রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

অপরিচিত



আবার দুইজন মুখোমুখি ;
তাদের মাঝখানে
অপরিচয়ের প্রগাঢ় ছায়া
ঝালরের মতো দুলে থাকে।
আকস্মিক স্মৃতির ঝাপটায়
তৈরি দৃশ্যপট
সে কেবল একটা দেজাভ্যু ।

শুধু একটা কথাই সত্যি বলে মনে হয়;
স্পর্শের ভাঁজে ছিলো তীব্র আগুন।



একা একজন

প্রবল বর্ষণের ভেতরে হেঁটে যাচ্ছে
ঝড়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে
একজন একা মানুষ।
সারারাতের জন্য
এই ঝড়জল
এই দুর্ভোগ।
রাত শেষ না হলে খুলবেনা
ভোরের আগে খুলবেনা
পান্থশালার দোর।

দ্বিধান্বিত





আগুন এবং স্বর্ণবিভ্রমের দোদুল্যমানতায়
পার হচ্ছি এক আজবধ্রুপদ মহাকাল।
প্রতিটি আগুন আমি সোনা ভেবে স্পর্শ করেছি
আর হাতের দগদগে ক্ষত লুকিয়েছি গোলাপমোড়কে।

দ্বিধা;
হাপরের কঠিন তাপতরঙ্গে পুড়ছে যে ধাতুভাগ
সে কী স্বর্ণপিন্ড হবে? না কী লৌহজঞ্জাল?












যাত্রা





কেন এমন ঝাপসা হয়ে আসে চোখ?
হয়তো চশমার কাঁচে কিছু জমেছে কুয়াশা।
ঠাসবুনটে র‍্যাকস্যাক ভরা জিনিসপত্র।
অসাবধানে কোথাও কিছু কী পড়ে রইলো?

যাত্রাতো নিশ্চিত ছিল। প্রস্তুতিও।




নদীর প্রকৃত নাম



পাশ থেকে খুব সন্তর্পণে উঠে চলে গেলে কেউ ;
ধুলোয় কেবল একটুখানি পদচিহ্ন আঁকা থাকে,

কোন পদধ্বনি বাজেনা।

একটা হাহাকার গড়িয়ে গড়িয়ে নামে জলের তারল্যে
তবু পাথরের কাঠিন্যে হাত রেখে বসে আছি।
ছায়াটাকে দু' ভাগ করে,
এক খন্ড যত্রতত্র বিলিয়ে দিয়েছি
বাকীটা নাহয় থাকলো আমার কাছে।

সব খেলার একটা শৈশব থাকে ; পুতুল এবং ঘুড়ির সময়কাল।
হয়তো কোনদিন কোথাও লেখা হবে ঘুড়ি ও পুতুলের গাঁথা।


পদ্মা, পিয়াইন যে নামেই ডাকোনা কেন
নদীর একটাই নাম ; তরঙ্গবিলাসী।  শুধু ঢেউয়ের ভাঙ্গন। 

বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৭

ভাইপার




খুব জরুরী কিছু এন্টিভেনম ;
একটা র‍্যাটলসাপ বারবার ছুঁয়ে যায়
ঘুমের শিথান ।
স্বপ্নের ভেতরেও তার ঘিনঘিনে ছোঁয়া ।
এখানে কোন প্রবলআকর্ষক  ঘ্রান নেই,
নাগবাঁশি বাজায়না কেউ।
বারবার কেন আসে এই ঘৃণ্য সরীসৃপ?
কোথা থেকে?
তবে কী
অক্ষরবিন্যাস থেকেও বের হতে পারে
বিষাক্ত ভাইপার
দিতে পারে প্রাণঘাতী দংশন?

চিহ্নিত করিনি সাপের জন্মস্থান
হতে পারে সেটা তোমারই তর্জনী।


দৌড়




দীর্ঘশ্বাসগুলো জমা রাখিনা;
ভোর হলেই মুঠো খুলে ছড়িয়ে দেই।


সিঁড়ি উঠতে গিয়ে দেখি,প্রথম ধাপেই
শুয়ে আছে সতর্ক ডোবারম্যান পিনশার
কানখাড়া, গুটান লেজ
মুহূর্তেই হামলে পড়তে পারে;
ভঙ্গিমায় একথা সুস্পষ্ট।
সেই থেকে সিঁড়িঘরে গিয়েছি আটকে;
সিঁড়িপথ ভুলে গেছি। 

কেউ কেউ, খোলাচোখ আকাশে নিবদ্ধ
মুক্তকচ্ছ
রণপায় দৌড়ায়।
বলতে ইচ্ছা হয়----
        থামো, এতো দ্রুততার কিছু নেই।
        পিছলালে তোমারই পতন। 


কোন দৌড়াকাঙ্ক্ষীকে কখনো
'ধীরে চলো' একথা বলতে নেই।


বুধবার, ১৫ মার্চ, ২০১৭

রাতের পৃথিবী

      


 কোন কোন ঘুম ভাঙ্গা রাতে দেখি
পৃথিবীটা নি:সম্বল ভিখিরির মতো
ফুটপাথে
কানা উঁচু থালা পেতে বসে আছে।
তন্দ্রাবেশে কুয়াশাভেজা নিস্তেজ রাত।


বাতাসের গায়ে গন্তব্যের প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে
একটি নিশাচর পাখি উড়ে গেলে;  তুমুল
পাখসাটে হু হু করে বাজে  অস্ফুট ব্যথাচ্ছন্ন এক সুর।
কখনোবা মানুষও তো পরিযায়ী পাখি!

শোনা না শোনার দোলাচলে হিস হিসে ধ্বণি বাজে ;
ঝলসে ওঠে রাতের চাবুক।


 একটা প্রকান্ড কালো মাকড়শার মতো
কিলবিলে দশপায়ে হেঁটে যাচ্ছে জমকালো রাত।


যেতে যেতে কোথাও কী কিছু ফেলে গেলো কেউ
একটি পতত্র? এক ফোঁটা বিষ?


------------------------------------------

শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭

আগুনের অবশেষ



ড্যান্সহলে অগ্নিহোত্রী। তবলচী বৈশ্বানর।

কী করে ছড়ালো পাখির চোখঝলসানো এতোটা দাহক?
পুড়ল প্রজাপতিডানা।পেখমের ভাঁজ খুলে দূরান্তে পালালে ময়ূর।

দাবানল থেমে যাবে ঠিক।তার আগে
পাতা পুড়বে। বুনোফলফুল।
বৃক্ষপল্লবাদি কাঠকয়লা হবে।
আরো বহুক্ষণ
r /> বনপোড়ানো রণভেরীর হুহুংকার শোনা যাবে।

 ধীরে ধীরে স্তিমিত হবে আগুনের লেলিহান জিভ
বাতাসের হোসপাইপ ধুয়ে নেবে সব জঞ্জালধোঁয়া।
অবশেষ থাকবে
কিছু গাছের কংকাল
বহুদিন উড়বে কিছু ছাই।




মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭

যাবার সময় হলে




কোথাও যাবার কথা হলেই আমার ট্রেনের কথা মনে হয়
এবং টিকেটচেকারের বিষাদমগ্ন আঙ্গুলে ধরা টিকেটের কথা।
এক কামরাভরা যাত্রী,
সদ্য স্বজন ফেলে আসা বিরহব্যথা;
ইঞ্জিনের ঝিক ঝিক ঝিক বাজনার মন আনচান করা কোরাসে
সম্মিলিত বিষন্নব্যথা বেজে ওঠে।
পূর্বতন ভ্রমণের নস্টালজিক স্মৃতিমন্থনের সাথে দুলতে দুলতে
আমরা এক নিরূপিত গন্তব্যের দিকে ছুটে যাই।

শেষ হুইসেল বেজে ওঠার সাথে সাথে
আসন্ন একাকীত্বের যন্ত্রণাব্যাকুল প্লাটফরমের
হৃদয়মথিত  দীর্ঘশ্বাসের কথা মনে হয়।