সোমবার, ২৯ জুন, ২০০৯

পারদ উঠে যাওয়া একটি আয়না

তুমি বলছো ওটা একটা আয়না।হ্যাঁ ছিল।
ঘর্ষণে ঘর্ষণে এখানে ওখানে পারদগুলো উঠে গেছে।
এখন------না আয়না না কাঁচ।
সামনে দাঁড়াও---ভাঙ্গাচোরা টুকরো খন্ড খন্ড ছবিগুলো
বলে--'বাকীটা কোথায় হারালে?পুরো তুমি নেই।'
ধীরে ধীরে সমস্ত পারদ উঠে গেলে
নিরেট এক টুকরো কাঁচের এপাশ ওপাশ বলে কিছুই থাকেনা।

এলো মেলো বাতাসের পাকে উদাসী ঘুড়ির মতো ছেড়ে দেওয়া সময়
কোন ছাড় দেয়নি;
কোথাও তোমার অপেক্ষায় থমকে যায়নি তার নির্ধারিত কাঁটাগুলো।

বোকা মাছ !
জলের গভীরে না গিয়ে চড়ে বসেছিল ঢেঊয়ের চূড়ায়
জোয়ারের টানে কেমন ডাঙ্গায় উঠে এলো!
কিছুতেই ছাড় দেয়নি ধীবর-হাতের মুঠোময়-উল্লাস।
মার্জারের চোখের লালসা ঘুরে রসুইয়ের আনাচে-কানাচে।

তরঙ্গ কখনো কাঁদে মাছের মরণে?
অবয়ব ধরেনা পারদবিহীন একখন্ড কাঁচ।

পিছনে পায়ের দাগ রেখে আসি।

বিমুগ্ধ-আবেশ কেটে গেলে শরাব মিথ্যে হয়ে যায়
তবু লালপানির পেয়ালা হাতে বসে থাকি;
জীবন দোল খাচ্ছে অবিরত ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো।

এখনো এ ঘরের সব কোন ছেয়ে আছে শেষ বিকেলের সুরভি-মদিরা
এখনো মুছেনি তানপুরার শেষ ঝংকারের রেশ
গোধুলীর কনে দেখা আলোর ঘেরে ফুটি ফুটি সন্ধ্যামালতী
আকাশে পাখসাট বাজে-------বিহঙ্গম ফিরছে কুলায়;
নিষ্প্রাণ স্ট্যাচুর মতো এক জোড়া মানব-মানবী
নির্বাক।ওদের সব কথা শেষ হয়ে গেছে।

তুমি তো জানতে --
চাঁদের কতটা গভীরে গেলে স্পর্শ করা যায় চরকাবুড়ির সুতো
আমাদের জন্য বাকী ছিল আরো এক তৃতীয়াংশ পথ।
ফিরে আসা যথার্থ ফিরে আসা হয়না আর
বারবার ভুল হয় প্রত্যাবর্তনের অলিখিত শর্তগুলো
অমলিন আঁকা থাকে পদযাত্রার ছাপ;

ফিরে আসি। পিছনে পায়ের দাগ রেখে আসি।

তেপান্তরের অপর পারে

আকাশের দিকে না তাকানোই ভালো
শূন্যতার অফুরান এই বর্ণসম্ভার শুধুই ঈর্ষাতুর করে।


সময়ের পালকিটা তেপান্তরের মাঠ পেরুলেই
খসে পড়ে মায়াবী পর্দা---------------
মুঠোর ভাঁজে লুকোনো নখরগুলো চেনা হয়ে যায় দ্রুত;

দুরন্ত সবুজ কিশোরেরা অচেনা,প্রবল পুরুষ
সবুজ মেয়েরা আর সবুজ থাকেনা
কাল নেকাবে ঢাকা পড়ে হরিৎ ওড়না
স্বপ্নের সমস্ত পাপ গচ্ছিত রেখে আসে পিয়াইনের জলের নুড়িতে।

পথের প্রতিটি মোড়ে একটি বিবর্ণ পাপড়ি খসে পড়ে
বুকের ভেতরে জমা নক্ষত্রের রাত
চাঁদের উঠোন
গানের জলসা--রবীন্দ্র,নজরুল,লালন,শচীন
পুকুরের মত্ত জলে দাপাদাপি নিদাঘ-মধ্যাহ্ন
কলেজ পালানো উন্মত্ত দুপুর
প্রখর-স্বপ্নের তীব্র সাদা পালে তর তর ভাসা ডিঙ্গিখানি

থরে থরে সাজানো স্মৃতির গ্যালারী।


যাপিত জীবনের ভারে ন্যুব্জ পৃষ্ঠদেশ
-----পিছু ফিরতে দেবেনা
কোথাও একদন্ড তিষ্ঠোতে দেবেনা কালের চাবুক।

প্রাত্যহিক ছন্দ ভেঙ্গে আচমকা আনমনে
দূরাগত অতীতের রিনরিনে কিশোরীকন্ঠটি বেজে ওঠে,
'তারাগুলো আরেকবার চিনিয়ে দেবে ,বাবা?'

কখনো আমি কেউ ছিলামনা

আমি কেউ নই।। কখনো আমি কেউ ছিলামনা।


সমুদ্রের ফেনায়িত মদে ভাঙ্গে প্রবাল-প্রাচীর

আমি তার কিয়দংশ;
মৃত;
ভঙ্গুর;
সামান্য।


রক্তস্রোতের মাঝে আদিমতম যাযাবর নেশা
তরঙ্গ-স্পন্দনে শিরায় শিরায় মাদলের বোল বেজে ওঠে;তবু
নিবিড় সমুদ্র-দর্শনে ব্যর্থ
তিন ঢেউ পেরুনো হয়না
প্রবল জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বালুকাবেলায় ফিরে আসি
বার বার।
ছুটে চলা কেবল গন্তব্যে পৌঁছানো নয়;অভ্যস্ত পদক্ষেপ।
মধ্যাহ্নের খররোদে অনায়াস-রপ্ত পদযাত্রা শেষে
ছায়াবীথি
অশ্বত্থের মূলে ঠান্ডা ঘাস
তরুছায়ে বৃন্তচ্যুত দু'একটি বর্ণগর্বী পারিজাত;

কেউ অপেক্ষায় থাকেনা।


আমি কিছু নই।কিছুই হতে চাইনি।
না বাজীর রেসের ঘোড়া
না ইতিহাসের পাতায় লেখা এক নাম
লোকশ্রুত-কিংবদন্তী;কিছু নয়।

একক-বিশুদ্ধ আমাকে চেয়েছি
আমি
শুদ্ধতম-বিশুদ্ধতায় আমি

কোনটি সত্য ছবি-----------
লহর-মগ্ন জলের অস্থির কারুকাজ?
দর্পণের ক্ষীণ দোদুল্যমানতা?
নাকি দেয়ালের ফ্রেমে ঈষৎ হাসিমাখা স্থিরচিত্রের উদ্ভাস;
দ্বন্দ্ব ঘুচেনা...................................................

আমি নেই..............................
না আয়নায়;
না জলে;
না স্থিরচিত্রে............।