মঙ্গলবার, ৯ নভেম্বর, ২০১০

নিগড়-বন্দী

ভাল আছি।কুশলজিজ্ঞাসার  উত্তরে এমন বলতেই হয়।এটাই ভব্যতা।
সভ্যতার হাত ধরে মুছে ফেলি সরল স্বীকারোক্তিগুলো।

হাইরাইজের খাঁচার ভিতরে স্মৃতিতাড়িত বিনিদ্র রাত।
ভুলে গেছি প্রথম বৃষ্টির সোঁদাগন্ধ।
টিনের চালে বর্ষণের ঝমঝম করতাল ঘুমের মদিরা।
"বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল........................"
শ্রাবনের ভরা গাঙ্গে ভেসে যাওয়া পদ্মপাতায় আঁকা পায়ের ছাপ;অভিজ্ঞান।
বকুল তলায় জেগে উঠা ভোর
ডাকপিয়নের প্রতীক্ষা্য মন আনচান করা প্রহরগুলো।


ভাল নেই---বলতেই ওষুধ আর অসুখের গন্ধ।হাসপাতাল।ডেটলফিনাইল।করুণার আর্তি।
ভাল লাগেনা---প্রিয়জনের উৎকন্ঠিত মুখ,  ব্যাকুল জিজ্ঞাসা।তাই সারাক্ষণ ভাল থাকি।


প্রতিরাতে ঘুমের দরোজায় প্রহরীর মতো দাঁড়িয়ে থাকে আটপৌরে যন্ত্রণাহতাশা।
মন্ত্রের মতো প্রবোধবাক্যে সান্ত্বনা খুঁজি-------------------------
কোন এক শিশির ভেজা ভোরে কুয়াশার চাদর গায়ে হেঁটে যাবো দূর গাঁয়ের অচেনা পথে
সবুজ ঘাসের বুকে ঝরে পড়া নীহারের ফুল কুড়োতে কুড়োতে যাবো
নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে মেখে নেবো সর্ষেক্ষেতের ঘ্রাণ
নাগরিক বিষগন্ধ পিছনে ফেলে বহুদূর চলে যাবো।আর ফিরবোনা।

অনিদ্রার এমনতরো কঠিন শপথবাক্য  দিনের আলোয় মুছে ফেলে দিনযাপন করি।
কোথাও যাইনা।শিকলে বেঁধেছি পা।শিকল খুলেনা।

শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১০

কলকল্লোল কোলাহলে

ইদানীং তোমাকেই ভয় পাচ্ছি-----নির্জনতা।
অন্ধকার ঘন হয়ে এলে রাতের কফিন থেকে ড্রাকুলার মতো উঠে আসো;
প্রাচীন-সমাধিতে ডানা ঝাপটায় রক্তভুক বাদুড়ের পাল।

কি অনায়াসে তুলে আনো
যত্রতত্র হেলায় ফেলে রাখা বিস্মৃতির প্রখর হলুদ খামগুলো,
ছেঁড়াখোঁড়া-অগোছালো অংক না মিলা হিসেবের খাতা।
চাইনা।
ধুলোর আবরণে--বিস্মরণের ছাইয়ের নীচেই ওসব মানায়।
জনপদে মানায়না শবের মিছিল।

যেতে চাই কোলাহলে।ঊর্মিমালায়।
ডেকে যাচ্ছে নীল ঢেউ--মাঝ সমুদ্র ----------------
আমি খুঁজছি এক অলৌকিক-সাম্পান---ডুবুরির পোষাক;
এই উন্মত্ত-মাতাল প্রচন্ড-তরঙ্গের গভীর-গভীর-গভীরতম নিবিড়তায়
পৌঁছানোর সমস্ত আয়োজন--সাজ-সরঞ্জাম।




অতলের শিথানে হাত রেখে স্পর্শ করি কলকল্লোল জলের পৃথিবী।

সোমবার, ৪ অক্টোবর, ২০১০

ট্রেন

কু-উ-উ-উ-ঝিক-ঝিক-ঝিক---কু-উ-উ-ঝিক-ঝিক-----
চলে যাচ্ছি----চলে যাচ্ছি-----চলে যাচ্ছি-----------
ছুটে চলেছে বিশাল ড্রাগন মুখে আগুনের ধোঁয়া ।আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে স্টেশন----চেনা শহরের শেষ চিহ্ন।
দু'পাশের ধানক্ষেত --ক্ষেতে কাজ করা চাষী---মাঠে চরা গরুর পাল--বাঁশী-বাজানো রাখাল-বালক----খাল-বিল-----নদী-
মাছের জাল আটকে রাখা বাঁশের মাচান---দূরগ্রাম---হাটুরে মানুষ; কত দ্রুত পিছনে চলে যাচ্ছে সব---আড়াল হয়ে যাচ্ছে।

জানালা-খোলা কামরার ভেতরে জমছে কুয়াশার মতো ধুলো।জমছে স্মৃতি।শৈশব।ছুটি।ট্রেন। মামাবাড়ী।
-----" মামাবাড়ির পদ্মপুকুর গলায় গলায় জল
এপার হতে ওপার গিয়ে নাচে ঢেউয়ের দল।"

কু-উ-উ-ঝিক-ঝিক--কু-উ--উ--ঝিক--ঝিক----
চা-বাগান--পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ফুটে থাকা নাম না জানা ফুলের নানারঙ ---অচেনা লোকালয়--এসব দুই চোখে মেখে নিয়ে আমিও ফিরে যাচ্ছি বার বার আমার শৈশবে-কৈশোরে।স্মৃতি থেকে খুঁড়ে তুলছি সেইসব রূপালী-বিষাদ যারা চোরা-জ্যোৎস্নার আড়ালে লুকোনো ছিল।আর আগুনের স্তব গাইতে গাইতে একদিন ছায়াপথে মিলিয়ে গিয়েছিল যে নীলকন্ঠ পাখীর ঝাঁক ,আজ আবার ফিরে এলো ডানায় আগুন ছড়াতে ছড়াতে।


আজ আবার মনে পড়ে গেল এমনি এক জংশনে আমি উঠে পড়েছিলাম একটি ভুল গাড়ীতে।টিকিট-চেকার বললো--'এ গাড়ীতো আপনার নয়,--এখানেই নেমে যান'।
সকলেরই কি থাকে অচেনা-মাঝপথে নেমে যাবার সাহস? আমার ছিলনা।

রবিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১০

এটি একটি গল্প হতে পারে

ক্রমশঃ মিশে যাচ্ছি পাহাড়ের অশ্রুধারার ভিতরেএই জলধারার অন্তে জন্ম নিয়েছে যে নদী আমি তার নাম দিয়েছি--'নিঃসঙ্গতা'
দূর থেকে দেখলে------সে কেবল দূর থেকেই দেখা----মনে হয় দিগন্তে আকাশ আর পাহাড় একসাথে মিশে আছে- খুব ঘনিষ্ঠ
বন্ধুর মতো- জড়াজড়ি করে আছে।দৃষ্টিভ্রম।এক বন্ধু বলেছিল,-'পাহাড়ের জন্য আমার খুব কষ্ট হয়।কেমন একাকী-নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকে'।মানি।চোখের বিভ্রমে যাই মনে হোক --পাহাড়তো সত্যি সত্যি কি ভীষণ নিঃসঙ্গ আর বিষন্ন!

চোখের সামনে স্পষ্টতঃই দেখতে পাচ্ছি নিবিড় বনানী-ছাওয়া একটি সবুজ পাহাড়।কি তীব্র লাল পারিজাত আর পলাশ ফুটেছে!
থোকা থোকা জারুল-শিরীষের ফুলের জলসায় পাখী-প্রজাপতি আর ফড়িংয়ের ভোর থেকে সায়াহ্ন পর্যন্ত লুকোচুরি-হুটোপুটি দুরন্তপনা।তবু তার বিষাদ ঘুচেনা।
আসলে এভাবে পাহাড়ের দুঃখের কথা বলতে চাইনি।আমি বলতে চেয়েছি একটি প্রজাপতির কথা।যার ডানায় মেখে দিয়েছিলাম আমার হাতের আবীর।এবং সেই প্রিয় নদীটির কথা।যার দুই পারের হরিৎ ঘাসের বুকে নীল-হলুদ-গোলাপি হরেক বর্ণের ফুলের মেলা।ক্ষণে ক্ষণে দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে পালিয়ে যাওয়া আকাশের ভিতরে হারিয়ে যাবার গল্প।
অথবা একটি লাল ফড়িংয়ের রূপকথা-উপাখ্যান।

* * * * * *

স্মৃতি কেবল আনন্দ নয়।সে বিস্মরণের অন্য প্রান্ত থেকে তুলে আনে বিদ্রোহ এবং যুদ্ধের কথা।জয় এবং পরাজয়ের গল্প।
চিলেকোঠায় পরিত্যক্ত নাটাইয়ের বিবর্ণ সুতো।রংচটা লাল-নীল ঘুড়ির কংকাল। অপটু হাতের চিত্রশৈলি--
গ্রামের দৃশ্য, ডোনাল্ড ডাক।ইয়ো ইয়ো।মার্বেলের বাক্স।
" জীবনের ধন কিছুই যাবেনা ফেলা
ধুলোয় তাদের হোক যত অবহেলা।"

কিছুই ফেলা হয়নি।ফেলা হয়না।স্মৃতির সিন্দুক খুলে মাঝে মাঝেই উঁকি দিতে হয়।কখনো উঠে আসে বহুমূল্য হীরে-জহরৎ।কখনোবা উথাল-পাথাল এক যন্ত্রণা।
কাগজ পুড়ানোর সাথে সাথে স্মৃতিও পুড়ানো হয়ে গেছে ----এমন নির্বোধ ভাবনাকে কি বলা যায়?'করুণা' শব্দটি শুধুমাত্র নির্বোধদের জন্য সংরক্ষিত করে ফেলি।

এইসব পিছুটানা স্মারক থেকে গড়ে নেই এক আগুনের পাখী ।যে তার উড়ার পথে পথে ছড়িয়ে দেবে অগ্নি-পালক।সেই পথ দিয়ে যাবে যেসব পথিকেরা---তাদের দগ্ধ পায়ের ছাপে আঁকা ছবিগুলো কেমন হতে পারে?পাখীর কন্ঠে কেমন বাজবে ---আগুনের গান--আগুনের সুর?

* * * * * *
নির্বাসনের কত না আয়োজন!
আলোকসজ্জা।ফুল।ঝলমলে জেল্লাদার বেশ-বিন্যাস।গয়না-গাটি।সানাই।ধুপ।পানাহার।হৈ চৈ।আনন্দ।
ফুল-ছড়ানো পথে শোভাযাত্রা।রাস্তার দুই পাশে মাঙ্গলিকধ্বণি। শুভেচ্ছার পুষ্পবৃষ্টি ঝরে ঝরে পড়ে।
এসব উচ্ছাসের মাঝখানে উহ্য থাকে----মাকড়শার জালে আটকে যাওয়া প্রজাপতির কথা। ছল-চাতুরি এবং নিঃশর্তে বিকিয়ে যাবার গল্প।
'সোনার খাটে ঘুমাও কন্যা,মায়াবাণ- দৈত্য তোমার পাহারায় আছে।'

ঘুম ভাঙ্গলেই অন্য পৃথিবী।একে একে খুলবে মুখোশ।ছিন্ন হবে মায়াজাল।জানালাবিহীন ঘর।আলোহীন-বায়ুহীন।
নেই আকাশ দেখার কোন ঘুলঘুলি।একটি মাত্র দরোজা নেমে গেছে এক অন্তহীন অন্ধকারের দিকে।সিঁড়ির পর সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে কোন পাতালের দিকে এই অগস্ত্য যাত্রা?














বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১০

সমঝোতা অথবা আত্মাহুতি

শিখে নিয়েছি মুখোশ এবং সমঝোতা
পোষাকের দীনতা ঢাকার কৌশলী ভাঁজ।
ফিরিয়ে নিয়েছি
বলা নাবলা শর্তগুলো।সখ্যতার।


রাত দ্বিপ্রহরের জোনাকীরা ডেকে যাবে বলে কথা দিয়েছিলো।
জানালার পাশে জমে হিমঅন্ধকার
অনিদ্রপ্রতীক্ষার  কালকুট বিষ।
জলের তীব্র গন্ধে ছুটে আসা হরিণের চোখ চেনে
আদিমকিরাতের  ধনুকে টংকার তোলা মুদ্রার হিংস্রতা;
জল এবং জ্যোৎস্নার বিপরীতে সে কবে গিয়েছে?  আত্মঘাতি।

বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১০

তুমি তার নাম ভুলে গেছো

দেখো----
কেমন করে পুড়ে যাচ্ছে এক একটি সবুজ পাতা;
আর ছাইগুলো কলমের কালি হয়ে তোমার লেখার খাতা ভরে দিচ্ছে নতুন শব্দ-সম্ভারে।


সহজ নয়-----
পুরোনো ক্যালেন্ডার জমানোর বাতিক ছেড়ে দেয়া।
পিছনের পাতাগুলো ঘাটলেই---------
কখনো ঝরে পড়ে একরাশ ফুল
কখনোবা তাড়া করে বিবর্ণ-হলুদ কঙ্কাল
অথবা ঘর-পালানো জ্যোৎস্নায় মাধবীর বনে সাপের নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ।

'কেবল আজকের জন্য বেঁচে থাকা'
--এমন আপ্তবাক্য মেনে নিয়েও
আনমনে বারবার দুই হাতে মেখে নিচ্ছো স্মৃতির ধুলোটুকু;
মুখ ভার করা আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবছো-----
জল-ঝারি হাতে এক্ষুণি বুঝি নেমে এলো জলপরী
সমস্ত মালিন্য মুছে ফেলে
করতলে আবার মেখে নেবে সুগন্ধী-আতর।আকাশ-কুসুম।
স্মৃতির ভারে এতোটাই বিপন্ন-বিকল তুমি
ভুলে গেছো--কেন এই চলে আসা-ফিরে যাওয়া;
বইয়ের ভাঁজে রক্তিম-গোলাপ কার জন্য রাখা
ভুলে গেছো তুমি তার নামও।
এভাবেই--
হারিয়ে ফেলেছো শহরের মানচিত্র;সামনের পথ।

রবিবার, ২৯ আগস্ট, ২০১০

মাঝরাতের নক্ষত্র এবং সোনালী তরল

"সবাই চলে গেছে শুধু একটি মাধবী তুমি......................................."

ফুরিয়ে গেছে চরকার সুতো---------
বোনা হয়নি রুপকথার সেই নকশীচাঁদর।


মাঝরাতে আচমকা আকাশের জানালা খুলে গেলে
একটি নক্ষত্র খসে সোজা আমার স্বপ্নের ভেতরে ঢুকে পড়ে
'খসে পড়া তারার কাছে কিছু চাইলে ইচ্ছা -পূরণ হয়'
----------------তুই বলেছিলি।
তারা খসা-------------
তুই।
কিছুতেই মনে পড়েনা কিযে চাই।


গুলমোহরের লতানো ঝোপে চাঁদ নেমে এলে
এক বুক চাঁদনীতে গলে গলে যায়
সারাদিনের জমানো ক্রোধ এবং বিষন্নতা।
কেমন অনায়াসে ভুলে যাই---------
মাত্র তিনটি কড়ির বিনিময়ে বিকিয়ে যাওয়া
সবুজ-দ্বীপের অনুতাপ।


সময়-শেষের-সংকেত বেজে গেলে
ড্যান্স-ফ্লোরের আলো-আঁধারিতে উদ্দাম-নৃত্যরতা
সিন্ডারেলা সহসা উধাও।

দীর্ঘ যুগ--------

সোনালী তরলে কি খুঁজিস তুই
ফেলে যাওয়া এক পাটি জুতো?

রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০১০

zযাওয়া-আসার একই গলি

দূর থেকে সুদূরে মিলায়
অশ্বখুরধ্বণি-হ্রেষা।সে এসে ফিরে গেছে।
পাইনের বনে বাজে তীব্র ভায়োলীন।
বেহালার সুরে কারো মন পুড়েছিল।

তুমি নদী ভালবাসনা
তবু জলের নুড়িতে তার নুপুরের ভাঁজ খুলেছিলে।
নীলপদ্মের পাপড়িতে সে রেখেছে তার
জামার বোতামে আটকে থাকা কষ্টের স্বেদ;
মাঝনদীতে ভেসে চলা নৌকার সাদা পালে
শিকস্তির দীর্ঘশ্বাসের হাহাকার।
গলুইয়ের বঁড়শীতে বাঁধা চারের ছলা-কলার কথা জেনে গেছে মাছ।

এমন ভাবি---
তোমার গলির আশপাশ দিয়ে কখনো যাবোনা


আমার ঘরেও আসা-যাওয়ার একই যে পথ!
একটাই গলি.............................................।

শনিবার, ৭ আগস্ট, ২০১০

উপন্যাসের শেষ ক'টি পৃষ্ঠা

ক্রমশঃ স্তব্দতার দিকে গুটিয়ে গেছে কথার পিঠে উঠে আসা কথাগুলো
অনুচ্চারের বর্ণমালায় সাজানো ডিঙ্গা ভেসে গেছে মেঘের ঢেউয়ের ভেতরে।
পাখীর চঞ্চুতে লেগে থাকা বিষ
অথবা
স্বপ্নের ভেতরে হুটহাট কালোবেড়ালের আনাগোনার কথা কেউ কেউ জানে।
কিছুতে মেলেনা গনিতের ছক
পৌনঃপুনিক শূন্যের ভারে হিসেবের খাতা ভারী হয়ে ওঠে।
উপন্যাসের পরিণতিটা জানা গেলনা-----
শেষ ক'টি পাতা ছেঁড়া ছিল।

শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০১০

শীতল পাথরে উষ্ণ হাত

শরাব হারাম।কসম--আর কোনদিন শরাব ছোঁবনা।
আঁচড়ে ভেঙ্গে ফেলি অমৃত-পেয়ালা;

আমাকে দেখে হাসে কাঁচের চূর্ণ টুকরোগুলো।


উপেক্ষা করে হিতৈষী ভ্রুকুটি
কত কি যে জড়ো করি কাকের বাসার মতো
ধুলো-বালি,ছাইপাশ
যাপিত জীবনের ছন্দে বিঘ্ন-বিসংবাদ।
একবার দুরপাল্লার বাসে যেতে যেতে
সুনসান মাঠ্রের পাশে প্রাচীন বটের ঝুরিতে বসে থাকা
একাকী শালিখের হলুদ ঠোঁটের নিঃসঙ্গতা
জামার পকেটে তুলে নিয়েছিলাম
জমা আছে
রংগীন মার্বেলের টুকরো
এক মুঠো শুকনো ঘাস।

সন্ধ্যারতির ঘন্টার রেশ থেমে গেলে
ঝিঁঝির ধ্রুপদ তালে জোনাকীরা নেচে নেচে ওঠে।

কে রাখে উষ্ণ হাত শীতল পাথরে?
কে বাজায় আগুনের বাঁশী?
জীবন-যাপনের ছন্দ ভেঙ্গে ফেলে
মাদলের নেশা।মহুয়ার বিষ।

সোমবার, ৫ জুলাই, ২০১০

জলের ফোটায় পরমায়ু

পাঠোদ্ধারে মগ্ন থাকি জলের মুকুর।
পুরাকালের এক ছবি।
প্রাচীন পুঁথির টানে এখানেই বারবার ফিরে আসি
স্পর্শ করি কালকুট
ভেঙ্গে ফেলি নদীর মৌনতা ।
ঘোর। কেবলি জলের ঘোর।
প্রগাঢ় ঘোরের নিগড়ে অর্ধেক জীবন বাঁধা পড়ে যায়
বাকী আর কতটুকু ফেরা?ভগ্নাংশের কতটা নিজস্ব?
বিন্দু বিন্দু নীরে ভেজা জীবন যাপনের খাতা।দীর্ণ-জীর্ণ।
কি ভীষণ আগুন-স্বভাব
অভিযোগের উদ্ধত আঙ্গুলগুলো।

শত অকর্তব্যের দায়

কার তুমি
ঘরের?ঘোরের?

প্রতিদিন একটি পালক পুড়ে
ভস্ম-স্তুপের ব্যাপ্তি বেড়ে যায়।

জলবিন্দুতে নিষিক্ত বিষ।
পরমায়ু জলের ফোটায়।