বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন, ২০১৮

প্রত্যাবর্তনের কাল




কোথাও কী রেখে গেছে
সর্ষে ফুলের ঘ্রাণ? 
তৃণের হরিৎ ছায়া? 


এক চোখ বুজে পিপ-শোর দৃশ্যগুলো
দেখতে দেখতে
মনে হলো
এক্ষুণি সেই চিঠিটা লিখে ফেলতে হবে
যার খচড়া তৈরি হয়েছিলো পার্চমেন্টে,
হাজার বছর আগে।
লিখে ফেলতে হবে সেই গল্পটা
কীভাবে রঙ-বিভোর পাখির বুকে
বিঁধেছিলো পারিজাত কাঁটা।
গোলাপ আঁকতে গিয়ে
শুধু শূন্য এঁকে যাওয়া
সেই অসমাপ্ত ছবির কথাও
মনে আছে আমার..........

পাথর থেকে গড়িয়ে পড়া
বহুবর্ণ অক্ষরের  গল্প বলতে বলতে
উড়ে যাচ্ছিল কাকাতুয়া
ঝুটিতে সূর্যের রং.........

অতীতের ঘরে ফেলে যাওয়া
একটি পায়ের  জলছাপ
একদিন খুঁজে পাবে কেউ; মনে হয়

ফিরবে সে, হাজার আলোকবর্ষ পরে।



বৃহস্পতিবার, ২৪ মে, ২০১৮

খোয়ারি ভাঙ্গার দাগ




আমাকে তাহলে পাথর করেই গড়ো
নোনাজলে যার ক্ষয় নেই।
হাতের তালু থেকে গড়িয়ে নামছে ছায়া;
ছায়ার ভেতর থেকে
আরো প্রগাঢ় অন্ধকার একটি নদী নেমে গেছে। কেউ জানেনা।
সব স্রোতস্বিনী ভেসে যায় যে সমুদ্রের দিকে
আমি একবার
মাত্র একটিবার
সেই জলধিকে, ভিন্ন কোন নামে ডাকতে চেয়েছি।
যখন
হাতের বাজুতে আঁকতে চেয়েছি হাঙরের ট্যাটু ;
মাঝসমুদ্রে ভেঁপু বেজে ওঠে
এক জাহাজ স্বপ্ন বোঝাই করে
বহুদূর চলে গেছে সেই জলযান।


নেশা কেটে গেলে করতলে
খোয়ারি ভাঙ্গার নোনা দাগ।
উন্মাদাগারের পথে ছুটে যায়
সমস্ত সমুদ্র-পালানো মানুষ;
যাদের হাতের বাজুতে হাঙরের ট্যাটু।



রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৭

তীব্র বাজাও তবে






তুমি হুইসেল বাজাতে জানো?
নিমেষে খান খান
ভেঙ্গে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করতে পারো
স্থবির পাথরের জগদ্দল স্তব্ধতা?
একটি আকাশপাতাল জোড়া খাতা খুলে বসে আছি।
অমিয়ঘোরে নিষিক্ত নতুন শব্দ লেখা হোক কিছু
এমন ভাবতে ভাবতে
চুরি হয়ে গেলো ভৈঁরো রাগে বাঁধা বেলীর সুগন্ধ।

বাতাসের কানে কানে রেখে দেই তবে
কিছু নীরবতা।

হরস্কোপ



ভাবছি একটা খাঁচাবন্ধী টিয়া হাতে
বসে যাবো রাস্তার পাশে।
তুমি বলতে পারো
এসব ভাগ্যগণনা,
হরস্কোপ টোপ সব বাজে কথা,
কুসংস্কার!
কিন্তু আমি তোমাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি
টিয়ার ঠোঁটে তুলে নেওয়া রংগীন কাগজে
বিশ্বাস রেখো।

সময়ের শবদেহ ক্ষমা চায় শুধু
অবিরত ক্ষমা করতে করতে
একবার আয়নার সামনে দাঁড়াই;
ক্ষমাহীন সব কালশিরা ফোটে আছে।
কেবল নিজেকেই ক্ষমা করা যায়না কখনো।
আহা! আমার কুড়িয়ে পাওয়া রঙীন কাগজ...









দুঃখদিনের দূতি






তোরঙ্গ খুলতেই ঘর জুড়ে
ন্যাপথেলিনগন্ধের মতো স্মৃতির ঝাপটা
আয়নায় একটুকরো মনখারাপ, বিষন্ন হাসে।
অপটিক ক্যাবল থেকে উড়ে যায়
ফিরে আসে বিষাদমগ্ন একলা শালিখ;
নিঃসঙ্গ শালিখ দুঃখদিনের দূতি--
সকলেই জানতো সে কথা।

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

হ্যালুসিনেশন




মিহিমৃত্যুর মতো একটা কান্না ছুঁয়ে আছে
আমিতো চেয়েছি তীব্ররোদ, ঘাম আর বৃষ্টি। শ্বেতপাথরে লিখা নাম
বিরতিহীন হ্যালুসিনেশনে এন্টিক শো-পিস হয়ে উঠছে ক্রমাগত।
যারা আয়নার সামনে দাঁড়াতে নিয়ত ভয় পায়
তারাই তোমার সব কথার মাঝে কেবল নান্দনিকতা খোঁজে।
যেন তুমি তার জন্য তৈরি করবে মিথ্যে সুন্দরের এক নন্দনকানন।
অথচ
ভাষাবিদেরাও জানে
ভাবনার কোন যথার্থ ব্যাকরণ হয়না কখনো।

একটি নরম রোদের চাদর তোমাকে ছুঁয়ে যেতে যেতে
গুটিয়ে নিল তার ব্যাকুল প্রসারিত করতল।
হয়তো ক্রমান্বয়ে এভাবেই
একদিন সবকিছু হারিয়ে যাবে ছায়ার নৈঃশব্দ্যে.......

শুক্রবার, ২৬ মে, ২০১৭

চোখের পাথর



মাঝখানে কাঁচের দেওয়ালজোড়া অভিমান;
কে কাকে ফেরায়?

হাঁটতে হাঁটতে অবিসংবাদিত একটা গোলচক্কর
চারদিকে চারপথ ; কুহকীমায়ার ইশারা।
বেখেয়াল নাজুক হাতের বন্ধন খুলে
কে যে কোন পথ ধরে চলে গেলো!
রেখে যায়নি কোন পদছাপ।

এক ঘোরলাল কৃষ্ণচূড়া দুপুর
দূর গোধূলির পথে বেঁকে যেতে যেতে
পিছু ফিরে একবার দেখে নেয়
আর কতো বাকী আছে
রংয়ের প্রলেপ মাখা মধ্যাহ্নের ছায়া।
অস্তমিত বিকেলের পথ জুড়ে রক্তাভ পাপড়ি,
লালগালিচা বিছানো পথে একটি সন্ধ্যা নেমে আসে
আকাশের শামিয়ানায় গুড়ো গুড়ো ছড়ানো
আবীর আবীর কিছু রাগরং;
চৌরাশিয়ার বাঁশিতে কাঁদে ইমনকল্যাণ,
উলোঝুলো পথেপ্রান্তরে বাজছে সায়াহ্ন।

ভরসন্ধ্যার খাতা খুলে দেখি
তরঙ্গের ধ্যানমগ্ন মুদ্রার বিন্যাস,
যা কখনো শেখোনি তুমি জোয়ারভাটিতে;
অগাধ জলের শিথানে চোখ রেখে
দেখে গেছো  শুধু মাছেদের কেলি
শেখোনি মাছের প্রকারভেদ,
কানকোর ভিন্ন গঠনপ্রকৃতি।
নোনাজল দেখেছো শুধু,
দেখোনি  নিষিক্ত চোখের পাথর।