বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৪

অনিদ্রার রাতে বর্ষণ-প্রত্যাশা

 




 ' আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে মনে পড়লো তোমায় '

কাকে মনে পড়ে? কে সে?সে কি শরীরি কেউ? নাকি স্মৃতি-মেদুরতায় আচ্ছন্ন আজন্ম-বিস্তৃত এক অলৌকিক অস্তিত্ব?মনে পড়ে। কত কি যে মনে পড়ে!
বৃষ্টি মানেই স্মৃতির হাত ধরে পিছনে হেঁটে যাওয়া।বৃষ্টি মানেই মনের ভিতরে গুনগুনিয়ে উঠা 'বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল"।ব্যালকনির রেলিংয়ের বাইরে হাত বাড়িয়ে  অবিরল জলধারাকে ধরতে যাই ।হাত ভিজে যায়।এই ভেজা করতলের কোমল-শীতলতায় একাকার হয়ে যায় সমস্ত শৈশব-কৈশোর, অতীত-বর্তমান।


মনে পড়ে সেই দুরন্ত শৈশব।
বৃষ্টির জল জমে ঘরের সামনের উঠোনটা যেন এক ঢেউ-খেলা নদী।সে নদীতে ভাসছে ছোট ছোট কাগজের নৌকাগুলো।যেন শ্বেত-শুভ্র জুঁই গুচ্ছ ভেসে চলেছে কোন এক স্বপ্নের দেশে।যেন রাজপুত্রের সপ্ত-ডিঙ্গা চলেছে বন্দিনী রাজকন্যাকে উদ্ধারের জন্য পাতালপুরীর অজানা দেশে।কেমন সে রাজকন্যা?' কুঁচবরণ কন্যারে তার মেঘবরণ কেশ '...............।কুঁচবরণ? সে আবার কি? আর মেঘবরণটাই বা কি?ছোট্ট মনে কত যে প্রশ্নের আঁকিবুকি।বড়দের কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে।কিন্তু এই পর্যন্তই ।বড়দের কাউকে জিজ্ঞেস করার কথা ঠিক সময়ে আর কখনো মনেই পড়তনা।রহস্যময়ী সেই রাজকন্যা সমস্ত শৈশব জুড়ে অজানা-অচেনা-রহস্যময়ী হয়েই রইল।আর রইল 'ঝ র ঝর মুখর ভাদর দিনে' কাগজের নাও ভাসানোর খেলা।সব আয়োজন এক বীরবাহাদুর রাজপুত্রের জন্য----সপ্ত-ডিঙ্গা সাজিয়ে যে যাবে রাজকন্যার দেশে ।দৈত্য-দানোর পাহারা এড়িয়ে সোনার কাঠি-রুপার কাঠি বদলে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলবে,উদ্ধার করে নিয়ে আসবে সেই চির-রহস্যময়ীকে।তারপর?সেই শৈশব-ভাবনায় তার আর কোন পর ছিলনা।অর্থাৎ একটি অসমাপ্ত উপন্যাসের খসড়া।
শিলাবৃষ্টি হলে কী যে  আনন্দ!শিল কুড়িয়ে বোতলে জমা করে রাখা। ক'দিন পরে হয়ত মনে পড়ল সেই শিল জমানো বোতলের কথা।ও মা কোথায় কি!এ যে কেবল জল ভরা একটি বোতল!মনের কোনে এমন সন্দেহও উঁকিঝুঁকি দেয় কেউ হয়ত ওই সুন্দর সাদা বরফ খন্ডগুলো চুরি করে তার বদলে বোতলে জল ভর্তি করে রেখে গিয়েছে।কিন্তু আসামীকে কিছুতেই সনাক্ত করা যাচ্ছেনা যে!
এভাবেই আশৈশব জল-হাওয়ার ভিতরেই বেড়ে উঠা । বসবাস।খরাপীড়িত দিনগুলোতে এক পশলা বৃষ্টির জন্য প্রাণ ব্যাকুল হয়।হাঁসফাঁস করি।
ঋতু আসে।ঋতু যায়।কিন্তু বর্ষা না এলে যেন প্রকৃতি এবং মন কোনটারই যেন পূর্ণতা আসেনা।কখনো রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটে যায়।শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরার আরামদায়ক ঠান্ডা আমেজও এক টুকরো ঘুমকে নিশ্চিত করতে পারেনা। এইসব অনিদ্রার রাতগুলোতে ঘোর বর্ষার একটানা বৃষ্টির  রিমঝিম শব্দের জন্য ছটফট করি।ছেলেবেলার টিনের চালে ঝমাঝম মাদল-করতালের ছন্দে বাজা বৃষ্টির শব্দ শুনে শুনে ভীষণ প্রশান্তির ঘুমের কথা ভেবে তীব্র নস্টালজিক হই।
এসো বর্ষা।
এসো বৃষ্টি ।
এসো ঘুম।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন