রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

চোখগুলো বেঁচে উঠুক


এমন নয় যে
চাঁদে হাত রাখলেই দুইহাত সোনালি হয়ে যাবে ;
বরং জ্যোৎস্নার তপ্ত আগুনে  পুড়ে যেতেও পারে।

সূর্যালোকে দাঁড়ালেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে
রাতের আঁচড়ের দাগগুলো।
যখন
 হাসির আড়ালে মানুষ লুকিয়ে ফেলছে কান্নার চিহ্নগুলো ;
তখন
আমি বলছি---এটা হয়তো মৃতদের কোন শহর।

কখনো কখনো
মানুষের চোখগুলো মাছেদের মতো নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।
 যেসব চোখের দিকে তাকালেই শবদেহের কথা মনে পড়ে
কতটুকু বেঁচে আছে তারা?

একটি কালো দাঁড়কাক টেলিফোনের তারে
একবার ডেকে উঠতেই কে যেন বললো,
-----আজ কেউ আসতে পারে।
উত্তরকোণে কাক ডাকলে অতিথি আসে।

এমনধারা কাকতত্ত্বে বিশ্বাসী নই।
তবু--অপেক্ষায় থাকি-----কেউ আসুক।
আসুক।
আর উন্মত্তমৃদঙ্গের তালে জাগিয়ে তুলুক এই প্রাণহীননগরীকে।
নিস্পন্দ চোখগুলোতে একইসাথে ফিরুক
নোনাজল আর অক্ষরের কারুকাজ।



------------------------------------------------------------------------------------------------------

বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

উজানের দূরত্ব


 সব  খেলায় একজন রেফারি থাকবে এমন কোন কথা নেই ;
অথবা রেফারির হুইসেল ।
জলক্রীড়ায়তো নয়ই।
 যেমন-----নৌকাবাইচ।

কখনো নামিনি জলে ;
 ভয় ছিল খুব।

আর এখন----------
ট্রফি  শুধু জলশাসনের দক্ষবিজেতার ;
জেনেও
উড়িয়ে দিয়েছি সাদা পাল
আর এক অলৌকিক  বৈঠায় রেখেছি হাত।
জানিনা জল কেটে কতদূর যেতে পারি---------

এইযে আচমকা হুট করে নদীতে নেমে যাওয়া
এওতো এক ব্যাখ্যাতীত প্রবলঘোরের খেলা

 জিতি
 অথবা
 ডুবি
এভাবেই ভেসে যাবো যতদূর-----------------

 একবার ভাটিতে না গেলে, জানা হবেনা
 মাঝনদীর ঢেউয়ের সাথে উজানের দুরত্ব  কতটুকু।




------------------------------------------------------------------------------------------------------------




মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০১৪

সব যাত্রা পূর্বনির্ধারিত নয়




             রাত নেমে এলে গাছেরাও হিংস্র হয়ে উঠে।পাতাগুলো ছড়াতে থাকে বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

                 আমার যে কী হয়!রাত নামলেই ইচ্ছে করে কোন ঝোপালো গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে বসে সারারাত পাতার বাঁশি বাজাই।যেমন বাজাতাম শৈশবের অলসউদাস দুপুরগুলোতে।বাজাই আর পান করি সোনালিজ্যোৎস্নার অমিয়দ্রাক্ষারস।

              আমার কোন আপত্তি নেই  রাতভর পাতার বিষাক্তনিঃশ্বাসে ফুসফুস ভরে নিতে।সারাদিন কত মানুষের ছড়িয়ে দেওয়া বিষ ঢুকে যায় শরীরের রন্দ্রে রন্দ্রে।আর শরীর সেই বিষগুলো নিতে নিতে হয়ে গেছে নীলকন্ঠ পাখি।কন্ঠনালীতে জমে আছে কালকুটের ভরা থলে।

                       হয়না। রাতগুলো থাকে লৌহদরোজার নিরাপত্তাবেষ্টনীতে বন্ধী। দূরে থাকে গাছ। পাতার বাঁশি।
পাহাড়সমান অনতিক্রম্য বাধা অতি ক্ষুদ্র এক ইচ্ছেপূরণের পথেও!

           পুনর্জন্মবিশ্বাসী হলে আমি চাইতাম  খোঁপায় বুনোফুল গোঁজা এক পাহাড়ী আদিবাসি রমনীর জীবন।হ্যাঁ জন্মে জন্মে আমি এক নারীই  থাকতে চাই।কিন্তু সেই নারী এই নিগড়বন্ধী সমাজের কেউনা।জীবন হবে মুক্তবিহঙ্গের মতো, প্রজাপতির মতো স্বচ্ছন্দবিহারের। যে নারীরা অবগুন্ঠনের আড়ালে লুকোয়না তাদের নারীত্ব--------বিব্রত নয় লোভীচোখের নগ্ন-চাহনীতে।উৎসবের রাতে মহুয়ার নেশায় ঘোরমাতাল হয়।নাচে তার পুরুষের হাতে হাতে ধরে, পায়ের তালে তালে  তাল মিলিয়ে।ঝোরার জলে পা ডুবিয়ে বঁড়শিতে মাছ  ধরে।চুলে মহুয়ার ফুল গুঁজে ঘুরে বেড়ায় পাহাড়ীঝর্ণার মতো বন্ধনহীন।
        জীবনতো হবেই এমন সহজ আর অনাবিল।
               নিরিবিলি রাতে পাতার বাঁশি বাজানোর সুযোগহীন  জীবন আমার চাইনা।
এমন নয় যে এই বাঁশির সুরে তৈরি হয় কোন মোহনীয় আবেশ, বরং  খানিকটা বিকট অথবা উদ্ভট মনে হয় কখনো কখনো।কিন্তু বাজাতে পারলে প্রাণের  অফুরানস্পন্দনের শব্দ বেজে উঠে ঠিকই।
        এই ইচ্ছেপূরণের  ব্যর্থতাকে  আমূল গ্রাস করে ফেলে  সীমাহীন বিষাদের নীলঢেউ।আর সারারাত সেই উথালপাথাল ঢেউয়ের নাগরদোলায় দুলতে থাকে পৃথিবী। 
 
                      ঘুম আসেনা। ঘুমপাড়ানি মাসীপিসী কেবলই পালিয়ে বেড়ায়।ছড়াগানের ছন্দে ছন্দে ঘুমে ঢুলু ঢুলু  সেই চোখ দু'টোই যে ফেলে এসেছি সহস্র আলোকবর্ষ দূরের শৈশবে ---- কেন যে বারবার ভুলে যাই! সেই মায়াভরা শিশুকাল আর ফিরবেনা । তবু হাতছানি দেবে। পিছু ডাকবে। আরো অনিদ্রায় অনিদ্রায় ভরে দেবে ব্যাকুল রাতগুলো।
         

             খুব চড়ামূল্যে কিনে নিতে হয় নিজস্ব নির্জনতাটুকু।আর এই মহামূল্য নির্জনতার ভেতরেই ঢুকে পড়ে পৃথিবীর সমস্ত কোলাহল।নিজের সাথে কথা বলতে গেলেই শুরু হয়ে যায় চাওয়াপাওয়া যোগবিয়োগের অংক। জীবনতো কখনো শুরু হয়না কোন অংকের সূত্রে।তবে কেন এত হিসেবের মারপ্যাঁচ উঠে  আসে !কেন যে খুব সামান্য সময়ের জন্য হলেও মনটাকে স্মৃতিশূন্য কিংবা একেবারে অনুভুতিশূন্য করে ফেলা যায়না ! কেন যে!


                                          বেঁচে থাকার কোন মানেই হয়না জীবনে কিছু পাগলামি না থাকলে।  এই এখন যেমন একশ তিন ডিগ্রী জ্বর নিয়ে কুয়াশাভেজা ব্যালকনিতে বসে হি হি করে কাঁপছি।মনে হচ্ছে এর চাইতে আনন্দদায়ক আর কিছু ঘটেনি এই জীবনে। এমনকি এখন যদি আকাশভাঙ্গা  জ্যোৎস্না নেমে  এসে প্লাবিত করে দিতে চায় , তাকে বলবো--' এখন নয়। এখন এই জ্বরতপ্ত অন্ধকারনির্জনতাই আমার প্রিয়। আলো চাইনা '।

        যাপিতজীবন আর স্বপ্নের মাঝখানে এক রেললাইন ফাঁক।আজীবন পাশাপাশি তবু কেউ কাউকে ছোঁয়না ; কেবলই সমান্তরে ছুটে চলা  আকাশ আর সমুদ্রের মতো।

            দৃশ্যতঃ আমার কোথাও যাবার ছিলনা।
তবু চোরাটানে আবার এসে দাঁড়াই ইস্টিশনে । টিকেটকাউন্টারের জানালায় হাত বাড়িয়ে এক অচেনা গন্তব্যের টিকিট কিনে ফেলি।
সব যাত্রাইতো আর পূর্বনির্ধারিত নয়।







----------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------








        


শুক্রবার, ২০ জুন, ২০১৪

আগুনের পাখিঃফিনিক্স


ভস্মস্তুপ থেকে আবার এসেছে উঠে, অবিনশ্বর আগুনের পাখী ;ফিনিক্স ।




প্রতিবন্ধী এক ঈশ্বরকে যুপকাষ্ঠে বলি দেবার পরে
যারা সন্যাসীর বাঘছাল দিয়ে বানিয়ে নিয়েছিল ট্রাম্পেট
আর সেই প্রচন্ড ঢাকের শব্দ ছড়িয়ে দিয়েছিল বাতাসের পরতে পরতে
তারাও কি পথ ভুলে নেমে গেলো কালো এক অন্ধকার গুহার দিকে?
ভুল করে বন্ধ গুহার ঘুলঘুলি খুলে গেলে
অবাঞ্চিত রোদ
রবাহুত শব্দের হৈচৈ ওঠে।
বন্ধ গুহাই নিরাপদ।বন্ধই থাক।

যুগে যুগে মানুষ কেবল শুনেছে
আগুন উগরে দেওয়া পাহাড়ের কথা।
 লারারিয়ায় এখনো অঙ্কিত আছে ভিসুভিয়াসের সাপ।


তীব্র হুইসেলের শব্দে দোলে ওঠে জলসাঘরের ঝাড়বাতি ;
অস্থির আলোর রেখাপথ ধরে আত্মবিনাশকামী পতঙ্গ ওড়ে ।

অগ্নিরহস্যসন্ধানী পতঙ্গেরা
 বারবার সে রহস্য জানতে  চেয়েছে
কী এমন ক্ষোভে ভলকানোর আচমকা এমন তীব্র ফোঁসে ওঠা।


অবশেষে
সমস্ত জমাট বরফ গলে গেলে দেখা গেল
রক্তমাংস নয়-----রঙীন পোশাক মোড়া কংকাল ছিল।


জানালার পাশে ছাইবর্ণ মেঘ
ঈশানকোণের বার্তা নিয়ে আসে-----
ছায়াপথ ধরে আবার আসবে ফিরে কফিনবন্ধী ঘুঙুরগুলো ;
যারা এখনো খুলেনি নাচের পোশাক,
ভুলেনি কত্থকের  'তেরে কেটে ' মুদ্রার বোল
একে একে ফিরবে সব  নাচঘরের  বেলোয়ারীআলোর বাসরে।
আবারো
 অদ্ভুত জোনাকীর আলো থেকে আসবে উঠে সেই নৃত্যপটীয়সী  ময়ুরগুলো
যারা অবারিত জলনৃত্যের শ্রান্তিতে রঙীনপালক ঝরিয়ে দিয়ে
উড়ে গিয়েছিল অচেনা মেঘপথের উজানসন্ধানে।


আবারো নতুন আঁচড়ে আঁচড়ে বিক্ষত হবে সোনালিডানার রেখাচিত্রগুলো;
পালকে জলের ভার অসহ হয়ে গেলে
আবারো জন্মান্তরের পথে ফিরে যাওয়া ?






















মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০১৪

মেঘমল্লার বাজে

বাজে
 মৃদঙ্গ। মেঘমল্লার। ময়ুর পেখম।

কাম্যবৃষ্টি ঝরে।


বাঁশীতে বাঁধা ছিল মেঘমল্লারের সুর ;

তুই চাইলি বলে---------------

হাজার একর আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামিয়ে দিলাম।

তুই কেন ভিজলিনা তবু?

হায় পিপাসার্ত মানুষ!
বরফের চাঁই ভেবে আগুন জ্বালায় সাদা পাথরের নীচে ;
পাথরে পাথর ঘষে।
আর কখনো কখনো
এই পাথুরেধোঁয়া  থেকেই ছড়িয়ে পড়ে ধুপসুগন্ধীঘ্রাণ
উড়ে আসে গন্ধবিভোর চকোরেরা ;
আগুনের আঁচে ছাই হয়।

খরার উজানে যেতে যেতে ছুঁয়ে ফেলি সমুদ্রের ঢেউ।
নোনাজলে গোড়ালি ডুবে গেলে,
চাইলাম----আকাশ আবার ফিরিয়ে দিক
সাগরের শুষে নেয়া জলকণারাশি।


আমার বাঁশীটা দিয়ে দিলে -------

তুই কি এমন বৃষ্টি নামাবি?






------------------------------------------------------------------------------------

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০১৪

বিঁধে আছে তীর এবং ভাঙ্গা কাচের টুকরো


পায়ে বিঁধে গেছে ভাঙ্গা কাচের টুকরো
রক্ত গড়িয়ে যাচ্ছে ড্যান্সফ্লোরে---------


নাচঘরে কেন এমন ছড়িয়ে দিয়েছো চূর্ণকাচ,
পাপড়ির নীচে গোলাপের কাঁটা?

আমারতো জানাই ছিল
পারশিগালিচার নীচে---রক্ত এবং কাচের টুকরো ; দুটোই লুকনো যায়।

রোজ ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি
সমস্ত শরীর জুড়ে বিঁধে আছে ঈর্ষার ছোট ছোট তীরগুলো।
যখন বিভোরঘুমে
বুকের ভেতরে পাখি, প্রজাপতি আর ঘাসফুল তুলে রাখি ;
কেউ ভালবেসে দিয়ে যায় তীরউপহার।


ইদানীং খুব সচেতনে
মানুষের ভাঁজকরা মুঠোর দিকে  তাকিয়ে দেখি
কখন কোন ফাঁকে গুপ্তনখরগুলো বের হয়ে আসে।


------------------------------------------------------------------------

সোমবার, ৯ জুন, ২০১৪

চাঁদ ডুবে গেলে



আমাদের একটা ছায়াঘর ছিল----
খুব রোদ্দুরের দিনে চুপচাপ পাতাঝরার শব্দ শোনার জন্য

তখন--
আবছাম্লান নীহারকণার মতো স্বপ্নেরা উড়ে উড়ে যেতো চারপাশে।


আমি রাতকে বলেছি আরো কিছুটা সময় থেমে যেতে ;
নীলজোনাকীরা যেটুকু সময়----------
সোনালীআগুন জ্বালিয়ে রাখে মুঠোর ভেতরে।
ঝিঁঝিপোকারা কথা দিয়েছিল কন্ঠে তুলে দেবে গুনগুন গুঞ্জরণের
ঝিনিকিঝিনি সুর।
খুব ভীরুতায় রাত বললো--
সেও থাকতে পারেনা চাঁদের পাহারা ছাড়া ;
চাঁদ ডুবে গেলে
সেও চলে যাবে।

থেমে গেল নক্ষত্রের সব কোলাহল।


চাঁদ ডুবে গেলে রাত নিভে যায় ।
কেনযে-------------------------





-------------------------------------------------------------------------------------------------




























রবিবার, ৮ জুন, ২০১৪

এক বৃদ্ধের গল্প এবং একজন কবি --বিষ্ণু বিশ্বাস

"' আমি নেই, হয়ত ছিলাম---"
এমন দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণে কে বলতে পারে এই কথা?একজন কবি ছাড়া আর কেউনা।যেখানে প্রতিদিন মানুষ সাড়ম্বরে জানান দিচ্ছে নিজেদের অস্তিত্ব ----আমি আছি ,আমি ছিলাম , আমি থাকবো।এমন নিঃশর্তে নিজের অস্তিত্বের প্রতি সন্দিহান হতে পারেন শুধুমাত্র একজন কবিই।কিন্তু এই মৃদু উচ্চারণই প্রবলভাবে জানিয়ে দেয় ---কবি আছেন , কবি ছিলেন।এই উচ্চারণ একজন কবির অহংকারের উচ্চারণ।শুধুমাত্র একজন কবিকেই মানায়।

  " ‘আমি নেই, হয়ত ছিলাম’, শুরু হল এইভাবে তার কথা।
সে মরে গেছে কি বেঁচে আছে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না তখন।
কে জানে, সে হয়ত শেষ থেকে শুরু করেছিল। তবে তার গল্প শুরু হলো সে সময়
যে সময়টিতে কেউ আমরা আর তৈরি নই এই গল্পটি শোনবার জন্য।"
( এক বৃদ্ধের গল্প/বিষ্ণু বিশ্বাস
২১/২২.১১.৯২ )

কী বিস্ময়কর! কী অদ্ভুত মিল নিজের জীবনের সাথে !
 হ্যাঁ কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের কথা বলছি। আশির দশকের কবি।
জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঝিনাইদহের বিষয়খালিতে (১৯৬২/২৯ মে)।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। '৮৫ সালে অনার্স শেষ করে চলে আসেন ঢাকায় । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ।নতুন জগৎ ।জীবনযাপন এবং কাব্যচর্চার নতুন পরিমন্ডল।শুরু হয় কিছুটা যেন এলোমেলো, এক বোহেমিয়ান জীবনযাপন। ।তবুও সময়ের সাথে মানিয়ে যায় সবকিছুই।লেখালেখি, আড্ডা, বন্ধুবান্ধব সবই চলছিল স্বাভাবিক।

ছন্দপতন ঘটলো ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার রাজনৈতিক ডামাডোলে।যার প্রভাবমুক্ত ছিলনা বাংলাদেশও।সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা উদ্ভুত এই হিংস্র পরিস্থিতি কবিকে বিপর্যস্ত করেছিল মারাত্মকভাবে।করেছিল আতংকগ্রস্থ।আজব আজব হ্যালুসিনেশনে ভোগতে থাকেন।ভীতচকিত হয়ে দেখতেন একটা সাদা গাড়ী  অথবা ছুরি হাতে কেউ একজন তাকে তাড়া করে ফিরছে।এইরকম ভীতিবিহবলতার মাঝে প্রায়ই উধাও হয়ে যেতে শুরু করেন মাঝে মাঝেই । আবার ফিরেও আসেন। এরকম সিজোফ্রেনিক অবস্থায় শুরু হয় মনোচিকিৎসা। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যান একেবারেই ।চলে যান পশিমবঙ্গে।১৯৯৩ সালে। এরপর বহু বছর আর তেমন কোন খোঁজ পাওয়া যায়না তাঁর।খোঁজ মিলল সুদীর্ঘ আঠারো বৎসর পরে ।পশিমবঙ্গের বনগাঁয়ের আশেপাশে কোথাও আছেন তিনি এটুকু জানা গেল। যেখানেই হোক, আছেন যে এটাই আনন্দের এবং স্বস্তির।

তাঁর বন্ধুবান্ধবের কথা থেকে জানা যায় বিষ্ণূ ছিলেন খুব ফ্যাশন্যাবল ছেলে। জিনস্‌ ছিল তাঁর প্রিয়, শার্ট পরতেন ইন করে।আশ্চর্য ব্যাপার  হলো সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হয়েও তিনি ভুলে যাননি নিজেকে গুছিয়ে রাখার অভ্যাস, ভুলে যাননি তাঁর একদাঘনিষ্ট বন্ধুদের নাম।এক প্রত্যক্ষদর্শী সুহৃদের কাছে জানা যায় আজো তিনি আগের মতই থাকেন সুসজ্জিত আর কেউ বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করে গড়গড় করে বলে যান বন্ধুদের প্রিয় নামগুলো।অর্থাৎ  তিনি আছেন স্মৃতি ও বিস্মৃতির এক নতুন জগতে। যা ফেলে এসেছেন পিছনে তা সম্পূর্ণ ধরে রাখতে না পারলেও পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেননি ,অতীতের কিছু অংশ আঁকড়ে ধরে আছেন গভীর মমতায় ।

 " থেমে থাক, লাল লাল বোতলে সৌগন্ধ স্থির
জলভারে
অপূর্ব অন্তর উৎসারিত শান্ত কান্ত জল
তোমাদের
আর নোনা হাড়ের আঘাতে ঝরুক আদর?
নোনা দাঁতে নোনা হাড়ে।
তারপরে
সাগরের অজানা গুহায় মানব আমি দাঁড়াব এসে
সম্মুখে তোমার তোমাদের
ঝর্ণাধারা
শাদা শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীত হবে
যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে।"
(রাতের সঙ্গীত/বিষ্ণূ বিশ্বাস)


জীবন থেমে যায়নি ঠিক ।তবে থমকে আছে। প্রায় চলৎশক্তিহীন। এই থমকে যাওয় জীবন আবার চলতে শুরু করবেতো?"ঝর্ণাধারা /শাদা শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীত হবে /যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে" । আকাশের নীলচোখে ভোর হোক।কবির জীবন বয়ে যাক ঝর্ণাধারা হয়ে ,শাদা পতাকার মতো হলদে সঙ্গীতে।



কবি কি ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ? '৯২ সালে লেখা  এক কবিতায় লিখছেন, ' আমি নেই ,হয়ত ছিলাম', আর ঠিক এক বৎসরের মাথায়ই হারিয়ে গেলেন, নেই হয়ে গেলেন। ' আমি নেই ,হয়ত ছিলাম'  বাক্যটা আর 'এক বৃদ্ধের গল্প' হয়ে রইলনা।হয়ে গেল কবির নিজস্ব উচ্চারণ।

 এই কবিতা যখনকার কবি তখন হয়ত ভোগছিলেন অস্তিত্বহীনতার সংকটে।এই থাকা অথবা না থাকা ধরে নিতে পারি নিজেকে নিয়ে একধরণের দ্বিধাগ্রস্থতা--নিজের গুরুত্ব-অগুরুত্ব নিয়ে।এই দ্বিধাদ্বন্দ নিয়তই আলোড়িত করে মননশীল মানুষকে।কী আমার অবস্থান অথবা আমি কতটুকু প্রয়োজনীয় অন্যদের কাছে--এই কৌতুহল মানুষের মাঝে খুবই প্রবল।বিশেষ করে একজন কবির কাছে।কবি থাকেনইতো নিজস্ব অস্তিত্বভাবনার জগতে ।নিজের এবং  চারপাশের  বাস্তবতা থেকে দূরে এক কল্পরাজ্যের সন্ধানে। এই পলায়নি মনোভাব থেকেইতো কবিতার জন্ম।কবি বাস্তবের হয়েও সম্পূর্ণ  বাস্তবের নন।

কে যেন বলে গেছেন --একজন কবির ভাবনা সমাজের সাধারণ মানুষের ভাবনার থেকে পঞ্চাশ বৎসর এগিয়ে থাকে। কাজেই এই প্রগতিশীল ভাবনার মাণদন্ডে প্রচলিত সমাজকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে গিয়েই কবি বারবার হোঁচট খান।সমঝোতা করাটা কখনোবা দূরুহতম হয়ে ঊঠে তার জন্য।আর তখনই ঘটে যায় বিপত্তি।সমাজ এবং কবিমানসের মধ্যে শুরু হয় এক অনিবার্য সংঘর্ষ--যাকে কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্থ হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।ভেঙ্গে যায় মানসিকস্থিতির বাঁধ।নিজের সাথেই তখন নিরন্তর  যুদ্ধে যুদ্ধে ক্লান্ত কবি কখনওবা পারেন স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরে আসতে,  আবার কখনও ব্যর্থ হয়ে হাল ছেড়ে দেন ;খেই হারিয়ে ফেলেন ।বিষ্ণু এই যুদ্ধে হেরে গেলেন ।স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফেরা হলোনা তাঁর।

"তারপর দ্রুত ভিড়ের ভেতর কোথায় সে ডুব দিল
 কোনদিন, তারপরে, তাকে আমরা আর দেখি নি।"
 ( এক বৃদ্ধের গল্প/বিষ্ণু বিশ্বাস)

এতো নেহায়েতই 'এক বৃদ্ধের গল্প' নয়।এ যে কবির নিজেরই গল্প।অজানা অচেনা এক ভিড়ের ভিতর নিজেকে লুকিয়ে ফেলার গল্প।যাকে আর কেউ খুঁজে পাবেনা সুদীর্ঘ আঠারো বৎসর পর্যন্ত ; এমন সফল এক আত্মগোপন।এই আত্মগোপনে আর কার কি আসলো গেল জানিনা ,বড় হয়ে রইল একজন অমিত সম্ভাবনাময় কবির আত্মবিনাশের ইতিহাস।বাংলাসাহিত্য বঞ্চিত হয়ে গেল কিছু আসাধারণ পংক্তিমালা থেকে।

আশার কথা কবি বিষ্ণু বিশ্বাসের খোঁজ পাওয়া গেছে। কিছু অসাধারণ মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে কবিকে আবার সুস্থ করে তোলা যায়। ফিরিয়ে আনা যায় তাঁর পরিচিত সাহিত্যের ভূবনে।
আশাকরি বিষ্ণু আবার ফিরবেন আমাদের মাঝে সুস্থ-স্বাভাবিক। বাংলা সাহিত্যভান্ডারে যোগ করবেন আরো নতুন কিছু অসাধারণ কাব্যশৈলি।

"এমন গল্পের কবি অন্ধ হলে সৃষ্টি স্থিতি লয়
নিশ্চিহ্ন আলোর সখা, তোমাদের শোনা কোন গান
পাথরে স্থির হয়েছে।"
( গল্পের কুমার / বিষ্ণূ বিশ্বাস)

এমন কবিতা গল্পের কবির অন্ধত্ব মেনে নেওয়া যায়না। " এমন গল্পের কবি " আবার চক্ষুষ্মান হও।ফিরে এসো আলোকের ঝার্ণাধারায়------'যখন ভোর হবে ভোরের আকাশের নীল চোখে '।

"শুধু মৃতদের গল্প কত আর কাঁধে ঝুলে যাবে
এবার নিষ্কৃতি পেলে, শান্তি অন্বেষণে মহাকাশে
গিয়ে, দু’টুকরো লোহা ঠুকে আগুন জ্বালিয়ে দেব
অসহ অসীম শব পুড়ে হোক ছাই পুড়ে ছাই।"
( কালো মেয়ে / বিষ্ণু বিশ্বাস)

হ্যাঁ কবি --মৃতদের গল্পগুলো কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে , শবগুলো পুড়িয়ে ছাই করে দিয়ে শুরু হোক নবজীবনের গান। জীবন আবার ফিরুক জীবনের মতো।


এক বৃদ্ধের গল্প/ বিষ্ণু বিশ্বাস

সূর্য ধীরে নিভে গেল। আকাশে গোলাপি একটা রঙ আস্তে অন্ধকারে হারাল। এক
বৃদ্ধকে ঘিরে আমরা বসে আছি কিছু তরুণ তরুণী। বহুকালের প্রাচীন। ও আমাদের
কিছু বলবে ভেবেছে, অথবা,
আমরা কিছু শুনব অপেক্ষায় রয়েছি। আমরা কোনো কথাই বলছি না।
তারপর একটি দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ- বৃদ্ধটির। নাভীপদ্মে সঞ্চিত যেন বহুকালের
গাঁজাময় গেজানো ধোঁয়া সে অসীমে ফুঁকে দিল।
‘আমি নেই, হয়ত ছিলাম’, শুরু হল এইভাবে তার কথা।
সে মরে গেছে কি বেঁচে আছে, তা নিয়ে আমরা ভাবছি না তখন।
কে জানে, সে হয়ত শেষ থেকে শুরু করেছিল। তবে তার গল্প শুরু হলো সে সময়
যে সময়টিতে কেউ আমরা আর তৈরি নই এই গল্পটি শোনবার জন্য।
কিন্তু শুরুতেই একটি প্রাচীন তরবারির কর্মসিদ্ধির কথা বলে, সে আমাদের থমকে
দিয়েছে। তারপর কবেকার ওর জীর্ণ ব্যাগ থেকে রাশি রাশি ঝরা পাতার মতো টাকা
-টাকা, একে একে, মুঠো মুঠো বের করল, আর তাতে আগুন জ্বালাল।
পৃথিবীর যতসব সুগন্ধি বৃক্ষের পত্র, পোড়া মাংস আর ধূপগন্ধের মতো,
চন্দন বনের হাওয়ায় কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেইসব।
আমরা আবার ব্যাকুল হলাম- কী বলে, শুনবো ভেবে ঠিক তখুনি
সে তার পলকা দাড়িতে কিছুক্ষণ হাত বুলালো, মাথা থেকে টুপিটি পকেটে নিল এবং
হাসল, তীব্র মৃদুস্বরে বলল, ‘এবার তোমরা’।
তারপর দ্রুত ভিড়ের ভেতর কোথায় সে ডুব দিল
 কোনদিন, তারপরে, তাকে আমরা আর দেখি নি।

২১/২২.১১.৯২












শনিবার, ৭ জুন, ২০১৪

এই ঘর ভুলানো সুরে

আমার কখনো পুরোটা পথ যাওয়া হয়না।
মাঝরাস্তার গোলকধাঁধায় আটকা পড়ে বারবার ফিরে আসি।
চলতে চলতে চাঁদের প্রাসাদ দেখে থমকে গেলাম।হাট করে খোলা ছিল জোৎস্না উঠোন।দুইদিকে দুই সিঁড়ি।একটা নেমে গেছে পাতালের পথে, অন্যটা সোজা আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়েছে দুই হাত।যেন ধরে ফেলবে--ছুঁয়ে ফেলবে আরেকটুখানি  এগিয়ে গেলেই। এবং পাতালের সিঁড়িটা ---নেমে গেছে এক অনন্ত নির্জনতার পথে।
কোনদিকে যাবো? উত্তরণের সিঁড়ি যদি ভেঙ্গে পড়ে মাঝপথে অথবা পাতালের সিঁড়ি গভীরগহন এক অনন্তগহ্বরে ঠেলে দেয় যেখান থেকে আর ফেরা যায়না!এইসব ভাবতে ভাবতেই --বন্ধ হয়ে গেল সামনের দরোজা।সিঁড়ি নেই। দরোজাও নেই।নেই আর কোন গন্তব্য।
এটাই যখন স্বভাব হয়ে গেল --বারে বারে সঠিক পথের দ্বিধাগ্রস্থতা ; নিজেকে পথের মাঝেই ছড়িয়ে দিলাম।পথ যেখানে নিয়ে যাবে, সেখানেই থেমে যাবো নাহয়।

রোজ ভোররাতে আকাশ থেকে নীল নীল যে ফুলগুলো ঝরে পড়ে,তার কোন নাম অথবা গন্ধ জানিনা আমি।
শুধু দেখি ফুলঝুরির মতো ঝরে পড়ছে থোকা থোকা আলোকরেনু।কোনদিন আমার হাতের মুঠোয় ধরতে পারিনি তার একটি কণাও।জানা হয়নি কেমন তাদের ঘ্রাণ অথবা উষ্ণতা।শুধু দূর থেকে দেখা সেই আলোর ঝলক ধরে রাখি চোখের স্মৃতিতে আর নয়নমণিতে সোচ্চার রাখি সেই বর্ণানুভব স্তবপাঠের মতো; হয়তো কোন একদিন ধরা দেবে সুগন্ধময় উত্তাপের সাথে।নিজেকেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখে দেই আকাশ এবং সমুদ্রের সীমাহীন নীলে । কেউ কেউ হয়ত খুঁজবে এই নীলসমর্পনের পিছনে কোন এক অজানা রহস্যময়তা,ধিক্কার অথবা করতালির সুযোগ।তবে আমিও কখনো কোন সুযোগ রাখিনা রহস্যসন্ধানী টিকটিকিদের জন্য।


একবার এক খাঁচা বিক্রেতা আমাকে বলেছিল--খাঁচা  পাখির থেকে বেশী মূল্যবান একজন গৃহস্থের কাছে।পাখি যখন তখন ডানা ঝাপটায় ,হৈচৈ করে । পালিয়ে যেতে পারে সুযোগ পেলেই।খাঁচা চিরকাল স্থির ।গৃহস্থবারান্দার শোভা।আবার নতুন কোন পাখি পোষা যায়।পুরোনো খাঁচা। নতুন পাখি।নতুন বুলি।
সন্ধানে আছে ---কিন্তু এখনো দেখা পাইনি কোন পাখিবিক্রেতার যার কাছে জেনে নিতে পারি তার নিজস্ব হিসাবনিকাশ ।অবশ্য খাঁচা অথবা পাখিওয়ালা দুজনেই বলবে  নিজেদের মতো করেই ।এটাই নিয়ম।

পথ।
 দু'সারি গাছের মাঝখানে ক্রমশঃ ছোট হয়ে আসা ছায়ামগ্ন একটা টানেলের ছবি,যা মিশে যাচ্ছে অনন্তের সাথে।দূরপাল্লার বাসে যেতে যেতে কতোবার দেখি এই দৃশ্য আর হারিয়ে যাই অনন্তবিভোরতার ভিতরে।

পথিক।
একতারা হাতে গৈরিকবেশ একজন ক্লান্তমলিন মানুষ।শ্রান্ত পায়ে হাঁটছে তবু একতারায় বাজিয়ে যাচ্ছে ঘরপালানো--ছন্নছাড়ানেশার সুর।

মানুষ নিজেইতো বাঁধে ঘর আর সেই ঘর থেকে পালিয়ে বেড়ায় অজানা পথেপ্রান্তরে।চারদেয়ালের আচ্ছাদনের ভিতরেও মনের গোপনকুঠরিতে লুকিয়ে রাখে এক বিবাগীবাউলের ছবি।দিগবলয়ের অন্যপ্রান্ত থেকে যখনতখন  ছূটে আসে যাদুকরী এক ঢাকের বাদ্য। সেই দূরাগত শব্দের টানে টানে ছুটে বেড়ায় দূর থেকে দূরান্তে।

ঘরের নয়, মানুষ হতে চেয়েছে আকাশের।মুক্তবিহঙ্গের মতো।  ভেবেছে  একদিন কোন জাদুমন্ত্রে তারও গজিয়ে যাবে দুইটা ডানা আর উড়ে বেড়াবে আকাশের অসীম নীলিমায়।
পাখি হতে না পেরেই  কি মানুষ বিবাগী হয়ে গেল!আকাশের না হতে পেরে পথের। ঘর ভুলানো সুরের  পথিক।





শুক্রবার, ৬ জুন, ২০১৪

অঝোরবৃষ্টি নামুক



 আজ এমন মনপোড়ানো চাঁদ উঠলো কেন?
জোৎস্নার তীব্রকলরবে ভেসে যাচ্ছে চরাচর।
চাঁদনি চাইনি।
বৃষ্টি চেয়েছি।

আজ এই শহরে অঝোরবৃষ্টি নামুক।
সবুজপাতারা সারাদিন বৃষ্টিপ্রত্যাশায় আছে।

বাচাল এক টুকরো ঝড়োহাওয়া নীপবনের গল্প শোনাতে এলে,
বলি--চুপ করে থাকোনা আরো কিছুটা সময়।
মেঘের ভেলায় চড়ে বৃষ্টিধারায়
নেমে যাবে একঝাঁক সাদা রাজহাস ;
কোলাহলে থমকে গেলে, ফিরে যেতে পারে।

যখন কাশগুচ্ছমেঘদল ভীড় করেছিল
কামিনীঝোপের মাথার উপরে ;দেখা হয়নি।
অন্যমনে ভাবছি তখন অঝোরবর্ষণের কথা।
এই অভিমানে জলরাশি দূরে সরে গেছে ; জানা হলোনা।

আজ তুমুল বেজে যাচ্ছে বৃষ্টিশৈশবের  স্মৃতিমেদুরতা।
ভীষণ দুলছে কাগজের নাও ;
অতলজলের দেশে মৎসকন্যা ;
নোলক হারিয়ে গেছে পাতালপুরিতে ;
প্রবলধারার ভেতরে রেনু রেনু ছড়িয়ে গেল ,
প্রথম কদমদিনের পাপড়িগুলো।

এক খন্ড অলস উড়োমেঘ খুব উদাসীনতায় ঈশানকোণের দিকে
উড়ে গেলে ---মনে হলো আজ আর বৃষ্টি হবেনা।
চাতকেরা  অভিশাপ ছড়াতে ছড়াতে দূরনীলিমার পথে
হারিয়ে গেলে
বাতাসের মীড়ে মীড়ে মিশে গেল বিষাদের সুর।

ধারামগ্নতায় জলপাহাড় গড়েছি আজ সারাটা বিকেল
ছড়িয়ে দিয়েছি ঘাসে ঘাসে
ফড়িংয়ের  ঠোঁটে ঠোঁটে সেই শুভসংবাদ পৌঁছে গেছে
গাছে গাছে, লতায়পাতায় ;
কেতকীকেয়ার ফুটি ফুটি কুঁড়িগুলো প্রতীক্ষায় আছে।
  আজ কেন তবে বৃষ্টি হবেনা?

আজ এই শহরে অঝোরবৃষ্টি নামুক।
রাতের আকাশ চিরে বেজে যাক জলঝরনামৃদঙ্গের তান ।







রবিবার, ১ জুন, ২০১৪

খেলা হার অথবা জিতের

কেউ কেউ পারে জলসূত্রি মেঘের ডানায় চড়ে রামধনুপ্রজাপতি হয়ে যেতে।
কেউ কেউ
ডিসটেম্পারড দেয়ালের ফ্রেমবন্ধী ছবি।

ড্রপসীন পড়ে গেছে ;
নাচঘর থেকে ফিরে যাচ্ছে নুপুরের সাথে যুদ্ধুক্লান্তপায়ের নর্তকীরা।
এওতো যুদ্ধজয়---ক্ষয়কাশ রোগীর মতো ধুকতে ধুকতে বিশুদ্ধনিঃশ্বাসে ফিরে আসা।
এওতো যুদ্ধজয়---বেয়াড়া বন্যার স্রোতেও পাড়ের লতাগুল্মে জড়িয়ে থাকা।

সংক্ষিপ্ত ট্রেইলারে লোভনীয় দৃশ্যক্রম।
ঠান্ডা ছবিঘরে সাজানো নায়কনায়িকা এবং চতুর কাহিনীবিন্যাস ;
কাটছাট ইতিহাস--সেলুলয়েডফিতের বাইরে।

প্রবল আবেগস্রোতে পেরিয়েছি দীর্ঘকুয়াশাভেজা হিমকালোমাঠ,
অন্যপাশে আলো আছে ভেবে।
আলো নয়
আগুনও নয়
মরীচিকা ছিল।
অনুচ্চারেই বাঙময় হয়ে রইল সব অনুযোগঅভিমান
তবু
বিহগদূতির  ঠোঁটে দিয়েছি তুলে ভাষাঅভিজ্ঞান।

রণক্ষেত্র থেকে দূরে,
ভিন্নপথের খোঁজে ,
ব্যস্ত হাতের মুঠোয় কেনযে আচম্বিতে ঊঠে আসে আগ্নেয়াস্ত্র

সংঘাত কেনযে এত অনিবার্য হয়ে ওঠে!

ঘড়ির কাঁটার সাথে পালটে যাচ্ছে রণকৌশল।আর
অবিশ্রান্ত যুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষয়ে যাচ্ছে আয়ু

কখনো একটু বিরামতো চাই

তবে-- সাদা পতাকাকে আত্মসমর্পনের ঝান্ডা ভেবে নিলেই
বিপর্যয় ; হিসেবের গরমিল।

যুদ্ধশেষের আবছা ঘন্টাধ্বণি বাজছে কোথাও?

কে হারলো?

জিতলো কি কেউ?



------------------------------------------------------------------------------------