বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

স্মৃতি-আলেখ্য

নদী কোথাও যায়না । স্থির।যা যায় তার নাম স্রোত।



আকাশে হাত রাখলেই মেঘের পর্দাগুলো খুলে খুলে যায়।
বৃষ্টি কি কামিনীগন্ধা ফুল?
মেঘমেদুর নীলে কেমন রংয়ের বিভ্রম নিয়ে ফুটে আছে ফুলের নকশাগুলো

আমি আসলে আঁকতে চেয়েছি বিহঙ্গএবং জলাধার।

হাজার বছর ধরে কেবল দুইটা শব্দ শিখেছি শুধু
সমুদ্র ও পাখি ; পেলব ডানার আদর অথবা উল্লাসমগ্ন ঢেউ।
যতোটা নিবিড় সান্নিধ্যে গেলে নৈকট্যের নিগূঢ় গল্প তৈরি হয়
ততোটা কাছে যাওয়া হয়নি সাগরের ।
আমাদের তুমুল স্মৃতির কোন আলেখ্য সোনার জলে লেখা হবেনা কোথাও।

স্বপ্নস্মৃতির গাড়ীতে যখন তখন উঠে পড়া যায় হিচহাইকারের মতো ;
এটুকুই ।





সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

মানচিত্রে তর্জনী চিহ্ন




আমিও তো বারবার দুঃসহ লজ্জায়  ম্রিয়মাণ হই

শহরের রাস্তায়  মৃত্যুদূতের মতো মিশকালো ট্যাংক নেমে এলে,
রক্তের হোলিতে মাতে কালো জাদুকর ;
জ্যান্ত হয়ে ওঠে ঘিনঘিনে লালসাসিক্ত আঙ্গুলগুলো।
বাগাড়-শকুনের মচ্ছব লাগে ।

আকাশ শিউরে ওঠে
স্তম্ভিত-বিস্ময়ে ম্রিয়মাণ নক্ষত্রেরা
মেঘের আড়ালে --------


হায়েনারা  বারবার  ফিরে ফিরে আসে -


আজও
পিতার শোণিতস্রোতে আমাদের অমোচনীয় কলংকের ছবি ফুটে উঠে ।
আহা নরশার্দুলেরা ! পিতৃহন্তারক !


মানচিত্রে  সেই অমোঘ তর্জনীর চিহ্ন লেগে আছে ;
অলঙ্ঘ্য-অবিনাশী আলেখ্য-উপাখ্যান।













বুধবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৫

একাকীত্ব



একাকীত্ব দাঁড়িয়ে আছে ধু ধু শূন্যতার ছাইবর্ণ মাঠে।


সুনসান প্রান্তরে বেজে উঠুক কিছুতো শব্দ
তুর্যনাদে আকাশের চোখ খুলে দিয়ে
না হয় একটু কাঁদলো পৃথিবী, ' মিয়া কি মল্লারে'  ।


মেঘ ঢেকে রাখে তারার আকাশ;নক্ষত্রবিহীন নিঃসঙ্গতা।
অন্ধকার ঢেউয়ের দোলনায়
জেগে থাকে প্রখর অনিদ্র রাত ;
ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমের ভেতরে স্বপ্নের লতাপাতা বেড়ে ওঠে
চৌরাশিয়ার বাঁশি কাঁদে
টুপটাপ বকুলের বিরহগান বাজে  ;
আর কিছু নয়
শুধু একটি রাত ঘুমোতে চেয়েছি সিডেটিভহীন ,
পাপড়িপালকের উষ্ণ আদরে।

চরে শিকস্তির চিহ্ন রেখে নদী কেন সরে  সরে যায়?














মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

দুই তারে


দুটোই।
লোহার শেকল অথবা সুক্ষতম রেশমি সুতো।
 অবাক সময় দোল খায় চিকন তারের টানে!


হালখাতায় লিখে রাখছি নগদবকেয়া হিসাব-নিকাশ
আবার হুট করে ঢুকে যাচ্ছি সমান্তরে ।ছেড়ে দিয়েছি ঘুড়ির সুতো ;
নাটাইসুদ্ধ।
কৃষ্ণভৃঙ্গের হুলের ভেতর ঢুকে পড়ছে বেহিসেবী দোদুল্যমানতা ।

ভাসানের প্রতিমা হয়ে কতবার ভেসে গেছি
আবার ভাটিতে ফেরা অবিকল নয় ; অবয়বে স্রোতের আঁচড়চিহ্ন ।
জল টেনে নিয়েছে  অশ্রুর মতো মুক্তোদানাগুলো ।

 হাতগুলো  পাথরপাথর  ;
কিছুই ধরতে পারেনা
না ফুল
না অমৃতপেয়ালা।
নোনাজলে ক্ষয়ে গেছে পা।

শৈত্যপ্রবাহের চূড়ায় আঁকার কথা ছিল যুগল পদচিহ্নের ছবি ।
ভিন্ন ছবি !
ভিন্ন পদচিহ্ন !   






 

শনিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৫

কাগজের নৌকা




 রাতের বোতল উপুড় করে, দীর্ঘশ্বাসের মদ পান করেছি গোপনে
তার  ক'ফোঁটা ভাগ আমি নদীকে দিয়েছি ;
গড়াতে গড়াতে ঠিক মিশে গেছে সমুদ্রের নুনে।


 আজ আবার বৃষ্টি
 আজ আবার কাগজের নৌকা ভাসানো দিন ;  
                                                                  
  কতদিন স্বপ্নের স্বাক্ষর এঁকে ভাসিয়েছি  রংগীন কাগজ ।

পায়ে পায়ে নিগড়ের নিষ্ঠুর  ঝনৎকার ছিল । পথ ক্ষমাহীন।

আকাশ-উদ্যানের সিঁড়িতে রেখেছি দ্বিধান্বিত পদক্ষেপ
                       
 কত নক্ষত্রের ফুল জমে আছে আকাশের গোপন পকেটে,
 আজো খুঁজে ফিরি।

পাথরে পাথর ঘষা আগুন থেকেই ছড়িয়ে পড়েছে যে  তারার ফুলগুলো ,
আমি কুড়িয়ে নিয়েছি ,
মায়াবতি স্বপ্নের ভেতর থেকে কুড়িয়ে নিয়েছি এক টুকরো চাঁদ।

গন্তব্য অজানা -----
ঘাসফড়িংয়ের পেছনে ছুটতে ছুটতে
আমিও যে কতবার ঘাস হয়ে গেছি তৃণমূলের জলকণা জানে ।
আজ আবার --
আনমনে ঢুকে পড়ি এক ছবিঘরে
দেয়ালে ঝুলন্ত ক্যানভাসে খুঁজি
মেঠো আলপথ, শিশির ছড়ানো সর্ষের ক্ষেত।



মরফিন-চর্যায় নিঃসাড় পড়ে আছে যে অচেতন দেহ
সে কি সন্নিবদ্ধ হাতের কপাট খুলে
হারিয়ে ফেলেছে জাদুর কপোত !










সোমবার, ২৩ মার্চ, ২০১৫

শুভ্র শূন্যতা

আয়না তোমাকে পরিচিত করে তোমার মুখের রেখাগুলোর সাথে অথবা জাগিয়ে তুলে সুপ্ত নার্সিসিজম, নির্ভর করে তুমি কিভাবে ব্যাবহার করছো তোমার নিজস্ব দর্পণটাকে। তবে তুমি যা নও তা দেখতে চেয়োনা।ঠকে যাবে । তোমার বুঝতে হবে , নার্সিসিজমেরও একটা সীমা আছে।
বরং তোমার প্রতিবিম্বটাকে রেখে দাও পাখির চোখের ভেতরে ।

কানামাছি খেলায় তোমার চোখে বাঁধা রুমালটা প্রজাপতি হয়ে গেলে , হারজিতের কথা মনে থাকেনা। সামনে তখন কেবল কতগুলো রং অথবা মিলিত বর্ণচ্ছটার রংধনু ।রংগুলো আলাদা করে ফেলো । তুমিতো জানোনা কোনটা আসল রং। খুঁজে নাও। কিন্তু মুছে ফেলোনা ডানার পরাগ। সব রংয়ের উৎসতো এটাই।
  আয়নার কাচে যখন বিম্বিত হবে রংগুলো তখন দেখবে সব বর্ণসমন্বয়েই ফোটে ওঠে ----শুভ্র শূন্যতা।



বুধবার, ১১ মার্চ, ২০১৫

রঙীন চশমা





দৃশ্য বদলায়না
কেবল চশমার কাচ বদলায় ।

মাঝে মাঝে
যখন—শীতের কুঁকড়ে যাওয়া পাতার মাঝেও
লিখে ফেলছি জীবন ;
বিবর্ণ ঘাসে
এক টুকরো সবুজ উষ্ণতা গড়িয়ে পড়ে ।

প্রতিটি স্বপ্নের ভেতরে আমি যে ঠিকানা খুঁজি ,
কাগজকলমে সেই নাম
কেবলই লিখে যাচ্ছি ভুল বানানে।
বানান-বিভ্রাটে গন্তব্যের ভুল !

ফেলে যাচ্ছি রঙীন কাচের চশমা।