রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭

তীব্র বাজাও তবে






তুমি হুইসেল বাজাতে জানো?
নিমেষে খান খান
ভেঙ্গে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করতে পারো
স্থবির পাথরের জগদ্দল স্তব্ধতা?
একটি আকাশপাতাল জোড়া খাতা খুলে বসে আছি।
অমিয়ঘোরে নিষিক্ত নতুন শব্দ লেখা হোক কিছু
এমন ভাবতে ভাবতে
চুরি হয়ে গেলো ভৈঁরো রাগে বাঁধা বেলীর সুগন্ধ।

বাতাসের কানে কানে রেখে দেই তবে
কিছু নীরবতা।

হরস্কোপ



ভাবছি একটা খাঁচাবন্ধী টিয়া হাতে
বসে যাবো রাস্তার পাশে।
তুমি বলতে পারো
এসব ভাগ্যগণনা,
হরস্কোপ টোপ সব বাজে কথা,
কুসংস্কার!
কিন্তু আমি তোমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি
টিয়ার ঠোঁটে তুলে নেওয়া রংগীন কাগজে
বিশ্বাস রেখো।

সময়ের শবদেহ ক্ষমা চায় শুধু
অবিরত ক্ষমা করতে করতে
একবার আয়নার সামনে দাঁড়াই;
ক্ষমাহীন সব কালশিরা ফোটে আছে।
কেবল নিজেকেই ক্ষমা করা যায়না কখনো।
আহা! আমার কুড়িয়ে পাওয়া রঙীন কাগজ...









দুঃখদিনের দূতি






তোরঙ্গ খুলতেই ঘর জুড়ে
ন্যাপথেলিনগন্ধের মতো স্মৃতির ঝাপটা
আয়নায় একটুকরো মনখারাপ, বিষন্ন হাসে।
অপটিক ক্যাবল থেকে উড়ে যায়
ফিরে আসে বিষাদমগ্ন একলা শালিখ;
নিঃসঙ্গ শালিখ দুঃখদিনের দূতি--
সকলেই জানতো সে কথা।

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

হ্যালুসিনেশন




মিহিমৃত্যুর মতো একটা কান্না ছুঁয়ে আছে
আমিতো চেয়েছি তীব্ররোদ, ঘাম আর বৃষ্টি। শ্বেতপাথরে লিখা নাম
বিরতিহীন হ্যালুসিনেশনে এন্টিক শো-পিস হয়ে উঠছে ক্রমাগত।
যারা আয়নার সামনে দাঁড়াতে নিয়ত ভয় পায়
তারাই তোমার সব কথার মাঝে কেবল নান্দনিকতা খোঁজে।
যেন তুমি তার জন্য তৈরি করবে মিথ্যে সুন্দরের এক নন্দনকানন।
অথচ
ভাষাবিদেরাও জানে
ভাবনার কোন যথার্থ ব্যাকরণ হয়না কখনো।

একটি নরম রোদের চাদর তোমাকে ছুঁয়ে যেতে যেতে
গুটিয়ে নিল তার ব্যাকুল প্রসারিত করতল।
হয়তো ক্রমান্বয়ে এভাবেই
একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে ছায়ার নৈঃশব্দ্যে.......

শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

চোখের পাথর



মাঝখানে কাঁচের দেওয়ালজোড়া অভিমান;
কে কাকে ফেরায়?

হাঁটতে হাঁটতে অবিসংবাদিত একটা গোলচক্কর
চারদিকে চারপথ ; কুহকীমায়ার ইশারা।
বেখেয়াল নাজুক হাতের বন্ধন খুলে
কে যে কোন পথ ধরে চলে গেলো!
রেখে যায়নি কোন পদছাপ।

এক ঘোরলাল কৃষ্ণচূড়া দুপুর
দূর গোধূলির পথে বেঁকে যেতে যেতে
পিছু ফিরে একবার দেখে নেয়
আর কতো বাকী আছে
রংয়ের প্রলেপ মাখা মধ্যাহ্নের ছায়া।
অস্তমিত বিকেলের পথ জুড়ে রক্তাভ পাপড়ি,
লালগালিচা বিছানো পথে একটি সন্ধ্যা নেমে আসে
আকাশের শামিয়ানায় গুড়ো গুড়ো ছড়ানো
আবীর আবীর কিছু রাগরং;
চৌরাশিয়ার বাঁশিতে কাঁদে ইমনকল্যাণ,
উলোঝুলো পথেপ্রান্তরে বাজছে সায়াহ্ন।

ভরসন্ধ্যার খাতা খুলে দেখি
তরঙ্গের ধ্যানমগ্ন মুদ্রার বিন্যাস,
যা কখনো শেখোনি তুমি জোয়ারভাটিতে;
অগাধ জলের শিথানে চোখ রেখে
দেখে গেছো  শুধু মাছেদের কেলি
শেখোনি মাছের প্রকারভেদ,
কানকোর ভিন্ন গঠনপ্রকৃতি।
নোনাজল দেখেছো শুধু,
দেখোনি  নিষিক্ত চোখের পাথর।



শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭

স্যুভেনির



তোমার শহরের মানচিত্র আঁকছিলাম দীর্ঘক্ষণ
সাদা কাগজে অবিরত  পেন্সিলের উল্টোপিঠ ঘষে গেছি ;
কোন দাগ পড়েনি কোথাও।
ছায়াঘন চোখের রাজপথ থেকে
গলি-উপগলি পেরিয়ে
এক গভীর উদ্যানের সাথে
মিশে গেছে যে অঙ্গুলি-নির্দেশ
কোন আঁচড়ের টানে যায়না ধরে রাখা তাকে।

নিমগ্ন পাঠে খুঁজেছি
শব্দের অর্ধস্ফুট বর্ণমালার ঘ্রাণ।
যন্ত্রণাগুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে
একটা হট্টগোলের পৃথিবীতে চলে গেলেও
বিস্মরণে হারিয়ে যেতে দেয়না সুষুপ্ত একটা খোঁচা।

মুঠোর ঘর্ষণে সমস্ত সবুজ ঝরে গেলে
পাতার কংকাল হাতে বসে থাকি।

বরফে চোবানো বোতলটা এবার খোলো
ময়ুরপাখায় উড়তে থাকুক অবরুদ্ধ স্বপ্নগুলো;
একটি নাচের পালক খসে গেলে,তুলে নিয়ে
মহার্ঘ্য স্যুভেনির করে রেখে দিও।




সোমবার, ৮ মে, ২০১৭

ফেরা কি হয়




তুমি কোথাও চলে যাবে
একথা শুনার পরে আর্তনাদের তীব্রশব্দে ঝরে পড়লো আকাশ
মুহুর্মুহু বজ্রপাতে জানিয়ে দিল তার প্রতিবাদের কথা।

তোমার সাথে নির্বাসনে চলে যাচ্ছে তোমার প্রিয় শহর ;
কীনব্রীজের নীচে
সুরমাতীরের স্নিগ্ধবাতাস বয়ে চলা বিকেলগুলো,
ব্যালকনির রকিং চেয়ার,
চায়ের টেবিল,
রাস্তার পাশের ঝাঁকড়া নিমগাছ,
দেওয়াল বেয়ে ওঠা মালতীর ঝাড়
তোমার কথা ভেবে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলবে অনেকগুলো দিন ধরে,
টবের ক্রিসেন্থিমাম
তোমার জলস্পর্শের অপেক্ষায় ব্যাকুল হয়ে  থাকবে বহুদিন।
আবার কবে পাতা উল্টাবে
এই উদগ্রীব অপেক্ষায় থাকতে থাকতে
ধুলোয় মাখামাখি হবে বুকশেলফে,
প্রিয় বইগুলো তোমার।
দেওয়ালের ছবিগুলো
প্রশ্নবোধক চোখে তাকিয়ে থাকবে কামরার শূন্যতার দিকে।
জানালার বন্ধ কাঁচে ধাক্কা খেতে খেতে
বাতাসেরা ফিসফিস করে
একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করবে -
' কেন গেল?
একেবারেই কি গেল?
আর ফিরবেনা? '

গেলে কি আর ফেরা হয়?

জানি
এই প্রিয় শহরের কথা ভেবে ভেবে
তোমারও মন কেমন করবে যখনতখন
আঁটসাঁট অস্বস্তিকর পোশাকের মতো
একটা প্রবল বিষন্নতা
জড়িয়ে ধরবে তোমাকে অবিরাম।
বিকেলের ব্যালকনি,
পাড়ার গলিটা
স্বেচ্ছাচারী-দস্যুর মতো ছিনিয়ে নিয়ে
খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলা
কিশোর- কিশোরীর প্রাণবন্ত হৈ চৈ - কোলাহল,
মাঠে নেমে আসা শালিকের ঝাঁক ,
বারান্দায় ছড়িয়ে দেওয়া দানা খুঁটে তোলা চড়ুই,
খোলা প্রান্তরের শিরীষ -জারুলের অপরূপ মেলা,
হুডখোলা রিকশায়
শহরের অলিগলি ঘুরে বেড়ানো খুচরো সময়,
চেনা- আধোচেনা মুখগুলো
পিছু থেকে বারবার ডেকে যাবে।
ডেকে যাবে
এ শহরের আচমকা হুট করে নেমে আসা
বৃষ্টিদিন,
মন আকুল করা সোঁদা গন্ধ,
ভেজা কদম- বকুলের ঘ্রাণ।
তখন কি তুমি ভাববে আবার ফেরার কথা?
একবার কোথাও চলে গেলে
ফেরা যায়?

একবার চলে গেলে
ফিরে এসে অবিকল পাওয়া যায়
এমন ঠিকানা কোথাও হয়তো নেই;
তবু ফেরার আকুতিতো মিথ্যে নয়।
চলে গিয়েও পিছুটান
চলে গিয়েও বারবার
ফিরে আসার আশাটুকু...









শনিবার, ৬ মে, ২০১৭

চশমার কাঁচের ছবি


তখন হাঁটছিলাম রংধনুর পথে
এতোটুকু বাজেনি দুর্লঙ্ঘ অতিক্রমের কোন ব্যাথা,
পথের দুপাশে থোকা থোকা
বর্ণালী রডোডেনড্রোন ফুটেছিল।
এক উল্লসিত পুষ্পবিহার শেষে
চিহ্নিত হলো পায়ের পাতার গাঢ় ক্ষতদাগ।
খুব দ্রুত ঝরে পড়ে সোনালি পরাগ, তাই
ডানায়  খুশীর সুগন্ধ মেখে প্রজাপতি উড়ে গেলে
ঈর্ষা হয়।
সেই থেকে
সোনালি নূপুরে একফোঁটা দ্বেষণার মেঘ,
সযতনে আগলে রেখেছি ;
কোন একদিন
পাথুরে নাচঘরে ঝরে যাবে শিঞ্জিনীর তালে।

সব ছবি জমা থাকে চশমার কাঁচে।
মাঝেমাঝে চোখ ঝাপসা হলে
অসময়-আচমকা বৃষ্টির ছাঁট ভেবে মনকে ভুলাই।



ক্যারিকেচার



এক ঢেউসমুদ্রের  খুব মন কেমন করা অন্ধকারে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে,
ইচ্ছে করে নিষিদ্ধ করে দিতে
জানালার ফাঁক গলে অনাহুত ঢুকে পড়া
আবছা চাঁদের ছড়ানোছিটানো পাপড়িগুলো।
দূরে কোথাও একটি 'পিউ কাহা'র কুহুতান
থেকে থেকে নাহয় ডেকেই গেলো অনিবার।

যখন আগাপাছতলা দেখে নিলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন ;
মনে হলো এই দিনযাপনের ছবিটা
উদভ্রান্ত কাঁপা হাতে আঁকা এক ক্যারিকেচার।
ঈর্ষাতুর তাকিয়ে থাকি অনিমেষ
কোথাও আঁকা হয়নি সেই অসম্ভব ছবিটির দিকে।

কতো কী যে বদলায়!
নিজস্ব অবয়ব দ্বিধাহীন উহ্য ফেলে রেখে
মহুয়ামাতাল ঘোরে
ভিন্ন কোন জীবনের ছায়াপাঠে মগ্ন হই।
চিহ্নিত হবার আগেই শরীরে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রামক-দুরারোগ্য রোগের কণিকা।
প্রতিচ্ছবি বদলে যায়, রোগাক্রান্ত এক আকৃতি ভেসে ওঠে
তবু প্রতিদিন হাসপাতালের রাস্তার এক ফার্লং দূরপথ দিয়ে হেঁটে  গেছি।

জীবন ফুরিয়ে যায় যেমনতেমন;
খোলামকুচির মতো অবজ্ঞায় ফেলে দেয়া সময়ের হাহাকার তবু বেঁচে থাকে,
গোধূলির রংয়ে বেজে ওঠা বিদায়ী সানাইয়ের ধুনে
জেগে ওঠে শেষঘন্টার হা-হুতাশ;
অস্তরাগের আবীরে মাখামাখি কিছু প্রত্যাশাও
বাকী থাকে  যেন।

মানচিত্রের বাইরে থেকে পৃথিবীটাকে একবার দেখে নিতে চেয়েছিলাম;
জ্বলজ্বলে লাল দাগের বাইরে যেতে পারলোনা চোখ।



মঙ্গলবার, ২ মে, ২০১৭

কিছু আচ্ছাদন থাক


প্যাস্টেল পটচিত্রে মোড়ে যাক
দেয়ালের বুদবুদ ওঠা নোনাক্ষতগুলো।

বেজে যাক যুথবদ্ধ নান্দনিক শব্দের ম্যাজিক
উঠুক করতালে ঝমাঝম ধ্বনি
চকচকে ব্লেডের ধারে কাটা আঙ্গুলের ডগা
ধ্রুপদী তালের কিছু রাগরংয়ে ঢাকা পড়ে থাক।
শোণিতস্রোতের ফল্গু বয়ে যাক গোপনে গোপনে।

প্যাডলকে হাত রেখে চাবি খুঁজে না পাওয়ার মতো
অনুচ্চারে আটকে যাওয়া কথাগুলো
বাতিল পাপড়ির মতো শার্সির বাইরে দিয়েছি তো ফেলে!
তবু কেন যে কখনো কখনো
বাতাসের তোড়ে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে ;
জলতরঙ্গ বাজানোর আহ্লাদ-ইচ্ছায়
জলের নুড়িতে পিতলের মুদ্রা ছুড়ে দিলে
যেমন ভোঁতা একটা টং শব্দ বাজে
বেজে ওঠে তেমনি অস্ফুট এক স্বর শুধু ;
যথার্থ সরব নয়।
কথার শূন্যমাঠে কিছু অনুচ্চারিত হাহাকারের
চিহ্নই কেবল জমা হয়।

বাজুক তুমুল কোলাহলের অর্কেস্ট্রা ;
নীরবতার হীনজীর্ণ মাৎস্যন্যায় ভেঙ্গে
কত্থকের বোলে বেজে যাক এক জোড়া প্রবল ঘুঙুর।




শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৭

রঙ



কারো গাঢ় নীল চোখ
বেজে যাচ্ছে বেদনার্ত সেতারের মতো ;
যেন ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে এক খন্ড আকাশ,
যেন এক্ষুণি জন্ম নেবে এক নতুন সমুদ্র।
অথবা মনে করো
এক বিভোর উদ্যানে অপরাজিতা ফুটেছে অনেক
যেন নীল নীল ভোরের আধখোলা জানালায়
সবুজ ঝালরের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দেয়া সকালের দূত।
আকাশ অথবা সমুদ্রের এই প্রগাঢ় রঙ
আনন্দ নাকি যন্ত্রণার এই প্রশ্ন ভুলে
এক মনোরম ল্যান্ডস্কেপে বিমুগ্ধ,
তাকিয়েই থাকি।
মাঝেমাঝে
দুঃখ ও সুখের সব রঙ বুঝি এমনি একাত্ম!

এখনো দুই হাতে বিবর্ণ ধূসরতা মাখা,
ছায়াটাকে আততায়ী ভেবে নিয়েছি সন্ন্যাস ;
রঙিন ফানুশ ওড়ানো কালে
এই চিত্রকল্প খুব বেমানান মনে হয়।

চোখের ব্যাথা দেখি,
অথবা নীলকণ্ঠ ফুলের সুন্দর
কথাতো একটাই
আমার বিবর্ণ ধুসর হাত নীল ছুঁয়ে থাকে।
মনে হয়
এইসব রঙের বিপরীতে ভিন্ন কোন রঙ নেই,
ছিলোনা কোথাও।



সোমবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৭

সসেমিরা সময়



গোপন কোঠরে চুপচাপ বসে থাকি ;
আমার চারপাশে গল্প তৈরি হয়
গাছের, ছায়ার, ঝরাপাতা আর শামুকের।

অঙ্গন
তার ছায়ার ভেতরে টেনে নিয়েছে,
একটি গাছ
ডালপালাসহ পাখির ছোট্ট ঘর।
পাতার উপরে পাতা ঝরে গেলে
আধো আধো নূপুরধ্বনি বাজে ;
যেন
তবলার বোলের অপেক্ষায় তৈরি নাচের মেয়েরা
আনমনা টুকছে
অস্থিরআলতো পায়ের ঘুঙুর।
বৃক্ষের এই ছায়ামগ্ন বিলাসের মাঝখানে
আমারো কী কোথাও একটুখানি প্রাপ্যছায়া
পড়ে আছে?

গল্পপাঠে - সাদা পৃষ্ঠায় নিবদ্ধ উৎসুক চোখ ;
পাপড়ির নীচে জমা
হাজারবছরের প্যাপিরাসকথা,
এক  অতল অন্ধকার
টানেলবিভ্রান্ত পথিকের গল্পটিও।

ক্যামেরায় ত্রস্ত শাটার টিপে
প্যানোরামার ভেতরের রহস্যরক্তিম  এক ছবি
তুলতে গেলে
সমস্ত চিত্রপট উধাও, ঘোরলাল মেঘের আড়ালে।
দৃশ্য কি  নিজেই নিজেকে লুকোয় আগুনের আঁচে?

জলভারে নত হয়ে আছে  সসেমিরা ঘড়ির সময়।






শনিবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৭

ইনকগনিটো



সবাই সতর্ক খেলছে। চেস,ট্র‍্যাম্পকার্ড, হাউজির খেলা।
ছায়ার অন্তর্গত ভিন্ন ছায়াবাজির খেল ;
ইন্দ্রজাল আর ছদ্মবেশের চৌকাঠে
পা আটকে যাচ্ছে বারবার।

হয়তো-
তোমার পিংক বাথটাবের কানাভর্তি স্বচ্ছতার
আড়ালে আছে কোন প্রাণঘাতী দাহক ;
উপুড় অডিকোলনের শিশি ঢাললেই
রুদ্ধ হবেনা তার জ্বলনস্বভাব।
বিপরীতে -
গায়ে ভীতিকর রোঁয়া ফুলিয়েফাঁপিয়ে
ভয় দেখাচ্ছে যে হতকুৎসিত শুঁয়াপোকা ;
সে-ও একদিন ঠিক মধুবর্ণী প্রজাপতি হবে।

কোনটা যে কার আসল রূপ!
কে যে কোন আড়ালে লুকোনো!

কখনওবা আবরণও মনোহর
চরকির ফ্যাঁকাসে কাগজে
চড়ারঙের প্রলেপ মাখানো ঘুর্ণনে বুঁদ হয়ে থাকি।

একটি গাঢ়রাত যখন তিমিরাশ্রয়ী আরেকটা রাতকে
আবরণ খুলতে বলে ;
অন্যরাত অবজ্ঞায় পাশ ফিরে শোয়।
যেন সে বধির। যেন সে স্পর্শস্পন্দনহীন।

দেয়াল এঁকে যাচ্ছে ঝড়মন্দ্র বাতাসের করতাল
ফুটে ওঠে একটা হাঙ্গরভয়ের ছায়া
ঝরে যাচ্ছে সব আচ্ছাদন.........

আড়াল ভালোবাসি আমিও তো।


বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৭

দুই হাতের ফাঁক





এরেনার ভেতর
একজন নবিশ গ্ল্যাডিয়েটরকে ঠেলে দিলে
সেও একবার ঘুরে দাঁড়ায় প্রাণের তাগিদে।

বিস্তর ভুলভ্রান্তি ফাঁকিজুঁকি ভরা বাল্যশিক্ষার সিলেবাস।
রূপকথার ঠাসবুনট ভরা শৈশব
দাদীমার মনোহর গাঁথা ;খরাহীন, জরাহীন
শুধু স্বপ্নের বাড়বাড়ন্ত গোলাঘর ভরা। শেখায়নি জীবন।
কেউ বলেনি
অনাগতঅরোধী এক রণক্ষেত্রের কথা।
হয়তো 

উড়ন্ত ফড়িঙের লেজে সুতো বেঁধে দিলে
তার আকাশ সীমিত হয়ে যায় ভেবে।

মোড় ঘুরতে ঘুরতে সব পথই বাঁকা
অনায়াস উদ্যানের কোন মহাসড়ক নেই।
কোন পরাভব নয় ।
নুড়িকাঁকর বিছানো পথে টলোমলো পা ফেলতে ফেলতে
এক বৈরি মহাকালকে বৃদ্ধাগুষ্ঠি দেখানোতে কোন বিভ্রান্তি ছিলোনা।

শুধু
ঘুমের বিছানায় মাঝেমাঝে মনে হয়
দুই হাতের মাঝখানে এতোখানি ফাঁক হলো কবে!






অগ্নিমুখো ড্রাগন


একটা ধুসর জামার ভেতরে রাত
তার ইনসমনিয়াক দৈত্য পোষে রাখে।
আমি রাখতে চেয়েছি ঘুম
আর
স্বপ্নের ঠিকাদারি।


ক্লান্তদেহ, নিমীলিত চোখ
তবু
করোটির ভেতর হৈ চৈ কোলাহল, কথার মিছিল।
নীরবতা--
অনায়াস দ্রুততায় বাচাল স্মৃতির অর্গল খুলে ফেলে।
কর্ণিয়ার ভেতর বুদবুদফোটা দৃশ্যের রঙধনু।
জ্যোৎস্নার প্লাবনে কোন রাতে ভাঁটফুল ফোটেছিল
সোনালী ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল
সব দ্বিধার আড়াল।



বাক্যের কারাভাঁয়
ভেসে চলে আসে অনুচ্চারের গল্পগুলোও
সেইসব গোপন গভীর ;যা কাউকে বলা হয়নি।
বিস্মরণের প্রচ্ছন্নগুহায় শায়িত
সারিসারি পাথরচাপা লাশ পুনর্বার জেগে ওঠে।
ঘুমের চৌকাঠ পোড়াতে
একটা অগ্নিমুখো ড্রাগন ছুটে আসে।



কেমন আছো তুমি


কেমন আছো সম্রাজ্ঞী?
কেমন চলছে তোমার রাজ্যপাট?


সব ক্ষয়দাগ, ক্ষতচিহ্ন ঢেকে দিতে
হাসির থেকে গাঢ়তম মেইকওভার নেই কোন।
কিন্তু--
মুখোশের মাঝেই কী আছে তেমন নিগূঢ় কোন রহস্যময়তা?
তীক্ষচোখ দৃষ্টিতে চেনা যায় সবই।

কেউ কেউ
খুব চড়াদামে কোঁচড়ভরা হিম কিনে আনার পর
অগ্নিপিপাসু করতল মেলে রাখে উত্তাপের পাশে
বেখেয়ালে পুড়ে গেলে, এন্টিসেপটিকে ঢাকা হাত পিছনে লুকায়।
পাতাঝরা ঋতুকালে পাখি উড়ে যায়
আমাদেরও যেন সব জেগে ওঠে তীব্র বিষাদবিরহ।
ভুলে থাকি
বাউলের মতো বেভুল বিবাগী এক মন নিয়েও
আমরা বিহঙ্গ নই ; একটি ক্ষীণকায় চড়ুইও না।

মেঘ উড়ছে,পিছু পিছু পাতা উড়ে যায়
মেঘ ও তার বাড়ির মাঝখানে এক হিমনীল দীর্ঘশ্বাস ঝুলে থাকে।




বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

বৃক্ষের মতো






 ছায়াবাঁকানো পথটা চলতে চলতে
কোথাও না কোথাও হুটহাট ঢুকে পড়বে
কোন অচেনা গলিতে।

ক্রমশঃ সাহসী হয়ে উঠা মুমূর্ষু গাছ
আনকোরা কুঁড়ি ও পল্লবের জেগে ওঠা ;
এসব দেখলে ---
স্বপ্ন দেখার সাহস ফিরে আসে। ত্রাস কেটে যায়।

গ্লেসিয়ারে অনিচ্ছুক ঢুকে পড়া
মত্ত তুষারঝটিকার হাড়ভেদী হিমের কীলক
মৃত্যুভয়ে কেঁপে ওঠা ; মনে থাকেনা।

কোন না কোন একদিন
রোদের চোখের ভেতর থেকে
আমিও উপড়ে ফেলবো তার ছায়া।আমি।













নীলকন্ঠ বেহালাবাদক



 ডানা ঝটপটানোর শব্দ উঠলে বোঝা যায়
বুকের মাঝখান থেকে কিছু একটা উড়ে চলে গেলো।

নিশুতিরাতের ভায়োলিন বাঁধা থাকে কৃষ্ণতরঙ্গের ছড়ে
বাতাসের মীড়ে অব্যক্ত ব্যাথার কম্পন বেজে ওঠে।
যখন হাওয়ার লহর থেকে কুড়িয়ে নিই
টুকরোটুকরো সুরের নির্যাস
তীব্রব্যাথার নীলে দুটো হাত শিরশির করে ওঠে।

আমিইতো নীলকণ্ঠ!
আমিইতো সেই বেহালাবাদক!












ইল্যুসন






 হ্যাঁ তোমাকেইতো!
যুগ যুগ ধরে খুঁজেছি তোমাকেই।

 শুধু যুগ? অনন্ত মহাকাল নয় কেন?
চেনাঅচেনা সমস্ত মুখের ভীড়ে তোমার আদল....
ব্যস্ত সড়ক পার হতে হতে
প্রতিটি পথিকের দিকে খরচোখে তাকিয়েছি।
তুমি কোথাও ছিলেনা।হয়তো থাকোইনা।
তুমি যে থাকোনা --- তুমি যে অলীক
কেউ বললোনা সে কথা। অনেকেই জানে।
হয়তো বড়রাস্তার ওই যে পাগলটা
মাঝেমাঝে মুখোমুখি হয়ে গেলে
সন্ত্রস্ত সতর্কতায় দ্রুত সরে যাই, সেও জানে।
হয়তো কাউকে একদিন এমন করে সেও খুঁজেছিল।
সে জানে! আমি জানিনা!

শেষপর্যন্ত জেনেছি আমি
'তুমি' এলকোহলের ঘোরে তৈরি এক ইল্যুসন
খোয়ারি ভাঙ্গার পরেই যা মিলিয়ে যায়।
এই অনর্থক বোধের জন্য মানুষ কতোপথ
অহেতুক হেঁটে গেছে!
কেউ কোনদিন তাকে পায়নি।

পায়না।

.

মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৭

আকাশবাড়ির চিঠি

আকাশের পকেটে কোন ডাকবাক্স আছে?

চিঠি উড়ে যাচ্ছে একটা প্রগাঢ় নীল অভিযাত্রার দিকে
শূন্যের সাথে শূন্যের দ্বন্দ্বজ কোলাহলে কে বেশী বেগবান
নির্ধারিত হোক।
হিপনিক জার্কসে ঘুম ভেঙ্গে গেলে
বুকের মাঝখান থেকে এক জোড়া সারস উড়ে যায়
অন্তহীন মেঘের বাড়ির পথে.......
একটি প্রবল ঘুম দ্রুত পতনোন্মুখ
অভ্রংলিহ পাহাড়ের চূড়া থেকে নিতল গহ্বরে।
আহা স্বপ্ন! সূর্যমহলের সিংহদুয়ারে আটকে পড়া স্বপ্নগুলো!
মনোশরীরবৃত্তে বন্ধী ঘুম অথবা স্বপ্নের প্রতি
তর্জনী তাক করা ; অভিষঙ্গবাহুল্য।  মনে হলো এমন।

রাত বেয়ে নেমে আসে কাঁকরভেজা এক পথ
শিথানে চুলের গোড়া থেকে ঝরে পড়ছে মেডুসার সাপ......

বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

এবং দ্বিতীয় আমি




ম্যাজিক মিরর।
এপাশেও প্রতিচ্ছবি। ওপাশেও।
তোমাকে দেখছি আমি।তুমিও কী দেখছো আমাকে?

জেনে নাও
আমরা কোনদিন হাত ধরাধরি করে হাঁটবোনা
রোমান্টিক কাপলের মতো।
মাঝখানে অভঙ্গুর কাচের দেয়াল ;
তবু অলৌকিক স্পর্শ ছুঁয়ে যাবে, যাচ্ছে।
অহোর্নিশ অন্তর্গত যুদ্ধ হবে। সমঝোতা হবে।
মাঝেমাঝে, --' তোমার তুমিকে বড়ো ভালোবাসি' বলে ফেলবে বেখেয়ালে।
আমিও তোমাকে এমন কিছু.....

আমরা আজীবন সমান্তর দূরত্বে।
আমরা আজীবন পাশাপাশি।

আমরা এক নই।
অবিচ্ছিন্ন নই।তবু আমাদের বিচ্ছেদ হবেনা।
পৃথিবীর নিক্তির মাপে দুজন একত্র।
কিন্তু আমরাতো এক নই -- দুজনেই জানি।আমরা দুজন।
শুধুমাত্র অন্যোন্য।
আমরা পৃথক নই তবু আমৃত্যু বিভেদদহন বয়ে চলি।

আমি
এবং
দ্বিতীয় আমি।



বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৭

হাওরের কান্না






আকাশকে মানায়না অসময়ের এই বৃষ্টিবিলাস।
এখন ইলিশখিচুড়ির বিলাসিকথন বড় বেমানান।

কেন এমন ভাঙ্গছে আকাশ?
কেন এমন প্রচণ্ড ঝড়
প্রকৃতির এমন তাণ্ডব?সব লণ্ডভণ্ড - তছনছ।
আকাশের পাথরখন্ডগুলো খেয়ে নিলো
কৃষকের ধানিজমি, ক্ষেতভরা ধান;গ্রাসাচ্ছাদনের পথ।
ঘর ভাঙ্গল।ভেসে গেলো জনপদ; এমন বন্যার কোপ!
মানুষের হাহাকারে ভেসে যাচ্ছে হাওর-নদী-বিল।
মানুষ কোথায় দাঁড়াবে?
ছোট্ট একটি কুঠির। লাউমাচা। গবাদিপশুর ঠাঁই। সব।
সব ভেসে গেছে।
কোথায় পরিত্রাণ
কীভাবে মানুষের এই অবিচ্ছিন্ন কান্নার অবসান হবে?

মানুষ দাঁড়াও আজ বিপন্ন মানুষের পাশে।
এই প্রতিকূল প্রকৃতি ; এই যুদ্ধে
বেঁচে থাক মানবতা, হাতে হাত রাখা  সুদৃঢ় বন্ধন।



মেয়েটা



মেয়েটা আসতো মাঝেমধ্যে ছেলেটার খোঁজে।
          ---- এমন বললো পুরনো বাড়িওয়ালা।
আসতো চোখভরা এক আকাশ মেঘ সাথে করে
আচমকা বৃষ্টিতে চৌকাঠ ভিজে যেতো।
সেই প্রবল বর্ষণের  ভেতরে বিষন্ন
পা টলোমলো করতে করতে ফিরে যেতো ;
তার কোন বর্ষাতি ছিলোনা।
পুরনো ঠিকানায় রোজ মেয়েটার চিঠি।জমে জমে স্তুপ ।
স্থান সংকুলানে মাঝেমাঝে ফেলে দিতে হয় ডাস্টবিনে;
ছেলেটা দেয়নি তার নতুন ঠিকানা।

ড্রয়ারভর্তি স্মৃতির কোলাজ সামনে নিয়ে বসে থাকে মেয়ে।
পুরনো এলবাম। কাঁশবন।শূন্যে উড়ে যাওয়া যুগলবন্ধী ছবি;
ফ্যাঁকাসে হতে হতে সাদা মেঘের কিনারা ছুঁয়েছে ।
হুডখোলা রিকশায় শহর মুঠোয় পোরা দিন ;
সব নিয়ে চলে গেছে ছেলে।

মেয়েটা
ব্যাগভর্তি ঘুম কিনে নিয়ে আসে।



সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭

মিউট




 একটা ঝাপসা রাতের ভেতর জুড়ে বসে আছে
আরেকটা কুয়াশামোড়া রাত।
মর্মরের ঘুঙুর বাজার অপেক্ষায় খোলা ছিল একটি জানালা।

তখন।
যখন আমরা শিখে নিয়েছিলাম
অন্ধকারের স্যাঁতসেঁতে আলোয়ানের ভেতর থেকে কিভাবে সবুজ পায়রা
ওড়াতে হয়,
প্রবল হিমের ভেতরে বেড়ালের ওম মাখা পশমী আমেজ।


ঘোর মহুয়া আর মাদলের মাতাল তালে বেজে যাচ্ছে কেউ।
আমিতো সব মিউটেই দিয়ে রেখেছিলাম!







রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭

ঈশ্বর



 আকণ্ঠসূরার ভারে টলতে টলতে কোথায় যাচ্ছে এ  মাতাল শহর!

আমাদের ঘরে কোন ঈশ্বর আসেননা।
মেঘ ছিঁড়ে ঝুম বৃষ্টি নামলেই,
আধোঅন্ধকার ঘরে
থোবড়ানো বিয়ারের ক্যান হাতে কেবলই ঝিমান।

আমরা দিনরাত্রি তার তপস্যায় থাকি
প্রার্থনারত হাতগুলো থেকে মাঝেমধ্যে 'আহা ' ধ্বনি বাজে।

মাত্র আধহাত দূরে পানপাত্র রেখে
যে লোকটা অসীমধৈর্যে বসে আছে
ঠোঁটে ছোঁয়ালেই শেষ হয়ে যাবে ভয়ে ;
সেই সুস্থির লোকটাকেই ঈশ্বর মনে হয়।

এই যে এখন, টালমাটাল পায়ে হেঁটে যাচ্ছে একজন ঘোরমাতাল

যদি ঠিকঠাক দরোজায় ঠোকা দেয় সেও তো ঈশ্বর হয়ে যেতে পারে....





রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

অপরিচিত



আবার দুইজন মুখোমুখি ;
তাদের মাঝখানে
অপরিচয়ের প্রগাঢ় ছায়া
ঝালরের মতো দুলে থাকে।
আকস্মিক স্মৃতির ঝাপটায়
তৈরি দৃশ্যপট
সে কেবল একটা দেজাভ্যু ।

শুধু একটা কথাই সত্যি বলে মনে হয়;
স্পর্শের ভাঁজে ছিলো তীব্র আগুন।



একা একজন

প্রবল বর্ষণের ভেতরে হেঁটে যাচ্ছে
ঝড়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে
একজন একা মানুষ।
সারারাতের জন্য
এই ঝড়জল
এই দুর্ভোগ।
রাত শেষ না হলে খুলবেনা
ভোরের আগে খুলবেনা
পান্থশালার দোর।

দ্বিধান্বিত





আগুন এবং স্বর্ণবিভ্রমের দোদুল্যমানতায়
পার হচ্ছি এক আজবধ্রুপদ মহাকাল।
প্রতিটি আগুন আমি সোনা ভেবে স্পর্শ করেছি
আর হাতের দগদগে ক্ষত লুকিয়েছি গোলাপমোড়কে।

দ্বিধা;
হাপরের কঠিন তাপতরঙ্গে পুড়ছে যে ধাতুভাগ
সে কী স্বর্ণপিন্ড হবে? না কী লৌহজঞ্জাল?












যাত্রা





কেন এমন ঝাপসা হয়ে আসে চোখ?
হয়তো চশমার কাঁচে কিছু জমেছে কুয়াশা।
ঠাসবুনটে র‍্যাকস্যাক ভরা জিনিসপত্র।
অসাবধানে কোথাও কিছু কী পড়ে রইলো?

যাত্রাতো নিশ্চিত ছিল। প্রস্তুতিও।




নদীর প্রকৃত নাম



পাশ থেকে খুব সন্তর্পণে উঠে চলে গেলে কেউ ;
ধুলোয় কেবল একটুখানি পদচিহ্ন আঁকা থাকে,

কোন পদধ্বনি বাজেনা।

একটা হাহাকার গড়িয়ে গড়িয়ে নামে জলের তারল্যে
তবু পাথরের কাঠিন্যে হাত রেখে বসে আছি।
ছায়াটাকে দু' ভাগ করে,
এক খন্ড যত্রতত্র বিলিয়ে দিয়েছি
বাকীটা নাহয় থাকলো আমার কাছে।

সব খেলার একটা শৈশব থাকে ; পুতুল এবং ঘুড়ির সময়কাল।
হয়তো কোনদিন কোথাও লেখা হবে ঘুড়ি ও পুতুলের গাঁথা।


পদ্মা, পিয়াইন যে নামেই ডাকোনা কেন
নদীর একটাই নাম ; তরঙ্গবিলাসী।  শুধু ঢেউয়ের ভাঙ্গন। 

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

ভাইপার




খুব জরুরী কিছু এন্টিভেনম ;
একটা র‍্যাটলসাপ বারবার ছুঁয়ে যায়
ঘুমের শিথান ।
স্বপ্নের ভেতরেও তার ঘিনঘিনে ছোঁয়া ।
এখানে কোন প্রবলআকর্ষক  ঘ্রান নেই,
নাগবাঁশি বাজায়না কেউ।
বারবার কেন আসে এই ঘৃণ্য সরীসৃপ?
কোথা থেকে?
তবে কী
অক্ষরবিন্যাস থেকেও বের হতে পারে
বিষাক্ত ভাইপার
দিতে পারে প্রাণঘাতী দংশন?

চিহ্নিত করিনি সাপের জন্মস্থান
হতে পারে সেটা তোমারই তর্জনী।


দৌড়




দীর্ঘশ্বাসগুলো জমা রাখিনা;
ভোর হলেই মুঠো খুলে ছড়িয়ে দেই।


সিঁড়ি উঠতে গিয়ে দেখি,প্রথম ধাপেই
শুয়ে আছে সতর্ক ডোবারম্যান পিনশার
কানখাড়া, গুটান লেজ
মুহূর্তেই হামলে পড়তে পারে;
ভঙ্গিমায় একথা সুস্পষ্ট।
সেই থেকে সিঁড়িঘরে গিয়েছি আটকে;
সিঁড়িপথ ভুলে গেছি। 

কেউ কেউ, খোলাচোখ আকাশে নিবদ্ধ
মুক্তকচ্ছ
রণপায় দৌড়ায়।
বলতে ইচ্ছা হয়----
        থামো, এতো দ্রুততার কিছু নেই।
        পিছলালে তোমারই পতন। 


কোন দৌড়াকাঙ্ক্ষীকে কখনো
'ধীরে চলো' একথা বলতে নেই।


বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

রাতের পৃথিবী

      


 কোন কোন ঘুম ভাঙ্গা রাতে দেখি
পৃথিবীটা নি:সম্বল ভিখিরির মতো
ফুটপাথে
কানা উঁচু থালা পেতে বসে আছে।
তন্দ্রাবেশে কুয়াশাভেজা নিস্তেজ রাত।


বাতাসের গায়ে গন্তব্যের প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে
একটি নিশাচর পাখি উড়ে গেলে;  তুমুল
পাখসাটে হু হু করে বাজে  অস্ফুট ব্যথাচ্ছন্ন এক সুর।
কখনোবা মানুষও তো পরিযায়ী পাখি!

শোনা না শোনার দোলাচলে হিস হিসে ধ্বণি বাজে ;
ঝলসে ওঠে রাতের চাবুক।


 একটা প্রকান্ড কালো মাকড়শার মতো
কিলবিলে দশপায়ে হেঁটে যাচ্ছে জমকালো রাত।


যেতে যেতে কোথাও কী কিছু ফেলে গেলো কেউ
একটি পতত্র? এক ফোঁটা বিষ?


------------------------------------------

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

আগুনের অবশেষ



ড্যান্সহলে অগ্নিহোত্রী। তবলচী বৈশ্বানর।

কী করে ছড়ালো পাখির চোখঝলসানো এতোটা দাহক?
পুড়ল প্রজাপতিডানা।পেখমের ভাঁজ খুলে দূরান্তে পালালে ময়ূর।

দাবানল থেমে যাবে ঠিক।তার আগে
পাতা পুড়বে। বুনোফলফুল।
বৃক্ষপল্লবাদি কাঠকয়লা হবে।
আরো বহুক্ষণ
r /> বনপোড়ানো রণভেরীর হুহুংকার শোনা যাবে।

 ধীরে ধীরে স্তিমিত হবে আগুনের লেলিহান জিভ
বাতাসের হোসপাইপ ধুয়ে নেবে সব জঞ্জালধোঁয়া।
অবশেষ থাকবে
কিছু গাছের কংকাল
বহুদিন উড়বে কিছু ছাই।




মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭

যাবার সময় হলে




কোথাও যাবার কথা হলেই আমার ট্রেনের কথা মনে হয়
এবং টিকেটচেকারের বিষাদমগ্ন আঙ্গুলে ধরা টিকেটের কথা।
এক কামরাভরা যাত্রী,
সদ্য স্বজন ফেলে আসা বিরহব্যথা;
ইঞ্জিনের ঝিক ঝিক ঝিক বাজনার মন আনচান করা কোরাসে
সম্মিলিত বিষন্নব্যথা বেজে ওঠে।
পূর্বতন ভ্রমণের নস্টালজিক স্মৃতিমন্থনের সাথে দুলতে দুলতে
আমরা এক নিরূপিত গন্তব্যের দিকে ছুটে যাই।

শেষ হুইসেল বেজে ওঠার সাথে সাথে
আসন্ন একাকীত্বের যন্ত্রণাব্যাকুল প্লাটফরমের
হৃদয়মথিত  দীর্ঘশ্বাসের কথা মনে হয়।






শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ঘুম








ঘুমের মতো এমন নিশ্চিন্ত পালানোর আশ্রয়;
কোথাও নেই।

 

অথচ

ঘুম এবং আমার মাঝখানে
পিচ্ছিল
কন্ঠকময়

একটি দীর্ঘ পথ পড়ে থাকে।

হিপনোসের বেদির সামনে ঘুরে বেড়ায়
স্মৃতির কোলাজ আর বাঁকা ছায়াগুলো।
প্রার্থনার হাত থেমে যায়।

একটি নিটোল ঘুমের বর চেয়েছিলাম।



রবিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৭

ক্রস কানেকশন

  


যখন খুলছিল পাতালপুরির শেষ দরোজাটাও,
পালিয়ে এসেছি। সব জানতে নেই---
এই কথা জানার পরেও
কোন নিষিদ্ধ গল্পের ভেতরে আচমকা-অনিচ্ছুক ঢুকে পড়ি।
কেন যে........


ক্ষয়াটে মুদ্রাগুলো বারবার নেচে ওঠে হাতের তালুতে।
নেচে যাও
নেচে যাও
তামার মুদ্রা
পিতল চাকতি
এভাবেই টুং টাং বেজে ওঠো।
ঘোর স্তব্ধতার হিমাগারে তুচ্ছতর শব্দই বাজনা।

স্বপ্ন বয়ে চলা চোখইতো জলের আধার
এ কথা জানার পরেই
ছবি আঁকতে চেয়েছিল অন্ধ মেয়েটি;
বাতাসের ইজেলে সাদা ক্যানভাস।