সোমবার, ৭ নভেম্বর, ২০১৬

এ কার দেশ




                             দেশটাকে এখন ভীষন অপরিচিত মনে হয় ।মনে হয় চিরপরিচিত সেই দেশ নয়---যেন ভুল করে আচমকা অন্য এক দেশে এসে পড়েছি, যার চারদিকে বর্বরতা আর নৃশংসতার অতল অন্ধকার । সুস্থ পরিবেশ যেন সুদূর পরাহত স্বপ্ন।স্মরণাতীতকালের ভয়াবহ নিষ্টুরতা আর নির্মমতায় ছেয়ে গেছে সমস্ত দেশ।মানুষের বিবেক-বুদ্ধি, মূল্যবোধ, নৈতিকতা সব যেন হারিয়ে গেছে  বিবেকহীনতা আর পৈশাচিকতার অতল অন্ধকারে। 
                                 দেশ যেভাবে অন্যায়, অত্যাচার, অনাচারে ভরে গেছে  মনে হয় দেশের জলবায়ুও যেন বিষাক্ত হয়ে গেছে , সুস্থভাবে নিঃশ্বাস নেবার উপায় নেই। আমাদের আশেপাশে যখন কোন অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে তখন তা মানুষের মনে রেখাপাত  করে নেতিবাচকভাবে । সেই প্রভাবে মানুষের স্নায়বিক বৈকল্য ঘটতে পারে। এর ভোক্তভোগি আমি নিজেই। ইন্টারনেটের কল্যানে , অনলাইন মিডিয়ার কল্যানে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে মানুষ দেশের আনাচ-কানাচে ঘটে যাওয়া প্রতিদিনকার ঘটনার টাটকা খবর পাচ্ছে।খারাপ খবরগুলো মানসিক স্বাস্থ্যেরজন্য, স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য ,হুমকি স্বরুপ হয়ে দেখা দিয়েছে। এখানে প্রতিদিনই এমন সব ঘটনা ঘটছে  , বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের জন্য তা সহ্য করা ভয়াবহ কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।চারদিকে এতো অনাচার,অন্যায়, অবিচার, নির্যাতনের চিত্র প্রতিদিন দেখতে হচ্ছে যেন দুর্ঘটনাই এখানে স্বাভাবিক বা দৈনন্দিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
                                মতের অমিল থেকে মানুষ মানুষের গলা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করছে চাপাতির কোপে।প্রেমে প্রত্যাখ্যাত  হয়ে কাংখিত নারীকে ধর্ষণ করছে , মেরে ফেলছে। বিকৃতকাম পুরুষের লালসার শিকার হচ্ছে এমনকি দুধের শিশুরাও। পাঁচ বৎসরের শিশুর যৌনাঙ্গ কেটে নিজের বিকৃতি মেটাচ্ছে পৌঢ় ধর্ষকামী পুরুষ।এর থেকে বিকৃত,  নির্মম, ভয়াল চিত্র আর  কি হতে পারে? ধর্ষন যেন এখনকার প্রাত্যহিক স্বাভাবিক  ছবি। প্রতিদিনই ধর্ষিত হচ্ছে কোন না কোন নারী অথবা শিশু ।দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০/১১ বৎসরের মেয়ে শিশু ।আমরা এমনও দেখেছি চোর সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয়েছে  শিশুকে।দেশে নারী বা শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে  সুস্পষ্ট আইন আছে। কিন্তু তা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে  তাও দেখতে হবে। আর প্রচলিত এই আইনগুলো কি যথেষ্ট বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে তা পূনর্বিবেচনার দাবী রাখে। আইন থাকলেই হয়না । তার সুষ্টু প্রয়োগের মাধ্যমেই অপরাধ রোধ করা সম্ভব। আর আইনকে এমনভাবে শক্ত করতে হবে যেন আইনের ফাঁক গলে এসব জঘন্য অপরাধীরা পার পেয়ে না যায়।
                                                     শুধু কি গলাকাটা আর ধর্ষণের মধ্যেই এসব অপরাধীর বিচরনক্ষেত্র সীমাবদ্ধ? তা নয়। অপেক্ষাকৃত দুর্বল জনগোষ্টির উপর দলবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াও এই নরপশুদের আরেকটি বহুল চর্চিত অপরাধ। দুর্বল আদিবাসী বা হিন্দু জনগোষ্টি এদের শিকার। নিকট অতীতে রামুতে যা ঘটতে দেখেছি   অতি  সম্প্রতি তাই ঘটে গেল ব্রাম্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে ।

                             সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্টির উপর নির্যাতনের যে নির্মম চিত্র তাতে এদেশের একজন সংখ্যাগুরু গোষ্টির মানুষরুপে নিজেকে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করছি।বর্বরতার সকল সীমা অতিক্রম গেছে নাসিরনগরে ঘটে যাওয়া ঘটনা । সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বলে খ্যাত বাংলাদেশের এ কোন অধঃপতন! পাকিস্তান আমলেও স্বাভাবিক অবস্থায়  হিন্দুদের উপর এমন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। একাত্তরের ঘটনা ছিল ভিন্ন। পাকিস্তানি সেনারা যেমন হিন্দু নির্যাতন করেছে ,মেরে ফেলেছে তেমনি বাংগালী মুসলমানও রক্ষা পায়নি গুটিকতক দালাল বাদে ।হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান  - বাংগালী ,আদিবাসী নির্বিশেষে যুদ্ধ করেছে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। আজকে সেই বাংগালী আরেক বাংগালীর উপর ঝঁপিয়ে পড়ছে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিভাজনের কারনে !যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরঅঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে একসাথে যুদ্ধ করে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা অর্জন  করেছিলাম , সেই অঙ্গীকার আজ কোথায়?   ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয়ে একদিন আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলাম। কিন্তু সেই বিভাজন যে ভুল ছিল অচিরেই প্রমানিত হয়েছিল। যার ফলে আবার ধর্মীয় বিভেদ ভুলে আমাদের দেশটিকে এক নতুন অসাম্প্রদায়িক দেশে পরিণত করেছিলাম। আজ সেই বাংলাদেশকে আবার ধর্মীয় বিভাজনের শিকারে পরিণত করার চেষ্টা করছে কারা?

               বর্তমান সরকার বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের সরকার ।এই সরকারের সময়েই বঙ্গবন্ধুর  অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের  স্বপ্নের এমন করুণ অবস্থা দেখতে হবে কল্পনাও করা যায়না। সরকারের প্রতি আকুল আবেদন সব অন্যায় -অবিচারের প্রতিবিধান করুন । দেশটার এই বেহাল দশা আর যে সহ্য হয়না।
                           






মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬

অন্ধকার, হ্যালুসিনেশন এবং কাঠের ঘোড়া




               'আমার  আঁধার ভালো......'



রাত্রিকে কেন ঢেকে দাও নকল আলোর বন্যায় ? শোন গন্ধরাজের সৌরভের সাথে কেমন হু হু বেজে যাচ্ছে
আঁধারের নিজস্ব সুর, আপন কোলাহল।
            এ আগুন  ফিরিয়ে নাও ।ভুলে যাও পাথরে পাথর ঘষা সভ্যতার এই উন্মেষ।যুগযুগ সাধনালব্ধ  কৃত্রিম আলোর এই ফোয়ারার উদ্ভাস ভুলে যাও।রাতকে থাকতে দাও তার নিজের মতো। রাতের এই স্বতস্ফুর্ত  নিজস্বতাকে আড়াল করতে জ্বালিওনা কোন প্রদীপ অথবা ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব।রাতচরা পাখিগুলোকে উড়তে দাও তাদের প্রিয় আকাশে।
        মুছতে চাইনা নকল আলোর উৎসবে অন্ধকার রাতের এই চাকচিক্য । আঁধারের নিজস্ব সুরটুকু  শুনতে চাই,  দেখতে চাই তমসার একান্ত আপন সৌন্দর্য ।আরো আরো আরো গাঢ় হোক তমিস্রা ।শ্লেটের কালোর মতো। হতাশার মতো। সারারাত অন্ধকার দেয়ালের গায়ে  একের পর এক ফুটে উঠুক ছবি। অতীত। দীর্ঘশ্বাস।এভাবেই একসাথে জেগে থাকবো আমি ও আমার অন্ধকার । সারারাত।

          
                                                               *           *         *



                   কুয়াশার চাদরে মোড়া ওই বনভূমি, ওই নদী , হরিণের জলপানের ওই দৃশ্য ; এক বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো ।মনে হয় ওই দৃশ্য কোথাও ছিলনা। অথবা ছিল। তারপরেও ওই দৃশ্যটাকে নেহাতই একটা রং-তুলিতে আঁকা ছবি বলেই ধরে নেই। কিন্তু এখনো সেই জলের গন্ধ, সেই পিপাসার্ত হরিণের ব্যাকুল ছুটে আসার আনন্দ-উল্লাস একদম টাটকা----জীবন্ত।

    কুয়াশামগ্ন  জল-জঙ্গলের ভেতরেই কি ছিল  সে স্বপ্নের কুটির?


আমরা যা সত্যি বলে ধরে নেই তার অনেকটাই হয়তো স্বপ্ন অথবা হ্যালুসিনেশন।এই হ্যালুসিনেশনেরও একটা স্মৃতি থাকে ।রঙ্গীন অথবা বিষাদাচ্ছন্ন ।
                               স্মৃতিবন্দি মানুষের পরাধীনতার কষ্ট অন্যরকম। অনুতাপ। নিজেকে এক মস্ত তোরঙ্গে বন্দি করে ফেলে নিজে নিজেই ।তারপর সেই সিন্দুকের চাবি হারিয়ে ফেলে। আজীবন পিছুটানের পঙ্গুত্ব।এমনি হয়।

                                                      *              *              * 

                                     আমারও যদি থাকতো একটা  ' টিন ড্রাম ' অস্কারের মতো! এমনকি প্রত্যেকটি মানুষেরই দরকার একটি টিনড্রাম অথবা ট্রাম্পেট জাতীয় কিছু একটা বাস্তবতার যাবতীয় অনাকাঙ্খিত কষাঘাত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য।
         থাকলে বেশ হতো। নেই।তাতে কি? আমারতো আছে একটি কাঠের ঘোড়া।যখন তখন  পালিয়ে বেড়ানো যায় দেশ থেকে দেশান্তরে, তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে , সাত সাগরের তীর পেরিয়ে  খেয়ালখুশীর বাড়িটিতে ঢুকে পড়া যায়।  এটাই আমার আজীবনের সঙ্গী। আমার মুক্তি।
                     খট্‌ খটা খট্‌ ।বর্তমান থেকে অতীত, অতীত থেকে অনাগতের স্বপ্নে ঢুকতে একটুও দেরী হয়না।জানি একদিন আচমকা শুরু হবে ফুরিয়ে যাবার বেলা ।ঘোড়া থেমে গেলেই শুরু হবে সেই চিরন্তনের খেলা ।সেদিনটি কবে ?  জানিনা।



                      ---------------------------------------------------------------













                        



























শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬

ঝরো, অন্যসময়ে


না থাকাই ভালো ছিল এতোটা আগুন
মলাটের গোপনে
পাতা জুড়ে থাকে বিশাল প্রান্তরমাঠ,
আগুন?
আগেই বলেছি।
বুকের ভেতরে কেউটের বাস
তবু
তোমাদের বাগানে ফোটে বসরাই গোলাপ, ব্ল্যাকপ্রিন্স।
আর এখানে
এক বুক আগুন নিয়ে ক্লিষ্ট বসে থাকি
জ্বলতে পারিনা ;
গাছের বাকলে শুধু লিখে রাখি,
'দহন, দহন'।
আজ আর এখানে এসোনা
মেঘমল্লারে মন নেই
দেখো ডানার ছায়া কেমন মুছলো আকাশ।
এখন জারুল ঝরার বেলা;
ঝরো তুমি
অন্য সময়। 



বুধবার, ২০ জুলাই, ২০১৬

একবার কড়া নাড়লেই



আছি
এক মায়াবী স্বপ্নের কোলাহলে।


একবার কড়া নাড়লেই
আবার খুলবে দরোজা
বেজে যাবে সুর;
ধ্রুপদী গানগুলো মনে পড়ে যাবে।

সেই বিকেল
সেই গুনগুন
রবীন্দ্রনাথ।
দৃশ্যের ভেতরে ঢুকে পড়বে
গলির সমস্ত হৈ চৈ সহ দুষ্টু বালক- বালিকা,
কর্কশ কাকগুলো ডেকে ডেকে উড়ে যাবে,
দানা খুটে খেতে ঘাসে নামবে শালিকের পাল,
দেওয়ালে জিমন্যাস্টের মতো হাঁটবে
পাশের বাড়ীর বেড়ালটা,
আচমকা ভেসে আসা বেলির সুবাস,
হর্ণ বাজানো গাড়ি,
ব্যালকনির রকিং চেয়ার।
তুমুল আলাপচারিতা।

সব।
অবিকল।

একবার কড়া নাড়লেই
আবার ছলকে ওঠবে চাঁদনি।



আবার ফিরে আসবো, সাগর

সমুদ্র এমন গোঙ্গায় কেন সারারাত
সেকি আরিথিউসার অপমানের কান্না?

প্রবল জলের ভেতর সূর্যাস্তের আকাশ
কেমন নি:শেষে ঢেলে দেয় তার সোনার থালা ;
সমুদ্রে।
নিস্তব্ধ দাঁড়িয়ে থাকি সৈকতে
সামুদ্রিক পাখি আর ঈগলের চিরায়ত প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলা দেখি।
সাগরেরবুকের গহনে খুঁজি আরেক আকাশ।
অস্থির ঢেউগুলো দেখতে দিলোনা।
কতোবার!
কতোবার!
ফিরে গেছি।

জলধির কী যে টান ধীবরেরা জানে। 

সোমবার, ১৮ জুলাই, ২০১৬

বেঁচে থাকি অন্য জগতে


স্বপ্নের ভুল?
স্বপ্নের আবার ভুল-শুদ্ধ কি?


থাক তবে এমনি অন্ধকার, লোডশেডিংয়ের এই রাত।
জ্বালবোনা মোমদানে কোন বাতি
ক্ষয়ে ক্ষয়ে মোম কেন এমন ব্যাকুল কেঁদে যাবে?
দূরে কোথাও বেজে যায়
চেনা-অচেনার দোলাচলে হু হু করা এক সুর
আমাকে খুঁজতে দাও সেটা কোন গান।
আলোর ঝলক দিয়ে দেখতে চাইনা কোন মুখ
আমি জেনে গেছি,
মানুষের মুখগুলো কেমন মুখোশ ঢাকা থাকে;
কতো ছবি আঁকতে চেয়েছি,
কখনো যায়না আঁকা মুখের গোপন রেখাগুলো।


কেন যে এতো নুন ধরে রাখে মহাজলধর!
তৃষার্ত ছিলাম তাই
সমুদ্রের নোনাজলে আঁজলা ভরেছি।


বেঁচে থাকি স্বপ্নের আবর্ত আর নিজস্ব নক্ষত্রে।
দেখি
আকাশের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে
স্বপ্ন বুনতে বুনতে উড়ে যায় লালফড়িংয়ের ঝাঁক,
পাখায় স্বপ্নের আবীর মাখা প্রজাপতি
মধু-স্বপ্নে বিভোর নিমগ্ন মৌমাছিগুলো।

পালক জমা রাখি তাদের ডানায়।




বোবা ছেলেটি------ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা


ছোট্ট ছেলেটি তার কন্ঠস্বর খুঁজছিলো।
(জোনাকীর রাজার  কাছে ছিল এটা।)
একটি জলবিন্দুতে
ছোট্ট ছেলেটি খুঁজছিলো তার কন্ঠস্বর।


কথা বলার জন্য চাইনি আমি এটা
আমি তাই দিয়ে তৈরি করবো একটা বলয়
কাজেই সে হয়তো তার ছোট্ট
আঙ্গুলে
পরিধান করবে আমার নীরবতা ।

একটি জলবিন্দুতে
ছোট্ট ছেলেটি খুঁজছিলো তার কন্ঠস্বর।

(এই গোপন কন্ঠস্বর , অনেক দূরে।
একটি জোনাকীর পোষাকে রাখা।)


(The Little Mute Boy ------ Federico García Lorca)







মধুর অনুযোগের সনেট -----ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা



আমাকে কখনো হারাতে দিওনা এই এই বিস্ময়
তোমার স্ট্যাচুর মতো চোখের ,  অথবা এই স্বরসঙ্ঘাত
তোমার নিঃশাসের স্বতন্ত্র গোলাপ
যা রাত্রে স্থাপিত হয় আমার কপোলে।

আমি তটস্থ থাকি , এই সৈকতে
এই শাখাহীন গুঁড়ি,যা আমার তীব্র অনুতাপ
পুষ্পহীনতা, শাঁস অথবা মৃত্তিকা
আমার উদ্যমহীনতার জীবানুর জন্য ।

তুমি যদি হও আমার গুপ্তধন
তুমি যদি  হও আমার দুর্দশা, আমার বিষন্ন যন্ত্রণা
যদি আমি হই সারমেয়, তুমি একাকী আমার প্রভু।

কখনো হারাতে দিওনা যা পেয়েছি আমি ,
এবং  সাজিয়ে দেবো তোমার নদীর শাখা
আমার বিচ্ছিন্ন শরতের পত্র-পল্লবে।


( Snnet Of The Sweet Complaint---Federico Gercia Lorca)

















শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১৬

যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও ----পাবলো নেরুদা




যদি তুমি আমাকে ভুলে যাও ----পাবলো নেরুদা



আমি তোমাকে
একটি কথা জানাতে চাই

তুমি জানো তা কেমন করে :
যদি তাকিয়ে থাকি স্ফটিক চাঁদের দিকে
আমার জানালায় ধীর শরতের লালিম শাখায়,
যদি স্পর্শ করি
আগুনের পাশে
স্পর্শাতীত ছাই
অথবা জরাজীর্ণ কাঠের গুঁড়ি,
সব কিছু আমাকে তোমার কাছে নিয়ে যায়,
যেন সবই অস্তিত্বময়,
সুরভীটুকু,আলো,ধাতুগুলো,
ছোট্ট নৌকাগুলোর
পাল ছিল
আমার প্রতীক্ষারত তোমার দ্বীপগুলোর দিকে।

বেশ,এখন,
যদি একটু একটু করে থামিয়ে দাও আমাকে ভালোবাসা
আমিও অল্প অল্প করে রুদ্ধ করে দেবো তোমাকে ভালোবাসা।

যদি আকস্মিক,
তুমি আমাকে ভুলে যাও
আর খুঁজোনা আমাকে
কারণ এরমাঝেই আমি ভুলে যাবো তোমাকে।

যদি তুমি এটা দীর্ঘ এবং মাতলামো ভাবো,
বৈজয়ন্তী বায়ুপ্রবাহের ভেতরে বয়ে যায় আমার জীবন,
এবং তোমার সিদ্ধান্ত
আমাকে ছেড়ে যাওয়া সেখানে
হৃদয়ের যে তটরেখায় আমার অধিষ্ঠান,
মনে রেখো
সেটা সেই দিন
সেই প্রহর
আমি আমার বাহুদ্বয় উত্থিত করবো
এবং আমার শেকড় উঠবে অন্য ভূমির সন্ধানে।

কিন্তু
যদি প্রতিদিন,
প্রতি ঘন্টা,
তুমি অনুভব করো তুমি এগিয়ে আসছো আমার দিকে
তোমার অপ্রশম্য মধুরতা সহ,
যদি প্রতিদিন একটি পুষ্প
তোমার ওষ্ঠদ্বয়ে আরোহণ করে আমার সন্ধানে,
আহ আমার প্রেম, আহ আমার আপন,
আমার মাঝে পুন: প্রজ্বলিত হয় সে সব আগুন
আমার মাঝে কিছুই নি:শেষ হয়নি অথবা হয়নি বিস্মৃত।
আমার ভালোবাসা শুষে নেয় তোমার প্রেম, প্রিয়,
এবং যতদিন বেঁচে থাকবে তুমি তোমার বাহুডোরে থাকবে
আমাকে না ছেড়ে।
 [If You Forget Me ---Pabolo Neruda]
























মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

বন্ধ্যা কমলাগাছটির গান--ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা





কাঠঠোকরা,
আমাকে বিচ্ছিন্ন করো আমার ছায়া থেকে ,
এই নিস্ফলা যন্ত্রনা থেকে
মুক্ত করো আমাকে ।
কেন জন্ম নিলাম আমি প্রতিবিম্বের মাঝে ?
দিন আবর্তিত হয় আমাকে ঘিরে ।
রাত তার প্রতিটি তারায়
অনুকরণ করে আমাকে ।
আমি থাকতে চাই প্রতিফলনহীন,
এবং তারপর আমাকে রেখো এমন স্বপ্নের ভেতরে
যেন ওই পিঁপড়েগুলো এবং কাঁটাবীজ
আমার পত্রপল্লব এবং টিয়াপাখি । 



 (The Song Of The Barren Orange Tree --Federico Garcia Lorca)-








শুক্রবার, ২০ মে, ২০১৬

পথিক





 
লাল ভেলভেট মোড়া কাসকেটে এক খন্ড সবুজ কাঁচ ;
পান্না নয়
চকমকে নকল পাথর ।

আমিই কি জানি
মায়াবী ঘাসের গোপনে বিষমুখো চোরাকাঁটা থাকে
শিশিরের হিমে রক্তের ছিটে মিশে যায়!

অনিষ্পন্ন স্বপ্নের ভেতরে
হ্রেষা...
..হ্রেষা.....
খট.....খটা....খট ...
এক পাল বুনো ঘোড়া
দিগ্‌বলয়ে তাদের পৌঁছনো হয়না কোনদিন

হাহাকারের মতো এত নীল মেখে কোথায় ছুটেছো ও মেঘ ?
ঠিকই তো জানো
কখন তোমার পাপড়ি খসানোর  পালা !