মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৬

অন্ধকার, হ্যালুসিনেশন এবং কাঠের ঘোড়া




               'আমার  আঁধার ভালো......'



রাত্রিকে কেন ঢেকে দাও নকল আলোর বন্যায় ? শোন গন্ধরাজের সৌরভের সাথে কেমন হু হু বেজে যাচ্ছে
আঁধারের নিজস্ব সুর, আপন কোলাহল।
            এ আগুন  ফিরিয়ে নাও ।ভুলে যাও পাথরে পাথর ঘষা সভ্যতার এই উন্মেষ।যুগযুগ সাধনালব্ধ  কৃত্রিম আলোর এই ফোয়ারার উদ্ভাস ভুলে যাও।রাতকে থাকতে দাও তার নিজের মতো। রাতের এই স্বতস্ফুর্ত  নিজস্বতাকে আড়াল করতে জ্বালিওনা কোন প্রদীপ অথবা ফ্লুরোসেন্ট বাল্ব।রাতচরা পাখিগুলোকে উড়তে দাও তাদের প্রিয় আকাশে।
        মুছতে চাইনা নকল আলোর উৎসবে অন্ধকার রাতের এই চাকচিক্য । আঁধারের নিজস্ব সুরটুকু  শুনতে চাই,  দেখতে চাই তমসার একান্ত আপন সৌন্দর্য ।আরো আরো আরো গাঢ় হোক তমিস্রা ।শ্লেটের কালোর মতো। হতাশার মতো। সারারাত অন্ধকার দেয়ালের গায়ে  একের পর এক ফুটে উঠুক ছবি। অতীত। দীর্ঘশ্বাস।এভাবেই একসাথে জেগে থাকবো আমি ও আমার অন্ধকার । সারারাত।

          
                                                               *           *         *



                   কুয়াশার চাদরে মোড়া ওই বনভূমি, ওই নদী , হরিণের জলপানের ওই দৃশ্য ; এক বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো ।মনে হয় ওই দৃশ্য কোথাও ছিলনা। অথবা ছিল। তারপরেও ওই দৃশ্যটাকে নেহাতই একটা রং-তুলিতে আঁকা ছবি বলেই ধরে নেই। কিন্তু এখনো সেই জলের গন্ধ, সেই পিপাসার্ত হরিণের ব্যাকুল ছুটে আসার আনন্দ-উল্লাস একদম টাটকা----জীবন্ত।

    কুয়াশামগ্ন  জল-জঙ্গলের ভেতরেই কি ছিল  সে স্বপ্নের কুটির?


আমরা যা সত্যি বলে ধরে নেই তার অনেকটাই হয়তো স্বপ্ন অথবা হ্যালুসিনেশন।এই হ্যালুসিনেশনেরও একটা স্মৃতি থাকে ।রঙ্গীন অথবা বিষাদাচ্ছন্ন ।
                               স্মৃতিবন্দি মানুষের পরাধীনতার কষ্ট অন্যরকম। অনুতাপ। নিজেকে এক মস্ত তোরঙ্গে বন্দি করে ফেলে নিজে নিজেই ।তারপর সেই সিন্দুকের চাবি হারিয়ে ফেলে। আজীবন পিছুটানের পঙ্গুত্ব।এমনি হয়।

                                                      *              *              * 

                                     আমারও যদি থাকতো একটা  ' টিন ড্রাম ' অস্কারের মতো! এমনকি প্রত্যেকটি মানুষেরই দরকার একটি টিনড্রাম অথবা ট্রাম্পেট জাতীয় কিছু একটা বাস্তবতার যাবতীয় অনাকাঙ্খিত কষাঘাত থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্য।
         থাকলে বেশ হতো। নেই।তাতে কি? আমারতো আছে একটি কাঠের ঘোড়া।যখন তখন  পালিয়ে বেড়ানো যায় দেশ থেকে দেশান্তরে, তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে , সাত সাগরের তীর পেরিয়ে  খেয়ালখুশীর বাড়িটিতে ঢুকে পড়া যায়।  এটাই আমার আজীবনের সঙ্গী। আমার মুক্তি।
                     খট্‌ খটা খট্‌ ।বর্তমান থেকে অতীত, অতীত থেকে অনাগতের স্বপ্নে ঢুকতে একটুও দেরী হয়না।জানি একদিন আচমকা শুরু হবে ফুরিয়ে যাবার বেলা ।ঘোড়া থেমে গেলেই শুরু হবে সেই চিরন্তনের খেলা ।সেদিনটি কবে ?  জানিনা।



                      ---------------------------------------------------------------













                        



























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন