড়ীর,
ভুলমানুষের মুখোমুখি।

হাজার বছরের পুরনো অসুখ ফিরে আসে,
মুমূর্ষুশয্যায় শুয়ে শুয়ে দেখি জানালার বাইরে একখন্ড নীলাকাশ
বেগুনী মেঘেদের ওড়াওড়ি
দেখি-- দুই টুকরো মেঘ খুব কাছাকাছি এসে
কেন যে প্রবলবিরাগে দূরে সরে গেল ;
মেঘেদেরও তবে আছে অভিমান!
তীব্রপাখসাটের ধ্বণি তুলে একটি স্কাইলার্ক
হারিয়ে গেল  শূন্যগর্ভ আকাশের ভীড়ে
বিশাল নীলিমায় কেবল একটি কোলাহলের শব্দরেশ লেগে আছে।

মূঠোর ভেতরে ঘাসফুল।
জোনাকির আলো।
তবু যেন সহস্রযুগের পুরনো স্বপ্নেরঅসুখ ফিরে  আসে।
জ্যোৎস্নার ধারাপাতে কমলাআগুন ঝরে পড়ে ;
 আবছা ঘন্টাধ্বণিতে বেজে যাচ্ছে
 সাবধানবাণী--
এমন সুনসান চাঁদনির মাঠে হাঁটলেই পা'দুটো ঝলসে যাবে ।

নিজেকে দ্বিখন্ডিত করেছি কবে যেন
কত যুগ আগে !
অর্ধেক  তার বাউলের একতারা সুরে।
বাকীটুকু কোথায় হারালো আজ আর পড়েনা মনে ;
তবু
দুই নৌকায় পা--জীবন টলোমলো  জলসরোবর।

 জলসিঁড়ি দীঘির মাঝখানে ফোটা
 লালশালুকের ফুল,
আর নির্জন মাঠের পাশে
সেই স্ট্যাচু ; অচলপাথর। আজো মনে হয় ঠিক তেমনি আছে ,
তেমনি নির্বাক।
সারণিতে আজো  বেঁচে  আছে তার প্রতিচ্ছায়া !


এবং চাঁদটাও
কেন যে সময়ের নিয়ম মানেনা !
বারবার----------------------------------------
 আটপৌরে জীবনের ছন্দে খুব ভুল হয়ে যায়।
ওই চাঁদ--অবেলার
জানালায় এসে দাঁড়ালেই
গদ্যলেখার পাতাগুলো সব নিমেষেই কবিতা হয়ে ওঠে ।

হাজার বছরের পুরনো অসুখ ফিরে ফিরে আসে।
আবার দাঁড়াই এসে কোন ভুল দরোজায়।







------------------------------------------------------------------------------------------